• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপপর্ব : যা দেখেছেন, যা দেখেননি

    চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপপর্ব : যা দেখেছেন, যা দেখেননি    

    চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপপর্বের সেরা ৫ ঘটনা.... 

    ১. নো কান্ট্রি ফর ‘ছোট ক্লাব’ 
    চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলতে এবার জায়গায় হয়নি ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগের বাইরে থাকা কোনো দলের। ইউরোপিয়ান ফুটবলের ইতিহাসে এবারই প্রথম ঘটল এমন কিছু। ইংল্যান্ড ও স্পেন থেকে অংশ নেওয়া চারটি দলই উতরে গেছে গ্রুপপর্ব। জার্মানি ও ইতালি থেকে তিন দল, আর ফ্রান্স থেকে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করেছে আরও দুই দল।

    চ্যাম্পিয়নস লিগ ‘বড়দের’ হাতে চলে গেছে আসলে আয়াক্সের ব্যর্থতায়। শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠ এক পয়েন্ট দরকার ছিল ডাচ চ্যাম্পিয়নদের। সে ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ভ্যালেন্সিয়ার কাছে হেরে গতবারের সেমিফাইনালিস্ট আয়াক্স বাদ পড়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। ইউক্রেন থেকে শাখতার দোনেতস্কের সামনেও সুযোগ ছিল পরের রাউন্ডে যাওয়ার। তবে তারাও আটালান্টার কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। 

    গ্রুপ পর্বের সবচেয়ে ‘লুজার’ আসলে কারা সেটা নিয়ে অবশ্য তর্ক হতে পারে। আয়াক্স নাকি ইন্টার মিলান? আয়াক্স খেই হারিয়েছে শেষ ম্যাচে গিয়ে। আর ইন্টার আগে থেকেই নড়বড়ে- স্লাভিয়া প্রাগ, ডর্টমুন্ড, বার্সেলোনার সঙ্গে এগিয়ে থেকেও শেষে গিয়ে ড্র করায় আগে থেকেই ছিল চাপে। শেষ পর্যন্ত ‘দ্বিতীয়’ বার্সেলোনাকেও হারাতে পারেনি ইন্টার। আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এমন একটা সময় ইন্টার দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারল না, যখন তারা সিরি আ-তে আছে সবার ওপরে।  গতবারও বার্সেলোনার কাছে শেষ ম্যাচে হেরেই গ্রুপের বাধা টপকাতে পারেনি ইন্টার। এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, এর পর ইন্টারের উন্নতি নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। 

    আয়াক্সের পক্ষে অবশ্য যুক্তি দাঁড় করানো যায়। সান সিরোতে ইন্টারের ম্যাচ শেষে স্কোরবোর্ড দেখে  ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ংয়ের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল কতোখানি হতাশ তিনি। ডি ইয়ংয়ের সঙ্গে আয়াক্স হারিয়েছে ম্যাথিয়াস ডি লিট ও লার্স শোনকেও। তার ওপর ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে দলের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কেও ইনজুরির কারণে পায়নি আয়াক্স। সে হিসাবে বড় ‘লুজার’ ইন্টার মিলানেরই হওয়ার কথা।     

    ২. গোল, গোল আর গোল 
    বায়ার্ন মিউনিখ গ্রুপপর্ব শেষ করেছে ৬ ম্যাচের সবকয়টিতে জিতে। এই ছয় ম্যাচের ভেতর টটেনহামকে তাদের মাঠে ৭-২ গোলে হারানো ম্যাচটাও আছে। এর ভেতর বায়ার্নের কোচের পদ থেকে আবার বরখাস্তও হয়েছিলেন নিকো কোভাচ। এর পর থেকে স্থায়ী কোচ ছাড়াই খেলছে বায়ার্ন। বাভারিয়ানদের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেই না হারানোর সবচেয়ে কারণ রবার্ট লেভানডফস্কি। একাই প্রতিপক্ষকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছেন পোলিশ স্ট্রাইকার। গ্রুপপর্ব শেষে সবচেয়ে বেশি ১০ গোল তার। আর বায়ার্নও গ্রুপপর্বের সবচেয়ে বেশি (২৪) গোল করা খেলোয়াড়। 

    লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরা এদিক দিয়ে এবার ভিন্ন। দুইজনই দুইটি করে গোল করেছেন গ্রুপপর্বে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা রেডবুল সালজবুর্গের এর্লিং ব্রুট হালান্ড। ৮ গোল করা তরুণ স্ট্রাইকার অবশ্য নিজের গোল সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। দ্বিতীয় পর্বে উঠতে পারেনি তার দলও। 

    এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপপর্ব গোলের দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে আগের সব আসরের রেকর্ড। মোট ৩০৮ টি গোল করেছে ৩২ টি দল। ২০১৭-১৮ এর ৩০৬ গোলের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে সেটা। 

      

    ৩. দল গড়েছেন জিদান, গ্রুপের রাজা আরও একবার পিএসজি 
    পিএসজির কাছে হেরে যখন রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরুর করেছিল তখন জিনেদিন জিদান নতুন করে পড়ে গিয়েছিলেন চাপে। সেটা আরও বেড়েছিল ক্লাব ব্রুজের সঙ্গে ঘরের মাঠে রিয়াল ড্র করার পর। সেই নড়বড়ে রিয়াল মাদ্রিদ এর পর দারুণভাবে গুছিয়ে নিয়েছেন জিদান। পিএসজির বিপক্ষে ফিরতি লেগেই নিজেদের প্রমাণ করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ডিফেন্স থেকে ফরোয়ার্ড লাইন প্রায় সব জায়গায়তেই দারুণ স্থিতিশীলতা এই দলে। জিদান তাই অনেকটাই রসিকতা করেই বলেছেন, দ্বিতীয় পর্বে লিভারপুলকে পেলেও হারিয়ে দেবে তার দল। রসিকতা হোক যাই হোক, রিয়াল মাদ্রিদের সেই আত্মবিশ্বাসটুকু পুঁজি হয়েছে এবার। 

    রিয়ালের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পিএসজি। পুরো ৫ পয়েন্টের লিড তাদের। নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পেদের সঙ্গে মাউরো ইকার্দিও নিজের ঝলক দেখিয়েছেন গ্রুপপর্বে। তবে পিএসজির আসল লড়াই শুরু আসলে এর পর, দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। তার আগে নিজেদের আরও গুছিয়ে নিতে আরও  দুই মাস সময় পাচ্ছে পিএসজি। 


    ৪. ব্রাজিলিয়ানদের রাত, আর্জেন্টাইনদের রাত 
    এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপপর্ব ব্রাজিল-আর্জেন্টাইনদের একটু আলাদা করে চেনানোর সুযোগ করে দিয়েছে। শেষ ম্যাচের রাতটা যেমন গেছে ব্রাজিলিয়ানদের। গ্যাব্রিয়েল হেসুস হ্যাটট্রিক দিয়ে শুরু করেছিলেন, এর পর নেইমার, ফিলিপ কুতিনিয়ো রদ্রিগো, ভিনিসিয়াস জুনিয়র- একে একে সবাই গোল করেছেন। আর্জেন্টিনা ভক্তদের অবশ্য মন খারাপ করার কারণ নেই তাতে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ ডে তিনে, এরিক লামেলা, অ্যানহেল ডি মারিয়া, মাউরো ইকার্দি, লিওনেল মেসিরা- সবাই গোল করেছিলেন। ইউরোপিয়ান লিগে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ভক্তরা তাই উদযাপন করার মতো অনেকগুলো মুহুর্তই পেয়েছেন এবার।      


    ৫. আটালান্টায় ম্লান  স্লাভিয়া প্রাগ 
    চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপপর্ব ড্র। বার্সেলোনা, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ইন্টার মিলানের সঙ্গে চতুর্থ দল হিসেবে গ্রুপে ছিল স্লাভিয়া প্রাগ। নিজেদের ক্লাবকে ইউরোপের রথী-মহারথীদের সঙ্গে দেখে হতাশায়  হেসেই ফেলেছিলেন স্লাভিয়া প্রাগের ক্লাব প্রতিনিধিরা। সেই স্লাভিয়া প্রাগ এর পর একের পর এক চমক দেখিয়েছে শুরু। সান সিরোতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ড্র দিয়ে শুরু করেছিল চেক প্রজাতন্ত্রের ক্লাবটি। এর পর ঘরের মাঠ বার্সেলোনার আছে ২-১ গোলে হারলেও সে ম্যাচে মেসিদের কঠিন সময় উপহার দিয়েছিল স্লাভিয়া প্রাগ। পরের লেগে তো ন্যু ক্যাম্পেই বার্সাকে আটকে দিয়েছিল তারা। শেষ দুই ম্যাচেও স্লাভিয়া পথ হারায়নি, যদিও জিততে পারেনি শেষ পর্যন্ত। তবে স্লাভিয়া যা চমক দেখানোর তা আগেই দেখিয়ে গেছে। 

    অবশ্য আটালান্টার কাছে ম্লান হয়ে গেছে স্লাভিয়ার চমকও। গ্রুপ পর্বে প্রথম তিন ম্যাচ হেরেও তারা উঠে  গেছে নক আউট পর্বে। তাও আবার প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে এসে। দুই মিলানের কোনো মিলানই না থাকলেও সান সিরোতে তাই থাকছে চ্যাম্পিয়নস লিগ।