নেট সেশন : ২০ বছর পর বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সামনে আবার পাকিস্তান
বিশ্বকাপ, ৪৩তম ম্যাচ
বাংলাদেশ-পাকিস্তান
কবে, কখন
৫ জুলাই, ২০১৯
বাংলাদেশ সময় ১৫৩০ (বিকাল ৩.৩০)
২০ বছরে বদলে যায় অনেক কিছুই, আবার বদলায়ও না কিছু ব্যাপার।
১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটা ছিল ডেড-রবার। গ্রুপ-পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ ছিল দুই দলেরই। পাকিস্তান আগেই নিশ্চিত করেছিল সুপার সিক্স। বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল বাংলাদেশের, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টা ছাড়া বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল সাদামাটাই। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে একটি জয়ই অবশ্য ছিল ‘যথেষ্ট’। তবে নর্দাম্পটনে বদলে গেল অনেক কিছুই। বাংলাদেশ স্তব্ধ করে দিল সে টুর্নামেন্টে দারুণ পারফরম্যান্স দেখানো ও পরবর্তীতে রানার্স-আপ পাকিস্তানকে, পেল স্বপ্নের জয়। টেস্ট স্ট্যাটাসের দাবিটা জোরালো হলো আরেকটু।
এরপর ২০ বছরে এবারের আগে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর বসেছে আরও চারবার, দুই দলই খেলেছে প্রতিটিতে। বাংলাদেশের সঙ্গে দেখা হয়নি পাকিস্তানের। ২০ বছর পর সেই ইংল্যান্ডে যখন ফিরল বিশ্বকাপ, নিজেদের ‘শেষ’ ম্যাচে মুখোমুখি দুই দল। আরেকটি ‘ডেড-রবার’। ‘শেষ’, ‘ডেড-রবার’ শব্দগুলি সরাসরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না, খাতা-কলমে পাকিস্তানের একটা ‘অসম্ভব’ সমীকরণ আছে বলে। তবে সেটা হওয়া আর টাইম-ট্রাভেল করে আবার নর্দাম্পটনের সেই দিনে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা মোটামুটি একই ধরনের।
তবে বদলে গেছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফরম্যান্সে এগিয়ে বাংলাদেশই। ২০১৫ সালে তাদেরকে দেশের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ, এরপর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের ‘নতুন বসতি’ আরব আমিরাতে জিতেছিল বাংলাদেশই। এমনিতে লড়াইটা হওয়ার কথা পাকিস্তানের পেস আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে শেষদিকে সাইফ উদ্দিনের ব্যাটিং ছিল দারুণ প্রাপ্তি, অন্যদিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয়ে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলেন ইমাদ ওয়াসিম। দুই দলের অলরাউন্ডারের লড়াইটাও তাই হওয়ার কথা রোমাঞ্চকর। আর সাকিব নামের একজন তো আছেনই!
সেসব বাদ দিলে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ‘সাকিব আল হাসান’-এর টুর্নামেন্টের শেষটা জয় দিয়ে করার। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তানের সঙ্গে জয়, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচ যথেষ্ট হয়নি সেমিফাইনালের জন্য। অবশ্য একইভাবে ভাববে পাকিস্তানও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের পর প্রায় ছিটকে যাওয়া তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল টানা তিন জয়ে। ১৯৯২ বিশ্বকাপের সঙ্গে মিলটা চলে গিয়েছিল অদ্ভুত কাকতালে। ইংল্যান্ডের টানা দুই জয়ে অবশ্য ‘৯২-কে আর টানতে পারছে না পাকিস্তান।
২০ বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপে তাই পাকিস্তান ‘ফেভারিট’ নয়, সেটা হওয়ার কথা বাংলাদেশেরই। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টাও তাই হবে না কোনও অঘটন।
অনেক কিছু বদলায়। অনেক কিছু বদলায় না। ২০ বছরে, অথবা এক বিশ্বকাপে।
রঙ্গমঞ্চ
লর্ডস, লন্ডন
হোম অফ ক্রিকেট। সেন্ট জনস উড রোডের যে ভেন্যুর নামটাই আলাদা একটা রোমাঞ্চের নাম। একটা দিক দিয়ে, ক্রিকেটের মক্কায় অভিষেক হচ্ছে বাংলাদেশের। ২০০৫ ও ২০১০ সালে এখানে দুটি টেস্ট খেললেও বাংলাদেশ খেলেনি কোনও ওয়ানডে। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এখানে তিনটি ম্যাচ হয়েছে, তিনটিতেই জিতেছে আগে ব্যাটিং করা দল। ৩০৮, ২৮৫, ২৪১- ক্রমান্বয়ে কমেছে স্কোরও। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটা হতে পারে ব্যবহৃত উইকেটে, থাকতে পারে সবুজের ছোঁয়া।
লন্ডনে এদিন আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই তেমন।
যাদের ওপর চোখ
মাশরাফি বিন মুর্তজা
৭ ম্যাচ, ১ উইকেট। গড়ের প্রসঙ্গ তাই আসে না। ইকোনমি ৬.৪২। বিশ্বকাপে ছন্দে নেই না মোটেই বাংলাদেশ অধিনায়ক। আগেই বলেছেন, এটিই তার শেষ বিশ্বকাপ। সে হিসেবে তার শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচও এটি। শেষটায় প্রলেপ দিতে পারবেন ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে প্রায় ভুলে যাওয়ার মতো এই বিশ্বকাপে?
শাহিন শাহ আফ্রিদি
টুর্নামেন্টের পরের ধাপে পাকিস্তান একাদশে নিয়েছিল এই পেসারকে। ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট, নতুন বলে তার সুইং বেশ ঝামেলায় ফেলে দেয় ব্যাটসম্যানকে। সঙ্গে উচ্চতায় লম্বা বলে পান বাড়তি বাউন্সও।
সম্ভাব্য একাদশ
চোটের কারণে ভারতের বিপক্ষে খেলেননি মাহমুদউল্লাহ। এ ম্যাচে সেরে না উঠলে থাকতে পারে আগের ম্যাচের একাদশেই। অনুশীলনে হাতে চোট পেয়েছেন আবার মুশফিকুর, তিনি খেলতে না পারলে দলে আসতে পারেন মোহাম্মদ মিঠুন। বাড়তি স্পিনার খেলানো হলে রুবেল হোসেনের জায়গায় আবার ফিরতে পারেন মেহেদি হাসান মিরাজ। স্কোয়াডে এখন পর্যন্ত খেলেননি শুধু আবু জায়েদ রাহি, তার সুযোগ কি মিলবে?
বাংলাদেশ- তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটকিপার)/মোহাম্মদ মিঠুন, সাব্বির রহমান/মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ/রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), মোস্তাফিজুর রহমান
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি আঙুলের চোট নিয়ে খেলেছেন ওয়াহাব রিয়াজ। তিনি এ ম্যাচে না খেললে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেতে পারেন পেসার মোহাম্মদ হাসনাইন।
পাকিস্তান- ইমাম-উল-হক, ফাখার জামান, বাবর জামান, মোহাম্মদ হাফিজ, হারিস সোহেল, সরফরাজ আহমেদ (অধি, উইকেটকিপার), ইমাদ ওয়াসিম, শাদাব খান, মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ/মোহাম্মদ হাসনাইন, শাহিন আফ্রিদি
সংখ্যার খেলা
- ০- বিশ্বকাপে পাকিস্তানের মুখোমুখি একবারই হয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের সেই ম্যাচ হয়েছিল যে ভেন্যুতে, নর্দাম্পটনের সেই কাউন্টি গ্রাউন্ডে এরপর আর হয়নি ছেলেদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। লর্ডসেও এর আগে সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ।
- ২- আর ২ উইকেট হলেই ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট হবে মোস্তাফিজের। এ ম্যাচে সেটি পেলে চতুর্থ দ্রুততম বোলার হিসেবে এই রেকর্ডে শেন বন্ডের সঙ্গী হবেন বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার।
যারা সেমিতে গেছে, তাদের আমি শুভকামনা জানাই। তারা ভাগ্যবান, সেই ভাগ্যটা যদি আমাদেরও থাকতো! বড় দলের সাথে বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে সেটা আমি গর্বিত। আমরা এই বিশ্বকাপে যেভাবে লড়াই করেছি, হয়ত সবার হৃদয়েই জায়গা করে নেবো।
ভারতের সঙ্গে হারের পর বলেছিলেন বাংলাদেশ হেড কোচ স্টিভ রোডস