অবশেষে বার্নাব্যুতে অ্যাটলেটিকোকে পরাজয়ের স্বাদ দিলেন বেনজেমা
কোন মুহূর্তে ম্যাচের মোড়টা আসলে ঘুরে গেল?
যে মুহূর্তে জিনেদিন জিদান ঠিক করলেন, বিরতির সময় একটা ফাটকা খেলবেন? ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও লুকাস ভাজকেজকে নামিয়ে দেবেন টনি ক্রুস আর ইসকোর জায়গায়? নাকি যে মুহূর্তে ভিনিসিয়াসের থ্রুটা ধরে ফার্লান্দ মেন্ডি ওই নিখুঁত ক্রসটা করবেন? নাকি যে মুহূর্তে আলভারো মোরাতাকে দেওয়া কাসেমিরোর ধাক্কাটা পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি রেফারি?
আপনি হয়তো প্রথমটার পক্ষেই ভোট দেবেন। মাদ্রিদ ডার্বি প্রথমার্ধে গত বেশ কয়েক বছরের চিত্রনাট্য মেনে চলছিল। বার্নাব্যুতে লা লিগায় অ্যাটলেটিকোর রেকর্ড দারুণ বললেও কম বলা হয়, গত ছয় ম্যাচের একটিতেও হারেনি তারা। প্রথমার্ধ শেষে মনে হচ্ছিল আজও তেমন কিছু অপেক্ষা করছে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য।
এমন নয়, প্রথমার্ধে রিয়াল একদমই সুযোগ পায়নি। সার্জিও রামোস বক্সের ভেতরে ফাঁকায় বল পেয়েও অত কাছ থেকে যদি ঠিকমতো পায়েই লাগাতে না পারেন, সেটার দায় তো ভাগ্যের নয়। কিন্তু এটা ছাড়া খুব বেশি পরিষ্কার সুযোগ পায়নি মাদ্রিদ। বরং সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে এগিয়ে যেত অ্যাটলেটিকোই। ১৯ মিনিটেই সলের শট একটুর জন্য চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। তবে প্রথমার্ধে অ্যাটলেটিকো সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি গিয়েছিল ২৪ মিনিটে। আনহেল কোরিয়াকে বলটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভিতোলো, কোরিয়া ডান প্রান্ত থেকে ভেতরে ঢুকে শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু কোণটা বেশি কঠিন হয়ে গিয়েছিল, পোস্টের বাইরের দিক থেকে লেগে ফিরে আসে বল। এরপরও কোরিয়া গোলের আরও ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন, কাজে লাগাতে পারেননি। অবশ্য অফসাইডের জন্য সেই গোল বাতিল হয়ে যেত এমনিতেও। এর মধ্যেই আসে ম্যাচের অন্যতম আলোচিত মুহূর্ত। কাসেমিরো বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে এসে পড়েন মোরাতার ওপর। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি, ভিআরও বদলায়নি। যদিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, কাসেমিরোর সঙ্গে মোরাতার ‘কন্ট্যাক্ট’ হয়েছে। তবে সেটা পেনাল্টির জন্য যথেষ্ট কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর কোনো সংশয় রাখতে দেননি জিদান। ক্রুস আর ইস্কোকে উঠিয়ে নামান ভিনিসিয়াস আর ভাজকেজকে। রিয়াল যেন জাদুমন্ত্রের মতো বদলে গেছে এর পরেই। ফিফটি ফিফটি বলগুলো তাদের দখলে আসতে থাকে। মদ্রিচ প্রথমার্ধেও দারুণ খেলেছিলেন, প্রথম ৪৫ মিনিটে অ্যাটলেটিকোর পোস্টে রিয়ালের একমাত্র শট তারই ছিল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফ্রেডি ভালভের্দে আরেকবার দূর থেকে পরীক্ষা নিয়েছিলেন অ্যাটলেটিকো গোলরক্ষকের। তবে অবলাককে পরাস্ত করার জন্য আরও ভালো কিছুর দরকার ছিল।
৫৬ মিনিটে সেই আরও ভালো কিছু পেয়ে যায় রিয়াল। তবে কারিগর বদলি ভিনিসিয়াস, তার দারুণ থ্রু খুঁজে নেয় ওভারল্যাপ করে ওপরে উঠে আসা মেন্ডিকে। বাঁ পায়ে যে দুর্দান্ত ক্রস করেছিলেন মেন্ডি, সেটা মার্কারকে ফাঁকি দিয়ে খুঁজে নেয় বেনজেমার পা। অত কাছ থেকে গোল করতে ভুল করেননি রিয়াল স্ট্রাইকার। প্রায় সাড়ে চার বছর পর লা লিগায় মাদ্রিদ ডার্বিতে গোল পেলেন করিম বেনজেমা। আর একটু অবিশ্বাস্যই মনে হবে, বার্নাব্যুতে লিগে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে এটি বেনজেমার প্রথম গোল।
এর মধ্যে চোট পেয়ে নেমে গেছেন মোরাতা, মরিয়া সিমিওনে নামিয়েছেন ক্যামেলো আর কারাসকোকে। কিন্তু সেই অর্থে পরিষ্কার আর সুযোগ পায়নি অ্যাটলেটিকো। বরং বাঁ দিক থেকে দারুণ কাট ব্যাক করার পর ভিনিসিয়াসের শট আরেকটু এদিক ওদিক হলেই খুঁজে নিতে পারত জাল, কিন্তু সরাসরি চলে যায় অবলাকের হাতে। কিন্তু শেষ দিকে আর কিছু করতে পারেনি অ্যাটলেটিকো।
এই জয়ে লিগে অপরাজিত যাত্রাটা আরেক দফা বাড়ল রিয়ালের। ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে বার্সার সঙ্গে দূরত্বটা এখন ৬ পয়েন্টের রিয়ালের, যদিও রিয়াল ম্যাচ খেলেছে একটি বেশি।