• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    আক্ষেপ ঘুচবে ইব্রার?

    আক্ষেপ ঘুচবে ইব্রার?    

    চেলসিকে হারিয়ে পিএসজিকে নিয়ে গেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে। গোল করেছেন, গোল করিয়েছেনও। পিএসজিকে পরের রাউন্ডে তোলার পাশাপাশি নিজের সমালোচনার জবাবটাও কি ইব্রাহিমোভিচ দিলেন এই ম্যাচেই?

    চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারার সমালোচনাটা ইব্রাহিমোভিচকে তাড়া করে আসছে বহুদিন ধরেই। আর করবেই বা না কেন! যেখানে যখন খেলেছেন, সবসময়ই প্রদীপের মতো জ্বলেছেন। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে খেলেছেন বিভিন্ন দলে। ডাচ লিগ, সিরি আ, লা লিগা, ফ্রেঞ্চ লিগ- সবগুলো শিরোপাই আছে নামের সাথে। নেই শুধু ইউরোপের ক্লাবের শ্রেষ্ঠত্বের পুরষ্কারটা। চ্যাম্পিয়নস লিগটাই অধরা রয়ে গেছে ইব্রার। সর্বোচ্চ সাফল্য একবার মাত্র সেমিফাইনাল খেলতে পারা। সাথে ‘যে ক্লাব ছেড়ে আসেন, তারাই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে’ – এমন এক অপয়া তকমা লেগে গিয়েছে গায়ে।

    লিগে বরাবরই গোলের দেখা পাওয়া এই সুইডিশ স্ট্রাইকারের চ্যাম্পিয়নস লিগে পরিসংখ্যান কিছুটা ফিকেই। খেলেছেন ইউরোপের শীর্ষ প্রায় সবগুলো লিগেই। গোল খরায় ভুগতে হয়নি ক্যারিয়ারের কখনই। সে তুলনায় চ্যাম্পিয়নস লিগে গোলের ট্যালিটা আর দশ জন সাধারণ খেলোয়াড়ের মতোই। মাত্র একবারই চ্যাম্পিয়নস লিগের এক আসরে দুই সংখ্যার ঘরে যেতে পেরেছে তাঁর গোল সংখ্যা। ২০১৩/১৪ মৌসুমে সেবার ৮ ম্যাচ খেলে ১০ গোল করেছিলেন ইব্রা।        

    লিগে নিয়মিত গোল করছেন, কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে কেন পারেন না? ফ্রেঞ্চ লিগে বলেই হয়ত মুড়ি মুড়কির মত গোল করে যাচ্ছেন! বয়সটাও হয়ে গেছে ৩৪। একে-একে দুই মিলিয়ে নিন্দুকেরাও সমালোচনার তীর ছুড়ে দিচ্ছিল। কিন্তু এ তো ইব্রা! বয়সটাকে শুধুমাত্রই সংখ্যা হিসেবে দেখেন যিনি। ৩৪ এ যখন সব স্ট্রাইকার শেষ দেখে ফেলেন নিজের, সেই বয়সে তিনি নাকি কেবল ওয়ার্ম আপ শুরু করেছেন! নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেন যিনি, সমালোচনার জবাব দিতে তিনি সময় নেবেন কেন?

       
    এই চেলসির বিপক্ষেই আগের মৌসুমে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায় শুনতে হয়েছিল সমালোচনা। নিন্দুকের এক হাত নিতে এর চেয়ে ভাল কোন ম্যাচ বাছাই করা যেত? প্রথম লেগে ২-১ এ জয় থাকলেও, লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে তা জানাই ছিল। মাত্র ১৬ মিনিটেই স্টামফোর্ড ব্রীজে পিএসজি যে এগিয়ে গেল, তাতে গোলদাতা র‍্যাবিওটের চেয়ে বরং অবদান বেশি ইব্রারই। ডান প্রান্ত দিয়ে করা ইব্রার ক্রসটা শুধু পায়ের ছোঁয়ায় চেলসির জালে ঢোকার অপেক্ষায় ছিল। দুই লেগ মিলিয়ে তখন ৩-১ এগিয়ে পিএসজি। এরপর ডিয়েগো কস্তা ম্যাচে সমতায় আনলে, কিছুটা চাপেই পড়ে পিএসজি। রোলার কোস্টারের মত খেলার ফল এদিক-সেদিক বেঁকিয়ে যাওয়া তো মঙ্গল-বুধবারের ইউরপিয়ান রাতের রীতি! দুই লেগ মিলিয়ে এক গোলে এগিয়ে থাকলেও খেলার ওমন সময় একটা গোলের খুব দরকার ছিল ফ্রান্সের ক্লাবটির। এবার আর পর্দার পেছনের নায়ক না হয়ে সত্যিকারের বীরপুরুষ হয়েই মঞ্চে হাজির ইব্রা। ৬৭ মিনিটে গোল করে মুহুর্তেই স্তব্ধ করে দেন লন্ডনের নীল রঙের বাসিন্দাদের। সাথে পিএসজিকে টানা দ্বিতীয়বারের মত  তুলে নিয়ে গেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ৮ এ। উপযুক্ত জবাব দিতেই এমন এক সময়ের অপেক্ষাই তো করছিলেন ইব্রা!

    ইব্রার মাঠের জবাবও যদি যথেষ্ট না হয় সেই শঙ্কায় দলের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়ের হয়ে লড়লেন দলের কোচও। সংবাদ সম্মেলনে রাখ ঢাক না রেখেই সব সমালোচনার জবাব দিলেন লরা ব্লা। “আপনারা বলেছিলেন ইব্রাহিমোভিচ লিগ ওয়ানে (ফ্রেঞ্চ লিগ) গোল করে, কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর কী হয়! আপনারা আসলে ফ্রেঞ্চ লিগের মান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন। ইব্রাহিমোভিচ আজ সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে” – নিজের দল আর ইব্রাকে নিয়ে ওঠা সব সমালোচনার জবাবটা কড়া সুরেই দিয়েছেন ব্লা।

    “ সে দলে আলাদা অবদান রাখে। মাঠে দুইজন সেন্টার ব্যাককে একাই ব্যস্ত রাখতে পারে। দলের প্রয়োজনে নিচে নেমেও খেলেছে। পুরো দলের মতোই ইব্রা ছিল অসাধারণ ”- চেলসির বিপক্ষে ম্যাচে ইব্রাহিমোভিচকে নিয়ে লরা ব্লার আলাদা করে কথা বলতে হল অনেকক্ষণই।      
           
    ইব্রার এই পারফরম্যান্স কি নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার ঘটাবে পিএসজিতে? সে প্রশ্নের জবাব অনেকটা এভাবেই দিলেন ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপ জয়ী পিএসজি কোচ।

    “আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ইব্রার কখনই ছিল না। চেলসির বিপক্ষের পারফরম্যান্সে আলাদা করে ইব্রার আত্মবিশ্বাসে কোন প্রভাব ফেলবে না। ওর গোল আর অ্যাসিস্টের লাভটা পাবে দল”

    আয়াক্স, জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান, বার্সেলোনা, এসি মিলান ঘুরে সবশেষ পিএসজিতে যখন নাম লেখালেন তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ ছাড়াই হয়ত ক্যারিয়ারটা শেষ করতে হবে ইব্রাকে। জুভেন্টাস, মিলানের দুই ক্লাব আর বার্সেলনার নামের পাশে পিএসজি তো কিছুটা বেমানানই! গত কয়েক মৌসুমে অবশ্য ঘোল পাল্টেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের। সে তোড়েই উঠে এসেছে পিএসজি, ম্যানচেস্টার সিটিরা। ম্যানচেস্টার সিটি না পারলেও ইউরোপিয়ান লিগে গত কয়েক মৌসুম ধরেই পিএসজি নিজেদেরকে চিনিয়েছে বড় দল হিসেবেই। আর তাতে জাতান ইব্রাহিমোচিভের অবদানটাই সবচেয়ে বেশি।

    নামকরা সব দলে খেলে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারার হতাশায়ই ইব্রার ক্যারিয়ারটা শেষ হবে না পিএসজিতেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে সেই রূপকথার জন্ম দেবেন ইব্রা তা এখনই বলা মুশকিল। তবে, গতরাতে আতশী কাচের নিচে ইব্রার পারফরম্যান্সটা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে আলাদা করে লেখা থাকবে অনেকদিন। ইব্রা যতই বয়সটা সংখ্যার সাথে তুলনা করুক, চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সময়টা যে সত্যিই ফুরিয়েই আসছে। এবার না হলে কবে?