• জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    আক্ষেপের পরও বাংলাদেশের প্রাপ্তিরই দিন

    আক্ষেপের পরও বাংলাদেশের প্রাপ্তিরই দিন    

    ২য় দিন, স্টাম্পস
    জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ২৬৫ (এরভিন ১০৭, মাসভাউরে ৬৪, নাঈম ৪/৭০, রাহি ৪/৭১) 
    বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ২৪০/৩* (মুমিনুল ৭৯*, শান্ত ৭১, টিরিপানো ১/৪০)
    বাংলাদেশ ২৫ রানে পিছিয়ে


    দিনটা আক্ষেপের। আবার তৃপ্তিরও। 

    ইনিংসটা বড় করতে না পেরে তামিম ইকবাল আক্ষেপ করতে পারেন, নাজমুল হোসেন শান্তর আক্ষেপ থাকতে পারে প্রথম ফিফটিটা ৭০-পেরুনো ইনিংসে রূপ দিয়েও সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে না পেরে। সাইফ হোসেন তার কাঙ্ক্ষিত লম্বা ইনিংস এদিনও খেলতে পারলেন না। জিম্বাবুয়ের লোয়ার অর্ডার অল্পতেই গুটিয়ে গিয়ে আক্ষেপ করতে পারে, কয়েকটি ব্রেকথ্রু পেয়েও সেসব কাজে না লাগানোর আক্ষেপ থাকতে পারে তাদের বোলারদের। 

    তবে শান্তর ৭১, মুমিনুলের অনেকদিন পর পাওয়া ফিফটির পর সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া, কিংবা বড় লিডের আভাস- বাংলাদেশকে তৃপ্তি দিতে পারে এসব। 

    মিরপুরের উইকেট দ্বিতীয় দিন প্রথম দিনের চেয়েও বেশি ব্যাটিং সহায়ক ছিল অনুমিত ভাবেই। সেখানে জিম্বাবুয়ে শেষ ৪ উইকেটে যোগ করতে পেরেছে মাত্র ৩৭ রান। সকালে রাহি-নাঈমের মাঝে একটা অলিখিত দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছিল, কে আগে ৫ উইকেট নিতে পারবেন। তাইজুল এসে ভাগ বসানোয় দৌড়ের শিরোনামটা বদলে ‘কে আগে’ থেকে হয়ে গেল শুধু ‘কে’। তবে শেষ উইকেটটাও গেল তাইজুলের কাছেই। 

    সকালে আরেক দফা ভাল বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়েছেন রাহি। একটু মুভমেন্ট আদায় করে নিয়েছেন, তাতেই ধরা পড়েছেন ডোনাল্ড টিরিপানো। টিরিপানো ও চাকাভাকে টানা দুই ওভার মেইডেনের পর একটা এজে চার খেয়েছিলেন রাহি, তবে এরপরের ওভারে পেয়েছেন উইকেটটা, এজেই। পরের ওভারে আবার এন্ডলোভু হয়েছেন এলবিডব্লিউ। তাতেই নাঈমের সমান ৪ উইকেট হয়ে গেছে রাহির। 

    ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মোস্তাফিজুর রহমান ৪ উইকেট নিয়েছিলেন, দেশের মাটিতে বাংলাদেশ পেসারের ইনিংসে ৪ বা এর বেশি উইকেট নেওয়ার শেষ ঘটনা ছিল এটিই। রাহির এরপর পালা ছিল প্রায় ১০ বছরের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার, ২০১০ সালে শাহাদাত হোসেন শেষ বাংলাদেশী পেসার হিসেবে দেশের মাটিতে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন, ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। শেষ বাংলাদেশী পেসার হিসেবে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন রবিউল ইসলাম, ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে। সব মিলিয়ে টেস্টে বাংলাদেশ পেসাররা ৫ উইকেট নিয়েছেন ৭ বার। 

    তবে তাইজুল এসে শুমাকে একবিডব্লিউ করলেন, নাঈমও এলেন বোলিংয়ে। শেষ পর্যন্ত শেষ উইকেটটাও গেল তাইজুলের কাছেই, ধৈর্যচ্যুত হয়ে স্লগ করতে গিয়ে আকাশে তুলেছিলেন চাকাভা। 
     


    ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিটা সেঞ্চুরি পর্যন্ত টানতে পারেননি শান্ত/বিসিবি


    লাঞ্চের আগে ৮ ওভার পার করতে হতো দুই বাংলাদেশ ওপেনারকে, সাইফ সেটি পারলেন না। জিম্বাবুয়েকে ব্রেকথ্রু দিয়েছিলেন নাইউচি, ক্রিজে আটকে থেকে খোঁচা দিয়েছেন সাইফ। এই ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ২-৩ ম্যাচের মধ্যে পারফর্ম করতে না পারলে বাদ পড়তে হবে- সেটি জানেন তিনি। ভাল করার আরেকটি সুযোগ এদিন নিশ্চিতভাবেই হারালেন এই ডানহাতি। 

    লাঞ্চের আগে-পরে শান্ত ও তামিম অবশ্য জিম্বাবুয়েকে হতাশ করে গেছেন বেশ কিছুক্ষণ। লাঞ্চের পর প্রথম বলেই দারুণ টাইমিংয়ে কাভার দিয়ে চার মেরেছিলেন টিরিপানোকে। মাঝে একটু লাইন-লেংথে আঁটসাঁট ছিলেন জিম্বাবুয়ে বোলাররা, তবে তামিম-শান্ত চড়াও হয়েছেন আবারও। শুমাকে ১৩ বলের মাঝে ৫ বাউন্ডারিতে তামিম বুঝিয়েছিলেন, দিনটা হতে পারে তারও। 

    টিরিপানোর মোটামুটি গুডলেংথে পড়া বলটায় গড়বড় হয়ে গেছে তা। এক বল আগেই রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়েছিলেন, কাজে দিয়েছে সে অ্যাঙ্গেল। তামিম ড্রাইভ করতে গিয়ে আউটসাইড-দ্য-লাইনে খেলে এজড হয়েছেন ৪১ রান করে।

    শান্ত অবশ্য এর আগেই রানের গতিতে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তামিমকে। দারুণ টাইমিং ছিল তার, চা-বিরতির আগে পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিও, ১০৭ বলে। অবশ্য মাইলফলকে যাওয়ার আগে একটা মেইডেন দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি। ফিফটির পর আর বাউন্ডারি মারেননি, শেষ পর্যন্ত শুমার বেশ বাইরের বলেই শেষ মুহূর্তে খোঁচা দিয়েছেন তিনি। 

    এখন পর্যন্ত প্রতিটি উইকেটেই আশা জুগিয়েছিল জিম্বাবুয়েকে, বাংলাদেশের বাঁধ ভাঙার। তবে হয়নি সেটি, এবার মুমিনুলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মুশফিক। শেষ ঘন্টায় দুজন মিলে তুলেছেন ৬৬ রান।

    জিম্বাবুয়ের স্পিনাররা সুবিধা করতে পারেননি, নাঈমের মতো আঁটসাঁট বোলিংয়ের বদলে আলগা বল করেছেন তারা একটু পরপরই প্রায়। সেসবের সুবিধা আদায় করেছেন মুমিনুল-মুশফিক। ৪ চারে ৭৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করা বাংলাদেশ অধিনায়ক পরের ২৯ রানে মেরেছেন ৫টি চার। ৩২ রানে ব্যাটিং করা মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে তিনি অপরাজিত আছেন ৭৯ রানে। শেষ ১৪ ইনিংসের মাঝে এটি তার সর্বোচ্চ। 

    ২০১৮ সালের নভেম্বরে শেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মুমিনুল, তৃতীয় দিন আরেকটি পাবেন কিনা, সেটির ওপর নির্ভর করছে- মুমিনুলও ‘আরেকটি আক্ষেপে’ পুড়বেন কিনা। 

    তবে আক্ষেপ থাকলেও, দিনটা বাংলাদেশের জন্য তো প্রাপ্তিরও।