অনেক পথ পাড়ি দেওয়া আফগানিস্তান এবার চায় নতুন চ্যালেঞ্জ
আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ, ডিভিশন ফাইভ। প্রথম রাউন্ড। আফগানিস্তানের প্রতিপক্ষ জাপান। ইউরোপের দ্বীপদেশ জার্সিতে হওয়া সে টুর্নামেন্টে জাপানের বিপক্ষে সেই ম্যাচেই অভিষেক গুলবাদিন নাইবের। ২০১১ বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন নিয়ে সে টুর্নামেন্টে গিয়েছিল আফগানিস্তান। সেটা শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়নি। ২০১৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছিল আফগানিস্তান।
এর পরের বিশ্বকাপে তাদের অধিনায়ক সেই নাইব। পরিসংখ্যান বলবে, সে বিশ্বকাপটা আফগানিস্তানের সুবিধার যায়নি মোটেও। ৯ ম্যাচ, কোনও জয় নেই, সবকটিতে পরাজয়। বিশ্বকাপের পর নাইবকে সরিয়ে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছে রশিদ খানকে। সব ফরম্যাটেই অধিনায়ক তিনি এখন। অবশ্য রশিদ বলছেন, বিশ্বকাপটা তাদের জন্য গেছে ‘অসাধারণ’। তবে শেষে গিয়ে ম্যাচ হেরেছেন তারা অভিজ্ঞতার অভাবে।
বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশে একটি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানিস্তানের সময়টা অবশ্য খাতা-কলমেও কেটেছে দারুণ। বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়, এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনালে ওঠা। রশিদ বলছেন, এ সফরটা তাদেরকে বিশ্বকাপের পর আবার ঠিক পথে ফিরিয়ে এনেছে, তেমন কিছু নয়। তারা ঠিক ‘ট্র্যাক’-এ ছিলেন সবসময়ই।
জার্সির সেই টুর্নামেন্ট থেকে মিরপুরে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ফাইনালের পর রশিদ খানের সংবাদ সম্মেলন- টাইমলাইনটা প্রায় ১১ বছরের। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর অভিষেক রশিদের, এরপর তো হয়ে গেছেন আফগান ক্রিকেটের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপন। জাপানের সঙ্গে জার্সির সেই ম্যাচ যখন আফগানিস্তান খেলছে, রশিদের বয়স তখন ১০-এর মতো। আজ তিনিই অধিনায়ক সেই নাইব-মোহাম্মদ নবি-আসগর আফগানদের, যারা খেলেছিলেন সেই ম্যাচ, সেই টুর্নামেন্ট।
এ সফরে আফগানিস্তান পেয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়
“আমরা গত পাঁচ বছরে মাত্র দুইবার অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছি”, সাম্প্রতিক সময়ে আফগান ক্রিকেটের চিত্র তুলে ধরছেন রশিদ, “(বেশি খেললে) আমরা তাদের শক্তিমত্তা, দুর্বলতা জানতাম। এদিকে নজর দেওয়া উচিৎ।”
বরাবরের মতোই, উঠতি দলের অধিনায়ক হিসেবে রশিদের অনুরোধটা পরিষ্কার, ‘ওপরের দিকের দলগুলি’র সঙ্গে যতো বেশি ম্যাচ, ততো বেশি অভিজ্ঞতা, “সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ। তারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনেক খেলেছে, এবং বিশ্বকাপে সেরা ফলটা পেয়েছে। যদি ভাল দল হতে চাই আমরা, তাহলে অবশ্যই শীর্ষ দলগুলির সঙ্গে আরও বেশি খেলতে হবে। চার বছরে একটি ম্যাচও নেই! তাদের চারটা পেসার থাকে, যারা ১৪০ কিলোমিটারের ওপর গতিতে বোলিং করে। আমরা আয়ারল্যান্ড-স্কটল্যান্ডের সঙ্গে খেলি, যাদের এমন বোলার নেই বললেই চলে।”
রশিদ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রাসঙ্গিকভাবেই টেনেছেন আফগান ক্রিকেটের বর্তমান চিত্র। জাতীয় দলে আসার আগে তারা অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা পাননা সেভাবে বলতে গেলে। রশিদ বলছেন, সুবিধা না পেলেও মেধার অভাব নেই তাদের। তরুণরা আছেন ঠিক পথেই।
টি-টোয়েন্টি সিরিজেই যেমন সিরিজসেরা হলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান রহমনউল্লাহ গুরবাজ। টেস্টে আফগানিস্তানের ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন রহমত শাহ, আলো ছড়িয়েছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। রশিদের মতে, আফগানিস্তান ক্রিকেটের প্রায় সবটুকুই সহজাত প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রম, “আমাদের মানুষের ধরনই এমন। তারা ক্রিকেটকে এভাবেই ভালবাসে, সুযোগ পেলেই মেধাটা দেখাতে চায়। সহজাত প্রতিভা।”
“বিশ্বকাপে আমরা মোমেন্টাম পেয়েছিলাম ব্যাটিং-বোলিংয়ে। শেষ করতে পারিনি। এটা অভিজ্ঞতার সঙ্গে আসে। আমরা নতুন। যতো বেশি খেলব, ততো ভাল হব।”
সেই বেশি ভাল হওয়ার পথে একটা স্টেশন ছিল বাংলাদেশ সফর। আফগানিস্তান অধিনায়ক রশিদ যেটার শেষে বলছেন, “এটা মাত্র শুরু। আশা করি ইনশাআল্লাহ আমরা বড় দলগুলিকে সামনে নিয়মিত হারাব।”