নাঈমকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না হাবিবুল
২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল। বিকেএসপি-৩ নম্বর মাঠে মুখোমুখি আবাহনী-লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের অলিখিত ফাইনালে, আবাহনী জিতলে সরাসরি চ্যাম্পিয়ন। আর হেরে গেলে রূপগঞ্জের সুযোগ ছিল শিরোপার। বিকেএসপির ছোট্ট মাঠে লিস্ট এ বা টি-টোয়েন্টির প্রচুর রেকর্ড হয়েছে। সেদিনও শুরুতে ব্যাট করতে নেমে আবাহনী করেছিল ৩৭৪। ম্যাচের ফল নিয়ে জল্পনা কল্পনা কিছুটা ওখানেই শেষ। তবে রূপগঞ্জের ইনিংসের শুরুতে লিকলিকে এক ওপেনার দৃষ্টি কেড়ে নিল। নাঈম শেখ নামের সেই তরুণের প্রিমিইয়ার লিগে সে বছরেই অভিষেক। তার আগের কয়েকটা ইনিংসে মুগ্ধ করেছিলেন। বিকেএসপির ছোট মাঠে সেদিন একের পর এক পুল খেলছিলেন, ৫৪ বলে ৭০ রানের ইনিংসটা নজর কেড়েছিল আলাদা করে। কে জানত, বছর দেড়েক পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পুরো ক্রিকেটবিশ্বেরই নজর কাড়বেন!
নাঈম শেখকে বিসিবি সেবারের পর থেকেই রেখেছে পরিকল্পনায়। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলা হয়েছে এর মধ্যেই, পরে পা রেখেছেন হাই পারফরম্যান্স, অনূর্ধ্ব ২৩ হয়ে এ দলেও। প্রিমিয়ার লিগে আলো ছড়ানোর পর গত বছর জাতীয় লিগ বা বিপিএলে ভালো কিছু করতে পারেননি। এই বছর প্রিমিয়ার লিগে আবারও ব্যাট হাতে উজ্জ্বল, ৮০৭ রান নিয়ে সাইফ হাসানের পর টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল তার। এরপর আফগানিস্তান এ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছেন, শ্রীলংকায় গিয়ে এ দলের হয়ে পেয়েছেন দুইটি ফিফটি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তার সক্ষমতা প্রমাণ করলেও টি-টোয়েন্টিতে কতটা কী করবেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন ছিল। ভারতের বিপক্ষে কালকের ৮১ রানের ইনিংসের পর কিছুটা উত্তর দিয়েছেন সেই প্রশ্নের।
নির্বাচক হাবিবুল বাশার বেশ কিছুদিন থেকেই দেখে আসছেন নাঈমকে। তরুণ একজন খেলোয়াড় যখন নিজের সক্ষমতার আভাস দেন, নির্বাচকদের জন্য সেটি বড় একটা তৃপ্তিই হওয়ার কথা। হাবিবুল অবশ্য এখনই বড় কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না তাকে নিয়ে, দিতে চাইছেন সময়, ‘বাংলাদেশে ক্রিকেটের জন্য ভালো খবর নাঈম শেখের রান করাটা। দুই বছর ধরে ওকে হাই পারফরম্যান্সে তৈরি করা হচ্ছিল। অনেক ট্যালেন্টেড খেলোয়াড়ই আসে কিন্তু পারফরম্যান্স সবার হয় না। নাঈম শেখকে দেখে মনে হচ্ছে যে একজন পারফরমার। প্রথম দুটি ম্যাচে বড় রান করতে পারেননি কিন্তু শেষ ম্যাচটাতে রানটা বড় করেছে। সবাইকে দেখিয়ছে সে বড় রান করতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রান করতে বিশেষ ক্ষমতা থাকা লাগে। মনে হচ্ছে ওর মধ্যে সেটা আছে যদিও এতো তাড়াতাড়ি মন্তব্য করাটা ঠিক নয়। মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছে সে। তবে মনে হচ্ছে ওর পিছনে বিনিয়োগ করেছি ভবিষ্যতে আরও কাজে লাগবে।’
নাঈমের কালকের ইনিংসের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো দিক ছিল তার অ্যাপ্রোচ। কখন বোলারদের অ্যাটাক করতে হবে, দুর্বল জায়গায় টোকা দিতে হবে সেটা বুঝে ফেলেছেন তাড়াতাড়ি। চাহাল বোলিংয়ে আসার পরেই তাই পর পর তিনটি চারে তাকে এলোমেলো করে দিয়েছেন, দুবের পরে দুই চারে তার আত্মবিশ্বাসন নড়িয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে সোজা ব্যাটে যেভাবে খেলেছেন, সেটা আলাদা করে নজর কেড়েছে হাবিবুলের, ‘ও (নাঈম শেখ) হাইপারফম্যান্স দলে আছে দুই তিন বছর হলো। প্রথম দিক থেকেই খুব বেশি ফ্ল্যাশি ছিল। এই বছর দেখলাম ওর নিজের ব্যাটিংয়ে অনেক পরিবর্তন এনেছে। একটা খেলার জন্য কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটিংটা দরকার হলে পরিবর্তন আনা। শুরুর দিকে যখন এসছিলো হাই পারফরম্যান্স টিমে তখন টেকনিক এতো আকর্ষণীয় ছিলো না। অনেক বেশি শট্ খেলতো, শট খেলার সামর্থটা সবসময় ছিলো। আড়াআড়ি শটটা একটু বেশি খেলতো। ও নিজেকে অনেক শুধরেছে। এই বছর যখন দেখলাম ওর ব্যাটিংয়ে অনেক পরিবর্তন দেখলাম। চার দিনের ম্যাচে অনেক নিয়ন্ত্রিত ব্যাট করে।’
নাঈমের সামনেই আবার মাঠে নামতে হচ্ছে, ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ইমার্জিং এশিয়া কাপ। সামনের মাস থেকে শুরু বিপিএল, সেখানে এবার আলাদা করে চোখ থাকবে তার ওপর। কাল নাগপুরে যেমন উড়েছেন, তেমনি মাঝেমধ্যে পা মাটিতেও রাখতে হবে তার।