• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    শেষ চারের স্বপ্নভঙ্গে জোছনাই শুধু দেখাল বাংলাদেশ

    শেষ চারের স্বপ্নভঙ্গে জোছনাই শুধু দেখাল বাংলাদেশ    

    ভারত ৫০ ওভারে ৩১৪/৯ ( রোহিত ১০৪, রাহুল ৭৭; মোস্তাফিজ ৫/৫৯)

    বাংলাদেশ ৪৮ ওভারে ২৮৬ (সাকিব ৬৬, সাইফ উদ্দিন ৫১, সাব্বির ৩৬, সৌম্য ৩৩; বুমরা ৪/৫৫, পান্ডিয়া ৩/৬০)

    ফলঃ ভারত ২৮ রানে জয়ী


    এজবাস্টনে তেরঙা পতাকাই উড়ছিল বেশি, ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ স্লোগানটা ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশের’ চেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছিল। দিন শেষে লাল সবুজের গর্জনটা হয়তো বেশি শোনা যেতেই পারত। কিন্তু আরও একবার অনিঃশেষ আক্ষেপ আর অতৃপ্তি নিয়ে শেষ করতে হলো। ক্যাচ মিস আর উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার হতাশায় বিসর্জন দিতে হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, ভারতের কাছে হেরে নিশ্চিত হয়ে গেল গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়।

    কিন্তু কোন আফসোসটা বেশি বুকে বাজবে বাংলাদেশের? শুরুতেই রোহিত শর্মার ওই ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া? কিন্তু মোস্তাফিজ তো সেই ক্ষতিটা প্রায় পুষিয়েই দিয়েছিলেন। তামিম, মুশফিক, সৌম্য, লিটন সবাই শুরুটা পেয়েছিলেন। মন্থর হয়ে আসা উইকেটে ব্যাট করা সহজ ছিল না অবশ্যই। কিন্তু তাতে তো উইকেট দিয়ে আসার হাহাকারটা চাপা থাকে না? এক সাকিব আল হাসানই হেক্টর হয়ে ট্রয়ের মাঠে লড়ে যাচ্ছিলেন। সাইফ উদ্দিন হয়ে গিয়েছিলেন মহাভারতের শত্রুব্যুহে ঢুকে পড়া অভিমন্যু। কিন্তু শেষ রক্ষা তো আর হলো না।  

    তামিম ইকবাল শুরু থেকে আভাস দিচ্ছিলেন, ক্যাচ মিসের দুঃখটা আজ ব্যাট হাতে ঘোঁচাবেন। দারুণ কিছু শটে শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২২ রান করে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে গেলেন। সৌম্য সরকার শুরুতে একটু স্লথ ছিলেন, কিন্তু এরপর কয়েকটি শটে দারুণ খেলছিলেন। সাকিবের সঙ্গে জুটিটা যখন জমে উঠছিল, তখনই হার্দিক পান্ডিয়ার প্রথম বৈধ বলেই সহজ ক্যাচ তুলে দিলেন শর্ট কাভারে।

    মুশফিক আর সাকিব ছিলেন। বাংলাদেশ ম্যাচে ছিল ভালোমতোই। মুশফিক দারুণ তিনটি চারে শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু চাহালের বলে হলো সর্বনাশ, ঝুলিয়ে দেওয়া বলটা মিসটাইম করে ক্যাচ দিলেন ২২ রান করে। লিটনও শুরুটা ভালো করেছিলেন, ভারতের সঙ্গে এশিয়া কাপে ওই দুর্দান্ত ইনিংসটা হয়তো তার মাথায় ছিল। পান্ডিয়াকে দুর্দান্ত একটি ছয় মেরে সেরকম আভাসও দিচ্ছিলেন। কিন্তু আবারও মন্থর উইকেট বুঝতে না পেরে পুল করতে গেলেন, আউট হয়ে গেলেন ২২ রান করে। মোসাদ্দেক খুব দ্রুতই বোল্ড বুমরার বলে, আপনি হয়তো তখন টিভিও বন্ধ করে দিয়েছেন।

    কিন্তু নিভে যেতে যেতেও প্রদীপটা আরও কিছুক্ষণ জ্বালিয়ে রাখলেন সাইফ উদ্দিন আর সাব্বির রহমান। বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ ৬৬ রানের জুটি এলো সপ্তম উইকেটে। তবে অসম্ভবের স্বপ্নটা যখন একটু একটু করে উঁকি দিতে শুরু করেছে, বুমরা সেটি ভেস্তে দিলেন। ৩৬ বলে ৩৬ রান করে বোল্ড সাব্বির। মাশরাফি একটি ছয় মারলেন, কিন্তু সেখানেই শেষ। কিন্তু সাইফ উদ্দিন ঠিক করলেন, ব্যাটল অব বাস্টার্ডের জন স্নো হওয়ার চেষ্টা করবেন। এমনকি রুবেলও বুমরার বলে চার মারলেন।

    ব্যবধানটা সাইফ উদ্দিন আর রুবেল মিলে যখন ২৮ রানে নিয়ে এসেছেন ব্যবধান, আপনি হয়তো নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন। ওদিকে সাইফ উদ্দিন দুর্দান্ত খেলছেন, ফিফটিও হয়ে গেছে তার। কিন্তু বুমরা পর পর রুবেল আর মোস্তাফিজকে বোল্ড করে শেষ করে দিলেন সব জল্পনা কল্পনার। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা হয়ে গেল এত কাছে তবু এত দূরের গল্প।  

     

    ইশ, উফ, যদি। যে ম্যাচের শুরুটাই হয় টসভাগ্যের বিড়ম্বনায়, সেটিকে আর কী-ই বলা যায়? মাশরাফি বিন মুর্তজার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, টসে হেরে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার একরাশ মেঘ জমেছে তার মুখে।

    খানিক পরেই সেই মেঘ ছড়িয়ে গেল বাকি সবার মুখে। রোহিত শর্মা শুরুতেই ছয় মেরে আজ ফিফথ গিয়ারে চলে যাওয়ার আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে মোস্তাফিজের বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন ডিপ স্কয়্যার লেগে। এমনিতে যে ক্যাচটা আরও ২০ বার ধরতে বললে হয়তো ২০ বারই ধরবেন, সেটাই হাত থেকে ফেলে দিলেন তামিম ইকবাল। সেটার জন্য বাংলাদেশকে কতটা মূল্য দিতে হয়েছে,  জেনে গেছেন এর মধ্যেই। রোহিত এরপর কচুকাটা শুরু করেছেন বোলারদের। মাশরাফি নিজে বল করেছেন, একের পর এক বোলার পরিবর্তন করেছেন, কোনো কিছুতেই লাভ হয়নি। ৪৫ বলে ফিফটি পেয়েছেন রোহিত, ভারত ১৭.২ ওভারেই পেয়ে গেছে ১০০।

    কেএল রাহুল একটু স্লথ ছিলেন, কিন্তু তিনিও যোগ দিয়েছেন এর মধ্যে। ৫৭ বলে পেয়েছেন ফিফটি, ওদিকে রোহিত এগিয়ে যাচ্ছেন সেঞ্চুরির দিকে। ২৩.১ ওভারে ভারত পেয়ে গেছে ১৫০, ওদিকে রোহিত শর্মা ৯০ বলে পেয়ে গেছেন সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে চারটি সেঞ্চুরিও হয়ে গেছে, তবে আজকেরটি আভাস দিচ্ছিলেন অনেক অনেক বড় করার।

    শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেরকম করেছিলেন, আজ আরও একবার ডুবতে থাকা বাংলাদেশকে খড়কুটো এনে দিলেন সৌম্য সরকার। তার বলেই লিটনকে ক্যাচ দিলেন রোহিত, ক্যাচ মিসের মাশুলটা বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিলেন ভালোমতোই। রাহুলও খানিক পর রুবেলের পরে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে, হঠাৎ করে একটা লাইফলাইন পেয়ে গেল বাংলাদেশ।

    তারপরও বিরাট কোহলি ছিলেন, বাংলাদেশের স্বস্তিতে থাকার কোনো কারণ ছিল না। তবে মোস্তাফিজুর রহমান ঠিক করলেন, জাদুর থলি থেকে আরেকটি স্বপ্নের ওভার বের করবেন। প্রথম বল ডট হলো, দ্বিতীয়টি শর্ট বল। মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন কোহলি, ২৬ রানেই ফিরলেন। প্রথম বলটা ডট দিলেন পান্ডিয়া, পরের কাটারে ক্যাচ দিলেন স্লিপে। মেডেন আর ডাবল উইকেটে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনলেন মোস্তাফিজ।

    ভারতের ৩৬০-৭০ রান থেকে তখন বাংলাদেশ তাদের ৩৩০-৩৪০ রানের মধ্যে আটকে রাখার স্বপ্ন দেখছে। ঋষভ পান্ট সেটি ভেস্তে দেওয়ার উপক্রম করেছিলেন, ৪১ বলে করে ফেলেছিলেন ৪৮ রান। কিন্তু সাকিবের বলে ক্যাচ দিলেন মোসাদ্দেককে। ধোনি তার মতোই ঢিমেতালে চলছিলেন, বাংলাদেশের তাতে আপত্তি করার কারণ ছিল না। দীনেশ কার্তিকও ধোনির-আবেশে শেষ পাঁচ ওভারেও বেশি কিছু করতে গেলেন না। শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজের বলেই ক্যাচ দিলেন মোসাদ্দেককে। এরপর শেষ ওভারে ধোনিকে ফেরালেন মোস্তাফিজ, শেষ বলে শামিকে আউট করে সাড়ে তিন বছর পর ওয়ানডেতে পেলেন ৫ উইকেট। শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৬৩ রান তুলল। ৩১৪ রানে আটকে বাংলাদেশ একটু হলেও স্বপ্ন দেখছে তখন। শেষ পর্যন্ত কাছে গিয়েও সেটি ভেস্তে গেছে।