বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যা কিছু প্রাপ্তি
শুরুটা হয়েছিল অনেক আশা নিয়ে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর সেমিতে ওঠার স্বপ্নটা রঙ্গিনই মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের। তবে সময়ের সাথে সাথে সেই স্বপ্নটা ক্রমেই ধুসর হয়েছে। সেমিতে ওঠা তো হয়ইনি, উল্টো শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে অষ্টম স্থানে থেকেই বিশ্বকাপ শেষ করতে হয়েছে সাকিব-তামিমদের। এই হতাশার মাঝেও বাংলাদেশের প্রাপ্তি কিন্তু কম নয়। সাকিবের অবিশ্বাস্য অলরাউন্ড পারফরম্যান্স কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩০০ এর বেশি রান তাড়া করে জেতা; ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে মাশরাফিদের আছে বেশ কিছু সুখস্মৃতি।
সুপারম্যান সাকিব
তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামার জন্য টিম ম্যানেজমেন্টকে রাজি করিয়েছিলেন সাকিব। বিশ্বকাপে এই পজিশনেই সাকিব হয়ে উঠেছেন ভয়ংকর। আগের তিন বিশ্বকাপ মিলিয়ে যেখানে সাকিবের মোট রান ছিল ৫৩৯, এবার আট ম্যাচেই সেটা ৬০৬! ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি পাঁচটি, সেঞ্চুরি দুটি। সর্বনিম্ন ইনিংসটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১ রানের। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলে সাকিবের রান ১১৪৬। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকার সেরা দশেও ঢুকে গেছেন তিনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানও এখন সাকিব, ভেঙেছেন শচীনের রেকর্ড। শচীন ও ম্যাথু হেইডেনের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ছয়শর বেশি রান তোলেন সাকিব।
বল হাতেও সাকিব নিয়েছেন ১১ উইকেট। সেরা বোলিং আফগানিস্তানের বিপক্ষে, সেদিন ২৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। এক বিশ্বকাপে দশ উইকেট ও পাঁচশ রান করা একমাত্র ক্রিকেটার হলেন সাকিব। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচে জিতেছে, তিনটিতেই ম্যাচসেরা সাকিব।
তিনশোর বেশি রান তাড়া করে জেতা একমাত্র দল
গ্রুপ পর্বে অন্য কোন দল যা করে দেখাতে পারেনি, বাংলাদেশ করেছে সেটাই। একমাত্র দল হিসেবে তিনশো রান তাড়া করে জিতেছেন সাকিবরা। টন্টনে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন মাশরাফি। এভিন লুইস, শেই হোপদের দারুণ ব্যাটিংয়ে ক্যারিবিয়ানরা লক্ষ্য দাঁড় করায় ৩২২ রানের। জবাবে সাকিবের অপরাজিত ১২৪ ও লিটন দাসের অপরাজিত ৯৪ রানের সুবাদে ৫১ বল হাতে রেখেই জয় পায় বাংলাদেশ।
এই বিশ্বকাপে মোট তিনবার তিনশো পেরিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩০ রান করেন সাকিবরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৮২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৩৩ রান করে বাংলাদেশ। এটাই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।
শেষভাগে মোস্তাফিজ ম্যাজিক
বিশ্বকাপের প্রথম ভাগে মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিং মন ভরাতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তিন উইকেট পেলেও পরের দুই ম্যাচে মাত্র এক উইকেট পান তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আবার তিন উইকেট নেন মোস্তাফিজ। পরের দুই ম্যাচে নিয়েছেন তিনটি উইকেট।
মোস্তাফিজকে পুরনো রূপে দেখা যায় ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে। দুই ম্যাচেই তিনি নেন পাঁচ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৫ রানে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট, ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিতে তাঁর খরচ ৫৯ রান। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে শেষবার অস্ট্রেলিয়ার পেসার গ্যারি গিলমোর টানা দুই ম্যাচ পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে এই বিশ্বকাপে মোস্তাফিজের উইকেট ২০টি। সেমিফাইনাল পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলারদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া বোলারও এখন মোস্তাফিজ। এর আগে রেকর্ডটি ছিল আব্দুর রাজ্জাকের(১৩ উইকেট)। এই বিশ্বকাপে ওয়ানডেতে নিজের শততম উইকেটও নিয়েছেন মোস্তাফিজ, সেটা এসেছে ৫৪ ম্যাচে। বাংলাদেশের বোলারদের মাঝে এটাই দ্রুততম, বিশ্বে এটা চতুর্থ দ্রুততম।
প্রাপ্তির নাম সাইফউদ্দিন
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন সাইফউদ্দিন। যে আট ম্যাচে খেলেছেন, তার সাতটিতেই পেয়েছেন উইকেট। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটাতেই শুধু উইকেটশূন্য ছিলেন তিনি। তিন উইকেট পেয়েছেন দুই ম্যাচে, দুই উইকেট নিয়েছেন তিন ম্যাচে। বিশ্বকাপে সাইফউদ্দিনের মোট উইকেট ১৩ টি। সেরা বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজর বিপক্ষে, ৭২ রানে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। ব্যাট হাতেও দেখিয়েছেন ঝলক। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ২৯ রান করার পর ভারতের বিপক্ষে পেয়েছেন দারুণ একটা ফিফটি।