বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে ইমার্জিং এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান
ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপ, ফাইনাল, মিরপুর
পাকিস্তান ইমার্জিং ৩০১/৬, ৫০ ওভার (নাজির ১১৩, রফিক ৬২, শাকিল ৪২, সুমন ৩/৭৫, হাসান ২/৫২)
বাংলাদেশ ইমার্জিং ২২৪ অল-আউট, ৪৩.৩ ওভার (আফিফ ৪৯, শান্ত ৪৬, মেহেদি ৪২, হাসনাইন ৩/৩২, খুশদিল ২/৩৯)
পাকিস্তান ইমার্জিং ৭৭ রানে জয়ী
গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচের পর সেমিফাইনালেও দাপুটে জয় নিয়ে ফাইনালে এসেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালের আগে চার ম্যাচেই পরে ব্যাটিং করেছিল তারা, জিতেছিল যথাক্রমে ৯, ৬, ৮ ও ৭ উইকেটে। তবে আলোর নিচেই আঁধার হয়ে ছিল মিডল অর্ডারের তেমন কোনও পরীক্ষায় না পড়া। মিরপুরের ফাইনালে পাকিস্তান সে পরীক্ষাটাই নিল বাংলাদেশের। শের-ই-বাংলার প্রায় ৪টি স্ট্যান্ড ভর্তি থাকা দর্শকদের হতাশ করে সে পরীক্ষায় ব্যর্থ বাংলাদেশ। ইমার্জিং এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের ৩০১ রান তাড়া করতে গিয়ে ২২৪ রানেই গুটিয়ে গিয়ে শিরোপা হারিয়েছে তারা।
বড় রানতাড়ায় জুটিও বড় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের, প্রয়োজন ছিল বড় ইনিংস। হয়নি কিছুই। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে জুটি বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ, শান্তর পর আফিফ ও মেহেদি ৪০ পেরিয়েও পাননি ফিফটি। শুরুটা ঝড়ো হলেও শীঘ্রই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে তারা। টুর্নামেন্টে দারুণ ফর্মে থাকা সৌম্য সরকারই যেন আভাস দিয়ে রেখেছিলেন- কী হতে চলেছে এদিন।
শামিন গুলকে মিডউইকেট দিয়ে ছয়ের পর দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মেরেছিলেন সৌম্য, এরপর অফস্টাম্পের বেশ বাইরের বলে স্ল্যাশ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি ৬ বলে ১৫ রান করে। বাউন্ডারির পর আউট হয়েছেন নাঈম শেখও, হাসনাইনকে ছয়ের পর টেনে মারতে গিয়ে মিড-অনে ধরা পড়েছেন তিনি।
এর আগে পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের দায়মোচনের একটা সুযোগ পেয়েছিলেন ইয়াসির রাব্বি, শান্তর সঙ্গে জুটি ফিফটি পেরিয়েও গিয়েছিল তার। তবে আমাদ বাটের স্লোয়ার মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশের প্রথম ছয়জন ব্যাটসম্যানের মাঝে একমাত্র এই ডানহাতি, করতে পেরেছেন ৩১ বলে ২২ রান।
শান্ত ৪ রানের জন্য ফিফটি মিস করেছেন পার্টটাইমের খুশদিল শাহকে সুইপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়ে। বাঁহাতি স্পিনার উমর শাহকে সুইপ করতে গিয়ে একই জায়গায় ক্যাচ দিয়েছেন টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বার ব্যাটিং করতে নামা জাকির হাসানও। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন শীঘ্রই দিয়েছেন ক্যাচ, খুশদিলের বলে মিড-অনে।
বাংলাদেশের শেষ স্বীকৃত জুটি ছিল আফিফ-মেহেদির, শেষ ভরসাও ছিলেন তারাই। মেহেদি শুরুতে বাউন্ডারি মেরে আলগা করেছিলেন রান ও বলের বাড়তে থাকা পার্থক্যের চাপ। এরপর আবার একটা পর্যায়ে ডট বলের চাপ গিয়ে পড়েছিল তার। ঠিকঠাক স্ট্রাইক পাচ্ছিলেন না আফিফ, হাসনাইনকে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েছেন শেষ পর্যন্ত তিনি, ৪৯ রান করে।
বাঁহাতি স্পিনার সাইফ বাদারকে ইনসাইড-আউটে খেলতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন মেহেদি, ৯ম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে করেছেন ৪৫ বলে ৪২ রান। অসম্ভব কোনও স্বপ্ন থাকলে সেটি তখন শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের, এর আগে সুমন খান একই বোলারের বলেই হয়েছেন এলবিডব্লিউ। হাসানকে বোল্ড করে এরপর পাকিস্তানকে ফাইনাল জয়ের উল্লাসে মাতিয়েছেন দিনের সেরা বোলার হাসনাইন।
এর আগে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে নিয়ে শুরুতে পাকিস্তানকে চেপেই ধরেছিল বাংলাদেশ। সুমন খানের বোলিংয়ে ৪১ রানে ২ উইকেটে পরিণত হয়েছিল পাকিস্তান- ৪ রান করা ওমাইর ইউসুফ ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের হাতে, হায়দার আলি ক্যাচ দিয়েছিলেন নাঈম শেখের হাতে। সেঞ্চুরি করা রোহেল নাজির এরপর দুটি বড় জুটিতে টেনেছেন পাকিস্তানকে।
প্রথমে ইমরান রফিকের সঙ্গে গড়েছেন ১১৭ রানের জুটি, ৩য় উইকেটে। ৮৮ বলে ৪ চার ও ২ ছয়ে ৬২ রান করার মেহেদি হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন রফিক। ৪র্থ উইকেটে সৌদ শাকিলকে নিয়ে নাজিরের জুটি আরও ৮৫ রানের। ৪৫তম ওভারে হাসান মাহমুদের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে নাজির করেছেন ১১১ বলে ১১৩ রান, ১২ চারের সঙ্গে মেরেছেন ৩টি ছয়।
তাদের গড়ে দেওয়া ভিতে শেষ ৩৪ বলে ৫৮ রান তুলেছে পাকিস্তান। শাকিল শেষ পর্যন্ত করেছেন ৪০ বলে ৪২, ১ চার ও ২ ছয়ে। খুশদিল শাহ ও আমাদ বাট শেষে খেলেছেন যথাক্রমে ১৬ বলে ২৭ ও ৭ বলে ১৫ রানের ক্যামিও। অবশ্য সহায়তা করেছে তাদের বাংলাদেশের পিচ্ছিল ফিল্ডিং-ও, এক ইয়াসিরই মিস করেছেন তিনটি সহজ ক্যাচ।
মেহেদি হাসান ছাড়া কমবেশি সব বাংলাদেশী বোলারই ছিলেন খরুচে, ৫২ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন হাসান। ৩ উইকেট নিতে সুমন খরচ করেছেন ৭৫ রান। মেহেদি অবশ্য ১০ ওভারে মাত্র ৩৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। সৌম্য উইকেট পাননি, পুরো ১০ ওভারে তিনি দিয়েছেন ৭৬ রান।