বৃষ্টির আগে ভারতীয় বোলারদের চাপে দমবন্ধ অবস্থা নিউজিল্যান্ডের
১ম সেমিফাইনাল, ওল্ড ট্রাফোর্ড
নিউজিল্যান্ড ২১১/৫*, ৪৬.১ ওভার (টেইলর ৬৭*, উইলিয়ামসন ৬৭, বুমরাহ ১/২৫*, জাদেজা ১/৩৪)
ম্যাচ স্থগিত, খেলা হবে রিজার্ভ ডে-তে
প্রথম সেমিফাইনাল। প্রথম দিন। স্টাম্পস।
ভারত-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ রিপোর্টের স্কোরকার্ডে এই তথ্যটা চাইলেই যোগ করে দেওয়া যায়। বৃষ্টি ম্যানচেস্টারের সেমিফাইনালকে নিয়ে গেছে রিজার্ভ ডে-তে, নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ৪৭তম ওভারের প্রথম বলের পরই যা বন্ধ করে দিয়েছিল খেলা। এর আগে ম্যাচের যতটুকু হয়েছে, তাতে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন ভারতীয় বোলাররা। স্কোরিং শট খেলতে বা রান বের করতে হাপিত্যেশ করেছেন নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা, এখন পর্যন্ত ৫৫.২৩ শতাংশ বল ডটই খেলেছেন তারা। রিজার্ভ ডে-তে সেমিফাইনাল শুরু হবে আজ যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকেই, তবে নতুন দিন রেখেছে শুধুই অনিশ্চয়তা, নিউজিল্যান্ডকে সেখান থেকেই বের করে নিতে হবে আশা।
টসে হেরে ফিল্ডিংয় নেমে ভারত অবশ্য আশা দেখেছে দ্রুতই। যদিও ইনিংস ও ভুবনেশ্বর কুমারের প্রথম বলেই মার্টিন গাপটিলের বিপক্ষে রিভিউ নিয়ে সেটি খুইয়েছিলেন বিরাট কোহলি। তবে রিভিউ হারিয়েও খুব একটা হতাশ হননি তারা, বরং উলটো চাপে পড়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। চতুর্থ ওভারে গিয়ে জাসপ্রিত বুমরাহর অফস্টাম্পের বাইরের গুডলেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে যখন গাপটিল খোঁচা দিয়ে নিজের দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ যাত্রা অব্যাহত রাখলেন, ততক্ষণে ভারতের ব্রেকথ্রু পাওয়া হয়ে গিয়েছিল যেন সময়ের ব্যাপার।
বড় বড় টার্নে নিউজিল্যান্ডকে চমকে দিয়েছিলেন জাদেজা/আইসিসি
কেন উইলিয়ামসন আরেকবার ‘ভার্চুয়াল’ ওপেনার হিসেবে নেমে আগলে রেখেছিলেন নিউজিল্যান্ডকে, তবে ডট বলের চাপে পড়ে হওয়া ক্ষতটা সেরে ওঠেনি দ্রুতই। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে নিউজিল্যান্ড তুলেছে মাত্র ২৭ রান, ২০১৪ সালের পর থেকে যা তাদের সর্বনিম্ন। হেনরি নিকোলসের সর্বনাশ হয়েছে অফস্টাম্প থেকে টার্ন করে ভেতরের দিকে ঢোকা রবীন্দ্র জাদেজার বলে, ব্যাট-প্যাডে ফাঁক রেখে নিকোলস সেটিকে বানিয়ে ফেলেছিলেন প্রায় আনপ্লেয়েবল।
ওল্ড ট্রাফোর্ডের জীবন্ত উইকেট দেখে ব্যাটিং নিয়েছিলেন উইলিয়ামসন, সে উইকেটই তাদের জন্য হয়ে গেছে যেন দুমুখো তলোয়ার। পেসাররা যেমন সুইং ও সিম মুভমেন্ট পেয়েছেন, ভারতীয় স্পিনার, বিশেষ করে জাদেজা পেয়েছেন বড় বড় টার্ন, সঙ্গে বাউন্স। টানা ৮ ওভার তাকে দিয়ে করিয়েছেন কোহলি, সে স্পেলে তিনি গুণেছিলেন মাত্র ২৫ রান।
মাঝে হারদিক পান্ডিয়ার চোট পেয়ে বাইরে চলে যাওয়া ভারতকে একটু চিন্তায় ফেলেছিল অবশ্য, তবে কোহলি নিজে বা অন্য কোনো পার্টটাইমারকে আনার আগেই ফিরে এসেছেন তিনি। নিউজিল্যান্ড ইনিংস থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বাউন্ডারি, সেটার নিয়মিত দেখা অবশ্য পাননিও তারা। ১৪ থেকে ২৮তম ওভারের আগ পর্যন্ত এমন একটা খরা গেছে, চাহালের বলে মেরে সে খরা কাটিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। টেইলরের সঙ্গে তার জুটিই ঝুলিয়ে রেখেছিল নিউজিল্যান্ডকে।
বিষণ্ণ ওল্ড ট্রাফোর্ড/এএফপি
উইলিয়ামসন ফিফটি পেয়েছেন, তবে তার ইনিংস ছিল দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যাওয়ার মতোই। পান্ডিয়া এসে স্লো-বাউন্সারে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন টেইলর-উইলিয়ামসনকে, টেইলরের একটা আউটসাইড-এজে যাওয়া ক্যাচ তো গ্লাভসে ধরেও রাখতে পারেননি এমএস ধোনি। এরপর জাদেজা ও বুমরাহকে ফিরিয়ে দ্বিমুখী আক্রমণ করেছে ভারত, তারা উইকেট না পেলেও তাদের তৈরি করা চাপের সুযোগে চাহাল ফিরিয়েছেন উইলিয়ামসনকে। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক চড়াও হতে গিয়ে আউটসাইড-এজে ক্যাচ দিয়েছেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে।
টম ল্যাথামের আগে জিমি নিশামকে পাঠিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, তবে সুবিধা করতে পারেননি তিনিও। পান্ডিয়ার ফুললেংথের বলে জোরের ওপর ব্যাট চালিয়ে শুধু ক্যাচই দিয়েছেন লেগসাইডে। কলিন ডি গ্র্যান্ডোম এসেছেন এরপর, টেইলরের সঙ্গে মিলে চাহালের এক ওভারে ১৮ রানও তুলেছিলেন। ভুবনেশ্বরের শর্ট বলে আপার কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ধোনির হাতে, আরেকবার সব ভার গিয়ে পড়েছে সে ওভারেই এলবিডব্লিউয়ের হাত থেকে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া টেইলরের ওপর।
৪৬তম ওভারে আবার ফিরেছিলেন বুমরাহ, তার কাছ থেকে টেইলররা তুলতে পেরছিলেন ৭ রান। মোমেন্টামটা একটু ঝুঁকেছিল নিউজিল্যান্ডের দিকে, বাগড়া বাঁধিয়েছে বৃষ্টি। এরপর বেশ কিছুক্ষণ চলেছে ডিএল পদ্ধতিতে ভারতের পরিবর্তিত লক্ষ্য নিয়ে গবেষণা। শেষ পর্যন্ত সেসব কাজে আসেনি।
খেলা স্থগিত হওয়ার পর সেটা কার জন্য কেমন হলো, তা নিয়েই যদি গবেষণা করা যায় এখন। আর সম্পূরক তথ্য হিসেবে বলা যায়, রিজার্ভ ডে-তেও খেলা শেষ হতে না পারলে ফাইনালে চলে যাবে গ্রুপপর্বে পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকা ভারতই।