শুরুর ধাক্কা সামলে সোসিয়েদাদের বিপক্ষে রিয়ালের তৃপ্তির জয়
ফলাফল
রিয়াল মাদ্রিদ ৩-১ রিয়াল সোসিয়েদাদ
আর মাত্র এক মিনিট গোল না খেয়ে পার করে দিতে পারলেই থিবো কোর্তোয়ার একটা রেকর্ড হয়ে যেত। ৫৩৫ মিনিট গোল হজম না করে ছিলেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে একটা গোল না খেয়ে থাকার পঞ্চম রেকর্ডটি হয়নি শুধু থিবো কোর্তোয়ার। এছাড়া পুরো ম্যাচে খুব বেশি আফসোসের সুযোগ নেই। লা লিগায় রিয়াল সোসিয়েদাদকে হারিয়ে বার্সেলোনার ওপর চাপ ধরে রেখেছে জিনেদিন জিদানের দল। জয়ের ধারায় ফেরার রাতে আরও অনেক তৃপ্তি সঙ্গী হয়েছে রিয়ালের।
সব কিছুর আগে বার্নাব্যুতে অবশ্য বাজে শুরু করেছিল রিয়াল। সার্জিও রামোস ডান প্রান্ত থেকে কোর্তোয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাক পাস পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ছিলেন উলিয়ান হোসে। কোর্তোয়া এগিয়ে গিয়েও বলের নাগাল পাননি। রামোসের ওই ভুল থেকে ম্যাচের মাত্র ২ মিনিটেই হোসে গোল করে স্বপ্নের শুরু এনে দেন সোসিয়েদাদকে।
রিয়ালের হয়ে আক্রমণে এদিন করিম বেনজেমা, এডেন হ্যাজার্ডের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলেন রদ্রিগো গোজ। মিডফিল্ডে কাসেমিরো আর লুকা মদ্রিচের সঙ্গে ছিলেন ফেদেরিকো ভালভার্দে। পিছিয়ে পড়লেও ঘরের মাঠে কতৃত্ব নিয়েই খেলছিল রিয়াল। ৩৬ মিনিটে রিয়ালকে সমতায় ফেরানোড় কাজটা করেছেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ জুটিই। লুকা মদ্রিচের নিখুঁত ফ্রি-কিক গিয়ে পড়েছিলেন সোসিয়েদাদের গোলের সামনে, বেনজেমা ছিলেন সেখানে। বলের উচ্চতা ছিল কিছুটা অদ্ভুত, পা-মাথা কোনোটাতেই নাগাল না পেয়ে অগত্যা বুক দিয়ে গোল করেছেন বেনজেমা।
ওই গোলে চলতি মৌসুমে লা লিগায় সবার আগে ১০ গোলের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন বেনজেমা। এ বছর লিগে তার গোল দাঁড়িয়েছে ২৫টি। ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগের ভেতর শুধুমাত্র লিওনেল মেসি (২৯ গোল) ও রবার্ট লেভানডফস্কি (২৮ গোল) তার চেয়ে বেশি গোল করেছেন।
বিরতির পর আর বেশিক্ষণ লিডে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি রিয়ালকে। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে শট করে আবারও গোল পেয়ে যান ভালভার্দে। তরুণ উরুগুইয়ানের শট অবশ্য সোসিয়েদাদ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করেছিল কিছুটা। ভালভার্দেকে গোলের জন্য পাসটা বাড়িয়েছিলেন মদ্রিচ। এর পর প্রতিপক্ষকে চমকে দিয়ে শটটা মেরেছিলেন ভালভার্দে।
রিয়ালের বাকিদের চেয়ে মদ্রিচ ছিলেন সবার চেয়ে আলাদা। ক্লাবের হয়ে এই প্রথম এক ম্যাচে জোড়া অ্যাসিস্ট পেয়েছেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার। ফর্মে ফেরার জন্য ওটাই যথেষ্ট ছিল। কিন্ত ৭৪ মিনিটে নিজে আরও এক গোল করে ফর্মে ফেরার বার্তাটা আরও জোরালোভাবেই দিয়েছেন মদ্রিচ। দূরের পোস্ট থেকে হেডে বল নামিয়ে দিয়েছিলেন বেনজেমা, গোলের ১২ গজ দূর থেকে বাম পায়ের জোরালো শটে মদ্রিচ সেরেছেন বাকি কাজ।
৭৪ মিনিটে রিয়াল ৩-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর জিদানের দলের জয় নিয়ে আর সংশয় ছিল না। তবে এর আগেই রদ্রিগোর বদলি হিসেবে গ্যারেথ বেলকে মাঠে নামিয়েছিলেন তিনি। ম্যাচের আগে বেল শিরোনাম হয়েছিলেন ওয়েলসের হয়ে উদযাপনের কারণে। মাঠে রিয়াল সমর্থকদের বড় একটি অংশ পুরোটা সময় দুয়ো দিয়ে গেছে বেলকে। সবমিলিয়ে বেল মাঠে ছিলেন ৩৫ মিনিট। এসবের ভেতরেই এক গোল করতে পারতেন, করাতেও পারতেন। এদিন আর আপাতত কোনো জবাব দেওয়া হয়নি বেলের। রিয়ালের জয়ের ব্যবধানও তাই আর বাড়েনি, আর দুয়ো শোনাও থামাতে পারেননি বেল। শেষদিকে মিনিট দশেকের মতো খেলার সুযোগ মিলেছে ইস্কোরও।
শুরুর ধাক্কা সামলে পুর ম্যাচে আর রিয়ালকে ধুঁকতে হয়নি। কোর্তোয়া ছিলেন দুর্দান্ত। গোটা দুই সেভ করে সোসিয়েদাদের ফেরার সব চেষ্টা আটকে রেখেছিলেন তিনি। ম্যাচে রিয়াল সমর্থকদের একমাত্র আফসোস থাকতে পারে শুরুর ওই গোল খাওয়া আর হ্যাজার্ডের গোল না পাওয়া নিয়ে।
১৩ ম্যাচ শেষে রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ২৮। লেগানেসকে হারানো বার্সেলোনার পয়েন্টও সমান। তবে আপাতত এই দুইদলের চেয়ে বেশ পিছিয়ে পড়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। এক ম্যাচ বেশি তাদের পয়েন্ট ২৫। গ্রানাডার সঙ্গে ১-১ এ ড্র করেছে তারা। এই নিয়ে শেষ ৫ ম্যাচের ৩টিতেই ড্র করল ডিয়েগো সিমিওনের দল।