• সাকিবের নিষেধাজ্ঞা
  • " />

     

    সাকিব চান, তার ভুল থেকে সবাই শিক্ষা নিক

    সাকিব চান, তার ভুল থেকে সবাই শিক্ষা নিক    

    ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় রয়েছেন সাকিব আল হাসান। ২০১৮ সালে দুটি টুর্নামেন্টের সময় ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেলেও তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানানোয় নিষেধাজ্ঞার শাস্তি নেমে এসেছিল তার ওপর। তবে এখন সাকিব নিজের ভুল বুঝতে পারছেন, আর তার ভুল থেকে পরবর্তীতে অন্য ক্রিকেটাররা শিক্ষা নিতে পারবেন বলেও মনে করেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

    দ্বীপ দাসগুপ্তের সঞ্চালনায় ক্রিকইনফোর ‘ক্রিকেটবাজি’ নামের অনুষ্ঠানে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন সাকিব, “আপনাকে সৎ হবে। লোকের সঙ্গে মিথ্যা বলে বা ভাব ধরে কোনও লাভ নেই। যা হওয়ার হয়েছে। মানুষ ভুল করবেই। কেউ শতভাগ ঠিক নয়। তবে সেই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে কতটা ভালোভাবে কামব্যাক করা যায়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর আপনি অন্যদেরও সেই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না করতে সচেতন করে তুলতে পারেন। তাদের সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানান, যাতে তারা আর সেই পথে না যায়।”

    “এটা অন্য কারও সাথেও হতে পারত, আমি হয়ত তখন তার কাছ থেকে শিক্ষা নিতাম। তবে এটা আমার সাথে হয়েছে, সুতরাং অন্যরা আমার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। আমি প্রথম দিন থেকেই সৎ থাকতে চেয়েছি। আমাকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছে, আমি কিছুই লুকাইনি। আমি সরাসরি কথা বলব। আমি ভুল করেছিলাম। আমার মতো একজন খেলোয়াড়ের এমন ভুল করা উচিৎ হয়নি। আমি এর জন্য ক্ষমা চেয়েছি এবং সেসব পিছনে ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমি তাই সবাই এর থেকে শিখুক, যাতে এই ধরনের কেউ কখনও না করে।”

    ২০০৯ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রথম বাংলাদেশ দলের ভার কাঁধে আসে সাকিবের। এরপর থেকে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কম বিতর্ক দেখেননি। দল নির্বাচন নিয়ে বোর্ড সভাপতি, নির্বাচক প্যানেল এবং মিডিয়ার সঙ্গে তাকে ভিড়তে হয়ে অনেকবার। তবে সেসব অভিজ্ঞতা তাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে বলে মনে করেন সাকিব, “আমি ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই বড় দায়িত্ব পেয়েছিলাম। সুতরাং ভুল করাই স্বাভাবিক ছিল। আমি যখন অধিনায়ক হই, তখন আমার বয়স ছিল ২১। আমি অনেক ভুল করেছি, আর মানুষের মাঝেও আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধারণা তৈরি হয়েছে। এখন পিছনে ফিরে তাকালে বুঝতে পারি, কিছু জায়গায় আমার ভুল ছিল, কিছু জায়গায় মানুষ আমাকে ভুল বুঝেছে। তবে এটা নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। উপমহদেশে এমনটা হয়ই।”

    তবে সময়ের সঙ্গে নিজেকে অনেকটাই সামলে নিয়েছেন সাকিব। এখন ভুল পদক্ষেপ যত কম নেওয়া যায় সেই চেষ্টাটাই করেন বলে দ্বীপ দাসগুপ্তকে জানালেন সাকিব, “অবশ্যই যতটা পারি ভুল কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। এখন আমি বিয়ে করেছি, দুই বাচ্চা আছে। আমি মনে করি, এখন আমি খেলা এবং জীবন দুটিই ভালোভাবে বুঝি। ২০ বছরের দিকে আমি যেমন ছিলাম, এখন আমি তার চেয়ে অনেক শান্ত। আমি নিজেকে অনেক পরিবর্তন করেছি। এখন মানুষ আমাকে বেশি ভুল করতে দেখবে না। আমার দুই মেয়ে আমাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।”

    ২০১১ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কঠিন সময় চলছিল। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্স এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ হার মিলিয়ে বেশ বিপাকে ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। আর সে সময় মাশরাফি ও আশারফুলদের মতো সিনিয়ররাও সাকিবের অধিনায়কত্বে খেলেছিলেন। প্রতিকূল সেই সময়টায় নেতৃত্ব দেওয়াটা সাকিবের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, জানিয়েছেন সেটি, “সিনিয়রদের নিয়ে আমার কখনোই সমস্যা হয়নি। আমরা টানা ম্যাচ জিততে পারছিলাম না, তাই আমাদের খেলায় উন্নতি আনাটাই তখন অগ্রাধিকার ছিল। মাঠের বাইরে কোনও না কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা চলতই। মিডিয়ায় কিছু বললেই তখন সেটা ভিন্নদিকে প্রবাহিত হত। তবে আমি মনে করি, সেই সময়ে ঐ বিষয়গুলোর দরকার ছিল। আজকে আমি যেখানে আছি, সেখানে আসতে সেই বিষয়গুলোরও অবদান আছে।”

    ২৯ অক্টোবর শেষ হচ্ছে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা। আর তাই অক্টোবরের দিকে বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা সফর হলে সেটি দিয়েই আবারও মাঠে ফিরতে পারেন সাকিব।