অইন মরগান : ইংল্যান্ডের 'একগুঁয়ে, কুল ও আইরিশ' অধিনায়ক
‘দিয়ার আর রিচ টিমস। অ্যান্ড দিয়ার আর পুওর টিমস। অ্যান্ড দিয়ারস ফিফটি ফিট অফ ক্র্যাপ। দেন দিয়ারস আস’।
-মানিবল
আছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ রেকর্ডে ‘ধনী’ দল- অস্ট্রেলিয়া। আছে ‘গরীব’ দল- আফগানিস্তান। তবে আফগানিস্তানের ক্রিকেটের গল্পটা রোমাঞ্চকর। রূপকথার মতো শোনায় যেটা। এরপর পঞ্চাশ ফুটের একটা শূন্যস্থান। এরপর ওয়ানডে ক্রিকেটে ইংল্যান্ড।
১৯৯২ সালের পর থেকে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ওয়ানডে ক্রিকেট ছিল প্রায় এমনই। ২০১২ সালে একবার ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছিল তারা, হয়তো অনেকেরই মনে নেই সেটা। ইংল্যান্ড হয়তো দারুণ ক্রিকেট খেলেছিল, তবে সেটা হারিয়ে গেছে সময়ের গভীরতায়।
গ্রায়েম সোয়ানদেরকে একবার বলা হয়েছিল, ব্যাটিংয়ে ২৩৯ রান করলেই ৭২ শতাংশ ম্যাচ জেতে ইংল্যান্ড। ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে প্রায় সেরকমই একটা স্কোর করল তারা, ২২৯। তবে শ্রীলঙ্কা সেটি পেরিয়ে গেল ৩৯.৩ ওভারেই।
পরের বিশ্বকাপের ঠিক আগ দিয়ে অধিনায়কত্বে পরিবর্তন এলো ইংল্যান্ডের। পরীক্ষিত অ্যালেস্টার কুককে বাদ দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হল অইন মরগানকে। যেন ডুবন্ত ইংল্যান্ড অপেক্ষায় কোনও মিরাকলের, মরগান সে জাহাজের নাবিক। মিরাকল এলো না। ইংল্যান্ডের জাহাজ গিয়ে ভিড়লো ওয়েলিংটনে। নিউজিল্যান্ড ১২৪ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে গেল ১২.২ ওভারে। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম করলেন ২৫ বলে ৭৭। ম্যাককালাম মরগানের খুব ভাল বন্ধু। নেতৃত্বের অনেক কিছু মরগান শিখেছেন তার কাছ থেকে। মরগানের বিয়েতে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছিলেন তিনি।
সেবারই এলো অ্যাডিলেড ওভাল। বাংলাদেশের কাছে স্তব্ধ হয়ে বিদায় নিল ইংল্যান্ড। আনুষ্ঠানিকভাবে ডুবে গেল তারা। পরিবর্তন দরকার, মরগান বুঝে গেলেন। তবে সে পরিবর্তনের তোপে তিনিও বাদ পড়বেন কিনা, নিশ্চিত ছিলেন না।
মরগান টিকে গেলেন। পরিবর্তন এলো। বোর্ডে ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট হয়ে এলেন স্ট্রাউস। এলেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ ট্রেভর বেইলিস। স্ট্রাউস তার সাবেক সতীর্থ মরগানকে স্বাধীনতা দিলেন ক্রিকেটার বাছাইয়ে। তৈরি হলো ওয়ানডে ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের ব্লুপ্রিন্ট।
স্ট্রোকমেকার ব্যাটসম্যান দরকার। ফাস্ট বোলার দরকার। লেগস্পিনার দরকার। বাঁহাতি পেসার দরকার। মরগানের টু-ডু লিস্ট বাড়তে থাকলো। বিশ্বকাপের পর প্রথম ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। সেই নিউজিল্যান্ড, যারা ২০১৫ বিশ্বকাপে ম্যাককালামের অধীনে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করেছিল।
ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো পেরিয়ে গেল ৪০০ রানের বাধা। মরগান যা পরিকল্পনা করেছেন, যেভাবে এগিয়েছেন, সেসব যে কাজে দেবে, সেটার প্রমাণ পেলেন। মরগানের একগুঁয়েমি ভাবটা বাড়লো হয়তো একটু।
এলো অ্যাডিলেড ওভাল, এলো বাংলাদেশ
****
মরগান একগুঁয়ে।
নিজে যা ভাবেন, চিন্তা করেন, করতে চান সেটাই। আত্মবিশ্বাস থাকে সেসবের পেছনে।
একবার ডেনমার্কে খেলতে গিয়েছিল আয়ারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দল। মরগান কোচকে বললেন, স্পিনার বোলিং করতে আসলে তার প্রথম ছয় বলের একটিকে তিনি মারবেন বোলারের মাথার ওপর দিয়ে। কোচ আঁতকে উঠলেন, ‘অইন, উইকেট কেমন সেটা তো দেখতে হবে আগে!’ ‘নাহ, ছয়ই হবে। কোন বলে, সেটা জানি না। তবে লং-অন দিয়ে ছয় হবে।’
সেটাই হয়েছিল।
একবার নেদারল্যান্ডসে বয়সভিত্তিক দলের খেলায় একটা ভ্যানে করে হাজির মরগান পরিবার। অইনের ভাই-বোন, বাবা-মা। তারা সেখানে রান্না করতেন মরগানের জন্য। অনুশীলন শেষে মরগান খেতেন সেটাই। কোচ আপত্তি করেছিলেন, তবে মরগান সেটাতে কোনও সমস্যা দেখতেন না। সমস্যা দেখতেন না তার সতীর্থরাও।
আয়ারল্যান্ডে মরগানের খুব ভাল বন্ধু গ্যারি উইলসন। তার মতে, মরগান যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাতে তাদের কোনও সমস্যা ছিল না। যেটাই করুন না কেন, ফিরে এসে সেঞ্চুরি করলে তাদের আপত্তি করার কথাও নয়!
উইলসনরা সবসময়ই জানতেন, মরগান থাকবেন না আয়ারল্যাডে। তার ইচ্ছা, স্বপ্ন, তার খেলার ধরন- সবকিছু যেন ইঙ্গিত করছিল একটা দিকেই- ইংল্যান্ড। ২০০৭ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড দলে পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন দুজন- এড জয়েস ও মরগান। আগের বছর আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৯ বছর বয়সী মরগান তার অভিষেক ইনিংসে রান-আউট হয়েছিলেন ৯৯ রানে। ৯ নম্বর ব্যাটসম্যানকে সঙ্গে নিয়ে আয়ারল্যান্ডকে দিয়েছিলেন জেতার মতো স্কোর। মরগান সে ইনিংসে আউটের পর কেঁদেছিলেন। এখন সে ফুটেজ দেখলে হাসেন।
১৯ বছর বয়সেও মরগানই ছিলেন আয়ারল্যান্ডের সেরা ক্রিকেটার, যিনি কোচকেও ‘শেখাতেন’। আইরিশ ক্রিকেটের উত্থান ছুঁয়ে গিয়েছিল মরগানকে, তবে তিনি খেলতে চাইতেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের পেশাদার ক্রিকেট। আয়ারল্যান্ড তাকে সে সুযোগ করে দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না তখন।
****
মরগান চিরায়ত আইরিশ ক্যাথলিক পরিবারের সন্তান।
১৯০১ থেকে ১৯৭১- প্রায় ৭০ বছর আয়ারল্যান্ডে নিষিদ্ধ ছিল ক্রিকেট। আপনি গ্যেলিক ফুটবল খেলতে পারেন, হারলিংয়ে অংশ নিতে পারেন, ক্রিকেট আপনার খেলা নয় সেখানে। নিষেধাজ্ঞার তোপে ক্রিকেট টিকে রইল ছায়ার মতো, কিছু পরিবার যেন গোপনে চালিয়ে যেতো এই চর্চা। আয়ারল্যান্ডে ক্রিকেট হাসির খোরাক, অথবা নিষিদ্ধ কোনও কিছু তখন। এড জয়েসের ব্যাট চুরি যেতো তাই। জন মুনি ট্রেনে করে অনুশীলনে যাওয়ার সময় লুকিয়ে রাখতেন ব্যাট। গোটা আয়ারল্যান্ডে শুধু একটা ‘গ্রাম’-এ ক্রিকেট টিকে ছিল ক্রিকেটের মতো করেই। মালাহাইড। যেখানে ক্রিকেট ছিল জনগণের খেলা। সেই মালাহাইডেই ছিল ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি স্কুল, সিইউএস, সেটার এক ট্রায়ালে মরগানকে নিয়ে গেলেন তার বাবা, বেশ পরিপাটি করে।
মরগানের ক্রিকেটটা রক্তে আছে বলা যায়। তার প্রপিতামহ ইংল্যান্ড থেকে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্রিকেট-প্রেম। সেখান থেকে পারিবারিক সূত্রে মরগান পরিবারে চেপে বসেছিল ক্রিকেট ভূত। তাদের খেলার জায়গা বলতে তখন বাড়ির পাশে এক জায়গা। কাজ থেকে ফিরে বাবাও যোগ দিতেন অইনদের সঙ্গে।
মরগান সেই বছর পাঁচেক বয়স থেকেই যেন এগিয়ে ছিলেন অন্য সবার চেয়ে। অনূর্ধ্ব-১৩ দলের সেই ট্রায়ালের পর ১১ বছর বয়সী মরগানকে স্কলারশিপের অফার পর্যন্ত দিলেন সিইউএসের প্রিন্সিপাল, অথচ তেমন কোনও পদ্ধতি তখনও চালু ছিল না সেখানে। এমন একটা স্কুলই খুঁজছিলেন মরগানের বাবা-মা, যেখানে পড়াশুনার সঙ্গে ক্রিকেটের মতো খেলাকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। মরগান সেই সুযোগটা পেলেন।
আয়ারল্যান্ডে গিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করছেন আইরিশ মরগান
মালাহাইডে শুধু নিজের খেলা নয়, মরগান সুযোগ পেলেন অন্যদের খেলা দেখার সুযোগও। আয়ারল্যান্ডে ফ্রি-টু-এয়ারে তখন ক্রিকেট নেই বললেই চলে, টেলিভিশনে ক্রিকেট মেলে কালেভদ্রে। বেড়ে উঠার একটা ধাপ তাই সিইউএস করে দিল মরগানকে। স্কুলে একটা ছুটি পেতেন মরগান, যে সময়টা আবার মিলে যেতো ইংল্যান্ডের সঙ্গে। লন্ডনের ডালউইচ কলেজে মরগান খেলতে গেলেন সে সুযোগেই। সেখানে খুব একটা ভাল করেছিলেন বলে মনে করেন না তিনি, তবে পরের মৌসুমেই সুযোগ পেয়ে গেলেন মিডলসেক্সের দ্বিতীয় একাদশে।
মরগান ইংলিশদের ক্রিকেটই খেলতেন। এবার ঢুকে পড়লেন ইংলিশ ক্রিকেটে। মিডলসেক্সে থাকতেই তার ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে, তবে সে দলে পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন শুধু তিনি ও জয়েস। মরগান সবসময়ই পেশাদার, সিরিয়াস ক্রিকেট খেলতে চাইতেন, যেখানে কেউ ক্রিকেট খেলছে বলে অন্যরা হাসাহাসি করবে না।
২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয়ে গেল তার। এর আগে জয়েসও ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছিলেন, আবার ফিরেও গিয়েছিলেন। মরগানের পর বয়েড র্যাঙ্কিন খেলেছিলেন, তাকেও ফিরে যেতে হয়েছে। মরগান টেস্ট খেলতে চেয়েছিলেন। ২০১২ সালে সে ক্যারিয়ার থমকে গেছে তার। তবে মরগানকে ফিরতে হয়নি এখনও। মরগান হয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক।
আয়ারল্যান্ডে তাকে নিয়ে কথা হয়েছে। ইংল্যান্ডে তাকে নিয়ে কথা হয়েছে। মরগান সেসব নিয়ে ভাবেননি। যারা তার কাছের মানুষ, তারা জানতেনই, সুযোগ পেলে তিনি ইংল্যান্ডে আসবেন। বাকিদের কথা তিনি চিন্তা করতে চান না।
****
মরগান 'কুল'।
তার চোখেমুখে চাপের ছাপ দেখবেন না আপনি সেভাবে। খুব মজার কথা বলে এক চিলতে একটু হাসি ফুটবে মুখে। প্রশ্নের জবাব কাটা কাটা দেবেন, আবার রসবোধও থাকবে। তার অধিনায়কত্বে খেলা ক্রিকেটাররা মনে করেন সেটিই, মরগান অধিনায়ক হিসেবে কুল। ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ থেকে শুরু করে মইন আলি বা অন্যরা তাই মনে করেন- এমন অধিনায়কের জন্য করা যায় যে কোনও কিছুই।
মরগান নিজেও কুল শব্দটা ব্যবহার করেন। সেমিফাইনালের পর সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকবার ফিরে এলো ওই কুল শব্দটা। ক্রিস ওকস কুল। ফাইনাল খেলা কুল। ফ্রি-টু-এয়ারে সে ফাইনাল দেখানো হবে, সেটা কুল।
২০০৩ সালে ডারবানের কিংসমিডে শচীন টেন্ডুলকারের একটি ছয় হয়তো এমনই কুল লেগেছিল মরগানের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ সেদিন ভারতে। মরগান তখন সিইউএসের একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকায়। খেলাটা মাঠে বসে দেখেছিলেন। সে বিশ্বকাপ মনে গেঁথে আছে তার। প্রিয় শটের কথা বললে মরগান বলেন, যে কোনও শট, যেটায় ছয় হয়। ১৬ বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপে মরগান ভেঙে দিলেন এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছয়ের রেকর্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ইংল্যান্ড তৈরি করে ফেলেছে ওয়ানডের একটা নতুন ব্র্যান্ড। সে ব্র্যান্ডটা অবশ্য বেশ ‘হট’।
যা কিছুই হোক, তারা যেসব কাজ করে এসেছেন, যে প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে এসেছেন- সেসবে আটকে থাকায় এই ইংল্যান্ডের মূলমন্ত্র। উপযুক্ত পিচ, উপযুক্ত সিম বোলার, স্পিনার, স্ট্রোকমেকার মিলিয়ে ইংল্যান্ড হয়ে উঠলো ওয়ানডের হট-ডগ। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিল সেমিফাইনাল থেকে। তবে সেবার একটা ভুল করে ফেলেছিলেন তারা। সেমিফাইনাল বলে ফ্রেশ পিচ দেওয়া হবে ভেবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, তবে খেলা হয়েছিল ব্যবহৃত উইকেটে। মরগান তবুও বিশ্বাস হারাননি। প্রথম চ্যালেঞ্জটা উৎরে যেতে পারেননি, তবে মরগান কুল থেকেছিলেন।
এ বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর উঠেছিল সমালোচনা। আরেকবার সেই পঞ্চাশ ফুটের গর্তের দিকে ফিরে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। তবে মরগান বা ইংল্যান্ড কুল থেকেছে। ভার্চুয়াল নক-আউট বনে যাওয়া ম্যাচে তারা ধরে রেখেছে স্নায়ু। ভারত, নিউজিল্যান্ডের পর সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া-বাধা টপকে গেছে তারা। ১৯৯২ সালের পর এই তিন দলের কাউকে বিশ্বকাপে এর আগে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড।
বলছেন মরগান, শুনছেন সতীর্থরা
মরগান নিজের অধিনায়কত্ব ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন হলি-আর্টিজান আক্রমণের পর বাংলাদেশ সফরে না এসে। ইসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এ সফরে কেউ আসতে না চাইলে বাধা দেবে না তারা। মরগান এলেন না। এলেন না অ্যালেক্স হেলস। অধিনায়ক হিসেবে মরগান আসতে রাজি হলে অন্যরাও প্রভাবিত হবেন, সেটা তিনি চান না।
বিশ্বকাপের আগেও স্কোয়াড নিয়ে ঝুঁকি নিয়েছেন।
অ্যালেক্স হেলসকে নিয়ে খবর বেরুলো, বিনোদনদায়ী ড্রাগ নেওয়ার দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন তিনি। তবে এ প্রক্রিয়াটাই এমন, যেটার খবর বাইরে আসার কথা নয়। এলো। বিশ্বকাপ শুরুর আগে হেলসের নিষেধাজ্ঞাও শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে মরগান কোচ ও অন্যান্য ক্রিকেটারদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন, এ দলের যে সংস্কৃতি, পদ্ধতি, হেলসের কাজ সেটার সঙ্গে যায় না। ওপেনিংয়ে রয়-বেইরস্টোর পর ব্যাক-আপ হিসেবে ছিলেন হেলস, তবে ইংল্যান্ডের এ স্কোয়াডে ব্যাক-আপ ক্রিকেটাররাও একটা বড় শক্তি। রয়ের চোট পরে হয়তো টের পাইয়ে দিয়েছে হেলসের অনুপস্থিতিই। তবে মরগান এই ‘স্যাক্রিফাইস’ করতে রাজি ছিলেন।
বিশ্বকাপের আগে জফরা আর্চারকে নিয়েও উঠে গেল প্রশ্ন। সবাই জানে, তিনি হট-কেক। তার মাঝে আছে অন্যরকমের কিছু। তবে সেজন্য বাদ দিতে হবে এমন কাউকে, যিনি মোটামুটি পরীক্ষিত। শেষ পর্যন্ত নেওয়া হলো আর্চারকে। বাদ পড়লেন ডেভিড উইলি।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর পরীক্ষিত বেশ কয়েকজনকে বাদ দিয়েছিল ইংল্যান্ড। মরগান ঝুঁকি নিতে আপত্তি করেন না তাই। এরপর আর্চার হয়ে গেলেন এক বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বোলার।
মরগানের কাজ-কারবার কুল, নাকি?
****
ডমিনিকা। জিম্বাবুয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা। গায়ানা। কেনিয়া। হংকং। বার্বাডোজ। দক্ষিণ আফ্রিকা।
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্কোয়াডের আটজন ক্রিকেটারের জন্মস্থান। ভাবছেন, ডমিনিকা, কেনিয়া বা হংকং কোথা থেকে এলো। এটা ১৯৯২ সালের ইংল্যান্ড স্কোয়াড। সেবার অধিনায়ক ছিলেন গ্রাহাম গুচ। সে স্কোয়াডের অনেকেই মনে করেন, ফাইনালে আম্পায়ারের কিছু সিদ্ধান্ত তাদের পক্ষে এলে বিশ্বকাপটা জিততে পারতেন তারাই। ডেরেক প্রিঙ্গলের বলে দুইবার জাভেদ মিঁয়াদাদের বিপক্ষে করা এলবিডব্লিউর আবেদন নাকচ করে দিয়েছিলেন আম্পায়ার স্টিভ বাকনর। ওয়াসিম আকরামের বলে কট-বিহাইন্ড হয়েছিলেন ইয়ান বোথাম, এখনও বোথাম বল সেদিন তার ব্যাটে লেগেছিল বলে মানেন না। মিঁয়াদাদ ম্যাচের পর প্রিঙ্গলকে নিজের পায়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, “আল্লাহ আজ আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছিলেন।”
১৯৯২ থেকে ২০১৯- ২৭ বছর।
আরেকবার ফাইনালের অপেক্ষা ফুরিয়েছে ইংল্যান্ডের। তাদের একটা প্রজন্ম সরে গেছে ক্রিকেট থেকে, টেলিভিশনে ‘পে-পার-ভিউ’ পদ্ধতির চাপ। একটা ট্রফি আবার আনতে পারে জোয়ার। এর আগেই ফাইনাল দেখানো হবে ‘ফ্রি-টু-এয়ার’-এ। যে মরগান ছোটবেলায় টিভিতে ক্রিকেট দেখতে পারতেন না ঠিকঠাক, সেই মরগানের দলই সে সুযোগটা করে দিচ্ছে।
সেই ‘আইরিশ’ মরগান, যিনি খেলতে চেয়েছিলেন একটা ‘ইংলিশ’ খেলা। ইংল্যান্ড এখন তার অধীনে খেলে একটা নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট। এ স্কোয়াডেরও পাঁচজন ক্রিকেটারের জন্ম ইংল্যান্ডের বাইরে। এবং তাদের অধিনায়ক একজন ‘আইরিশ’। ইংল্যান্ড মরগানের 'হোম-গ্রাউন্ড' লর্ডসে ফাইনাল জিতলে এতদিন ধরে দারুণ সব পরিকল্পনা ও সেসব বাস্তবায়ন করতে যে কঠোর পরিশ্রম করেছে, তার পুরষ্কার পাবেন মরগান ও তার দল। আর না জিতলে তারা জানবেন, কাজটা ঠিকঠাক করতে পারেননি তারা।
হয়তো মরগান আবার লেগে পড়বেন নতুন কোনো পরিকল্পনায়।
তিনি ইংল্যান্ডের আইরিশ অধিনায়ক। তবে তাদের নেতা। তিনি একগুঁয়ে। তিনি পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে বিশ্বাসী। তিনি কুল।