দানি আলভেজ : লর্ড অফ দ্য উইং
দানি আলভেজের জন্য ব্যাপারটা “আই শ্যাল পাস”। সেটা ফুটবলীয় পাসও হতে পারে, আবার আক্ষরিক অর্থে শব্দের বাংলা করলে যা দাঁড়ায় তেমনটাও হতে পারে। দানি আলভেজকে তো আটকে রাখা যায় না। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ৩৭ এ পা দিয়েছেন, গত বছর অধিনায়ক হিসেবে কোপা আমেরিকার শিরোপাও উঁচিয়ে ধরেছেন। কিন্তু থামাথামির নাম নেই। লক্ষ্য একটাই, ২০২২ বিশ্বকাপ খেলতে চান তিনি। বয়স তখন দাঁড়াবে ৩৯। তাতেও সমস্যা নেই। আলভেজ মানেন, চাইলে সব সম্ভব।
আলভেজ সব কিছু সম্ভব করার মন্ত্র শিখেছিলেন খামারে কাজ করার সময় থেকে। ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় শহর সাও পাওলো থেকে দুই হাজার কিলোমিটার উত্তরের এক শহরে জন্মেছিলেন আলভেজ। জুয়াজেইরোর বাড়িতে প্রতিদিন ভোর ৪টায় ঘুম ভাঙত বাবার ডাকে। শহরের ঠিক বাইরে এক খামার, সেখানেই কাজে যেতেন আলভেজ। কিশোর বয়সে খামারের পাশাপাশি এক হোটেলেও বেয়ারার কাজ করে সংসারে যোগান দিতেন। অল্প-স্বল্প টাকা অবশ্য জমিয়ে রাখতেন নিজের কাছে। সেটা ফুটবলের জন্য। জুয়াজেইরোর এক কোনায় সুন্দর একটা মাঠ ছিল, সেখানে খেলতে যাওয়াই ছিল দানির সাপ্তাহিক বিনোদন।
নিয়মিতই অবশ্য ফুটবল খেলতেন দানি। বাবাও ছিলেন ফুটবল পাগল, এলাকার ছেলে-পেলে নিয়ে একটি ফুটবল দল বানিয়েছিলেন তিনি। সেই দলে রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলতেন দানি। আর দশটায় ব্রাজিলিয়ানদের মতো স্ট্রিট-ফুটবলেই হাতেখড়ি তার। কিন্তু উইঙ্গার হয়ে খেলে গোল-টোল আর পেতেন না। একরকম বাধ্য হয়েই ডিফেন্সে খেলা শুরু করেছিলেন এরপর। তবে ওই ‘না পারাটাই’ পরে কাজে লেগেছে দানির।
বয়স ১৩, দানি তখন বড় ভাইয়ের সঙ্গে জুয়াজেইরোর ব্যস্ত শহরে এক বাসা ভাড়া নিয়েছেন। ফুটবল অনুশীলন করবেন আর কাজ-টাজ করে টাকা কামাই করবেন- এমনটাই ইচ্ছা। স্থানীয় এক ক্লাবে অনুশীলন করতে করতেই বাহিয়ায় খেলার ডাক পেয়েছিলেন দানি।
***
২০০০, স্পেন। লা লিগা থেকে রেলিগেটেড হয়ে গেছে সেভিয়া। নতুন করে, নতুন দর্শনে ফেরার লড়াই শুরু তাদের। সাবেক খেলোয়াড় মঙ্কিকে ক্লাবটির স্পোর্টিং ডিরেক্টর করা হলো। দায়িত্ব দুইটি- যুব দল শক্তিশালী করতে হবে, ইউরোপের বাইরে স্কাউটিংয়ে শক্তি বাড়িয়ে তরুণ ফুটবলারদের তুলে আনতে হবে।
সেভিয়া এক মৌসুম পরই আবার লা লিগার ফ্লাইট ধরেছিল। আর মঙ্কি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তার কাজ। জহুরি হিসেবে মঙ্কির এখন যে নাম-ডাক তার শুরু আসলে তখন থেকেই। তার প্রথম দিককার ‘সাফল্যের’ একজন ছিলেন আলভেজ। বাহিয়ার মতো ক্লাব থেকে হুট করে লা লিগার আলো ঝলমলে দুনিয়ায় ঠাঁই হওয়ার সুযোগ কমই ছিল আলভেজের। সেভিয়ায় শুরুতে অবশ্য আলভেজ এলেন ধারে। এসে বসে থাকলেন সাইডবেঞ্চে। কখনও কখনও সাইড বেঞ্চের টিকেটও মিলল না।
দানি আলভেজ একটা ব্যাপার মনে-প্রাণে মানেন। কঠিন সময়ে আপনি দুই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অবস্থা যাই হোক সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, নইলে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারেন। গুটিয়ে নিলে হয়ত নিরাপদ থাকবেন, আর ‘ঝুঁকি’ নিয়ে এগিয়ে গেলে জ্যাকপট হিট করে ফেলতে পারেন।
আলভেজের জন্য কঠিন সেই সময়টা ছিল সেভিয়ার প্রথম কয়টা মাসই। নভেম্বরে ব্রাজিলের হয়ে খেলতে গেলেন যুব বিশ্বকাপে। ব্রাজিল সেবার শিরোপা জিতল। আর আলভেজ হলেন টুর্নামেন্টের তৃতীয় সেরা ফুটবলার। আলভেজের সঙ্গে সেভিয়ার চুক্তি পাকা না হওয়ার কোনো কারণই ছিল না।
পরের মৌসুমে লা লিগায় মোট ২৯ ম্যাচ খেলেছিলেন আলভেজ। সেবার থেকেই দলে নিয়মিত হয়ে যান তিনি। স্প্যানিশ কোচ হুয়ান্দে রামোসের অধীনে সেভিয়ার চেহারাও ততোদিনে ফিরতে শুরু করেছে, আর আলভেজ ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিলেন ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে। তবে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর নজরে আলভেজ আসলেন ২০০৬ সালে। সেভিয়াকে ইউয়েফা কাপ (এখনকার ইউরোপা লিগ) জেতানোর পরও অবশ্য সেভাবে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই হলো না আলভেজের। হওয়ার কথাও অবশ্য ছিল না। তবে অক্টোবরে এক প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলের জার্সিতে সুযোগ পেয়ে গেলেন। মৌসুম শেষে আবারও সেভিয়ার হয়ে জিতলেন ইউয়েফা কাপ। মে, জুন- দুই মাস আলভেজের গেল স্বপ্নের মতো। সেভিয়ার হয়ে শিরোপা জিতে ব্রাজিলের জার্সিতে জিতলেন কোপা আমেরিকা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনালসহ খেললেন মোট ৪ ম্যাচ। তবে সেভিয়ায় ফিরে হুট করেই সব কেমন ওলট-পালট হয়ে গেল আলভেজের।
আগস্টে মোটামুটি ঘোষণা গিয়েই ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন আলভেজ। চেলসিও তার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। খেলোয়াড় আর চেলসির মধ্যে সমঝোতা হয়ে গেলেও সেভিয়ার প্রেসিডেন্ট গোঁ ধরে বসলেন। কিছুতেই ছাড়বেন না তিনি আলভেজকে। শেষ পর্যন্ত আলভেজের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সুসম্পর্কটাই আর থাকল না। তবে আলভেজ আরও এক মৌসুম সেভিয়ায় থেকে যেতে রাজি হয়েছিলেন।
***
“ওর সঙ্গে চুক্তিটা দারুণ ব্যাপার। যদি মেসির সঙ্গে আর সমন্বয়টা ভালো হয়- তাহলে আমি নিশ্চিত আমাদের রাইট ফ্ল্যাঙ্ক হবে বিশ্বের সেরা”- ২০০৮ সালে দানি আলভেজকে বার্সেলোনায় নিয়ে আসার পর বলেছিলেন পেপ গার্দিওলা।
বার্সেলোনায় গার্দিওলার নিজেরও সেটা প্রথম মৌসুম ছিল। রোনালিনহো, ডেকোরা চলে যাওয়ার পর নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছিল বার্সেলোনায়। শূন্য থেকে গড়ার চ্যালেঞ্জটাই নিতে চেয়েছিলেন আলভেজ। “কষ্ট করে কিছু না বানালে মহৎ হওয়া যায় না”- আলভেজের নিজের কথা।
গার্দিওলার কথা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়েছিল। বার্সেলোনার রাইট ফ্ল্যাঙ্ক শুধু সেরাই হয়নি, ফুলব্যাকের সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়েছিলেন দানি আলভেজ। আর বার্সেলোনার সাফল্যের অনেকটা জুড়েই ওই ডান প্রান্তে মেসি-আলভেজের সমন্বয়। প্রথম মৌসুমে সম্ভাব্য সব শিরোপা জিতে ওই বার্সেলোনা তো পরে ফুটবলের ইতিহাসটাই নতুন করে লিখেছিল। বার্সেলোনার ওই আধিপত্য চলেছে ২০১১ সালেও। লুইস এনরিকের আমলেও ছিল রেশ। আলভেজ যতদিন বার্সেলোনায় ছিলেন, আসলে ততোদিন ছিল বার্সেলনার জৌলুসও।
কথাটা অবশ্য অতিরঞ্জিন মনে হতে পারে। জাভি-ইনিয়েস্তা-মেসিদের মতো খেলোয়াড় থাকার পর একজন ফুলব্যাকের জন্য এতো প্রশংসা ‘বেশি’ মনে হলেও তাতে দোষের কিছু নেই। তবে আলভেজ ২০১৬ সালে বার্সা ছাড়ার আগ পর্যন্ত তার পরিসংখ্যান দেখুন। বার্সেলোনায় ৩৯১ ম্যাচে ১০১ অ্যাসিস্ট আর ২১ গোল। এরপর বার্সার রাইটব্যাক হিসেবে খেলা সার্জি রবার্তো আর নেলসন সেমেদো অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। পুয়োল গেছেন, তার খালি জায়গা পূরণ হয়েছে। জাভির শূন্যতা পূরণ হয়, ইনিয়েস্তার শূন্যতাও পূরণ হয়- কিন্তু আলভেজের বদলে বার্সেলোনা আরেকটা আলভেজ ৪ বছরেও বা পেল কই? পরিসংখ্যান বাদ দিন, আলভেজকে সংখ্যা তত্ত্বে বিচার করা যাবে না।
ফুলব্যাক পজিশনের সংজ্ঞাটাই তো বদলে দিয়েছিলেন আলভেজ। ডান দিক দিয়ে বার্সেলোনার বেশিরভাগ আক্রমণেই থাকতেন আলভেজ। আলভেজ নিজেকে ফাঁকায় রাখার অবিশ্বাস্য এক জাদু শিখে গিয়েছিলেন। রাইট ফ্ল্যাঙ্কে ওভারলোড তৈরি করে ফলস নাইন পজিশনে মেসির এতো সাফল্যের পেছনে বড় অবদানও আছে তার। আলভেজ মেসিকে পাস দেবেন, মেসি গোল করবেন- এই দৃশ্য লা লিগায় একটা সময় হাইলাইটাসের মতো চলেছে প্রতি সপ্তাহে। নিজেই গোল পাবেন, শট করলেই গোল হবে- এমন সব জায়গা থেকে কতশত বার আলভেজ মেসির পায়ে বল ঠেলে দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। আলভেজ একবার বলেছিলেন, "মেসি গোল দিক। লোকে বলবে মেসি অনেক গোল দিত। কিন্তু এরপর মানুষ জিজ্ঞাসা করবে তাহলে এই পাসগুলো কে দিত? তখন তারাই জবাব দেবে, দানি আলভেজ। আমি এতেই খুশি।"
আক্রমণের সঙ্গে ট্র্যাকব্যাক করার দারুণ ক্ষমতা, গেম রিড করতে পারা আর প্রখর মনোযোগ- এই তিনের মিশেল আলভেজ আর বার্সেলোনাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন বহুদূর। জেতা যায় এমন কিছু বাদ যায়নি আলভেজের বার্সা ক্যারিয়ারে।
আলভেজ কাফুকে মানতেন নিজের আইডল। দুর্দান্ত কাফুকে আলভেজ ছাড়াতে পেরেছেন কী না সেটা তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু বার্সেলোনার ৮ বছর দানি আলভেজ যে নিজেকে বিশ্বের সেরা ফুলব্যাকে পরিণত করেছিলেন সেটা নিয়ে বোধ হয় দ্বিমত করার লোক কমই পাওয়া খুঁজে পাওয়া যাবে।
***
২০১৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। বার্লিন স্টেডিয়ামের টানেল আবার দোতলা। ড্রেসিংরুম ওপরে। এস্কেলেটর চেপে ওঠা-নামার সুযোগ আছে তাতে। জুভেন্টাসের বিপক্ষে ফাইনাল শুরুর আগে আলভেজ অনুশীলনের জন্য নামছেন। সঙ্গে নেইমার। নেইমার স্বাভাবিক মানুষের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। আর আলভেজ দুই হাত, দুই পা মেলে দিয়েছেন এস্কেলেটেরের রেলিংয়ে। এরপর উপুড় হয়ে ওভাবেই নামছেন সিঁড়িতে পা না ফেলে।
ফাইনালের মতো ম্যাচের আগে এসব রসিকতা আপনি করতে পারবেন না। ফাইনাল পরীক্ষার আগেই পারবেন না, ফাইনাল ম্যাচ তো দূরে থাক। কেউ কেউ অবশ্য পারেন। তাদের ভেতর অদ্ভুত এক শক্তি কাজ করে। বিপদের সময় তাদের দিকে তাকিয়ে আপনি স্বস্তি খোঁজেন। আলভেজ তেমন একজন।
বার্সেলোনা ছেড়ে ‘বিনামূল্যে’ জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন ৩৩ বছর বয়সী আলভেজ। যাওয়ার অবশ্য খুব বেশি ইচ্ছা ছিল না তার। একরকম ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ক্লাব ছেড়েছিলেন। বার্সেলোনাকে তার অভাব বুঝতে পারবে সেটা আলভেজ নিজেও ক্লাব ছাড়ার সময় জানতেন। কিন্তু সুযোগটা এতো আগে পেয়ে যাবেন তা ভাবতে পারেননি।
বার্সেলোনার সঙ্গে আলভেজের কোনো ঝামেলা নেই। জুভেন্টাসের হয়ে যখন চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে ন্যু ক্যাম্পে গেলেন, ঢোকার আগে ক্লাবের লোগোতে হাত ছুঁয়ে ঢুকলেন মাঠে। বার্সেলোনা আলভেজের বাড়ি-ঘড়। সমস্যাটা ছিল ক্লাব অফিসিয়ালদের সঙ্গে। যা বুঝিয়ে দেওয়ার তা কোয়ার্টার ফাইনালের ওই দুই লেগেই আলভেজ বার্সেলোনাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আর বাকিদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন সেমিফাইনালে।
মোনাকোর বিপক্ষে গঞ্জালো হিগুয়াইনের দারুণ দুইটি গোলে অ্যাসিস্ট করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। তরুণ কিলিয়ান এমবাপ্পেকে পাহারায় রেখে নিষ্কর্মা বানিয়ে জানান দিয়েছিলেন বুড়িয়ে যেতে তার ঢের বাকি। এরপর আর কোনোদিন আলভেজের সঙ্গে ‘বুড়ো’ শব্দটি কেউ যোগ করেননি।
আলভেজের কাছে আরেকটি ব্যাপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুত্ব। ন্যু ক্যাম্পে যখন জুভেন্টাস সেমিফাইনালে ওঠার উল্লাস করছে, তখনও আলভেজ থেমে ছিলেন। সবার আগে গিয়ে নেইমারকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। নেইমার আলভেজকে পেয়ে কেঁদেছিলেন অঝোরে। গতবার কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালের পর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দ্বন্দ্বটা আরেক দফা উস্কে দিয়েছিলেন মেসি। আলভেজ ব্রাজিলের অধিনায়ক। এরপরও আলভেজ চুপ ছিলেন। সবকিছুর আগে সম্ভবত ‘বুন্ধত্বটাকেই’ প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
এসব অবশ্য এরিক আবিদালের গল্পের কাছে কিছুই না। বার্সেলোনার সাবেক ডিফেন্ডার যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন, তখন তাকে নিজের লিভার পর্যন্ত দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আলভেজ। আবিদাল পরে সুস্থ্ হয়েছেন। কিন্তু তার সম্মানে এক মৌসুমে আলভেজ নিজের ২ নম্বর জার্সি বাদ দিয়ে গায়ে চাপিয়েছিলেন ২২ নম্বর।
আলভেজ নিজ দেশে কোপা আমেরিকার শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন। ব্রাজিলের হয়ে আলভেজ আগেও কোপা জিতেছেন, কনফেডারেশনস কাপও জিতেছেন। তবে এই শিরোপার আবেদন ছিল আরেকটু বেশি। এক যুগ পর বড় টুর্নামেন্টের প্রথম শিরোপা, তাও ঘরের মাঠে। ব্রাজিলের ইতিহাসে নিজের জায়গা করে নেওয়াটা বাকি ছিল। ৩৫ এ গিয়ে সেটাও করা হয়ে গেছে।
***
ছোটবেলায় আলভেজের ইচ্ছা ছিল আরেকটি। সাও পাওলোর হয়ে খেলবেন। সে ইচ্ছা এতো প্রবল যে সাও পাওলো জাহান্নামের ক্লাব হলেও তিনি তার সদস্য হতে চাইতেন। সিরি আর পর, পিএসজিতে দুই মৌসুম ফ্রেঞ্চ লিগ জিতে, কোপা মিশন শেষ করে সেই সাও পাওলোতে যোগ দিয়ে ইচ্ছে পূরণ করেছেন আলভেজ। সাও পাওলোতে নাম লেখানোর পর তাকে দেওয়া হয়েছে ক্লাবের ১০ নম্বর জার্সি। আলভেজকে বরণ করার দিন সাও পাওলোর মাঠে হাজির ছিল ৪৫ হাজার সমর্থক। আর ছিলেন কাকা। তিনিই জার্সি তুলে দিয়েছিলেন আলভেজকে।
এই বয়সেও নতুন মিশনে নেমেছেন আলভেজ। এক যুগ ধরে লিগ জেতে না সাও পাওলো, ২০১২ এর পর আর কোনো শিরোপাই জেতা হয়নি তাদের। আলভেজ চান স্বপ্নের ক্লাবের হয়ে কিছু জিততে। তিনি বিশ্বাস করেন তিনি সেটাও পারবেন। কারণ সাও পাওলোর সমর্থক হয়ে খেলতে এসেছেন নাকি এখানে, “আমি সাও পাওলোর সবচেয়ে বড় সমর্থক। সমর্থকদের সঙ্গে আমার পার্থক্য হলো আমি মাঠে বসে কিছু একটা করতে পারব যেটা হয় আমাদের সাহায্য করবে।”
ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতা খেলোয়াড় আলভেজ। তার শিরোপা ভান্ডারে নেই শুধু বিশ্বকাপ। ৩৯ বয়সেও কেন বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখছেন- সেটা তো অনুমিতই। আলভেজ না চাইলে তাকে থামানোর তো আসলেই কেউ নেই।