দ্বিতীয়ার্ধের ঢিলেঢালা ফুটবলেও রিয়ালের সঙ্গী সহজ জয়
ফুলটাইম
রিয়াল মাদ্রিদ ৩-১ এইবার
তিন মাস পর মাঠে নেমে বিরতির আগেই তিন গোলের লিড পেয়ে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ওই স্বস্তি অবশ্য বিপদও ডেকে আনতে পারত দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথমার্ধে ঘাপটি মেরে থাকলেও পরের অর্ধে এইবার লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে গেছে বারবার। এইবার আর শেষ পর্যন্ত নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে পারেনি। প্রথমার্ধের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স যথেষ্ট হয়েছে রিয়ালের। বার্সেলোনার সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধানও কমিয়ে ২ নামিয়েছে জিনেদিন জিদানের দল।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর সংস্কারকাজ শুরু হওয়ায় এই মৌসুমের জন্য ট্রেনিং গ্রাউন্ডই রিয়ালের নতুন ঘরের মাঠ। ভালদেবাবাস ট্রেনিং গ্রাউন্ডে রিয়ালের শুরুটা হয়েছিল অবশ্য হালকাচালে, অনেকটা অনুশীলনের মতোই। আগের দিন বার্সেলোনা এগিয়ে গিয়েছিলেন ম্যাচের ৬৫ সেকেন্ডে, রিয়ালের প্রথম গোল পেতে সময় লাগল আর মিনিট দেড়েক বেশি। বক্সের ভেতর বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ এইবার। কোণায় বল গেল টনি ক্রুসের কাছে। সাত পাঁচ না ভেবে বল থামার আগেই ক্রুস মারলেন নিখুঁত শট। সেই শট জড়াল টপ কর্নারে।
প্রথমার্ধের বাকি সময়ের গল্প রিয়াল মাদ্রিদের এক চেটিয়া আধিপত্যের। সেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র এডেন হ্যাজার্ড। মার্চে খেলা স্থগিত না হলে হয়ত এই মৌসুমে মাঠে নামারই আর সুযোগ হত না বেলজিয়ানের। অপ্রত্যাশিত সুযোগ ছাড়ার পাত্র নন হ্যাজার্ড। ম্যাচের ঘন্টাখানেক পেরুনোর পর বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত হ্যাজার্ড আলো ছড়িয়েছেন, তাতে রিয়ালও জ্বলে উঠেছে।
করিম বেনজেমাও অবশ্য সঙ্গ দিয়েছেন ভালোই। ৩০ মিনিটে রিয়ালের গোলে আছে তার ভূমিকাও। বাম প্রান্ত থেকে কাট করে দারুণ এক থ্রু পাস দিয়েছিলেন তিনি হ্যাজার্ডকে। বেলজিয়ান সেই পাস পেয়েছেন বক্সের ভেতর। সামনে ছিলেন শুধু এইবার গোলরক্ষক। চাইলে নিজেও গোল করতে পারতেন, হ্যাজার্ড দিলেন স্কয়ার পাস। সার্জিও রামোস এক টোকায় সেই বল পুরলেন এইবারের জালে।
মিনিট সাতেক পর এইবার হ্যাজার্ড নিজেই গোলে শুট করেছিলেন। তবে এইবার গোলরক্ষক দিমিত্রোভিচ এবার বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। সেভ করলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। বক্সের কোণায় বল পেয়েই মার্সেলোর বাম পায়ের জোরালো শটে আবারও এগিয়ে যায় রিয়াল। গোলের পর হাঁটু গেড়ে উদযাপন করেছেন মার্সেলো। বর্ণবাদ বিরোধী প্রতিবাদের সাক্ষী হয়েছে তাই ভালদেবেবাসও।
ম্যাচের ভাগ্য আসলে ৩৭ মিনিটের ভেতরই লিখে ফেলেছিল রিয়াল। জিদানও তাই বোধ হয় ছাড় দিলেন কিছুটা। ৬১ মিনিটের ভেতর রামোস, হ্যাজার্ডদের তুলে নিলেন। তবে তার এইবার চোখ রাঙাতে শুরু করে দিয়েছে। গ্যারেথ বেল, ভিনিসিয়াস জুনিয়ররা তাই অন্যপ্রান্তে বাকি সময়ে বলার মতো তেমন কিছুই করতে পারেননি।
থিবো কোর্তোয়াকে প্রথমার্ধে তেমন একটা সেভ করতে হয়নি। পরের অর্ধের শুরুতেই বেগ পেতে হলো। এক্সপোজিতোর শট ঠেকিয়ে শুরু করলেন। মিনিট দশেক পর বদলি হিসেবে নেমে সার্জি এনরিকে কাঁপিয়ে দিলেন রিয়ালের বারপোস্ট। এর কিছুক্ষণ ডান দিক থেকে নেওয়া কর্নারের পর জটলার ভেতর থেকে গোল খেয়ে বসে রিয়াল। বদলি ফার্লন্দ মেন্দির মতো, কোর্তোয়ার দায় সমান তাতে। একজন অফসাইড ফাঁদে ফেলতে পারেন, আরেকজন চমকে গিয়ে নিজের দিকে আসা বল হাতছাড়া করেছেন।
এরপর খানিকটা কঠিন সময় পার করতে হয়েছে রিয়ালকে। এইবার খেলেছে প্রাণবন্ত ফুটবল। পেদ্রো লিয়ন অন্তত দুইবার ভালো সুযোগ পেয়ে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন রিয়াল সমর্থকদের। রিয়াল পরে বলের দখল পেতেও ধুঁকেছে। মার্সেলো ফিটনেস নিয়ে ভুগেছেন, অবশ্য পুরোটা সময়ই খেলেছেন তিনি। ৮৪ মিনিটে ফেদেরিকো ভালভার্দে নামার পর অবশ্য এইবার আর রিয়ালের আক্রমণভাগে সময় পার করতে পেরেছে কম। সময়ও যত কমে এসেছে রিয়ালও দ্বিতীয়ার্ধে ঝক্কি সামাল দিয়ে এগিয়ে গেছে তিন পয়েন্টের পথে।
এইবারের ৪ দিন পর একই মাঠে রিয়ালের প্রতিপক্ষ ভ্যালেন্সিয়া। জিদান হয়ত ওই ম্যাচের কথা মাথায় রেখেই বিশ্রামের নীতিতে গেছেন। শীর্ষস্থানের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান যখন মাত্র দুই, তখন তো সব হিসেবই মাথায় রাখতে হয় কোচকে।