পাকিস্তানকে ডুবিয়ে ভেসে রইল নিউজিল্যান্ড
ইংল্যান্ড ৫০ ওভারে ৩০৫/৮ (বেইরস্টো ১০৬, রয় ৬০; নিশম ২/৪১, বোল্ট ২/৫৬)
নিউজিল্যান্ড ৪৫ ওভারে ১৮৬ অলআউট (ল্যাথাম ৫৭, টেলর ২৮, উইলিয়ামসন ২৭; উড ৩/৩৪, স্টোকস ১/১০)
ফলঃ ইংল্যান্ড ১১৯ রানে জয়ী
একে একে নিভিছে দেউটি। আশার বাতিঘর নিভতে শুরু করেছে উপমহাদেশের। শ্রীলংকা ডুবে গিয়েছিল আগে, বাংলাদেশ ডুবল কাল। ভারতই শুধু বেঁচে রইল। আর এখন নিউজিল্যান্ডের হারে পাকিস্তানের প্রদীপটাও প্রায় নিভেই গেল। সেটা জ্বালিয়ে রাখতে হলে পাকিস্তানকে যা করতে হবে, তার চেয়ে মাসখানেকের মধ্যে ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হয়ে যাওয়া বোধ হয় বেশি সম্ভব। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচটা এখন মর্যাদার লড়াই হয়ে গেল। আর হোঁচট খেয়েও ১৯৯২ সালের পর প্রথম বারর মতো ইংল্যান্ড চলে গেছে শেষ চারে, তৃতীয় হওয়াটাও নিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের। সেমিতে তাদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বা ভারতই হচ্ছে।
ডারহামের ম্যাচটা নিয়ে আসলে বলারও খুব বেশি কিছু নেই। তিনশর বেশি রান তাড়া করে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসটা কিছুদূর গড়ানোর পরেই ফলটা একরকম নিশ্চিত হয়ে গেছে। বিশ্বকাপের এই অর্ধে টসে জিতে যেমন চোখ বন্ধ করে ব্যাটিং নিচ্ছেন অধিনায়কেরা, টস জেতা মানে হয়ে যাচ্ছে ম্যাচের অনেকটা জেতাও। আজও যেমন অইন মরগান শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন। গ্রীষ্ম যত গড়াচ্ছে, ইংলিশ উইকেট হয়ে যাচ্ছে খানিকটা উপমহাদেশীয় ফ্ল্যাট উইকেটের মতো। শুরুতে ব্যাট করার জন্য দারুণ, সময়ের সঙ্গে একটু স্লথ হচ্ছে, ব্যাট করাও কঠিন হচ্ছে।
আজও যেমন শুরুতে জনি বেইরস্টো আর জেসন রয় যেভাবে শুরু করেছিলেন, মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড ৪০০ না হোক, ৩৫০ এর আশেপাশে চলে যাবে। প্রথম ১০ ওভারে দুজন তুলে ফেলেছিলেন ৬৭ রান, ১৫ ওভারের মধ্যে চলে এলো ১০০ রান। বেইরস্টো আর রয় আভাস দিচ্ছিলেন বড় কিছুর।
শেষ পর্যন্ত ব্রেকথ্রু দিলেন এবারের বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো জিমি নিশম। শর্ট কাভারে ক্যাচ প্র্যাকটিস করালেন রয়, ফিরলেন ৬০ রানে। ততক্ষণে অবশ্য ১২৩ রানের উদ্বোধনী জুটি হয়ে গেছে।
জো রুট ক্রিজে এলেন, বেইরস্টোর সঙ্গে আরেকটি বড় জুটির কাজটাও শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে বেইরস্টো পেয়ে গেলেন টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ভারতের সঙ্গে নির্লিপ্ত থাকলেও আজ বাঁধভাঙা উদযাপন করলেন, যেন সমালোচকদের জবাবটা দিলেন ব্যাট হাতেই।
কিন্তু ইংল্যান্ড পথ হারাতে শুরু করল ঠিক এর পরের বল থেকেই। জো রুটের আউটটা ছিল অদ্ভুত, আম্পায়ার আউট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিলেন রুট। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেল, বোল্টের বলটা ব্যাট ছুঁয়ে গেছে তার, কিন্তু রুট সেটা বুঝতেই পারেননি। বেইরস্টোও একটু পর আউট, ইংল্যান্ড ৪০০ রানের আশায় এর মাঝেই নামিয়ে দিয়েছে বাটলারকে চারে।
কিন্তু বাটলার-স্টোকস কেউই আজ বেশিদূর এগুতে পারলেন না। দুজনই পিচের মন্থরতা বুঝতে না পেরে ক্যাচ প্র্যাকটিস করালেন। দুজনই ঠিক ১১ রানে। একজন মিড উইকেটে, আর আরেকজন লং অনে। হঠাৎ করেই ২৪৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল ইংল্যান্ড। মরগান একটু চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ৪০ বলে ৪২ রানের ইনিংসটা আরও বড় না করতে পারার হতাশা থাকবে। ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর আদিল রশিদ ও লিয়াম প্লাংকেট শেষের দিকে একটু তেড়েফুঁড়ে খেলার চেষ্টা করলেন। তাতে ৩০০ পেরুল ইংল্যান্ড, শেষ ১০ ওভারে তারপরও ৬৪ রানের বেশি উঠল না। ৩০ ওভারে ২০০র কাছাকাছি রান থাকার পরও শেষ পর্যন্ত সেটা হয়ে গেল ৩০৫।
তবে নিউজিল্যান্ড সেটাকে কঠিন বানিয়ে ফেলল কিছুটা নিজেদের দায় আর কিছুটা ভাগ্যের বিড়ম্বনায়। হেনরি নিকোলস প্রথম ওভারেই এলবিডব্লু হলেন শুন্য রানে। অথচ রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন, বল চলে যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে। গাপটিলের দুঃস্বপ্নের টুর্নামেন্টে আরও একবার আউট হলেন ৮ রান করে। তবে উইলিয়ামসন যতক্ষণ ছিলেন, আশা ছিল। সেটা শেষ হয়ে গেল দুর্ভাগ্যজনকভাবেই।
মার্ক উডের বলে ড্রাইভ করেছিলেন টেইলর, কোনোমতে আঙুল ছোঁয়াতে পারলেন উড। উইলিয়ামসন ক্রিজে ঢোকার আগেই নন স্ট্রাইকে বল ভেঙে দিল স্টাম্প, বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ৪০ রানের নিচে আউট কিউই অধিনায়ক। টেইলরও রান আউট, তবে তাতে নিজের দায়ই বেশি। নিশম ১৯ রান করে উডের বলে বোল্ড, বেশিক্ষণ টেকেননি ডি গ্র্যান্ডোমও। ডারহামের কাউন্টি খেলা ল্যাথাম একটু লড়াই চালিয়ে গেলেন, সেটা নিউজিল্যান্ডের হারের ব্যবধানই শুধু কমাল। হারেও অবশ্য খুব একটা ক্ষতি হয়নি নিউজিল্যান্ডের, শেষ চার প্রায় নিশ্চিত হয়েই গেছে।