লর্ডসের নাটক ও ঘটনার ঘনঘটার কেন্দ্রবিন্দুতে স্মিথ
আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, দ্য অ্যাশেজ
২য় টেস্ট, লর্ডস, চতুর্থ দিনশেষে
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২৫৮ ও ৯৬/৪*
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ২৫০
ইংল্যান্ড ৬ উইকেট নিয়ে ১০৪ রানে এগিয়ে
আবেগ, উৎকন্ঠা, শঙ্কা, হতাশা, উল্লাস, রোমাঞ্চ, ভুল, লড়াই- টেস্ট ক্রিকেটের একদিন থেকে আরও কী কী চান সেটার একটা তালিকা করতে পারেন আপনি। লর্ডসের চতুর্থ দিন সেসব চাহিদার বেশিরভাগই পূর্ণ করতে পারার কথা। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৮০ রানে রেখে শুরু করা দিনটা শেষ হয়েছে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেট বাকি রেখে ১০৪ রানে এগিয়ে রেখে। অবশ্য সম্ভাবনার টেবিলে ওপরের দিকে থাকার কথা অস্ট্রেলিয়ারই, তবে শেষদিন কোন রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষা করে আছে সেটি কে জানে! প্রায় পাঁচ সেশনের মতো খেলা হতেই পারেনি এ টেস্টে, তবুও পঞ্চম দিনের জন্য চাইলে এখনই প্রহর গোণা শুরু করে দিতে পারেন আপনি।
এদিনও বরাবরের মতোই শিরোনামে উজ্জ্বল স্টিভ স্মিথ। তবে শুধু তার লড়াই আর দৃঢ়চেতা ব্যাটিং নয়, ছিল তাকে নিয়ে উৎকন্ঠা আর শঙ্কাও। জফরা আর্চারের বলে মাথার নিচের দিকের অনাবৃত অংশে লেগে যে উঠে গিয়েছিলেন তিনি। ক্ষণিকের জন্য ২০১৪ সালের স্মৃতি যেন উঁকি দিয়ে গিয়েছিল, যেবার প্রায় একইরকম এক আঘাতে চলে গিয়েছিলেন ফিলিপ হিউজ। স্মিথ এরপর অবশ্য ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন আবারও, তবে ফিল্ডিংয়ে নামেননি আর। রাতে স্মিথকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তিনি আর খেলবেন কিনা। মাথার নিচে আঘাত পাওয়ার আগে কনুইয়েও আঘাত পেয়েছিলেন আর্চারের বলেই, তবে এক্স-রে নিশ্চিত করেছে কোনোরকমের চিড় নেই সেখানকার হাড়ে।
চতুর্থ দিন প্রথম ব্রেকথ্রু ইংল্যান্ড পেয়েছিল দ্রুতই, স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে এজড হয়ে স্লিপে ররি বার্নসের দারুণ ক্যাচের শিকার হয়েছিলেন ম্যাথু ওয়েড। এরপরই টিম পেইনকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা করেন স্মিথ। দুজনের জুটিতে এসেছে ৬০ রান, আর্চারের বলে ব্যাট-প্যাড হয়ে শর্ট লেগে ধরা পড়ে ফিরেছিলেন পেইন। আর্চার এদিন হাজির হয়েছিলেন অন্যরকমের পেস নিয়ে, যাতে মিশে ছিল রোমাঞ্চের আগুন। সে আগুনেই নড়বড়ে হয়ে পড়েছিলেন স্মিথ।
ক্রিকেটবিশ্ব থমকে গিয়েছিল যে সময়...
ইনিংসের ৭৭তম ওভারে শর্ট বলে ডাক করতে গিয়ে ঠিকঠাক করতে পারেননি স্মিথ, এর আগের বলেই পুল করে মেরেছিলেন চার। স্মিথ ব্যাট ফেলে পড়ে গিয়েছিলেন এরপর, ইংল্যান্ড ক্রিকেটাররা সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে গিয়েছিলেন তার দিকে, দুই ড্রেসিংরুম থেকেই গিয়েছিল মেডিকেল সহায়তা। এর আগেই আর্চারের শর্ট বলেই হাতে আঘাত পেয়েছিলেন স্মিথ, বল গিয়ে লেগেছিল তার কনুই বরাবর। বেশ ব্যথা পেয়েছিলেন বলেই মনে হচ্ছিল, কনুইয়ে এরপর সুরক্ষা ও পেইনকিলার নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যাটিং। কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফিজিও ও টিম চিকিৎসকের সঙ্গে লর্ডসের করতালির মাঝে মাঠ ছেড়েছেন স্মিথ, ৮০ রানে ব্যাটিং করছিলেন তিনি।
এরপর নেমেছেন আবার, পিটার সিডলের উইকেটের পর, ক্রিস ওকসের বলে খোঁচা মেরে ফিরতে হয়েছিল সিডলকে। দ্বিতীয় দফা নেমে স্মিথ দেখিয়েছেন আরও দারুণ সাহস, ৮০ থেকে ৯২-এ গিয়েছিলেন তিন চারে। এরপরই অবশ্য ওকসের ভেতরের দিকে ঢোকা বল ছেড়ে দিয়ে হয়েছেন এলবিডব্লিউ। ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন, তবে এর আগে ঠিকই খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস, আর তাকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল উৎকন্ঠার ধোঁয়া। জ্যাক লিচের বলে ন্যাথান লায়ন এলবিডব্লিউ ও ব্রডের চতুর্থ শিকার হিসেবে প্যাট কামিন্স কট-বিহাইন্ড হলে ইংল্যান্ড পেয়েছিল ৮ রানের লিড।
তবে সেই এগিয়ে থাকা তাদের জন্য সান্ত্বনা হতে পারেনি, কামিন্সের পরপর দুই বলে দুই আঘাতে। জেসন রয়ের বিস্মৃত টেস্টটা শেষ হয়েছে অদ্ভুত স্টাইলে, ফ্লিক করতে গিয়ে লিডিং-এজে তিনি ধরা পড়েছেন পেছন ছুটতে থাকা বোলার কামিন্সের হাতেই। পরের বলেই অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরেছেন রুট, আগের ইনিংসেই এলবিডব্লিউ হওয়াটা হয়তো মনের মধ্যে খেলা করছিল তখনও, লেগসাইডের বাইরের দিকে বেশ চেপে গিয়ে ব্যাটিং করছিলেন তিনি।
কার্যত ১৭ রানে ২ উইকেটে পরিণত হওয়া ইংল্যান্ডকে একটু অক্সিজেন জুগিয়েছিলেন ররি বার্নস ও জো ডেনলি। দুজনের ফিফটি জুটি ভেঙেছেন পিটার সিডল, তাকে শরীর থেকে আগবাড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন ডেনলি, যিনি আরেকবার শুরু করেও বড় করতে পারলেন না ইনিংস। বার্নসও সিডলেরই শিকার, তিনি খোঁচা মেরে ধরা পড়েছেন টিম পেইনের হাতে। যদিও তিনি ফিরতে পারতেন আগেই, ২৪ রানে ন্যাথান লায়নের বলে তার বিপক্ষে রিভিউটা অস্ট্রেলিয়া নিলে। টিম পেইন একই ভুল করেছেন বেন স্টোকসের সময়ও, এবারও বোলার ছিলেন লায়ন। এর বাইরেও দুটি ক্যাচ ফেলেছেন ডেভিড ওয়ার্নার, প্রথমে ডেনলির, পরে স্টোকসের।