পেস-বিষে নীল বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ শুধুই হতাশা
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১৫০ অল-আউট (মুশফিক ৪৩, মুমিনুল ৩৭, শামি ৩/২৭, ইশান্ত ২/২০)
ভারত ১ম ইনিংস ৮৬/১* (পুজারা ৪৩*, আগারওয়াল ৩৭*, রাহি ১/২১)
ভারত ৯ উইকেট নিয়ে ৬৪ রানে পিছিয়ে
হুট করেই মনে হতে পারে, বাংলাদেশ হয়তো গিয়ে পড়েছে নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকায়। পেসারদের সিম মুভমেন্টে ব্যাটসম্যানদের এজড হওয়া যখন ভবিতব্য, বল যখন ছোবল মারছে ক্ষণে ক্ষণে- এমন মনে হতেই পারে। ইন্দোরে ভারতীয় পেসাররা বাংলাদেশের ওপর মুভমেন্টের বিষ ছাড়লেন একের পর এক, সঙ্গে মিশল রবি আশ্বিনের স্পিন। তাতেই নীল হয়ে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ প্রথম দিনশেষেই হয়ে পড়লো দিশেহারা। শেষবেলায় মায়াঙ্ক আগারওয়ালের সহজতম ক্যাচ ফেলে ইমরুল কায়েস যেন ফুটিয়ে তুললেন পুরো দিনে বাংলাদেশের হতাশাটুকুই!
টসে জিতলে ফিল্ডিং নিতে চাওয়া বিরাট কোহলি হেরেও পেলেন সেটি, মুমিনুল হক যে নিলেন ব্যাটিং। হয়তো নিজেদের পেসারদের ওপর তেমন ভরসা ছিল না তার, অথবা ব্যাটসম্যানদের ওপর ছিল বেশি আশা। ব্যাটসম্যানরা হতাশ করেছেন, বোলাররা পরে পিচে যা কিছু ছিল তার পুরো সুবিধা আদায় করতে পারেনি। ইন্দোরে ৯ উইকেট বাকি রেখে ৬৪ রানে এগিয়ে থাকা ভারত বাংলাদেশের জন্য রেখেছে তাই শুধুই অনিশ্চিত এক হতাশার ঘূর্ণিপাক।
ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের প্রথম রান তুলতে লেগেছিল ২০ বল, প্রথম বাউন্ডারি এসেছিল ২৬তম বলে- সেটিও আউটসাইড-এজে। একপ্রান্তে ইশান্ত শর্মা বল বের করে নিচ্ছিলেন রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে, আরেক প্রান্তে ওভার দ্য উইকেট থেকে বল ভেতরের দিকে আনছিলেন উমেশ যাদব। ইমরুল কায়েস বা সাদমান ইসলামের আউটসাইড-এজকে এসজি বলটা কীভাবে ফাঁকি দিচ্ছিল, সেটি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল এক রহস্য।
৬ষ্ঠ ওভারে অবশেষে ঘটলো সেটি, আউটসাইড-এজে ইশান্তের বলে স্লিপে ধরা পড়লেন ইমরুল। পরের ওভারে ফুললেংথ থেকে পুশ করতে গিয়ে এজড হলেন সাদমানও। বাংলাদেশের বাঁধ এই বুঝি ভেঙে গেল মনে হলেও মিঠুন-মুমিনুল আগলে রাখলেন কিছুক্ষণ। একদিকে শামি এসে এর আগেই আগুন ঝরানো শুরু করেছেন, মিঠুনকে ফাঁদে ফেলেছেন তিনি লেট-সুইংয়ে।
মুমিনুল বল ছাড়ছিলেন বেশ দারুণভাবে, সেই বল ছাড়াটাই পরে গিয়ে কাল হয়ে দাঁড়ালো তার। মুশফিক ও তিনি মিলে রাহানে ও কোহলির কাছে তিনবার জীবন পেয়ে লাঞ্চে গিয়েছিলেন বাংলাদেশকে একটু ধাতস্থ করে। বিরতির পর আবার জীবন পেলেন মুশফিক, ১৪ রানের মাথায় দ্বিতীয়বার। শামিকে একটা চার মারলেন মুমিনুল, আশ্বিনকে ছয়ের পর চার মেরে একটু আধিপত্য বিস্তার করতে চাইলেন।
শামির বোলিংয়ে জবাব ছিল না মুশফিকদের কাছে/বিসিসিআই
তবে সে পর্যন্তই। আশ্বিনের ড্রিফটারটা ছেড়ে দিয়ে বোকা বনতে হলো বাংলাদেশ অধিনায়ককে, পেছন ফিরে শুধু স্টাম্প হারানোটাই দেখতে পেলেন- চতুর্থবার এসে অবশেষে সফল হলেন আশ্বিন। মাহমুদউল্লাহ হয়তো আশ্বিনের বেদনা বুঝতে পেরেছিলেন, অফস্টাম্প ছেড়ে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে তাকে উপহার দিয়ে এলেন নিজের উইকেটটা।
চা-বিরতির আগে এরপরের গল্পটা মোহাম্মদ শামির এক ওভারের। প্রথম বলটা ফুললেংথে মুশফিকের পা-বরাবর। পরেরটিও ফুল, এবার অফস্টাম্পের একটু বাইরে, মুশফিক ছেড়ে দিলেন সেটি। এরপর লেংথ কমিয়ে আনলেন, তবে নীচু হলো অফস্টাম্পের বাইরের বলটি, ছাড়লেন মুশফিক। চতুর্থ বলটাও ফুললেংথে, তবে পড়ার পর সোজা হলো একটু। মুশফিক আবারও ছাড়লেন। তিনি তখন ছেড়ে দেওয়ার মুডে চলে গেছেন। শামি এরপর ছাড়লেন গোলাটা। ফুললেংথে পড়ে ক্ষ্যাপাটে দানবের মতো বলটা ঢুকে গেল স্টাম্প বরাবর, মুশফিক যতক্ষণে ব্যাট নামিয়ে এনেছেন, ততক্ষণে সে বলে উইকেট লেখা হয়ে গেছে। পরের বলে আবার ইনসুইং, এবার এলবিডব্লিউ হলেন মিরাজ। যদিও রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন।
হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা নিয়ে চা-বিরতিতে গেলেন শামি। বিরতির ঠিক পরের বলেই উমেশ যাদবকে খোঁচা মেরে লিটন কট-বিহাইন্ড হলে পূর্ণ হলো ভারতের ‘হ্যাটট্রিক’। শামি পরের ওভারে এসে হ্যাটট্রিকটা পেলেন না, তবে বাংলাদেশ ১০ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে গেল ১৫০ রানের মাঝেই। তাইজুল রান-আউট হলেন জাদেজার থ্রোয়ে, এবাদত যাদবের বলে হলেন বোল্ড।
ভারতের ব্যাটিংয়ে চতুর্থ ওভারে গিয়ে স্ট্রাইক পাওয়া রোহিতের উইকেটই হয়ে থেকেছে একমাত্র সান্ত্বনা বাংলাদেশের। রাহির ফুললেংথের বলে পুশ করতে গিয়ে আউটসাইড-এজড হয়েছেন তিনি। পুজারা নেমে শুরু করেছিলেন স্বভাববিরুদ্ধ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। প্রথম ৩৪ রানের ভেতরই ছিল তার ৭টি বাউন্ডারি। আগারওয়ালও সুযোগ বুঝে খেলেছেন শট।
ঠিক লেংথটা বারবারই হারিয়ে ফেলেছেন এবাদত-রাহিরা, ১১ ওভার করে উইকেটশূন্য থেকেছেন এবাদত। রাহি আগারওয়ালকে লেংথের ফাঁদে ফেলেছিলেন ঠিকই, কোলের ওপর যাওয়া ক্যাচটা নিতে পারেননি কায়েস। মিরাজকে এখনও বোলিংয়ে আনেননি মুমিনুল। হয়তো দ্বিতীয় দিন বেশ লম্বা সময় কাটাতে হবে বোলারদের- মুমিনুল সেটি আগেভাগেই বুঝতে পেরেছেন।