সাকিবহীন সময়ের জন্য বাড়তি 'মানসিক প্রস্তুতি' নিয়ে রাখছেন মিরাজ
‘ব্যাটিং তো করতেই হবে, ভাই। করতে হবে না?’
নেটে অনুশীলন শেষে ফেরার পথে ‘ব্যাটিং নিয়ে বেশ খাটছেন’ কথা শোনার পর মেহেদি হাসান মিরাজের উত্তর। বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিং, গোলাপি বলে ব্যাটিং-বোলিং, ফিটনেস, দীর্ঘদিন খেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা, এবং সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা- মিরাজ করছেন অনেক কিছুই। ভারত সফরে শুধুই টেস্ট স্কোয়াডে থাকা মিরাজ ঘাটতি রাখতে চান না কোনও কিছুতেই।
২০১৬ সালে অভিষেকের পর থেকে ২০টি টেস্টের সঙ্গে ৩৮টি ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এই অফস্পিনিং অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি, এরপর দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ বা ভারত সফরের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডেও তাকে বিবেচনা করেননি নির্বাচকরা। ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসা অপশন নিয়ে মিরাজ ভাবছেন না, আপাতত তার লক্ষ্য নিজের কাজটাই করে যাওয়া।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলার পর শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলেন ‘এ’ দলের হয়ে সফরে, এরপর খেলেছেন জাতীয় লিগে। খুলনার হয়ে মিরপুরে তাদের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে না খেললেও গোলাপি এবং লাল বলে চালিয়ে গেছেন অনুশীলন। টেস্ট দলে সাকিবের অনুপস্থিতিতে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে প্রধান স্পিনার হিসেবে খেলতে হতে পারে তাকেই, “সাকিব ভাই যখন বোলিং করেন একপ্রান্ত থেকে তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক কিছু শিখতে পারি এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেক সহায়তা পাই। যদি কোনো ঘাটতি কিংবা সমস্যা থাকে সাকিব ভাই আমাকে সাথে সাথে বলে। যে না এখানে সমস্যা আছে। এখানে বল করলে ভালো হবে। আমি সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করি।”
২০ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৮৯ উইকেটের ৭১টিই মিরাজ পেয়েছেন সাকিবের সঙ্গে খেলা ১৪ টেস্টে। পরিসংখ্যানও তাই মিরাজের ক্যারিয়ারে সাকিবের ‘প্রভাব’টা সমর্থন করে। তাকে ছাড়া ভেট্টোরির পরমার্শেই চলতে চান তিনি আপাতত, “এখন যখন সাকিব ভাই নেই, সে কারণে আমাকে নিজেকেও একটু মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমার প্রস্তুতিটাও ভালো নিতে হবে। বিশেষ করে এখন আমাদের সঙ্গে কোচ আছেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, আশা করি ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারব এবং পরামর্শ পাব। আমরা যদি ওর পরামর্শ অনুযায়ী চলতে পারি, তাহলে হয়তো আমাদের সাফল্য আসার সুযোগ বেশি থাকবে।”
মিরাজকে টেনে তুলছেন সাকিব, বিপক্ষ আফগানিস্তান, ২০১৯/বিসিবি
টেস্ট ছাড়া বাকি দুই ফরম্যাটের বাইরে থাকলেও সেসবে ফেরার আশাও ছাড়ছেন না মিরাজ, “আমি গত দুই-আড়াই বছর তিন ফরম্যাটেই খেলেছি। এখন টেস্ট দলে আছি। আমার মনে হয় এই যে সময়টা পেয়েছি নিজেকে আরও পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করতে পারছি। কারণ আমি গত ১০-১২ দিনে যে কাজটা করেছি, আমার কাছে মনে হয় আমি এমন একটি সুযোগ চেয়েছি, এরকম একটু সময় নিয়ে ব্যাটিং বোলিং, আমার শারীরিক ফিটনেস যে ঘাটতিগুলো আছে সেগুলোর উন্নতি করা। দীর্ঘ দিন ক্রিকেট খেলার জন্য।”
“আমি চাই অনেক বছর ক্রিকেট খেলতে। অনেক দিন ক্রিকেট খেলতে হলে ফিটনেস, স্কিলের উন্নতি করতে হয়। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যখন খেলি তখন এক জায়গায় পড়ে থাকলে কিন্তু আমি টিকতে পারব না। আমাকে দিন দিন অনেক উন্নতি করতে হবে এবং আমাকে আরও ওপরে নিয়ে যেতে হবে। আমি মনে করি এই শূন্যস্থানটা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের কাজগুলো সামনের দিনগুলোতে কাজে লাগাতে পারব। সামনে আমাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। এসব ছোট ছোট যে জিনিসগুলা নিয়ে কাজ করেছি এটা আমার অনেক কাজে লাগবে।”
ইডেন গার্ডেনসে প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে যাওয়ার আগে গোলাপি বল নিয়ে মিরাজ তার ধারণার কথা জানালেন এভাবে, “এখন পর্যন্ত আমি যা বোলিং করেছি ,আমার কাছে মনে হয় বলটা ড্রিফট করে, বল নড়াচড়া করে। কিন্তু আরও ভালো পরিষ্কার হব যখন কোচদের সঙ্গে কথা বলব, ওখানে গিয়ে অনুশীলন করব।
“এখন পর্যন্ত আলাদা কোনো কাজ করছি না। আমি যতটুকু শুধুমাত্র মানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি ভারতে কোচদের সঙ্গে কথা বলে, আলাপ করে (ঠিক করবো) কীভাবে কী করলে ভালো হয়।”