বিশ্বকাপ গ্রুপপর্ব : ব্রাথওয়েট ও প্রেম, স্টার্ক ও প্রাস এবং অন্যান্য...
গ্রুপপর্ব শেষ। না, এরপর আর বেশি কিছু বাকি নেই। সেমিফাইনাল আর ফাইনাল! এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের দিকে ফিরে তাকালে যা যা আসতে পারে, অথবা যা যা নাও আসতে পারে...
ব্রাথওয়েট ও প্রেম (বিরহ)
ম্যাচজেতানো ইনিংসের অভাব নেই বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে। কোনোটি শুরুতেই ছিটকে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে (ইংল্যান্ডের বাঁচা-মরার লড়াইয়ে জনি বেইরস্টোর দুই সেঞ্চুরি ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে), রানতাড়ায় কেউ খেলেছেন মাথায় বরফের ব্যাগ নিয়ে এগুনোর মতো ইনিংস (সাকিব আল হাসান, বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও কেন উইলিয়ামসন, বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বাবর আজম, বিপক্ষ নিউজিল্যান্ড)। চাপে পড়ে প্রথম ইনিংসে কেউ ছিলেন দুর্দান্ত (ন্যাথান কোল্টার-নাইল, বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও হারিস সোহেল, বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা), আবার দল আর পরাজয়ের মাঝে ব্যবধান হয়ে ছিলেন কেউ (ইমাদ ওয়াসিম, বিপক্ষ আফগানিস্তান)। আর আছে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি, যা হয়ে গেছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির টেক্সটের মতো, আপনি চান বা না চান, আসতেই থাকবে।
তবে এসব শুধুই প্রাপ্তির গল্প। ক্রিকেট-প্রেমের ব্যাপারটা একটু বিরহের ফ্রেমে আপতন করে দেখা যায়।
ক্রিকেট আপনাকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করতে পারে। হয়তো সবসময় নয়, তবে মাঝে মাঝেই। সেই প্রেমে আবার অপ্রাপ্তির বেদনা মাঝে মাঝেই ছাপিয়ে যায় প্রাপ্তির আনন্দকে। হয়তো এক সময় গিয়ে সেই বিরহটাই হয়ে ওঠে প্রেমের মূল আকর্ষণ, ব্যর্থ প্রেমিক বা প্রেমিকার একমাত্র অবলম্বন। কার্লোস ব্রাথওয়েটের ইনিংসটি তেমন।
অনেকদিন ধরে কারও সামনে পড়লে বুক ধড়ফড় করে আপনার, কিন্তু কথাটা বলতে পারেন না। সবকিছু গুবলেট পাকিয়ে যায়। এরপর সাহস করে বলে ফেললেন, ওপাশ থেকে সাড়াও মিললো। চারপাশে এতো কিছু বিপক্ষে আপনাদের, তবুও আপনারা বদ্ধ কেবিনে বসে করেন রুদ্ধশ্বাস কতো প্রতীক্ষা। এরপর সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা। হয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, অথবা তাকে ছাড়ার ঝুঁকিটা নিতে হবে। আপনি ঝুঁকিটা নিলেন। কারণ, আপনার ঝুঁকির মানসিকতা তখন উত্তুঙ্গে, চাইলেও অন্যকিছুর কথা ভাবতে পারছেন না।
তবে আপনার প্রেম উড়ে চলে গেল। আপনার জন্য পড়ে রইল শুধুই বিরহ, অপ্রাপ্তির বেদনা। যে বিরহও এখন মধুর আপনার কাছে।
হ্যালো, কার্লোস ব্রাথওয়েট! ইউ ডু রিমেমবার দ্য নেম। নাকি?
ক্রিকেট-জীবন-প্রেম-বিরহ.../এএফপি
স্টোকস : দ্য ফেড এক্সপ্রেস অফ ক্রিকেট?
অ্যাথলেটিসিজম। ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি এই শব্দটা কখন শোনেন আপনি?
ব্যাটিং নয়, বোলিং নয়, অবশ্যই ফিল্ডিংয়ে (ফিল্ডিং শুনেই কি বাংলাদেশের একরাশ ছবি সেলুলয়েডের মতো ভেসে উঠল? একটু শান্ত হোন। ঢাকায় একদিন জ্যাম কমবে। বাংলাদেশ একদিন ফিল্ডিংয়ে ধারাবাহিকভাবে ভাল করবে)।
গ্রুপপর্ব শেষে এ বিশ্বকাপ দেখেছে দারুণ সব ক্যাচ। উইকেটকিপারদের কথা বাদ দিন, তারা এসব নেবেনই। ফাবিয়েন এলেনের অন্তত দুটি অসাধারাণ ক্যাচ আছে-- একটি ফিরতি, আরেকটি প্রায় ভূমির সঙ্গে সমান্তরালে পেছন দিকে লাফিয়ে উঠে। ক্রিস ওকসের দুটি ডাইভিং ক্যাচ আছে, তার সুইং যদি তার প্রেমে আপনাকে না ফেলতে পারে সহজে, তাহলে এ দুটি ক্যাচ দেখে আরেকবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। রবীন্দ্র জাদেজা শুধু ফিল্ডিং দিয়েই যে কোনও দলে জায়গা করে নেওয়ার দাবি রাখতে পারেন, ‘সুপার-সাব’ হিসেবে সামনে ডাইভ দিয়ে নেওয়া জেসন রয়ের ক্যাচটা সেটার আরেকটা প্রমাণ। ইমরান তাহির নিজের বলে দারুণ একটা ক্যাচ নিয়ে কাগিসো রাবাদাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন, রাবাদা যে তার উদযাপনে সঙ্গী হতে চেয়েও হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ইউ ক্যান নট ডু দ্যাট!
শেলডন কটরেল দৌড়ে এসে ছোঁ মেরে ধরে, বাউন্ডারির বাইরে যাওয়ার আগে সামনে ছুঁড়ে, বাউন্ডারির ভেতর ঢুকে আবার সেটা ধরে সেরা ক্যাচের তকমার দৌড়ে প্রায় সবাইকে পেছনে ফেলেছিলেন। তবে… বেন স্টোকস আছেন যে!
সে শটে ক্যাচ হবে সেটা কেউ ধারণা করেননি, অ্যান্ডাইল ফেহলুকওয়ায়ো ছয় হবে ধরে নিয়েছিলেন হয়তো। বল প্রায় নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পর ডানহাত পেছনে বাড়িয়ে মোমেন্টামের চোটে দিগ্বিদিক ছোটা কুকাবুরাকে যখন স্টোকস থামিয়ে ফেলেন, তখন মুহুর্তের জন্য আপনি থ বনে যেতে বাধ্য। রজার ফেদেরারের সেইসব শটগুলির মতো, প্রতিপক্ষ যখন ফাইনাল শট খেলেছে বলে ধরে নিয়ে দেখেন ফেদেরার সেটা কোনও একভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন, শুধু ফেরাননি, পয়েন্টের দলিলটাও করে নিয়েছেন!
ইউ ক্যান নট ডু দ্যাট, বেন স্টোকস!
সেক্সি স্টার্ক ও প্রাস
রাহুল দ্রাবিড় নাকি ২০০৫ সালে যুবরাজ সিংকে পেছনে ফেলে ভারতের ‘সেক্সিয়েস্ট স্পোর্টসপার্সন’ হয়েছিলেন। তা তিনি হতেই পারেন।
তবে ফাস্ট বোলিং, মানে আদতেই ফাস্ট বোলিং কেউ করলে তাকে চিরায়ত ‘সেক্সি’ তালিকার আজীবন সদস্যপদ দিয়ে দেওয়া উচিৎ ক্রিকেটে। মিচেল স্টার্ককে দেখে শুধু ‘সেক্সি’ হওয়া নয় অবশ্য, আপনি পদার্থবিদ্যাও শিখে নিতে পারেন একটু।
হয়তো আপনার গতিবিদ্যার ‘প্রাস’ নিয়ে একটু ঝামেলা আছে। নিক্ষেপণ কোণ, আনুভূমিক পাল্লা, সর্বোচ্চ পাল্লা, ইত্যাদি ইত্যাদি। স্টার্কের সেই ইয়র্কারটা দেখুন স্টোকসকে করা।
স্টার্কের দৌড়ানো, বলের রিলিজ পয়েন্ট, বলের গতিপথ-- সবকিছু। একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে যে পরিমাণে নিখুঁত ও পরিমিত হতে হয়, নিক্ষেপণ কোণ ও আনুভূমিক পাল্লা যতখানি হতে হয়- স্টার্কের সে ইয়র্কার তার প্রমাণ। ভুলে যান ম্যাচের পরিস্থিতি, ভুলে যান এমন একটা বলে সেদিন ক্রিকেট বলকে প্রায় ফুটবলের মতো করে দেখে টাইমিং করা স্টোকসকেও অসহায় বানিয়ে দিয়েছিল সেটা। আপনি দেখুন স্টার্কের ইয়র্কারটা শুধু। এরপর হাত থেকে স্টোকসের ব্যাট ফেলে দেওয়া, লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়াটা দেখুন।
প্রাস কী, কীভাবে প্রাস ক্রিকেট বলের প্রাস হয়ে উঠতে পারে একই সঙ্গে ‘সেক্সি’ ও ভয়ঙ্কর, সেটা বুঝতে স্টার্কের ওই ইয়র্কারটা দেখুন।
লকি ফার্গুসন, জাসপ্রিত বুমরাহ, লাসিথ মালিঙ্গা বা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ইয়র্কারগুলো দেখার আগে-পরে হলেও সেটা দেখুন। এমনকি প্রাস বুঝার দরকার না হলেও দেখুন।
স্টোকসকে স্টার্কের প্রাস শিক্ষা...
কটরেলের স্যালুট, কটরেলকে স্যালুট
২০০৯, কেট উইন্সলেট জিতলেন ‘দ্য রিডার’ এর জন্য অস্কার।
অস্কার জিতলে কী বলবেন, সেটি নাকি তার বয়স আট হওয়ার আগেই বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করতেন উইন্সলেট। নিশ্চিতভাবেই অস্কার পেলে কীভাবে তার হিরো-হিরোইনরা বক্তব্য দেন, সেটা শুনেছিলেন তিনি। একটা শ্যাম্পুর বোতল হাতে থাকতো তার, অস্কারের স্মারক তখন সেটা। অস্কারের উদযাপনের অনুশীলনটা করে রেখেছিলেন এই বৃটিশ অভিনেত্রী।
উইন্সলেটের মতো আপনিও নিশ্চয়ই উদযাপনের অনুশীলন করেছেন ছোটবেলায়। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দৌড় শুরু করে-- যেটা আদতে ছিল আপনার রান-আপ-- এরপর আপনার প্রিয় বোলারের মতো বলটা করে, আবেদন করে বা না করে শুরু করে দিয়েছেন উদযাপন। একেকজন বোলারের উদযাপন কতো আলাদা ছিল বা আছে, কেউ উড়ছেন, কেউ মাটির দিক করে ঘুষি মারছেন!
বিশ্বকাপ এমন উদযাপনকে আরেকটু মনে রাখার মতো মাত্রা দেয়। শেলডন কটরেলের স্যালুটটি যেমন। লেফট-রাইট-লেফটা-রাইট, এরপর স্যালুউউউউট! এরপর দুহাত মেলে পেছনে একটু ঝাঁকি মারা! সঙ্গে এ উদযাপনের পেছনের গল্পটা-- কটরেল স্যালুট দিয়ে সম্মান জানান তার এক সময়ের ডিফেন্সের সতীর্থদের-- আপনাকে আরও আবেগী বানিয়ে দিতে বাধ্য। রাস্তায় দুই পিচ্চি সেটা অনুকরণ করলে তাই আপনার একটা হাসি আসে, একটা অদ্ভুত ভাললাগা কাজ করে।
জনি বেইরস্টোর ওয়ার্নারের মতো করে লাফিয়ে উঠে সেঞ্চুরি উদযাপন, সাইফউদ্দিনের প্রত্যেকবার উইকেট পেয়ে নতুন স্টাইলের কিছু করা বা ইমরান তাহিরের ভোঁ দৌড়, কিংবা গেইল-ব্রাথওয়েটের পুশ-আপ দিয়ে ক্যাচের উদযাপন তাই কটরেলের সে উদযাপনের সঙ্গে দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে।
স্যালুট, কটরেল! আপনি উইন্সলেটের শ্যাম্পুর বোতলটা হয়তো আর কারও হাতে তুলে দিয়েছেন এরই মাঝে।
বৃষ্টিরে বৃষ্টি...
১০ দলের বিশ্বকাপ, উদ্দেশ্য নাকি রোমাঞ্চ বাড়ানো। সব দলের সঙ্গে সবাই খেলবে, হবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা। আড়ালে থেকে হাসলো প্রকৃতি। হয়ত তাতে ভর করে একটু হেসে নিলেন উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড, সিকান্দার রাজা বা রিচি বেরিংটনরা। 'বঞ্চনা'র এক পর্যায়ে তো আপনার মুখে কাষ্ঠ হাসিই ফুটে ওঠে!
ইংল্যান্ডজুড়ে হানা দিল বৃষ্টি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা হয়নি এতদিন, হলো সেটিই-- তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। গ্রুপপর্বে রিজার্ভ ডে নেই কেন, সেই আলোচনাও উঠলো। ভারত-নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তিনটি ম্যাচ ভূমিকা রাখলো দলগুলির পরবর্তী গতিপথ নির্ধারণেও।
রিজার্ভ ডে শুধু নয়, আলোচনায় এলো নেট রান-রেটও। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট সমান হলেও সেমিফাইনালে গেল নিউজিল্যান্ড, সেটাও তারা গেল শীর্ষ তিন দলের সঙ্গে কোনও ম্যাচ না জিতেই। পাকিস্তান নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জিতেও সেমিফাইনালে না গিয়ে গেল বিমানবন্দরে। দারুণ চাপে থেকেও টানা চারটি ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের অসম্ভব আশা টিকিয়ে রাখা পাকিস্তানের কাছে নেট রান-রেট হয়ে উঠলো শেল, যাতে দুমড়ে মুচড়ে গেল বিরানব্বই ও উনিশের মাঝের সৃষ্টি করা অলৌকিক পথটা।
১৯৯২ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অদ্ভুতুড়ে বিদায়ের পর বদলে গিয়েছিল বৃষ্টি নিয়ম। নেট রান-রেট বদলে ফেলার মতো কারণ কি খুঁজে পাওয়া গেল এবার? ওভার টু ইউ, আইসিসি!
মিস লাগবে, মিস?
মিস-- শুনলে কি সবার আগে তামিম ইকবালের কথা মনে হচ্ছে? নাকি মুশফিকুর রহিম? ২০১৫ বিশ্বকাপে ক্রিস ওকসের ক্যাচ ফেলেছিলেন তামিম, তবে রুবেল হোসেন ভুলিয়ে দিয়েছিলেন সেসব। এবার ভোলাতে দিলেন না রোহিত শর্মা, এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে ‘ভাগ্যবান’ ব্যাটসম্যান যিনি। ভারতের সঙ্গে হেরে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের স্বপ্ন মিলিয়ে গেল বাংলাদেশের, যেটি তাদেরকে দেখিয়েছিলেন স্বপ্নময় টুর্নামেন্ট খেলা সাকিব আল হাসান।
তামিমেরও আগে আরেকটি মিস তাড়া করে ফিরতে পারে আপনাকে। কেন উইলিয়ামসনের রান-আউটটা আদতে কীভাবে মিস করলেন মুশফিকুর রহিম? প্রশ্ন কমন পেলেন সবকিছু, কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবেই। দারুণ রোমাঞ্চে পরীক্ষা শেষ করে খাতা জমা দিয়ে বাইরে এসে যখন সিগারেটটা ধরিয়েছেন, আপনার মনে পড়লো-- এই বিশ্ববিদ্যালয়েও আপনি প্রশ্নের নম্বর লিখতে ভুলে গেছেন? এরপর? ভাবতে পারেন? মুশফিকও হয়তো পারছেন না।
বিশ্বকাপে সাকিব ও বাংলাদেশের গল্প এক ফ্রেমে...
ক্রিস গ্যাফানির মিসটা অবশ্য অন্যরকম একটু। সেদিন কী যেন হয়েছিল দুই আম্পায়ারের, যেন ডিআরএসের সঙ্গে লড়াই চলছিল তাদের। অস্ট্রালিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে আম্পায়ার সিদ্ধান্ত দেন, সেটা বদলে যায় ডিআরএসে। ক্রিস গেইল শেষ পর্যন্ত আউট হলেন। তবে পরমুহুর্তেই রিপ্লে দেখালো, আউটের আগের বলটি ছিল বেশ চোখের পড়ার মতো নো, যেটি মিস করে গেছেন গ্যাফানি।
অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এসব মিস (নতুন) কিছু নয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তারা সাজিয়ে বসেছিলেন মিসের পসরা। এজবাস্টনে ফিরে এসেছিল চার বছর আগের ইডেন পার্ক। কলিন ডি গ্র্যান্ডোমে ফিরেছিলেন গ্রান্ট এলিয়ট। কেন উইলিয়ামসনে কেউ ফিরে আসেননি, টাইম-মেশিনে চড়ে অনেকদূর গিয়ে তিনি নিজেই সেই উইলিয়ামসন হয়ে ফিরেছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা এদিন ক্যাচ মিস করলো, উইলিয়ামসনের এজড হয়েছে সেটি বুঝে উঠতে পারাটা মিস করে গেল, রান-আউট মিস করলো। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য অদ্ভুত সব উপায় বের করার জন্য বিখ্যাত প্রোটিয়ারা এবার বিদায় নিশ্চিত করলো সেসব মিসে ভর করেই!
মিস লাগবে, মিস?
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও ফুটবল বিশ্বকাপের মিল কোথায়?
মীরাক্কেলের কোনও পারফর্মারের বিখ্যাত প্রশ্ন- অমুক ও তমুকের মধ্যে মিল কোথায়? এরপর একটা ‘সিলি’ জবাব দেবেন তিনি, যেটা মূলত আপনাকে হাসির খোরাক জোগাবে। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ (ফুটবল, আর কি!) ও ২০১৯ সালের এই বিশ্বকাপ (ক্রিকেট, মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপ নয়) এর মধ্যে মিল কোথায়?
পোকা।
ভলগোগ্রাদে ইংল্যান্ড-তিউনিসিয়া ম্যাচে আক্রমণ করেছিল পোকা, ফুটবলাররা ব্যস্ত ছিলেন পোকানাশক স্প্রে নিতে। সে ভেন্যুর পাশে ছিল নদী, যা ছিল সেসব পোকার আশ্রয়স্থল। ডারহামের রিভারসাইডেও আক্রমণ করলো পোকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচে। এ ভেন্যুর পাশেও নদী, হয়তো এসব পোকাও এলো সেখান থেকেই।
৩২ দলের সঙ্গে ১০ দল, গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের সঙ্গে এই শোয়ের তেমন তুলনা চলে না। তবে দুই বিশ্বকাপকে মিলিয়ে দিল পোকা।
‘সিলি’ শোনাচ্ছে? তাহলে দোষ মীরাক্কেলের।
বেল (বিতর্ক) তুমি কই?
আচ্ছা, বেলের ব্যাপারটা কী হলো? আরে না, গ্যারেথ বেল রিয়াল মাদ্রিদে কী করছেন বা কোথায় যাচ্ছেন, সেটা নয়। জিং বেলের ব্যাপারটা।
বিশ্বকাপ শুরুর দিকে বেশ আলোচনায় এসেছিল জিং বেল, কারণ তার ‘নট-নড়ন-চড়ন’-এর অভ্যাস। প্রথম ১৪ ম্যাচে ৫ বার এমন হয়েছিল, বল স্টাম্পে লেগেছে কিন্তু বেল পড়েনি। সাধারণ বেলের চেয়ে জিং বেল বেশি ভারী কিনা, এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন আচরণ করলে কী হবে-- জিং প্রায় পরিণত হয়েছিল ক্রিকেটের আরেক অদ্ভুতুড়ে বিতর্কে।
প্যাভিলিয়নে জিং বেল কী, কেন- এসব বিশদ আলোচনা করে একটা ফিচারও লেখা হয়েছিল। তবে জিং বেল এরপর থেকে আর গড়বড় করলো না। এমএস ধোনির গ্লাভস বিতর্কের মতো হারিয়ে গেল এটিও।
জিং বেলকে কি বেরসিক বলা যায়?