• বাংলাদেশের ভারত সফর
  • " />

     

    নন্দনকাননে সেই পুরনো চিত্রনাট্যে ব্যবধান শুধু মুশফিক

    নন্দনকাননে সেই পুরনো চিত্রনাট্যে ব্যবধান শুধু মুশফিক    

    কলকাতা টেস্ট 

    তৃতীয় দিন শেষে 

    বাংলাদেশ ১০৬ এবং ৩২.৩ ওভারে ১৫২/৬ (মুশফিক ৫৯*, মাহমুদউল্লাহ ৩৯ আহত অবসর)

    ভারত ৮৯.৪ ওভারে ৩৪৭/৯ ডিক্লে (কোহলি ১৩৬; আল আমিন ৩/৮৫, এবাদত ৩/৯১,  রাহী ২/৭৭ )

    বাংলাদেশ ৮৯ রানে পিছিয়ে 


    ইডেন টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে আপনার কয়েকজনের জন্য একটু সহানুভূতি জাগতে পারে। 

    এক, অবশ্যই বাংলাদেশের দলের ফিজিও জুলিয়ান কালেফিতো। ভদ্রলোক পুরো দিন জুড়ে এমন ছুটোছুটি করেছেন, তার ওপর দিয়ে ঝড় কম যায়নি। মুশফিক ছাড়া বাকি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের চেয়ে মাঠে বেশি সময়ও বোধ হয় কাটিয়ে ফেলেছেন। 

    দুই, অনেক কষ্টে ছুটিছাটা নিয়ে যারা এই টেস্টের তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম দিনের টিকিট কেটেছেন। তৃতীয় দিনে তাও খেলা হচ্ছে, তবে চতুর্থ দিনে খেলা নিয়ে যেতে হলে লক্ষণ-দ্রাবিড়ের ২০০১ সালের সেই কীর্তির মতো মহাকাব্যিক কিছু করতে হবে। 

    সমস্যা হচ্ছে, একা তো আর রাবণবধ করা যায় না। রামের সঙ্গে একজন লক্ষণ দরকার, অর্জুনের যেমন দরকার ভিমকে। সেই দোসর হতে পারতেন মাহমুদউল্লাহ। মুশফিকের সঙ্গে কাল যতক্ষণ ব্যাট করছিলেন, গোলাপী বলের জুজু টুজু কিছু ছিল বলে মনে হচ্ছিল না। কিন্তু কনকাশন ধাক্কার পর এবার মাহমুদউলাহর হ্যামস্ট্রিং বিশ্বাসঘাতকতা করল। তৃতীয় দিন খুব দরকার না হলে তাকে মাঠে পাওয়া বলে মনে হয় না। 

    মুশফিক অবশ্য এখনও আছেন। কিন্তু তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো বলতে গেলে আর কেউ নেই। মিরাজ ছিলেন কিছুক্ষণ, কিন্তু ইশান্ত শর্মার বলে খোঁচা দিয়ে ফিরে গেছেন। তাইজুল মনে হচ্ছিল দিনের শেষটা কাটিয়ে আসবেন, কিন্তু উমেশের বলে ক্যাচ দিয়ে এলেন গালিতে। এখনো ৮৯ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে আপাতত টেস্টের তৃতীয় দিনে নিয়ে যাওয়াটাই খানিকটা সাফল্য মনে হতে পারে। 

    খেলা যে তৃতীয় দিনে যাবে, সেই সম্ভাবনা নিয়েই তো একটা সময় শংকা জাগা শুরু করেছিল। সন্ধ্যার আলো মিলিয়ে যাওয়ার সময় কোহলি হুট করেই ঘোষণা করলেন ইনিংস। বল তখন সুইং করছিল দুই দিকে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পেয়ে একেবারে খুবলে নিতে শুরু করলেন ইশান্তরা। সাদমান ফিরলেন প্রথম ওভারেই। মুমিনুল এলেন, শুন্য ফুটওয়ার্কে স্কুলবালকসুলভ শট খেলে ফিরলেন কোনো রান না করে। টেস্টে এই প্রথম পেয়ার পেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বাংলাদেশের হয়ে অধিনায়ক হিসেবে এই ‘কীর্তি’ এর আগে ছিল কেবল হাবিবুল বাশারের। ইডেনের স্ট্যান্ড থেকে উত্তরসূরির এই কীর্তি দেখতে নিশ্চয় হাবিবুলের ভালো লাগেনি। 

    ইডেনে বাংলাদেশের যেসব সাবেকরা গেছেন, এই ব্যাটিং দেখে সবারই খারাপ লাগার কথা। ইমরুল কয়েকটা বল টিকেছেন, কিন্তু ইশান্তের বলে আরও একবার ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে। ৬ রানে আউট হয়েছেন এবার, গত পাঁচ ইনিংসেই দুই অংক ছুঁতে ব্যর্থ। ইশান্তের একটা বল মিঠুনের মাথায় লাগল, সেটা নিয়েই গেলেন চা বিরতিতে। কিন্তু উমেশের শর্ট বলে আগের মতৈ উইকেট দিয়ে এলেন। ১২ রানে যখন ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের, বিভিন্ন ‘সর্বনিম্নের’ রেকর্ড আপনার মাথায় আনাগোনা করতে পারে হয়তো। 

    তবে মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকের মাথায় ছিল অন্য কিছু। মাহমুদউল্লাহ একটু স্টান্স বদলে পেছন থেকে খেলার চেষ্টা করেছেন, তাতে কাজও দিচ্ছিল। মুশফিক কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলতে শুরু করেছিলেন দারুণ সব শট। দুজনের জুটিতে ৬৯ রান উঠেছে, মাহমুদউল্লাহর হয়েছে ৩৯। এরপরেই সিংগেলস নিতে গিয়ে টান লেগেছে। উঠে গেছেন মাঠ ছেড়ে। কাল তাকে অবশ্যই দরকার হবে বাংলাদেশের। 

    ব্যাটিংয়ে মুশফিক ছাড়া গল্পটা আরও একবার ব্যর্থতার। তবে বোলিংয়ে অন্তত তা ছিল না। সকালের সেশনটা অবশ্য হতাশার কেটেছিল বাংলাদেশের। কোহলি আর রাহানে মিলে হতাশ করে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের বোলারদের। তাইজুল এলেন, একটু টার্ন পাওয়া শুরু করলেন। রাহানেকে শেষ পর্যন্ত তাতেই বোকা বানালেন, পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন রাহানে। কলকাতায় স্পিনারদের হাসার সুযোগ আজকের দিনে আর আসেনি। 

    প্রথম সেশনে ওই এক উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান তুলল ভারত। কোহলি তার আগেই পেয়ে গেছেন ২৭তম সেঞ্চুরি, আভাস দিচ্ছিলেন সেটা আরও বড় করার। 

    তবে এরপরেই ভোজবাজির মতো বদলে যেতে শুরু করল সমীকরণ। লাঞ্চের পর পরেই জাদেজা রাহীর বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন। এর পরেই সবচেয়ে বড় উইকেট পেল বাংলাদেশ। এবাদতের বলটা ফ্লিক করেছিলেন কোহলি, ডিপ ফাইন লেগে বলটা দারুণ এক ডাইভে ধরে ফেললেন তাইজুল। কোহলি নিজেও অবিশ্বাসে হেসে ফেলেছেন। এর পরের সময়টুকু অনেক দিন পর বাংলাদেশের পেসারদের জন্য বিজ্ঞাপন হয়ে থাকবে। আল আমিন ইনসুইংয়ে এলবিডব্লু করেছেন অশ্বিন, ইশান্তকে; রাহীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন উমেশ। ঋদ্ধিমান আর শামি কিছুক্ষণ কাটালেন, গোধুলীর আলোতে ব্যাটিং কঠিন হয়ে উঠছিল। এর পরেই কোহলির ইনিংস ঘোষণা। আর বাকি সময়টা মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে বাদ দিলে সেই ব্যর্থতার গল্পই।