• লা লিগা
  • " />

     

    বেনজেমার রেকর্ড, আসেনসিওর স্বপ্নের ফেরায় রিয়ালের তৃপ্তির রাত

    বেনজেমার রেকর্ড, আসেনসিওর স্বপ্নের ফেরায় রিয়ালের তৃপ্তির রাত    

    ফুলটাইম
    রিয়াল মাদ্রিদ ২-০ ভ্যালেন্সিয়া


    ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচটা কঠিন হওয়ার কথা ছিল। তবে কঠিন কিছু জয় করলেই বোধ হয় দারুণ সব গল্প লেখা হয়। আলফ্রেড ডি স্টেফানো ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে জয়ের সঙ্গে দারুণ একটা গল্পই সঙ্গী হয়েছে রিয়ালের। করিম বেনজেমা নতুন রেকর্ড গড়েছেন জোড়া গোল করে। এর মাঝে মার্কো আসেনসিও দুর্দান্ত এক ফেরার গল্প লিখেছেন। দ্বিতীয়ার্ধের দারুণ শোডাউনে বার্সেলোনার সঙ্গেও পয়েন্ট ব্যবধান আবার দুইয়ে নামিয়ে এনেছে রিয়াল।

    রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকেরা এই ম্যাচের পর একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই পারেন। যখন দরকার ছিল তখন আরও একবার বেনজেমা রিয়ালকে পার করিয়েছেন। ৬১ মিনিটে বেনজেমার প্রথম গোল ঘুরিয়ে দিয়েছিল ম্যাচের চিত্রপট। এরপর ৮৬ মিনিটে বেনজেমা করেছেন দেখার মতো আরেক গোল। তাতে ফেরেঙ্ক পুসকাসকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ২৪৩ গোল নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন বেনজেমা।

     


    আসেনসিওর গল্পটা অবশ্য আরও শিহরণ জাগানিয়া। গত বছর মে মাসে সবশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছিলেন। এরপর প্রাক মৌসুমে প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে এসিএল ইনজুরিতে পড়লেন। তাতে মৌসুম শুরুর আগেই গোটা মৌসুম শেষ হয়ে গিয়েছিল আসেনসিওর। অপ্রত্যাশিত বিরতিতে সেরে উঠলেন, ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো নামলেন বদলি হয়ে। এরপর প্রথম টাচেই গোল করে আসেনসিও লিখেছেন প্রত্যাবর্তনের গল্প। 

    ম্যাচের মোড় ঘুরেছে আসলে দ্বিতীয়ার্ধে। আগের ম্যাচে প্রথমার্ধে ভালো খেলেও পরের অর্থে ঝিমিয়ে পড়েছিল রিয়াল। এবার ঘটেছে উলটোটা। প্রথম গোলে ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছে রিয়াল, এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। হুট করে পজেশন উদ্ধার করে নিজেদের অর্ধ থেকেই আক্রমণে উঠেছিল রিয়াল। হ্যাজার্ড ছিলেন তার উৎস। লুকা মদ্রিচকে পাস দিয়ে ডান দিক থেকে বক্সের কাছাকাছি গিয়েছিলেন হ্যাজার্ড, মদ্রিচের ফিরতি পাসে ছন্নছাড়া ভ্যালেন্সিয়ার ডিফেন্স লাইন। হ্যাজার্ড এরপর বলটা ঠেলে দিয়েছিলেন শুধু বেনজেমার দিকে। তখন বক্সের ভেতর থেকে ডান পায়ের নিচু ফিনিশে রিয়ালকে প্রথম স্বস্তি এনে দেন বেনজেমা। 

    ওই গোলেই ভ্যালেন্সিয়ার কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এর আগ পর্যন্ত ম্যাচে ভালোভাবেই টিকে ছিল ভ্যালেন্সিয়া। ম্যাচের শুরুতে সাবেক বার্সেলোনা গোলরক্ষক জ্যাস্পার সিলেসেন হ্যাজার্ডের দারুণ শট ঠেকিয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিলেন দলের। থিবো কোর্তোয়াও অবশ্য কম যাননি, রদ্রিগোর দারুণ গোলমুখী শট তার হাতে প্রতিহত হয়ে বারপোস্টে লেগে ফেরত এসেছিল। আর এসব কিছুই হয়েছে ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটের ভেতর।


    এরপর ভ্যালেন্সিয়া একচেটিয়া আক্রমণে উঠেছে প্রথমার্ধে। রিয়ালকে তখন হিমশিম খেতে হয়েছে। অন্তত ২টি নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল ভ্যালেন্সিয়া। এর মধ্যে একবার তো রদ্রিগো গোল করে উদযাপনও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু দোষটা করেছিলেন ম্যাক্সি লোপেজ। অফসাইড পজিশনে থেকে ভিএআরের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি তিনি আর। রেফারির জন্য অবশ্য সিদ্ধান্ত ছিল কঠিন। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পার্থক্য দেখে পরে গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে। ভ্যালেন্সিয়ার উল্লাসও তাই মিলিয়ে গিয়েছিল। তবে কনদগবিয়া যখন প্রথমার্ধে আরেকবার গোলে শট নিয়ে কোর্তোয়াকে কাঁপিয়ে দিলেন তখনও একটি ব্যাপার অন্তত নিশ্চিত ছিল, এই ম্যাচ সহজে ছাড়ছে না ভ্যালেন্সিয়া।

    কিন্তু বেনজেমার ওই গোলের পরই ম্যাচের লাগাম ছুটে গিয়েছে ভ্যালেন্সিয়ার। এই মৌসুমে মাঠে আর মাঠের বাইরে শত ঝামেলায় টালমাটাল ভ্যালেন্সিয়ার করুন চেহারা ফুটে উঠেছে তখন।

    রিয়ালের একাদশে এদিন সুযোগ হয়েছিল ফেদেরিকো ভালভার্দের। নিজের স্বভাবসুলভ মিডফিল্ড পজিশনে অবশ্য খুব বেশি দেখা যায়নি তাকে। ৭৪ মিনিটে ভালভার্দের বদলি হয়ে হাসিমুখে মাঠে নেমেছিলেন আসেনসিও। ৩১ সেকেন্ড পর মুখের হাসি আরও চওড়া হয়েছে তার। ফার্লন্ড মেন্ডির ক্রস থেকে বক্সের ভেতর বাম পায়ের ভলিতে গোল পেয়ে মুখের হাসি চওড়া হয়েছে ২৪ বছর বয়সীর। 

    আর শেষটা বেনজেমা করেছেন দুর্দান্ত আরেক গোলে। সেই গোলের পাসও আবার আসেনসিওর দেওয়া। বক্সের ভেতর বল পেয়ে ডান পায়ে ফ্লিক করে, বাম পায়ের ভলিতে বেনজেমা করেছেন তার ক্যারিয়ারেরই অন্যতম সেরা গোল। পুসকাসকে ছাড়িয়ে যাওয়ার গোলটা মনোনীত হয়ে যেতে পারে পুসকাস অ্যাওয়ার্ডের জন্যও। 

    অসহায় ভ্যালেন্সিয়া খেই হারিয়ে পরে ম্যাচ শেষ করেছে ১০ জন নিয়ে। ৮৯ মিনিটে বদলি কিং ইন লি সার্জিও রামোসকে লাথি মেরে মাঠে নামার ১২ মিনিটের ভেতরই আবার বেরিয়ে গেছেন সরাসরি লাল কার্ড দেখে।