'সবচেয়ে খারাপ সময়ে আর কাউকে পেতাম না', মাশরাফিকে তামিমের ধন্যবাদ
সবসময় সমর্থন পেয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ‘ধন্যবাদ’ দিয়েছেন তামিম ইকবাল। ‘ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময়ে’ তাকে যেভাবে পেয়েছেন, অন্য কাউকে এভাবে পেতেন না বলেও মনে করেন বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে লাইভে এসে টানা তৃতীয়দিনের মতো সতীর্থকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তামিম। এদিন অতিথি ছিলেন মাশরাফি। সেখানেই স্মৃতিচারণ করেছেন দুজন। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাজে সময়ে মাশরাফির পাশে থাকার গল্পও শুনিয়েছেন তামিম। মাশরাফি প্রসঙ্গ টেনে ‘কোট’ করেছেন, “যখন ‘বুম বুম তামিম হ্যাজ বিকাম নাউ ঘুম ঘুম তামিম’।”
সে বিশ্বকাপে একদিন মাশরাফিকে ধরে কেঁদেও ফেলেছিলেন তামিম, “আমি এতোই কষ্ট পাচ্ছিলাম, ভালও খেলছিলাম না বিশ্বকাপে। আমি আপনাকে ধরে কান্না করে দিয়েছিলাম। আপনি যেভাবে সামলেছেন আমাকে। আমি অনেকের সাথে খেলব মাশরাফি ভাই, কিন্তু ওই দিনটা ভুলতে পারব না। সে সময় আপনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, কীভাবে কথা বলব। কীভাবে চলব। আমি এখনও সেসব অনুসরণ করি। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময়ে আমি আপনাকে যেভাবে পেয়েছি, আর কাউকে পেতাম না। আমি সত্যি আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।”
“আমি সবসময়ই বলতাম, ২০১৫ বিশ্বকাপে সব খারাপ ছিল আমার আগাগোড়া। কিন্তু আপনি সবসময়ই টিম হার্ডলে সবার আগে আমার কথা বলতেন, ‘যে কাল তামিম রান করলে আমরা জিতব’। আমি বুঝতাম আপনি কেন বলতেন। একটা ব্যাপার মাশরাফি ভাই, যে আমি এমন একজন, আমাকে যদি কেউ গুরুত্ব দেয়, তাহলে আমি ভাল করি। আপনি যে আমাকে ভাল লাগানোর জন্য করতেন, আমি ভুলতে পারব না।”
জবাবে মাশরাফি বলেছেন, তার বিশ্বাস ছিল তামিমের ওপর, “তামিম, সম্পর্কটাই এমন। এখানে একটা ব্যাপার আছে। আমি বিশ্বাস করি, যে তুই যদি চিন্তা না করতি যে ‘রান করছি না’, তাহলে তুই ভাল করতি। তুই তখন আলাদা ক্রিকেটার। আচ্ছা, ২০১৫ এর পর পাকিস্তানের সাথে দুইটা সেঞ্চুরি একটা ফিফটি (করলি), বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণ (এর বিপক্ষে)।
“আমি এরপর বাসায় যখন এসেছি বা হোটেলে, আমি তখন নিজেকে প্রশ্ন করেছি, ‘আমি ঠিক না ভুল’। তুই নিজেকে প্রমাণ করিসনি, তুই আমাকে প্রমাণ করিসনি, আমি নিজেকে প্রমাণ করেছি। যে আমি ঠিক। আমি তামিমকে সমর্থন দিচ্ছি, আমি ঠিক। একেবারেই ঠিক।”
এমনই এক খারাপ সময়ে তামিম আউট হয়ে ফেরার পরের স্মৃতিও উল্লেখ করেছেন তামিম, “মনে আছে, একবার আউট হয়ে ফেরার পর একজন বলল, ‘মেক শিউর দ্যাট হি ডাজনট প্লে দ্য নেক্সট গেম’। আপনি বললেন, ‘ইফ হি ডাজনট, দেন আই উইল রিজাইন’। আমার আশা, আমিও এমন কারও জন্য করব।”
মাশরাফি তামিমকে বলেছেন, ‘ম্যাচ উইনারদের দিকে নজর রাখতে, “তোর ক্ষেত্রে বারবার ঘটত। আমি যতক্ষণ জানি, তুই সেরাটা দিচ্ছিস। তাহলে তো কিছু যায় আসে না। সৌম্য, লিটন, মোস্তাফিজ আছে, তুই জানিস, তারা কতো বড় অস্ত্র। তাদের জন্য প্রকাশ্যে না বললেও, যদি স্পেস দিতে পারিস। ওরা কিন্তু ম্যাচ উইনার।”
“তুই এখন অধিনায়কত্ব করবি, অনেকে অনেক কিছু বলবে। তবে তোর মন যা বলবে, ‘গাট ফিলিং’ যা বলতে তুই সেটাই করবি। মন থেকে করলে, রাতে ঘুমানোর সময় খারাপ লাগবে না, যে তুই তোর কথা শুনে হেরেছিস। অন্যর কথা শুনে করলে তোর মনে হবে আমার মন বলছিল, কেন করলাম না।”
“সব সময় সামনে তাকাতে হবে। আমি তোর কাছে প্রত্যাশা করি। তুই চাইতিস না। এখন আসছে। তুই জানিস কী করতে হবে। মন খুলে করবি। যেটা ইচ্ছা করে করবি। সবার সাথে আলোচনা করবি। তোর নেতৃত্ব মাঠে ব্যবহার করিস, তাহলে তুই অনেক সফল হবি।”
অবশ্য অধিনায়কত্বে মাশরাফির ‘মতো’ কাজ করলেও কীভাবে তার সমান হবেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন তামিম, “আমি সবসময় বিশ্বাস করতাম, আপনার সাথে জ্বিন-টিন কিছু আছে। আমি মানা করতাম, অফস্পিনার দিয়েন না। আপনি দিতেন। উইকেট পেয়ে যেতো। আমি হয়তো আপনার মতো অধিনায়কত্ব করতে পারব, কিন্তু জ্বিনটা আনব কোথা থেকে?”
সেটার সমাধানও দিয়েছেন মাশরাফি, “তুই অফস্পিনার আনতি না সে সময় অধিনায়ক থাকলে, তাই তো? সেটাই করবি। সেটাই তোর বিশেষত্ব। আমি দিব (দিয়েছি) অফস্পিনার, কারণ আমার মন বলেছে- এটা আমার বিশেষত্ব। এটা দিয়েই সফল হবি ইনশাল্লাহ।”