ভিয়ারিয়ালকে হারিয়ে ৩৪তম বারের মতো লা লিগা চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ
ফুলটাইম
রিয়াল মাদ্রিদ ২-১ ভিয়ারিয়াল
দরকার ছিল একটি জয়। এই রিয়াল মাদ্রিদ কাজের সময় সবটুকু নিংড়ে দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কাজের কাজটা সারা হয়ে গেছে রিয়ালের। ভালদেবাবাসে করিম বেনজেমার জোড়া গোলে ভিয়ারিয়ালকে হারিয়ে ৩৪ তম বারের মতো লা লিগার শিরোপা জিতেছে জিনেদিন জিদানের রিয়াল। সবশেষ লা লিগা শিরোপাটাও দুই মৌসুম আগে জিদানের হাত ধরেই এসেছিল। খেলোয়াড় হিসেবে একবার লা লিগা জিতেছিলেন জিদান। কোচ হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো লা লিগা জিতে ছাড়িয়ে গেছেন নিজের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারও।
অথচ এক মাসেরও কিছু বেশি সময় আগেও পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে ছিল রিয়াল। লস ব্লাঙ্কোরা জানত, ওখান থেকে শিরোপা জিততে দারুণ কিছু করতে হত। রিয়াল মাদ্রিদ দুর্দান্ত কিছু করল। জিতল একটানা ১০ ম্যাচ। রিয়ালের সামনে বার্সেলোনা হয়ে গেল অসহায়। লিগের এক ম্যাচ রেখে রিয়াল শিরোপা জিতল ৭ পয়েন্টের লিডে থেকে।
ম্যাচ শেষে সার্জিও রামোস ট্রেনিং গ্রাউন্ডেই উঁচিয়ে ধরেছেন শিরোপা। উৎসবে মেতেছে মাদ্রিদের সাদা অংশ। ভালদেবেবাসের রিয়ালের উদযাপনে আরেকটু রঙ চড়িয়েছে বার্সেলোনার ভরাডুবি। ন্যু ক্যাম্পে ১০ জনের ওসাসুনার কাছে হেরে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করছেন লিওনেল মেসিরা। ৬ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে ৩০০ লোকেরও কম উপস্থিতিতে শিরোপার উদযাপন তাই একেবারে মন্দ হয়নি রামোসদের!
বার্সেলোনার অবশ্য জিতলেও হত না। রিয়ালের কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নেওয়ার যোগ্যতাও তারা হারিয়েছে বহু আগে। রিয়ালের ভাগ্য ছিল রিয়ালের হাতেই। ২৯ মিনিটে করিম বেনজেমা ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে গোল করে কাজ অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিলেন রিয়ালের। মিডফিল্ডে কাসেমিরো বল জিতে দিয়েছিলেন লুকা মদ্রিচের কাছে। মদ্রিচ কয়েক গজ দৌড়ে বক্সের ভেতর থ্রু বল দিয়েছিলেন বেনজেমাকে। ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষকের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জড়িয়ে লিগে মৌসুমের ২০ তম গোলের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার।
শীর্ষ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে মেসির পিছু নিয়েছেন বেনজেমা। ৭৬ মিনিটে যখন রিয়াল পেনাল্টি পেল তাই বেনজেমাকেই দিয়েই বোধ হয় গোল করাতে চেয়েছিলেন রামোস। সরাসরি গোলে শট না নিয়ে, পাস দিয়েছিলেন বেনজেমাকে। তিনি গোলও করেছিলেন, তবে রামোস বলে টাচ করার আগেই বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন বেনজেমা, তাই ওই গোল বাতিল করে পুনরায় কিক নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। পরেরবার বেনজেমাই নিয়েছেন স্পটকিক, করেছেন গোল। লিগের এক ম্যাচ বাকি থাকতে মেসির চেয়ে ২ গোলে পিছিয়ে আছেন এখন তিনি।
রিয়ালের পাওয়া পেনাল্টি নিয়ে অবশ্য আরও একবার প্রশ্নবোধক চিহ্ন আছে। রামোসকে ফাউল করার দায়ে ভিয়ারিয়ালের সোফিয়ান চাকলার বিরুদ্ধে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি। তবে চাকলা রামোসকে ট্যাকেলই করেননি সেভাবে।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পরের মিনিটেই ভিনসেন্ট আইবোরা এক গোল শোধ দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন। শেষদিকে একের পর এক আক্রমণে রিয়ালের রক্ষণকেও ব্যস্ত রেখেছিল ভিয়রিয়াল। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন থিবো কোর্তোয়া। শেষদিকে দুর্দান্ত কিছু সেভ করে ভিয়ারিয়ালকে আর ম্যাচে ফিরতে দেননি রিয়াল গোলরক্ষক।
শেষদিকে অবশ্য মার্কো আসেনসিওর একটি গোলও বাতিল হয়েছিল ভিএআরে। তবে তাতে রিয়ালের উৎসবে ভাটা পড়েনি বিন্দুমাত্রও। জিদান ম্যাচের আগে বলেছিলেন, এটাই নাকি মৌসুমের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ হতে যাচ্ছে। এমন কথা গেল কয় সপ্তাহ ধরেই বলে আসছেন রিয়াল কোচ। এবার হয়ত থামবেন তিনি!
লেগানেসের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা আয়েশি ভঙ্গিতেই কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন জিদান। এরপর আগস্টে অপেক্ষা করছে রিয়ালের জন্য আরেক পরীক্ষা। ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ খেলতে হবে রিয়ালকে। প্রথম লেগের পর ২-১ এ পিছিয়ে আছে রিয়াল। তবে লিগ আবার শুরুর হওয়ার পর টানা ১০ জয়ে রিয়াল যে খেল দেখাল তাতে পেপ গার্দিওলাও ম্যান সিটি ওই লিডের কথা এতোক্ষণে ভুলেই গেছে হয়ত!
আপাতত অবশ্য চ্যাম্পিয়নস লিগের ভাবনায় কিছুতেই যাওয়ার কথা না রিয়ালের। আপাতত সময়টা তাদের উদযাপনের! ফাঁকা ট্রেনিং গ্রাউন্ড, সিবেলিস ফোয়ারার ফাঁকা চত্বর, সমর্থক ছাড়া শিরোপা উদযাপন নিশ্চিতভাবেই রঙ হারাবে কিছুটা। কিন্তু রিয়ালের তৃপ্তি তাতে কমার কথা নয়!