লায়ন-কামিন্সে এজবাস্টন দুর্গ জয় অস্ট্রেলিয়ার
অস্ট্রেলিয়া ২৮৪ ও ৪৮৭/৭
ইংল্যান্ড ৩৭৪ ও ১৪৬
ফলঃ অস্ট্রেলিয়া ২৫১ রানে জয়ী
চতুর্থ দিন শেষে এজবাস্টনে দুইটা ফলই হতে পারত। ড্র বা অস্ট্রেলিয়ার জয়। শেষ দিনের লাঞ্চের পর প্রথম সম্ভাবনাও অনেকটা শেষ হয়ে গেল। আর পরের সম্ভাবনার জন্য চা বিরতি পর্যন্তও অপেক্ষা করা লাগল না। নাথান লায়ন আর প্যাট কামিন্স মিলেই শেষ করে দিলেন ইংলিশদের। ১৮ বছর পর এজবাস্টনে কোনো টেস্ট জিতল অস্ট্রেলিয়া, ভেঙে পড়ল এতোদিন ধরে টিকে থাকা ইংলিশদের দুর্গ।
স্টিভ স্মিথ আর ম্যাথু ওয়েড যদি আগের দিনের একিলিস আর ওডিসিয়াস হন, আজ সেই দুজনের ভূমিকা অবশ্যই পালন করেছেন লায়ন আর কামিন্স। শেষ দিনে একদিক থেকে থেকে ব্যাক অব দ্য লেংথে বল করে গেছেন কামিন্স, ইংলিশরা সেই শর্ট বল সামলাতে পারেনি। আর লায়ন পেয়েছেন টার্ন আর বাউন্স, তাতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে ইংলিশদের ব্যাটিং।
শুরুটা করেছিলেন কামিন্সই। এবং অনুমান করুন, সেটাও শর্ট বলেই। ররি বার্নস বুঝতে পারেননি বাউন্সারটা, গালিতে সহজ ক্যাচ নিয়েছেন লায়ন। সকালের তৃতীয় ওভারেই উইকেট পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, প্রথম ইনিংসে ইংলিশদের নায়ক আজ ফিরে গেছেন ১১ রান করেই। এরপর জো রুট আর জেসন রয় মিলে কিছুটা সময় হতাশ করে গেছেন অস্ট্রেলিয়াকে। এই টেস্টের জঘন্য আম্পায়ারিং আম্পায়াররা ধরে রেখেছিলেন আজও, বিশেষ করে জোয়েল উইলসন। রুটকে দুইবার আউট দিয়েছিলেন। একবার বল লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল, আরেকবার ইনসাইড এজ। দুবারই সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিয়েছেন রুট। আবার লায়নের বলে একবার আউট হতে পারতেন রুট। শট খেলার জন্য আলিম দার আউট দেননি, তবে রুটও জানেন তিনি সেই বলে শট খেলার চেষ্টা করেননি তেমন। বেঁচেই গিয়েছেন সেবার।
ইংলিশদের উইকেটের টপাটপ পড়া অবশ্য থেমে থাকেনি। লায়নকে খেলতে অধৈর্য হয়ে গিয়েছিলেন রয়, উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে হয়ে গেলেন বোল্ড। ফিরেছেন ২৮ রানে, যেটা পরে হয়ে থেকেছে ইংল্যান্ডের ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। জো ডেনলি এসেছেন, লায়নের বলে ব্যাট প্যাডে ক্যাচ দিয়েছেন। আবার রিভিউ নিয়ে সেটা নষ্টও করেছেন। ৮০ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। প্যানিক বাটন টেপা হয়ে গেছে তখনই। রুটও শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েছেন ব্যানক্রফটকে, অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিয়ে ব্যানক্রফট জানান দিয়েছেন কেন এই পজিশনে তিনি সেরাদের একজন। ৮৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে গেছে ইংল্যান্ড।
যেখানে লাঞ্চ শেষ করেছিল, সেখান থেকেই যেন শুরু করল অস্ট্রেলিয়া। লাঞ্চের পর পরেই কামিন্সের বল বুঝতে না পেরে বোল্ড বাটলার, শেষ হয়েছে ২৫ বলে ১ রানের প্রতিরোধ। জনি বেইরস্টোর সময়টা ভালো যাচ্ছিল না, তবে আজ আউট হয়েছেন অদ্ভুতভাবেই। এবারও কামিন্সের শর্ট বল, মনে হচ্ছিল বেইরস্টোর হাতেই লেগেছে, গ্লাভসে নয়। বেইরস্টো রিভিউ নিলেন সঙ্গে সঙ্গে, কিন্তু দেখা গেল বলটা গ্লাভসের ওপরের অংশ ছুঁয়ে গেছে। দুঃস্বপ্নের একটা ম্যাচেও কীভাবে যেন দারুণ একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেললেন আম্পায়ার উইলসন। ও হ্যাঁ, ১০০ উইকেটও হয়ে গেছে কামিন্সের।
ম্যাচ তখন প্রায় অস্ট্রেলিয়ার। বেন স্টোকস ছিলেন বলে হয়তো আরেকটু প্রতিরোধের আশা দেখছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু বেইরস্টোর আউটের পর পরেই স্টোকসও লায়নের টার্ন করা বলে খোঁচা দিয়ে ক্যাচ দিলেন পেইনকে। এবং বেইরস্টোর মতো স্টোকসও আউট ৬ রানে। ৯৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের পরাজয় সময়ের ব্যাপার তখন।
এরপর ক্রিস ওকস একটু পালটা আক্রমণ করেছনে, কিন্তু ওই পর্যন্তই। মঈন আলী আরও একবার লায়নের শিকার, ফিরেছেন ৪ রানে। ব্রডকেও প্রথম বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়েছিলেন লায়ন। সেটা হয়নি, তবে জয়ের জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। ওকসকে ৩৭ রানে ফিরিয়ে কামিন্স অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াকে, জয় হয়েছে এজবাস্টন-দুর্গের।