• ক্রিকেটারদের আলাপ
  • " />

     

    আইসিসি ট্রফি ১৯৯৭ : আকরাম, নান্নু, পাইলটের বলা কিংবা না বলা গল্প

    আইসিসি ট্রফি ১৯৯৭ : আকরাম, নান্নু, পাইলটের বলা কিংবা না বলা গল্প    

    ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির আগে এবং পরে- বাংলাদেশ ক্রিকেটের পালাবদলের বইয়ের বড় একটা অধ্যায় বদলে গেছে। সে টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিশ্চিত করে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ, আগের দুইবার যে টুর্নামেন্টে সুযোগ লাগিয়েও কাজে লাগাতে পারেনি তারা। কুয়ালালামপুরের কিলাত কিলাব মাঠের দুইদিন ধরে হওয়া বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনাল, কিংবা তার আগে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনাল বলে যাওয়া ম্যাচ, এর সঙ্গে সে টুর্নামেন্টের আগে-পরের প্রস্তুতি, আবহ- এসব নিয়ে তামিম ইকবালের শো-তে কথা বলেছেন তখনকার অধিনায়ক আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও খালেদ মাসুদ পাইলট। 


    এর আগে কোচ ছিলেন মুদাসসর নজর ও মহিন্দর অমরনাথ। এবার কোচ হিসেবে এসেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তী গর্ডন গ্রিনিজ। 

    মিনহাজুল আবেদিন নান্নু : সবচেয়ে বড় সুযোগ ছিল ‘৯০-এ। এর আগে ঘরোয়াতে আমরা দুই দিনের একটা টুর্নামেন্ট হয়েছিল, সেটি কাজে লেগেছিল। আমরা সেমিফাইনালে গিয়েছিলাম। জিম্বাবুয়ের ডেভ হটন দারুণ একটা সেঞ্চুরি করেছিল। অল্প রানরেটের কারণে জিম্বাবুয়েকে পেয়েছিলাম, নাহলে কেনিয়াকে পেতাম (জিম্বাবুয়ে এর আগেই খেলেছিল বিশ্বকাপ)। ১৯৯৪-এ আবার কেনিয়ার কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়ি। 

    আমাদের যে সিস্টেমটা, প্রস্তুতি নিতে হয়, নজরের অধীনে '৯০-এ শুরু করেছিলাম। '৯৪-এ মহিন্দর অমরনাথ ছিল। সব মিলিয়ে নজর শিখিয়েছে অনেক কিছু। গ্রিনিজ এসে আরও বদলে দিয়েছে। আমরা বিকেএসপিতে গিয়ে অনুশীলন শুরু করি, আলাদা একটা মাঠ পাই। সিস্টেমটা বদলাতে থাকে। 

    বোর্ডকেও ধন্যবাদ দিতে হবে তখনকার। কৃত্রিম টার্ফে খেলা হয়েছিল সে টুর্নামেন্ট, এর আগের প্রিমিয়ার লিগ আমরা তেমন টার্ফে খেলেছিলাম। সার্ক টুর্নামেন্টও খেলেছিলাম। 

    খালেদ মাসুদ পাইলট : বিকেএসপিতে যেন কারাগারে ছিলাম আমরা। ভোরে উঠেই ফিটনেস ট্রেনিং করাতো গর্ডন গ্রিনিজ। এরপর বিরতি দিয়ে আবার ব্যাটিং-বোলিং। এরপর বিরতি দিয়ে আবার ফিল্ডিং। দিনের পুরোটা আলো ব্যবহার করতো। বৃহস্পতিবার রাতে ফিরতে পারতাম ঢাকায়, এরপর আবার শুক্রবার সেই কারাগারে।

    ‘৯৭-এ যে ক্যাম্প ছিল, আকরাম ভাই, নান্নু ভাই, বুলবুল ভাই, মনি ভাইয়ের একটা রুম ছিল। আমি একটু দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। আমাকে তারা খুবই আদর করত। ওই রুমে খুব আড্ডা দিতাম। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। যেটা আমার জীবনে কাজে লেগেছে।
     


    কোচ গর্ডন গ্রিনিজে সঙ্গে (বাঁ থেকে) খালেদ মাহমুদ সুজন, মেহরাব হোসেন অপি, আকরাম খান ও আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে/ক্রিকইনফো


    প্রথম পর্বে গ্রুপ ‘বি’-তে ডেনমার্ক, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, পশ্চিম আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ১০ পয়েন্টই পেয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও হংকং। হংকংয়ের সঙ্গে জিতেছিল বাংলাদেশ, পরের ম্যাচ ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ১২৯ রানে আইরিশদের অল-আউট করেছিল বাংলাদেশ, তবে দুপুর ২.১৫-এর দিকে বৃষ্টি এসে বন্ধ করে দেয় খেলা, বাংলাদেশের ইনিংসে তখন ৭ম ওভারে হয়েছিল একটি বল। বিকাল ৫.১৭-এর দিকে আবার শুরু হয়েছিল খেলা। তবে হয়েছিল মাত্র ৩ বল। শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগ করতে হয়েছিল দুই দলের মাঝে। 

    পাইলট : তখন গ্রাউন্ডসম্যান থাকতো না সেভাবে। ওই পয়েন্টটা আমাদের দরকার ছিল। আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটাররা সময় নষ্ট করছিল। আমরা, কর্মকর্তা, দর্শক-- সবাই মাঠে পানি নিস্কাশন করছিলাম তোয়ালে দিয়ে। ড্রেসিংরুমের জন্য আমরা যে তোয়ালে নিয়ে যেতাম। তখন তো এমন কড়াকড়ি ছিল না, যে মাঠে কেউ ঢুকতে পারবে না। 

    আকরাম : তোয়ালে যেটা হয়েছে। আমাদের নিয়ম ছিল, ভোর ৫টায় আইসিসির হোটেল ছেড়ে দিতে হতো ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে। তো বাসের এসি বেশ তীব্র ছিল, আমরা তোয়ালে বের করে জড়াতাম গায়ে। আমাদের সৌভাগ্য মাঠে অনেক বাংলাদেশী ছিল। সাংবাদিক ভাইয়েরাও গিয়েছিলেন (পানি নিষ্কাশণে)।

    আয়ারল্যান্ডের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ কার্যত বাংলাদেশের জন্য কোয়ার্টার ফাইনাল। ১৭১ রানে ডাচদের অল-আউট করে ব্যাটিংয়ে নেমে এলোমেলো হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ, ১৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে। 

    আকরাম : ১৯৯৪ সালে সুযোগ এসেছিল, সেখানে ব্যর্থ হওয়ার পর আমাদের ক্রিকেটের সুযোগ-সুবিধার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এরপর ১৯৯৭। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছিল। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে অমন হলে কিন্তু আমরা কোয়ালিফাই করতে পারতাম না। শান্ত কিন্তু ওই ম্যাচে অনেক ভাল বোলিং করেছিল। এটা ছিল 'টিম-এফোর্ট'। আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসে কিন্তু অনেক ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটার ছিল ভাল। 

    তখন তো তথ্যও ওভাবে পেতাম না। আমি আর নান্নু ভাই যখন ব্যাটিং করছি, মালয়েশিয়ায় যেটা হয়-- বৃষ্টি হচ্ছে, সেটা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের এখানে হচ্ছ না- আবহাওয়া এমন ছিল। তো খবর আসলো, ২০ ওভারের আগে যদি খেলা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমরা কোয়ালিফাই করব। তখন আমি দেরি করা শুরু করলাম-- গ্লাভস আনতে বলছি, পানি আনতে বলছি। এরই মাঝে কিন্তু ম্যাচ রেফারি সতর্ক করেছে। তখন খেলা বন্ধ হলো। 

    ৩.০৭ মিনিটে বন্ধ হয়েছিল খেলা। প্রায় ঘন্টা দুয়েক চলেছিল বৃষ্টি। 

    আকরাম : এরপর হঠাৎ আবার খবর আসলো যে না, ম্যাচ যদি না হয় তাহলে বাংলাদেশ কোয়ালিফাই করতে পারবে না। আবার চাপে পড়ে গেলাম। এরপর তো কার্টেইল ওভারে খেলা গড়ালো। নান্নু ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটা জুটি হলো। তখন একটা বিশ্বাস ছিল আমাদের, দেখি শেষ পর্যন্ত কী হয়। সে টুর্নামেন্টে আমরা পরিবারের মতো ছিলাম।

    ৯২ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন আকরাম। ৩৩ ওভারে ১৪১ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের, ম্যাচ  জিতেছিল তারা ৮ বল বাকি থাকতে, ৩ উইকেটে।  

    সেমিফাইনাল, প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। প্রথমে ব্যাটিং বাংলাদেশ। ১২ রানে ১ম উইকেট পড়ার পর তিনে নামলেন পাইলট, আগের ম্যাচেও যিনি খেলেছিলেন ৯ নম্বরে। 


    স্লিপে ক্যাচ নিচ্ছেন আকরাম খান, উইকেটকিপিংয়ে খালেদ মাসুদ/ক্রিকইনফো


    তামিম : পাইলট ভাই তিন নম্বরে নেমেছিলেন। কেন নেমেছিলেন? 

    পাইলট : আমাদের যে দল ছিল, সবাই কিন্তু ভাল ব্যাটিং করত। এর আগে কিন্তু ঘরোয়াতে ৪-৫-এ ব্যাটিং করেছি। আগের দিন আকরাম ভাই, (গাজি আশরাফ হোসেন, ম্যানেজার) লিপু ভাই আমাকে বলেছিল যে “একটা জুয়া খেলব”, আমি তিনে খেলতে পারব কিনা। আমি বলেছিলাম কোনও সমস্যা নাই। আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল, ঘরোয়াতে যেহেতু করি। আগের ম্যাচগুলোতে অল্প অল্প করে করলেও ভাল ব্যাটিং করেছিলাম। পুরো টুর্নামেন্টে কিপিংটা ভাল করেছিলাম। 

    আমাদের দিনটা ভাল ছিল, শুরুতে উইকেট গেলেও পরে (আমিনুল ইসলাম) বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটা ভাল জুটি হয় (তৃতীয় উইকেটে, ১১৫ রানের)। আমাদের একটা বড় স্কোর (২৪৩) হয় , ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় যে এই ম্যাচ আমরা জিতে বেরিয়ে আসব। সে ম্যাচ বড় ব্যবধানে (৭২ রানে) জেতার পরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল যে ফাইনালে যে-ই আসুক আমরা জিতব। 

    তামিম : নান্নু ভাই, আমি ছোট ছিলাম, রেডিওতে শুনতাম। আপনার একটা ইনিংস ছিল ৩১ বলে ৩৯ রানের, সাতে নেমে। আপনি সাতে নেমেছিলেন কেন? 

    নান্নু : এটা একটা সারপ্রাইজ ছিল, আমি যেহেতু টুর্নামেন্টে চারে ব্যাটিং করেছি। আগেরদিন যখন বলা হলো, পাইলটকে তিনে নামানোর কথা। আকরাম যেটা বললো, আমরা পরিবারের মতো, আমরা যে কোনও কিছু করতাম। আমার সাথে সাইফুল ভাল ব্যাটিং করেছিল (৩৯ রানের জুটি, পরে রফিক করেছিলেন ৭ বলে ১৬)। সবারই এমন আত্মবিশ্বাস ছিল, যে যখনই যেখানে নামানো হোক, আমরা কাজটা করতে পারব। 

    ১৯৯৯ বিশ্বকাপে মিনহাজুল আবেদিন নান্নু/ক্রিকইনফো/গেটি


    তামিম : আকরাম চাচা, ফাইনালের আগে কী বলেছিলেন অধিনায়ক হিসেবে টিম মিটিংয়ে। আর রফিক ভাই ওপেনিং করেছিলেন কেন?  

    আকরাম : আমরা শুধু আমাদের কথাই বলতাম, টিম মিটিংয়ে। এখনকার মতো তো না যে অ্যানালিস্ট থাকবে, শুধু অভিজ্ঞতা থেকে কথা বলতাম। ফাইনালে কেনিয়া কিন্তু আমাদের চেয়ে ভাল দল ছিল। এক- ওদের ফিটনেস ভাল ছিল (ফাইনালে কেনিয়া ফিল্ডিং করেছিল দারুণ, বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছিলেন তারা)। দুই- বিশ্বমানের কয়েকটা ক্রিকেটার ছিল। অধিনায়ক হিসেবে আমার যেটা সুবিধা ছিল, সিনিয়র-জুনিয়র সবাই আমাকে পছন্দ করত। 

    আমাদের অনেক অলরাউন্ডার ছিল। রফিকের ব্যাপার যেটা ছিল, আমরা তিনে (টপ অর্ডারে) কাউকে ঠিক করতে পারছিলাম না, এটা কিন্তু  নান্নু ভাই এসে আমাকে বলেছিল। এরপর আমি বলেছিলাম, ঠিক আছে আমি তাহলে কোচের সাথে কথা বলি। এরপর গর্ডন আর লিপু ভাইয়ের কাছে গেলাম। রফিক কিন্তু এ সময় (খেললে) সাকিবের মতো সুপারস্টার হতো, ‘হি ওয়াজ আ ভেরি ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার’। বললাম যে ও তিনে গেলে ভাল হয়। পরে নান্নু ভাই তিনে গিয়েছিল। দুর্জয় আর রফিক গেল ওপেনিংয়ে। 

    মাঠ ভারি ছিল, চার মারা কঠিন ছিল। আত্মবিশ্বাস ছিল, কেনিয়াকে হারাতে পারলে… আমাদের লক্ষ্য ছিল ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়া, টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া… 

    স্টিভ টিকোলোর সেঞ্চুরিতে ২৪১ রান করেছিল কেনিয়া। বৃষ্টির কারণে খেলা গড়ায় রিজার্ভ ডে-তে। বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫ ওভারে ১৬৬ রান। ওপেনিংয়ে ১৫ বলে ২৬ রান করেছিলেন রফিক। ১৫১ রানে ৮ম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন খালেদ মাহমুদ। 

    শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রান, মার্টিন সুজির প্রথম বলটা ছিল লো-ফুলটস, টেনে ছয় মেরেছিলেন পাইলট… 

    আকরাম : শেষ ওভারে ১১ প্রয়োজন ছিল, তখন তো এটা অনেক বড় ব্যাপার। প্রথমেই আমাদের জন্য ভাল যে কাজটা করলো পাইলট সাহেব, প্রথম বলেই ছয় মেরে দিল। 

    পাইলট : পাইলট সাহেব? হাহাহহাহা

    আকরাম : ছয়ের পর লক্ষ্য সহজ হয়ে গেল। এরপর তো উনি (পাইলট) আরেক কাজ করলেন। তিনটা না দুইটা (একটি) বল ডট দিয়ে দিলেন। আবার টেনশনে পড়ে গেলাম। আমরা দল হিসেবে খেলেছি। শান্ত-পাইলটের শেষ ওভার তো দেখেছো, দুদিন পরে টিভিতে দেখিয়েছিল। খুব মজা করেছি আমরা, তবে টিম এফোর্টটা ভাল ছিল। 
     


    আইসিসি ট্রফি জয়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লাস/ক্রিকইনফো/অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস


    তামিম : আমি এখনও হাইলাইটস যখন দেখি, সবাই পারলে মাঠের ভেতর ঢুকে যায়। অনেক উপদেশ, হাতের ইশারায় দেওয়ার চেষ্টা করছিল। ড্রেসিংরুমে কী চলছিল নান্নু ভাই?

    নান্নু : সবার একটাই কথা, জিততেই হবে। বল যেদিকেই যাক, দৌড়াও। সবার একটাই কথা ছিল, ‘মার, মার’। প্রথম বল ছয়ের পর তো দুইটা (একটি ছিল ওয়াইড) ডট পড়াতে আবার টেনশন। ড্রেসিংরুম তো ছিল তাঁবু। যারা আউট হয়েছিল, কেউ কিন্তু প্যাড খোলেনি। এমন একটা ভাব, আবার নামতে হবে ব্যাটিংয়ের জন্য। 

    তামিম : পাইলট ভাই, ১ ওভারে ১১ রান। আপনি তো ‘ফেমাস’ ছিলেন না মারতে, যতটুকু জানি আপনাকে। প্রথম বলে ছয়, এই ওভারটার কথা যদি বলতেন। আমার মতে, বাংলাদেশ কখনোই ঐ ওভার ভুলতে পারবে না, বিশ্বকাপ জিতলেও না। 

    পাইলট : তামিম, তুমি জন্মের পর দেখেছো আমি এক-দুই করে খেলতাম। কারণ হচ্ছে, আমরা যখন টেস্ট বা ওয়ানডে খেলা শুরু করলাম, তখন এমন হতো- চার উইকেট পড়ে গেছে, (তখন) ‘পাইলট যাও’! মানে উইকেট আটকে রাখতে হবে। আগে কিন্তু মেরে খেলতাম। 

    প্রথম বল ছয় মারলাম, ওয়াইড হলো, ডট দিলাম। তখন কিন্তু মনের মধ্যে ছিল, জিততেই হবে। আমি দোয়া করছিলাম, “আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস নিয়ে হলেও আজকের দিনটা জিতায়া দাও আল্লাহ”।

    চতুর্থ বলে মারতে গিয়ে ডট দিয়েছিলেন শান্ত, পরের বলে এসেছিল ২। শেষ বলে প্রয়োজন ১… 

    পাইলট : আমি শুধু ভয় পাচ্ছিলাম শান্তকে নিয়ে। ও কিন্তু মাঝে মাঝে পাগলামি করে। আমি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম। আমি শুধু বলছিলাম, তোর কাজ হচ্ছে ব্যাটে লাগানো। সৌভাগ্যক্রমে পায়ে লেগেছিল। আমি ভাল দৌড়াতাম। আমি আসলে নান্নু ভাইকে অনুসরণ করতাম, নান্নু ভাইয়ের রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে খুব ভাল ছিল। 

    নান্নু : আমরা কিন্তু ঘন্টা দুয়েক বুঝতে পারিনি কী কাজ করেছি। হোটেলে যখন ব্যাক করলাম, সবাই মিলে রুমের সামনে দৌড়াদৌড়ি- পাইলট, সুজন, সাইফুল- তখন উপলব্ধি করেছি, কী কাজটা করে ফেলেছি। 
     


    তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আকরাম খান, আইসিসি ট্রফি জয়ের পর/ক্রিকইনফো


    পাইলট : হোটেলে এসে আনন্দ করছি। ফ্লাইট ছিল পরদিন, কিছুক্ষণ পর শুনলাম চলে আসতে হবে সেদিনই। আমাদের এখনকার প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তখনও ছিলেন। উনি দেশের বাইরে চলে যাবেন বলে চার্টার্ড ফ্লাইট দেওয়া হয়েছে। ছোট একটা বিমানে করে চলে এসেছিলাম ঢাকায়। বিমানে ওঠার সময় দেখি পাইলট, বিমান ক্রু, সবাই কেক নিয়ে এসেছে। আমরা কিন্তু বাসের মতো করে (উল্লাস করতে করতে) এসেছি। পরদিন ছিল পহেলা বৈশাখ। 

    সে দলকে ঢাকায় দেওয়া হয়েছিল গণ-সংবর্ধনা। কোচ গর্ডন গ্রিনিজকে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। 

    তামিম : আমরা যে জিনিসটা দেখেছি, আপনারা দেখেন নাই। চট্টগ্রামে আমাদের বাসায় ৩ ফুট পানি ছিল, রঙের পানি। দেশের সব জায়গাতেই এই অবস্থা ছিল। আমি সবসময়ই বলি, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতলেও আমরা এই উদযাপনটা দেখতে পাব না। 

    আকরাম : শেষ একটা কথা বলতে চাই, পাইলট যেটা বললো, শেষ ওভারে ১১ রান দরকার ছিল। আল্লাহর কাছে দোয়া করছিল, “যাতে আমার প্রিয় জিনিসটা নিয়ে যায়, তবুও জিতিয়ে দেয়”। আল্লাহ তো ভাল জিনিসটা নেয়ই নাই, আইসিসির পর আল্লাহ ওকে সবচেয়ে ভাল জিনিসটা দিয়ে দিয়েছে। ঘটনা হচ্ছে, সবাই বলে না, আইসিসির পর এটা পেয়েছে, ওটা পেয়েছে। পাইলট কী পেয়েছে জানো? ও যখন আইসিসিতে যায়, ও বিয়ে করে গিয়েছিল। ওর শ্বশুর ওরে দেখতেই পারে না। যখন আইসিসি থেকে আসলাম, ওর শ্বশুর- যার মাথায় রঙ, দাড়িতে রঙ- ওকে জড়িয়ে ধরে সোনার চেইনটা পরিয়ে দিল। এই জিনিসটা আমি কখনোই ভুলতে পারব না। 

    তামিমের সঙ্গে পুরো শো দেখতে পারেন এখানে