কেমন গেল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ২০১৯?
২০১৯ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই আর। প্যাভিলিয়ন ফিরে তাকিয়েছে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি- তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের দিকে।
টেস্ট : সেই পুরোনো গল্প
বছর আসে। বছর যায়। টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশের জন্য থেকে যায় ওই একই রকম।
শর্ট বল, স্পিন, পেসারদের মুভমেন্টের রহস্য বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা খুঁজে ফিরেছেন, আর বোলাররা সেসবের ব্যবহারের রহস্য খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়েছেন। এসবের মাঝে চলে গেছে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট।
বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট (সন্ত্রাসী হামলায় ক্রাইস্টচার্চ বাতিল না হলে তিনটি হতো), দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের পর ভারত সফরে দুটি- বাংলাদেশ হেরেছে সবকটিতেই। ৪টি ইনিংস ব্যবধানে, ১টি ২২৪ রানে।
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে এ নিয়ে ১৩ বার এমন হলো, যখন বছরে কোনও জয় পায়নি বাংলাদেশ। অন্তত একটি জয় এসেছে বছরে- এমন ধারায় গত তিন বছরে বাংলাদেশ ছিল নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিক, ২০১৯ সে চক্র ভাঙলো আবার।
বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডে নেইল ওয়াগনারের শর্ট বলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা হয়ে উঠেছিল আলোচনার খোরাক। দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের শক্তি ‘স্পিন’ই কাবু করেছিল বাংলাদেশকে। আর ভারতে গিয়ে তাদের পেসারদের মুভমেন্টে তারা হয়েছে নাস্তানাবুদ।
বিপরীতে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণকে বেশিরভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের রেখে যাওয়া গর্ত পূরণে। তবে তুলনামূলক ‘পেস-সহায়ক’ কন্ডিশন পেয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি পেসাররা, প্রতিটি উইকেট নিতে গড়ে তারা খরচ করেছেন ৬০.৮০ করে রান। এক বছরে এর চেয়ে বাজে গড় বাংলাদেশ পেসারদের ছিল এর আগে ৭ বার। স্পিনারদের অবস্থা আরও বাজে, ২০১৯ সালে প্রতিটি উইকেট নিতে তারা খরচ করেছেন গড়ে ৫১.৫৭ রান, বছরের হিসেবে এর চেয়ে বাজে তারা করেছিলেন এর আগে ৪ বার।
উইকেট নিতে পেসার বা স্পিনার- দুই ক্যাটাগরির বোলারই এ বছর খরচ করেছেন প্রায় সমানসংখ্যক বল- পেসারদের স্ট্রাইক রেট ৮৬.২, পেসারদের ৮৫.৬।
টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান : মাহমুদউল্লাহ, ৩৩২, ৩৬.৮৮ গড়; তামিম ইকবাল, ২৭৮, ৬৯.৫০ গড়
সেঞ্চুরি ৩টি- মাহমুদউল্লাহ, তামিম, সৌম্য সরকার
উইকেট : আবু জায়েদ ৯, তাইজুল ইসলাম ৯
ওয়ানডে : আশা-নিরাশার দোলাচল
নিউজিল্যান্ড? ভুলে যান। ওখানে কখনও বাংলাদেশ জেতেনি, যদি খুব ভাল করে বাংলাদেশ ক্রিকেট অনুসরণ করেন, তবে মনে হতে পারে এক মহাকালের অপেক্ষা সেটি। অবশ্য এমন অপেক্ষা বাংলাদেশ ক্রিকেটে এটিই একমাত্র নয়। যেমন ছিল কোনও সিরিজ বা টুর্নামেন্ট ফাইনাল জেতার অপেক্ষা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল, যেন বাংলাদেশ জাতীয় দলকে (ছেলেদেরটা অবশ্যই, মেয়েরা ফাইনাল আগেই জিতে গেছে) পাড়ার কোনও গোল্ডকাপ ধরনের টুর্নামেন্টে নামিয়ে দিলেও ফাইনাল হারবে তারা।
মালাহাইডে সে ধারা ভেঙে ফাইনাল জিতল বাংলাদেশ। দশ বছরের এক অপেক্ষা কাটলো।
বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান আপনাকে নিয়ে গেলেন তার স্বপ্নযাত্রায়। তবে বাকিরা ঠিক তার সঙ্গে গতিটা ধরে রাখতে পারলেন না। ফল- মুখ থুবড়ে পড়লো আপনার স্বপ্ন। যেন সাকিব ও বাংলাদেশ চলছিলেন ভিন্ন দুই গতিতে। একসময় সেমিফাইনালের অনেক হিসাব-নিকাশ কষা দলটা বিশ্বকাপ শেষ করলো শুধু আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপর থেকে। বেশি আশা ভাল নয়, এমন ভেবেছিলেন নাকি এরপর আপনি?
বিশ্বকাপ একটা ক্ষত রেখে গেল। শ্রীলঙ্কা সিরিজ সে ক্ষত পূরণে সহায়তা করতে পারত একটু। উলটো বাংলাদেশ সেখানে হলো হোয়াইটওয়াশ। তেতো স্বাদটা বাড়িয়ে দিতে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে তৈরি হলো ধোঁয়াশা। অধিনায়ক থাকছেন না অবসর নিচ্ছেন- বেশ আলোচনায় ছিল সেটিও।
তবে বছরশেষে বাংলাদেশ পেলো আরও বড় ধাক্কা। বিশ্বকাপে যিনি নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই সাকিবই সামনের বছরের অনেকটা জুড়ে থাকবেন না নিষেধাজ্ঞার কারণে!
গত বছরের ০.৬ জয়ের হারটা এ বছর নেমে এসেছে ০.৩-এ- ওয়ানডেতে ২০১৯ তাই শেষ পর্যন্ত হয়ে থেকেছে হতাশা হিসেবেই।
সবচেয়ে বেশি রান : মুশফিকুর রহিম- ৭৫৪ রান, ৫০.২৬ গড় ;সাকিব আল হাসান- ৭৪৬ রান, ৯৩.২৫ গড়
সবচেয়ে বেশি উইকেট : মোস্তাফিজ- ২৮.১৪ গড়ে ২৯। সাইফউদ্দিন- ৩৭.২৭ গড়ে ১৮।
টি-টোয়েন্টি : অন্যতম সেরা বছর!
উহু। টি-টোয়েন্টি কখনোই বাংলাদেশের প্রিয় ফরম্যাট বলে মনে হয়নি। এখানে-ওখানে জয় বা এমন কিছু- টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ চলছে এভাবেই। এ বছরও তাই। আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ে ও ভারতের বিপক্ষেই বাংলাদেশ খেলেছে ৭টি ম্যাচ। আফগানিস্তানের কাছে হেরেছে একটি, দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালটা ভেসে গেছে বৃষ্টিতে।
ভারতে গিয়ে প্রথম ম্যাচ জিতে প্রত্যাশার পারদ বেশ উঁচুতে তুললেও ঘাম দিয়ে জ্বর নেমে গেছে পরের দুই ম্যাচে। ত্রিদেশীয় সিরিজে আফিফ হোসেনের প্রত্যাবর্তন ও ভারত সিরিজে নাঈম শেখের অভিষেক অবশ্য আশা জুগিয়েছে বাংলাদেশকে।
সব মিলিয়ে এ বছরটা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সেরা এক দিক দিয়ে। জয়-পরাজয়ের অনুপাত ১.৩৩, যা সবচেয়ে বেশি তাদের রেকর্ডে।
সবচেয়ে বেশি রান : মাহমুদউল্লাহ ২৯.৮৩ গড়ে ১৭৯। নাঈম ৪৭.৬৬ গড়ে ১৪৩।
সবচেয়ে বেশি উইকেট : শফিউল ৮, সাইফউদ্দিন ৭।