মেসির 'প্রথম'-এ সেভিয়ার জালে বার্সার গোলউৎসব
২০১৯-২০ মৌসুমে ইনজুরির কারণে বার্সেলোনার দশ ম্যাচের মধ্যে খেলতে পেরেছেন কেবল পাঁচটি। অ্যাসিস্ট করা, ম্যাচসেরা হওয়া- সবই করেছেন এরই মধ্যে, কিন্তু এই পাঁচ ম্যাচে শুধু গোলটাই পাওয়া হচ্ছিল না লিওনেল মেসির। অবশেষে ন্যু ক্যাম্পে নিজের সবচেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ সেভিয়ার বিপক্ষেই আসল বার্সেলোনা অধিনায়কের বহুল প্রতীক্ষিত গোল। দুর্দান্ত এক ফ্রিকিকে গোলের খাতা খুললেন মেসি, অবশ্য ততক্ষণে ম্যাচ জেতা হয়ে গেছে বার্সার। সেভিয়াকে ৪-০ গোলে হারিয়ে টেবিলের দুইয়ে উঠে এসেছে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা।
দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময়ই গোলের জন্য রীতিমত হন্যে হয়ে ছুটেছিলেন মেসি। কখনও ভুল পাস, বা কখনও সেভিয়া গোলরক্ষক থমাস ভাচলিকের দক্ষতায় গোলমুখে বারবার খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছিল তাকে। কিন্তু ৭৮ মিনিটে আর আটকানো যায়নি মেসিকে। ডিবক্সের প্রায় ২৫ গজ দূরে ফ্রিকিক পায় বার্সা, গোললাইনে ভাচলিক ছাড়াও ছিলেন আরেকজন ডিফেন্ডার। কিন্তু চমৎকার বাঁকানো ফ্রিকিকে দুজনকেই পরাস্ত করেন মেসি। মুহূর্তেই ‘দিওস! দিওস!!’ চিৎকারে ফেটে পড়ে ন্যু ক্যাম্প। গোলের পর মেসির স্বস্তির হাসিই প্রমাণ করে; দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য ঠিক কতটা মরিয়া ছিলেন তিনি।
দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিকে সেভিয়ার জালে গোলউৎসব শুরু করেছিলেন সুয়ারেজই
মেসির গোল পাওয়া, টেবিলের দুইয়ে ওঠার ম্যাচের শেষটা অবশ্য খুব একটা সুখকর হয়নি এর্নেস্তো ভালভার্দের দলের। ৮৯ মিনিটে সেভিয়ার বদলি ফরোয়ার্ড হাভিয়ের হার্নান্দেজকে ফাউল করে নিশ্চিত গোলের সুযোগ কেড়ে নেন বার্সার হয়ে অভিষেক হওয়া উরুগুইয়ান ডিফেন্ডার রোলান্ড আরাউহো। অভিষেকেই সরাসরি লাল কার্ড দেখতে হয় তাকে। রেফারির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় উসমান ডেম্বেলেকে। দ্বিতীয়ার্ধে হলুদ কার্ড দেখে লিগে আগামী ম্যাচের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছেন জেরার্ড পিকে।
গেটাফের বিপক্ষে আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় সেভিয়ার বিপক্ষে ছিলেন না ক্লেমেন্ত লংলে, তার জায়গায় নামা তরুণ ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার জাঁ-ক্লদ তোদিবো এই ম্যাচেই পড়েছেন ইনজুরিতে। বার্সা স্কোয়াডের আরেক ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতি ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে আছেন অনেকদিন ধরেই। আন্তর্জাতিক বিরতির পর এইবারের বিপক্ষে ম্যাচে তাই সেন্টার ব্যাক ক্রাইসিসেই হয়তো ভুগতে হবে কাতালানদের।
মৌসুমে নিজের প্রথম গোলের উল্লাস!
অবশ্য সেভিয়ার বিপক্ষে এতকিছুর পরও জয়ের জন্য তেমন ভুগতে হয়নি বার্সাকে। অবশ্য বড় হারের জন্য নিজেদের ফিনিশিংকে দুষতে পারে সেভিয়াও। শুধুমাত্র প্রথমার্ধে তিনটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন সেভিয়া স্ট্রাইকার লুক ডি ইয়ং। ১৭ এবং ২৩ মিনিটে গোলের একেবারে সামনে থেকে হেড বাইরে মেরেছেন তিনি। অবশ্য এক্ষেত্রে বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। প্রথমার্ধে সেভিয়ার দুটি নিশ্চিত গোল ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। বার্সার মত দলের হোমে এত সুযোগ হাতছাড়া করার পরিণাম ঠিক কী হতে পারে, প্রথমার্ধে ঠিক সেটাই যেন জানান দিলেন সুয়ারেজ, ডেম্বেলেরা।
২৭ থেকে ৩৫- ৮ মিনিটের এক বার্সা মিনি ঝড়ে উড়ে গেছে সেভিয়া। শুরুটা করেছিলেন সুয়ারেজ। ২৭ মিনিটে লেফটব্যাক হিসেবে নামা নেলসন সেমেদোর ক্রসে দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিকে দলকে লিড এনে দেন ‘এল পিস্তোলেরো’। মিনিট পাঁচেক পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আর্তুরো ভিদাল। ৩২ মিনিটে দুর্দান্ত এক পাসিং মুভের পর আর্থার মেলোর ডিফেন্সচেরা ক্রসে পা ছুঁয়ে গোল করেন চিলিয়ান মিডফিল্ডার। গত সপ্তাহে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে নেমেই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ভিদাল, পুরস্কারস্বরূপ সেভিয়ার বিপক্ষে নেমেছিলেন মূল একাদশেই। নেমেই ভালভার্দের আস্থার প্রতিদান দিলেন তিনি। ৩৫ মিনিটে সেভিয়ার হতাশার ষোলকলা পূরণ করেন ডেম্বেলে।
দুর্দান্ত সোলো গোলে ভালভার্দের আস্থার প্রতিদান দিলেন ডেম্বেলে
দুর্দান্তভাবে সেভিয়া ডিফেন্ডার দানিয়েল কারিসোকে কাটিয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন তিনি। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও গোলের প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল সেভিয়াই। কিন্তু ৪৮ মিনিটে টের স্টেগানকে একা পেয়েও শট বারে মেরেছেন ডি ইয়ং। ম্যাচে ফেরার আশায় তার জায়গায় চিচারিতোকে নামিয়ে দেন হুলেন লোপেতেগি, কিন্তু কাজের কাজটা আর হয়নি। গত বছর এই অক্টোবরেই ন্যু ক্যাম্পে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার হয়ে এসেছিলেন সাবেক স্পেন ম্যানেজার, হেরেছিলেন ৫-১ গোলে। প্রায় এক বছর পর আবারও একই মাসে ন্যু ক্যাম্পে হারলেন বড় ব্যবধানে।
গোলখরায় ভুগতে থাকা মেসিও প্রিয় প্রতিপক্ষ সেভিয়ার বিপক্ষে গোলের সংখ্যা বাড়িয়ে নিলেন ৩৭-এ। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, রিয়াল ভায়াদোলিদের সাথে ড্র করায় টেবিলের দুইয়ে উঠে এল বার্সা। আরেক ম্যাচ পরই এল ক্লাসিকো, মোক্ষম সময়েই ফর্মে ফিরল বার্সার রক্ষণভাগ এবং মেসি। এল ক্লাসিকোর সপ্তাহ তিনেক আগে এর চেয়ে বেশি আর কীইবা চাইতে পারতেন ভালভার্দে।