'টেনশন করিস না' বলার পরই 'টেনশন ঢুকেছিল' সৌম্যর মাথায়
সৌম্য সরকার লুটিয়ে পড়েছেন, সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমদের সান্ত্বনাও যথেষ্ট হচ্ছে না তার কাছে। ‘ওয়াইড ইয়র্কার মাথায় ঘুরছিল’, সেটি করতে গিয়ে করে ফেলেছেন লেংথ বল। এক্সট্রা কাভার দিয়ে টেনে মেরেছেন দীনেশ কার্তিক, যেটি হয়েছে ফ্ল্যাট ছয়। শেষ বলে ৫ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের, ৪ হলেও নিদাহাস ট্রফির সেই ফাইনাল গড়াত সুপার ওভারে। সেটি হয়নি, ফাইনালও জেতা হয়নি তখনও বাংলাদেশের।
২০১৮ সালের সে টুর্নামেন্টের ফাইনালে শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান, অধিনায়ক সাকিব বোলিংয়ে এনেছিলেন ‘পার্ট-টাইমার’ সৌম্যকে। বলা যায়, আসলে সৌম্য ছাড়া অপশন ছিল না তার, মেহেদি হাসান মিরাজ ১ ওভারে দিয়েছিলেন ১৭ রান। শেষ ওভারের চাপ শুরুতে তাকে ছুঁয়ে যায়নি, সতীর্থরা উৎসাহ দিয়েই চাপটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন-- এমন বলেছেন সৌম্য।
তামিম ইকবালের লাইভ শো-তে মুমিনুল হক, লিটন দাসের সঙ্গে এসে সৌম্য ফিরে তাকিয়েছেন সে ওভারের দিকে। অবশ্য তামিম মজা করেছেন, “তোকে বোলার হিসেবে গুণি না, তুই জাতের বোলার বা কিছু। তবুও বল সে ওভারের আগে কী চলছিল তোর মনের মাঝে।”
সৌম্যর তখন শুধু মনে পড়েছিল মাহমুদউল্লাহর ‘৮ রানের থিওরি’, “প্রথম যখন সাকিব ভাই বোলিং দিয়েছে, কিছু মনে হয়নি যে এতো করতে হবে। রিয়াদ ভাই যখন প্রথম ঘরোয়াতে বোলিং দিত কঠিন সময়ে, বলতো, ‘তোর টার্গেট ৮ রান’। তো তখন আমার সেটা মনে হয়েছে। প্রথম ৩ বল যখন করেছি, আমার কিছু মনে হয় নাই। যে না ঠিক আছে, করছি। হেরে যাব, জিতে যাব- মাথায় কিছু ছিল না। যে জায়গায় বোলিং করব করতেছি।”
একটি ওয়াইডের পর প্রথম বৈধ ডেলিভারিটি ডট করেছিলেন সৌম্য, এরপরের দুই বলে এসেছিল দুটি সিঙ্গেল।
“তিন বল পর সবাই এসে বলা শুরু করেছে, যে তুই পারবি। তখন আমার মনে হয়েছে যে পারব মানে কি, আমি তো করছিই। আমি ২০তম ওভার বোলিং করব, আমি টেনশন নিচ্ছি না। তখন বাইরে থেকে বলছি (ডেকে পাঠিয়েছি) যে জল আনো, চোখে দিব। বাইরে থেকে এসে বলেছে যে সৌম্য, তুই পারবি, টেনশন করিস না। তখন আসলে আমার মধ্যে টেনশন ঢুকেছে। কেন, কী হচ্ছে।”
“দ্বাদশ ব্যক্তি বলার পরই ঢুকছে (চিন্তাটা)। চার নম্বর বলটা সবচেয়ে ভাল করেছিলাম, থার্ডম্যান দিয়ে চার হলো। সাকিব ভাই দৌড় দিয়ে আসছে, ‘এটা কিছুই না। এটা মনে কর, যে তোর হিরো হওয়ার চান্স আছে, জিরো হওয়ার নাই। কারণ তুই মূল বোলার না। জেতাতে পারলে বাংলাদেশে হিরো হবি’। এটা মাথায় নিয়ে পাঁচ নম্বর বল করতে গেছি, বিজয় শঙ্কর আউট হলো। সাব্বির-মিরাজ মিলে ধরেছে (ক্যাচ)। আউট না হলে ভাল হতো, দুই রান হলে বিজয় শঙ্কর স্ট্রাইকে থাকত।”
আরও পড়ুন- বাংলাদেশের যে ৫ ম্যাচ হতে পারতো অন্যরকম, হয়েছে শুধুই আক্ষেপের
শঙ্কর আউট হওয়ার ফলে প্রান্তবদল করে স্ট্রাইকে গিয়েছিলেন কার্তিক। শেষ বলে মুশফিকের কথা অনুযায়ী ‘ওয়াইড ইয়র্কার’ করতে চেয়েছিলেন সৌম্য, “তখন কারও দিকে মনযোগ নাই, শুধু মুশফিক ভাই বলছে যে ‘ওয়াইড ইয়র্কার’। তখন আমার মাথায় এটাই ঘুরছে, ‘ওয়াইড ইয়র্কার’। দৌড় দিয়েছি, করেছি-- কিন্তু হয় নাই।”
সৌম্য ভেবেছিলেন ওয়াইড ইয়র্কারই নিরাপদ অপশন, “তবে পরিকল্পনা ছিল, ওয়াইড ইয়র্কার যদি করি, এজ হলেও চার হবে থার্ডম্যান দিয়ে। টাইমিং ভাল হলেও কাভার দিয়ে চার হবে। তবুও আমি নিরাপদ। চার হলেও টাই, অন্তত সুপার ওভারে মোস্তাফিজ বা ভাল বোলার কেউ সুযোগ পাবে।”
সেটি অবশ্য হয়নি আর। তবে সে ম্যাচের দিকে সৌম্যরা ফিরে তাকিয়েছেন হাসিমুখেই। যেমন মনে করিয়েছেন বাউন্সারে তামিমের মাথায় আঘাত করার কথা, “তামিম ভাই আমাকে বোলার হিসেবে গণ্য করেন না। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগে প্রথম যখন খেলার সুযোগ পেলাম- বগুড়ায়- তামিম ইকবাল খান ব্যাটিং করছেন, আর আমি বিকেএসপির পিচ্চি সৌম্য সরকার বোলিং করছি। বাউন্সার গিয়ে লাগছে তামিম ভাইয়ের মাথায়। আমি তো খুশি হই গেছি।” তামিম অবশ্য বলার চেষ্টা করছিলেন, পরের বলে কী হয়েছে সেটি বলতে। সৌম্যর সোজাসাপটা উত্তর, “পরের বল তো দেখার বিষয় না, আমি তো তখন ছোট, পিচ্চি!”