নেট সেশন : সমীকরণ সহজ, তবে কঠিন প্রতিপক্ষের বাধা পেরুতে পারবে বাংলাদেশ?
বিশ্বকাপ, ৪০তম ম্যাচ
ভারত-বাংলাদেশ
কবে, কখন
২ জুলাই, ২০১৯
বাংলাদেশ সময় ১৫৩০ (বিকাল ৩.৩০)
এটা বিশাল এক ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশনের মতো। ধাপে ধাপে সরল হচ্ছে সেটা, নির্দিষ্ট ফলটা পেতে অনেক সমীকরণ সমাধানের পর বেরিয়ে আসছে সরলীকৃত একটা ফল, কমছে শর্ত। বাংলাদেশের এ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার সমীকরণ এমনই। ইংল্যান্ডের শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হার, বাংলাদেশের আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়, পাকিস্তানের পরপর দুই জয় প্রভাব ফেলেছে এতে। তবে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয় এ সমীকরণকে নামিয়ে এনেছে সহজ এক শর্তে- সেমিফাইনালে যেতে বাংলাদেশকে জিততেই হবে পরের দুই ম্যাচ।
সেই শর্ত পূরণের প্রথম ধাপটা আসছে, ভারতের বিপক্ষে। যাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্মৃতিটা মোটামুটি মিশ্র। সেই ২০০৭ সালে তাদেরকে বিদায় করে দিয়ে বাংলাদেশ ফেলে দিয়েছিল হইচই, সে ম্যাচের আগে বলা মাশরাফির ‘ধরে দিবানি’ কথাটা বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় লোকগাঁথারই অংশ। ২০১১ সালে প্রথম ম্যাচে নিজেদের মাটিতে অবশ্য উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আর চার বছর আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের শেষটাও হয়েছিল আশাভঙ্গের উৎস হয়েই।
সেই কোয়ার্টার ফাইনালের পর দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে একটি সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ, যাতে জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। এরপর আর দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়নি, দুই দলের দেখা হয়েছে টুর্নামেন্টেই। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল কিংবা এশিয়া কাপের ফাইনাল, বাংলাদেশ হেরেছে প্রতিটিতেই। সাম্প্রতিক সময়ের ইতিহাসও তাই এগিয়ে রাখবে ভারতকেই।
তবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে হেরে নিজেদের জয়রথে ছেদ পড়েছে ভারতের, সে ম্যাচের এক দিন পরই তাদেরকে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। বিজয় শঙ্করের বিশ্বকাপ শেষই হয়ে গেছে, শিখর ধাওয়ান নেই আগে থেকেই। বাংলাদেশ অবশ্য আফগানিস্তান ম্যাচের পর পেয়েছে বেশ লম্বা একটা বিরতিই, চোট-টোটের সমস্যাতেও একটু প্রলেপ পড়েছে তাতে।
ধাওয়ান-বিহীন টপ অর্ডারে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির ওপর অতি নির্ভরতা, মিডল অর্ডারে একটা ভঙ্গুর চিত্র ভাবনার কারণ ভারতের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কাজে আসেনি দুই স্পিনার খেলানোর ট্যাকটিকসও। মোহাম্মদ শামির উইকেটের প্রতি প্রেম যেন বেড়ে গেছে, বল নতুন থাকতে তার সিম মুভমেন্টও হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর। আর ডেথ ওভারে নিজেকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া জাসপ্রিত বুমরাহ তো যে কোনও দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের সমস্যা সেখানে পেস আক্রমণ, সঙ্গে সাকিব-নির্ভরতা টপ অর্ডারে। অবশ্য মিডল অর্ডারে মুশফিকুর রহিম বা মাহমুদউল্লাহ ভরসা যোগান সবসময়ই। ভারতের ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্পিন কতখানি কার্যকরী হতে পারে, প্রশ্ন সেটাও।
অবশ্য সব প্রশ্ন, সব সম্ভাবনা সরিয়ে এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটার প্রেক্ষাপট একটাই- সেমিফাইনালের সমীকরণ মেলাতে এ ম্যাচে জয়ের শর্তটা পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে।
রঙ্গমঞ্চ
এজবাস্টন, বার্মিংহাম
৩০ তারিখেই ইংল্যান্ড-ভারতের ম্যাচ হয়েছে এ মাঠে । স্পিনাররা সুবিধা করতে পারেননি, এ বিশ্বকাপের অন্যতম ফ্ল্যাট উইকেট ছিল সেটি। তবে বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচ হতে পারে আগের দিনের উইকেটেই, সেক্ষেত্রে চিত্র বদলাতে পারে একটু। টস তখন হয়ে উঠবে আরও গুরুত্বপূর্ণ।
মাঠের আকারও মানিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার এখানে। একদিকে স্কয়ার অফ উইকেট বেশ ছোট এখানে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর স্পিনারদের কার্যকর না হওয়ার কারণ হিসেবে যেটিকেও উল্লেখ করেছিলেন ভারত অধিনায়ক কোহলি।
এমনিতে এ ভেন্যুর ইতিহাস বেশ রোমাঞ্চকর। ২০০৫ অ্যাশেজের সেই টেস্ট, বা ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনাল হয়েছিল এ ভেন্যুতেই। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালও এখানেই খেলেছিল বাংলাদেশ ও ভারত। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এদিন আংশিক মেঘলা থাকতে পারে বার্মিংহামের আকাশ।
যাদের ওপর চোখ
তামিম ইকবাল
বাংলাদেশ কী অধির আগ্রহেই না অপেক্ষা করে আছে তার কাছ থেকে একটা বড় ইনিংস দেখার জন্য! এ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তার ব্যাটিং হাইলাইটস ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৮ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬২ রানের ইনিংস। বিশ্বকাপে তার রেকর্ডটা ঠিক তামিম-সুলভ নয়, নেই সেঞ্চুরিও। শুরুতে তার একটা বড় ইনিংস বদলে দিতে পারে ম্যাচের চিত্রই। যে ভারতের বিপক্ষে ফিফটি করে আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন তামিম, সেই ভারতের বিপক্ষেই পূরণ করতে পারবেন আক্ষেপটা?
বিরাট কোহলি
টানা ৫টি ফিফটি করেছেন তিনি, সর্বোচ্চ ৮২। ক্যারিয়ারে এমন ‘সেঞ্চুরি-খরা’ এর আগে কখনোই আসেনি কোহলির। রোহিত শর্মার এরই মাঝে করে ফেলেছেন তিনটি সেঞ্চুরি, তবে কোহলি তিন অঙ্ক পর্যন্ত যেতে পারছেন না। বাংলাদেশ খুব করেই চাইবে, সেই খরা কাটানোর উপলক্ষ্য অন্তত আর এক ম্যাচ স্থগিত থাকুক তার।
সম্ভাব্য একাদশ
চোট মোটামুটি আছে সিনিয়র পাঁচজনসহ সাইফউদ্দিনেরও। সবচেয়ে বড় শঙ্কাটা অবশ্যই মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও ব্যাটিংয়ের সময় খুঁড়িয়েছেন তিনি, তার মাংশপেশি ছিঁড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি খেলার মতো অবস্থায় না থাকলে দলে হয়তো জায়গা পাবেন সাব্বির রহমান অথবা মোহাম্মদ মিঠুন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন লিটন দাস, শেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে তার সেঞ্চুরির কথা ভেবে আবারও শুরুতে পাঠানো হতে পারে তাকে।
ব্যবহৃত উইকেটে খেলা হলে মিরাজ-মোসাদ্দেক দুজনকেই খেলানোর পরিকল্পনাতেই বহাল থাকতে পারে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে তাই নামতে পারে আগের ম্যাচের একাদশই।
বাংলাদেশ- তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটকিপার), সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ/রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), মোস্তাফিজুর রহমান
শঙ্কর আগের ম্যাচেও খেলেননি, ঋশাভ পান্টও ঠিক দিতে পারেননি আস্থার প্রতিদান। ভারতের সামনে অপশন তাই লোকেশ রাহুলকে চারে পাঠিয়ে আগারওয়ালকে খেলানো। তবে তাকে ব্যাক-আপ হিসেবেই ভাবলে শুরুর দিকে ব্যাটিং লাইন-আপ একই থাকবে ভারতের। ফিট হওয়া ভুবনেশ্বর কুমার ফিরতে পারেন, দুই রিস্টস্পিনারের একজনের বদলে অথবা মোহাম্মদ শামির জায়গায়।
ভারত- রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, রিশাভ পান্ট, এমএস ধোনি (উইকেটকিপার), কেদার যাদব, হারদিক পান্ডিয়া, কুলদিপ যাদব, যুঝভেন্দ্র চাহাল/ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি/ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রিত বুমরাহ
সংখ্যার খেলা
- ২৪- আর ২৪ রান হলে বিশ্বকাপের এক আসরে ৫০০ রান করা প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হবেন সাকিব আল হাসান। এ বিশ্বকাপে এখন তার চেয়ে এগিয়ে আছেন অ্যারন ফিঞ্চ (৫০৪) ও ডেভিড ওয়ার্নার (৫১৬)।
- ২- এ বছর ৩১টি ডেথ ওভার করেছেন বুমরাহ। এর মধ্যে মাত্র দুটিতে তিনি দিয়েছেন ১০-এর ওপরে রান।
আমরা তো স্লো-বলই করি!
স্লোয়ার বল ব্যবহার করবেন কিনা, সেটা জিজ্ঞাসা করায় মাশরাফি বিন মুর্তজা।
(মাশরাফির উক্তি কৃতজ্ঞতা- মোহাম্মদ ইসাম, ক্রিকইনফো)