বৃষ্টিবন্দি ড্রেসিংরুমে মাহমুদউল্লাহদের এনসিএল-ভাবনা
বৃষ্টিবন্দি ড্রেসিংরুমে কাল অলস সময় কেটেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। মাঝেমধ্যে বাইরে উঁকি দেওয়া ছাড়া বেশি কিছু করারও নেই। এর মধ্যেই চলেছে ক্রিকেট নিয়ে পরিকল্পনা, ভারতের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে কথা হয়েছে প্রস্তুতি নিয়ে। পণ্ড ফাইনালের পর কাল মাহমুদউল্লাহই সংবাদ সম্মেলনে এসে বলে গেছেন, সামনের জাতীয় ক্রিকেট লিগ নিয়েই আলাপ হয়েছে তাদের। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের আদি এই প্রতিযোগিতায় জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা অনেক ধরেই অনিয়মিত। তবে ভারতের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে এবারের আসরে কমবেশি সবাই খেলবেন বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে।
আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্টে অমন হারের পরেই আসলে প্রশ্নটা উঠেছিল জোরেশোরে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টেস্ট সামর্থ্য আসলে কতদূর? আর ঘরোয়া প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে না খেলার মাশুলই কি দিতে হচ্ছে? সাকিব অবশ্য পরের প্রশ্নটা মানতে চাননি, উল্টো বললেন চার-পাঁচ বছর ধরে তার এনসিএল-বিসিএলে না খেলার পরেও সমস্যা হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটের যে মান, তাতে সেখানে খেলে কতটা লাভবান হওয়া যাবে সেটা নিয়েও নিজের সংশয়ের কথা বলেছেন।
তবে আপাতত ভারতের বিপক্ষে এবারের এনসিএলকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছেন জাতীয় ক্রিকেটাররা। নভেম্বরের সিরিজের আগে আর কোনো খেলা নেই, ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ক্যাম্পও দেরি আছে। বিসিবি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, তবে ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ার কথা এবারের এনসিএল। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এবার সাকিব ছাড়া জাতীয় ক্রিকেটারদের সবাই কমবেশি খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাকিব ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলতে চলে যাচ্ছেন এর মধ্যে, সেখান থেকে এসে সরাসরি যোগ দেবেন ক্যাম্পে। তামিম ইকবাল এর মধ্যেই অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন, বিরতির পর আবার এনসিএল দিয়ে ফিরতে পারেন ২২ গজে। মুশফিককেও দেখা যাওয়ার কথা। আর মাহমুদউল্লাহ তো কাল স্পষ্ট করেই বলে দিলেন, ‘এবারের এনসিএল নিয়ে আমরা সবাই কমবেশি সিরিয়াস। আমরা ক্রিকেট খেলতে চাই, সেটা এনসিএল হক আর বিসিএল হোক- যেখানেই খেলি আমাদের পারফর্ম করতে হবে। এটাই আমাদের রুটিরুজি, আর পারফর্ম না করলে অনেক প্রশ্ন উঠবে। তো আমরা যে জায়গার জায়গা থেকে পারফর্ম করার চেষ্টা করি। তো আজকে যখন বৃষ্টি হচ্ছিল তখন আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম এনসিএলে কে কোন দলে খেলবে, কার সূচি কখন। আমার মনে হয় সুযোগ পেলে সবাই ভালো করার চেষ্টা করবে।’
শেষ পর্যন্ত যদি জাতীয় ক্রিকেটাররা খেলেন, অনেকের জন্যই সেটি হবে অনেক দিন পর এনসিএলে ফেরা। মাহমুদউল্লাহর নিজের জন্যই যেমন চার বছর পর ফেরা হবে এনসিএলে। গত বছর অবশ্য বিসিএলে খেলেছিলেন, তবে এনসিএলে সর্বশেষ খেলেছিলেন ২০১৫ সালে। তামিম ইকবালের জন্যও সেই বছরটাই এনসিএলে খেলার সর্বশেষ অভিজ্ঞতা হয়ে থেকেছে। মুশফিক অবশ্য গত বছর বিসিএলে খেলেছিলেনে কটি ম্যাচ, তার আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এনসিএলে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন। তবে ২০১৫ সালের পর তামিম দেশের কোনো ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় খেলেননি। সাকিবও দেশে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতায় খেলেছিলেন সেই ২০১৫ সালেই, তাও একটি মাত্র ম্যাচে। টেস্ট দলে এখন নিয়মিত মেহেদী হাসান মিরাজও ২০১৭ সালে সর্বশেষ এনসিএল খেলেছিলেন। টেস্ট স্পেশালিস্ট তকমা পেয়ে যাওয়া মুমিনুল হক অবশ্য খেলছেন নিয়মিত। যেমন খেলছেন তাইজুল ইসলামও।
এর মধ্যে মিরাজ, সৌম্যরা অবশ্য ব্যস্ত থাকবে এ দলের হয়ে শ্রীলংকা সফরে। ওদিকে জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা আরও বেশ কয়েকজন গেছেন ভারতে অনূর্ধ্ব ২৩ দলের হয়ে। আর বাকিরা নিজেরাও ঝালিয়ে নিতে শুরু করবেন অনুশীলনে। মাহমুদউল্লাহ যেমন বলছেন, ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে গত কয়েকদিনে টেকনিক নিয়ে কাজ করেছেন কিছু, ‘আমি গত কয়েকদিনের নিলের সঙ্গে পার্সোনালি কথা বলেছি। আমার মনে হয় ও ভালো একজন ব্যাটিং কোচ। অনেক সময় টেকনিক্যালি আমি নোটিস করতে পারছি না খুব ছোটখাটো জিনিস, কিন্তু সেটা বড় প্রভাব রাখতে পারে- সেটা ও ধরিয়ে দিচ্ছিল। টেকনিকের খুঁটিনাটি অনেক ব্যাপারে ওর সাথে কথা হয়েছে। যখন আপনি রানখরায় ভুগবেন তখন আপনার মাথায় চলে আসবে, আপনার যেভাবেই হোক রান করতেই হবে। কিন্তু কোন জায়গায় কাজ করলে রান পাবেন সেটা অনেক সময় মনে থাকে না। তো এই ব্যাপারগুলো নিয়ে ওর সাথে কথা হচ্ছিল।’
আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বেশ কিছু প্রশ্নের। ভারত সফরে বাংলাদেশকে নিশ্চিতভাবেই অনেক অনেক কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু তার আগে ক’টা প্রশ্নের উত্তর মিলবে?