নেট সেশন : বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সেই অস্ট্রেলিয়া, এই ইংল্যান্ড
বিশ্বকাপ, ২য় সেমিফাইনাল
অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড
কবে, কখন
১১ জুলাই, ২০১৯
বাংলাদেশ সময় ১৫৩০ (বিকাল ৩.৩০)
অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ। সেমিফাইনাল। এজবাস্টন।
যথেষ্ট রোমাঞ্চ জাগছে না এখনও?
হুট করেই সেদিন টুইটারে সরগরম হয়ে উঠলেন ইংলিশরা। চ্যানেল ফোরে ২০০৫ অ্যাশেজের একটা অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছে এক ঘন্টার সম্ভবত। সে অনুষ্ঠান নস্টালজিক করে তুলেছে তাদের, সে অ্যাশেজ ইংলিশ ক্রিকেটে কী ভূমিকা পালন করেছে সে আলোচনায় আরেকবার সরব হয়েছিলেন তারা। সেই এজবাস্টনের এই ম্যাচটা অ্যাশেজের নয়, তবে ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে এর তাৎপর্যটাও হয়তো খুব কম নয়। হয়তো সে তাৎপর্য বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে আরও অনেকদিন, তবে ক্রিকেট থেকে প্রায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়া একটা প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনার দারুণ মাইলফলক হতে পারে এ ম্যাচ।
অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়, তবে বল-টেম্পারিং কেলেঙ্কারির পর টালমাটাল দলটা প্রথম বড় পরীক্ষা এদিন। আর অস্ট্রেলিয়া বলেই সেসব ক্ষত ভালভাবে সারাতে প্রয়োজন হয়ত একটা বিশ্বকাপ। তা বিশ্বকাপ তাদের কাছে নতুন নয়, ইংল্যান্ডের কাছে যেমন অচেনা। দুই দলেরই বোধহয় গত চার বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে এটি খুব পরিচিত এক মঞ্চ, যেটি পেরিয়ে আরেকবার ষষ্ঠ স্বর্গে অবতরণের সুযোগ। ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে হয়তো তাৎপর্যটা আরও বেশি। বিস্মৃত সেমিফাইনালের স্মৃতি ফিরে এসেছে, বিস্মৃত ফাইনাল কি আসবে?
গ্রুপপর্বের শেষটা দুই দলের হয়েছে দুই রকম। প্রায় বাঁচা-মরার দুই ম্যাচ জিতে এসেছে ইংল্যান্ড, আরেক সেমিফাইনালের দুই দল ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া সেখানে শেষ ম্যাচটা হেরে গেছে অনেক আগেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। অবশ্য গ্রুপপর্বের মুখোমুখি লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আপাতত চোটের সমস্যা নেই ইংল্যান্ডের, তবে অস্ট্রেলিয়াকে বেশ জোরেসোরেই আঘাত করেছে তা। দুজনের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে সেমিফাইনালের আগেই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাই দেখা যেতে পারে বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামা দুজনকে।
খেলার স্টাইলে অবশ্য দুই দলের পার্থক্যটা সুস্পষ্ট। ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে যেমন ঢালাও আক্রমণের নীতিতে বিশ্বাসী, অস্ট্রেলিয়া খেলছে উইকেট ধরে রেখে পরে গিয়ে স্কোর বড় করার পুরোনো নীতিতেই। দুই দলই দুই স্টাইলে সমর্থন পাচ্ছে তাদের ব্যাটসম্যানদের কাছে। ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চের বিপরীতে জেসন রয় ও জনি বেইরস্টো-- লড়াইটা জমজমাট হওয়ারই কথা।
সঙ্গে মিচেল স্টার্ক, জফরা আর্চার, মার্ক উডের গতি আছে। দুই দলের স্পিন-আক্রমণ অবশ্য একটু ভিন্ন, আদিল রশিদ ইংল্যান্ডের বেশ অনেকদিনের পরীক্ষিত স্পিনার, ন্যাথান লায়নকে সেখানে অস্ট্রেলিয়া নামিয়েছে অ্যাডাম জ্যাম্পার অফ-ফর্মের কারণেই।
হয়তো অস্ট্রেলিয়ার চোটের সমস্যা আছে, তবে বিশ্বকাপে তাদেরকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়ার কি এতো সহজ! বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যে এর আগে কখনোই হারেনি তারা। প্রতিপক্ষ ‘নতুন’ ইংল্যান্ড, যারা গত কয়েক বছরে ওয়ানডের একটা নতুন ব্র্যান্ড তৈরি করেছে, এ বিশ্বকাপে সে ব্র্যান্ড একইসঙ্গে আবার সমালোচিত ও প্রশংসিতও হয়েছে।
এজবাস্টনে শেষ হাসি কার- সেই চিরায়ত বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়া, নাকি ওই নতুন ব্র্যান্ডের ইংল্যান্ডের?
রঙ্গমঞ্চ
এজবাস্টন, বার্মিংহাম
১৯৯৯। ল্যান্স ক্লুজনার বা অ্যালান ডোনাল্ডের সেই ক্ষ্যাপাটে দৌড়। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ম্যাচ। ২০ বছর পর আবার যখন বিশ্বকাপে ফিরেছে ইংল্যান্ড, আবারও সেখানে আরেকটি সেমিফাইনাল। আবারও আছে অস্ট্রেলিয়া। তবে এবার তাদের বিপক্ষে এখানকার সাম্প্রতিক ইতিহাস। ২০১৪ সালের পর এই ভেন্যুতে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ হারেনি ইংল্যান্ড।
নতুন পিচে হবে খেলা, থাকতে পারে ঘাসের ছোঁয়া। আবহাওয়া বাগড়া বাঁধাতে পারে এ ম্যাচেও, এদিন বার্মিংহামে পূর্বাভাস আছে বৃষ্টির। তবে রিজার্ভ-ডেতে গিয়েও দুই দিনের ওয়ানডে যে হতে পারে রোমাঞ্চকর, তার প্রমাণ তো দিয়েছেই নিউজিল্যান্ড ও ভারত।
যাদের ওপর চোখ
জস বাটলার
ইংল্যান্ডের নতুন দিনের সবচেয়ে আলোচিত মুখ তিনি। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর দিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারা ম্যাচে সেঞ্চুরি ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটির পর সে অর্থে জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি। সেমিফাইনালের মতো মঞ্চে পারবেন তাকে নিয়ে ওঠা উচ্চাশার প্রতিদান দিতে?
অ্যালেক্স ক্যারি
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সবচেয়ে বড় ট্রাম্পকার্ড যেন তিনি। পিটার হ্যান্ডসকমকে বাদ দিয়ে তাকে দলে নেওয়াটা বিস্ময় হয়ে এসেছিল, তবে দারুণ সব ইনিংস খেলে সে বিস্ময়কে দূরে ঠেলেছেন তিনি। বিশ্বকাপে নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ক্যারি করবেন কেমন?
সম্ভাব্য একাদশ
উসমান খাওয়াজার জায়গায় পিটার হ্যান্ডসকম খেলছেন, সেটা নিশ্চিত করেছেন কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। আভাস দিয়েছেন ম্যাথু ওয়েডের খেলা ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বাদ দেওয়ার মতো বড় সিদ্ধান্তেরও। মার্কাস স্টোয়নিস ম্যাচের আগেই ফিট হবেন বলেও আশা তাদের।
অস্ট্রেলিয়া- অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, পিটার হ্যান্ডসকম, মার্কাস স্টোয়নিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল/ম্যাথু ওয়েড, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটকিপার), প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, নাথান লায়ন, জেসন বেরেনডর্ফ
ইংল্যান্ড একাদশ থাকতে পারে অপরিবর্তিতই। লিয়াম প্লাঙ্কেটের জায়গায় মইন আলির ফেরাটাও অনিশ্চিত, প্লাঙ্কেট যেভাবে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন সে কারণে।
ইংল্যান্ড- জেসন রয়, জনি বেইরস্টো, জো রুট, অইন মরগান (অধিনায়ক), বেন স্টোকস, জস বাটলার (উইকেটকিপার), ক্রিস ওকস, লিয়াম প্লাঙ্কেট, আদিল রশিদ, জফরা আর্চার, মার্ক উড
সংখ্যার খেলা
- আর ২টি ডিসমিসাল হলেই এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালের রেকর্ডে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পাশে নাম লেখাবেন ক্যারি।
- আর ২টি উইকেট হলে গ্লেন ম্যাকগ্রার পর দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট হবে স্টার্কের।
- ৩২ বছর পর বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। শেষ ১৯৮৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
- ৯টি সেঞ্চুরির মাঝে ৩টিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছেন জেসন রয়।
- ১৭টি উইকেট হয়ে গেছে আর্চারের, এরই মাঝে ইয়ান বোথামকে কাটিয়ে এক বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট হয়ে গেছে তার।
আমরা আন্ডারডগ।
ইংল্যান্ড ম্যাচের চাপ নিতে চাননি ন্যাথান লায়ন।
এখন পর্যন্ত আমার খেলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ? হ্যাঁ।
প্রস্তুত বেন স্টোকস