১০ জনের বার্সা ৫ বছর পর স্বস্তির জয় নিয়ে ফিরল সেল্টা থেকে
ফুলটাইম
সেল্টা ভিগো ০-৩ বার্সেলোনা
সেল্টা ভিগোর মাঠে বার্সেলোনা জিততে পারে না। এই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২০১৫ সালের পর থেকে বালাদিওসে ৫ বার খেলতে গিয়ে একবারও জয়ের দেখা পায়নি বার্সা। সেই ধারায় অবশেষে ছেদ পড়েছে। সাহসি বার্সেলোনা ম্যাচের বেশিরভাগ সময় ১০ জন নিয়ে খেলেও সেল্টার মাঠে পেয়েছে স্বস্তির জয়। আগের ম্যাচের মতো এবারও আনসু ফাতি বার্সার বড় উপকার করেছিলেন দলকে এগিয়ে দিয়ে। এরপর ক্লেমেন্ত ল্যাংলেট লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর বাকি কাজ করেছেন লিওনেল মেসি। নিজে গোল করেননি, তবে তিনিই আত্মঘাতী গোল আদায় করে দিয়েছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। আর রোনাল্ড কোমানের দল বাকি সময়ে দারুণ লড়াই করে লা লিগায় টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় নিশ্চিত করেছে।
সেল্টার মাঠে জয়ের সঙ্গে অনেকগুলো স্বস্তিও মিলেছে বার্সার। ফিলিপ কৌতিনহো টানা দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ খেলেছেন। দলের জয়ে বড় ভূমিকা তার। আর ফাতি তো আরও একবার শিরোনাম কেড়ে নিয়েছেন। দুঃসময়ের পর এই জয়ে বার্সা সমর্থকদের আশার আলোই দেখার কথা।
আগের ম্যাচের একাদশটাই মাঠে নামিয়েছিলেন কোমান। বালাদিওসের তুমুল বৃষ্টিতে অবশ্য শুরুতে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে দুই দলই ভুগছিল। যদিও সেল্টাকে তেমন একটা সুযোগই দিচ্ছিল না বার্সা। দারুণ প্রেসিংয়ে সেল্টাকে রক্ষণেই ব্যস্ত রাখছিল তারা। এর সুফল বার্সা ভোগ করেছে ১১ মিনিটে। কৌতিনহোর বাড়ানো পাস বক্সের ভেতর দারুণ ফার্স্ট টাচে রিসিভ করে এরপর অন্য পায়ে আউট সাইড অফ দ্যা বুটের শটে গোল করেন ফাতি। লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে ফাতির তৃতীয় গোলে শুরুতেই গেরো কাটানোর প্রেরণা পেয়ে যায় বার্সাও।
বার্সার ওই স্বস্তি অবশ্য ৩৫ মিনিটে একবার উবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। জেরার্ড পিকে ডেনিস সুয়ারেজকে ফাউল করার অপরাধে সরাসরি লাল কার্ড দেখে বসেছিলেন। তবে তার ভাগ্য ভালো। সুয়ারেজ ছিলেন অফসাইডে। পিকের ওই লাল কার্ডও তাই পরে বাতিল করেছেন রেফারি। কিন্তু পিকের ডিফেন্সিভ সতীর্থ ল্যাংলেট আর বাঁচতে পারেননি। আগেই একবার হলুদ কার্ড দেখেছিলেন তিনি। ৪২ মিনিটে সেই সুয়ারেজকে কনুই মেরেই আরেকবার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
ল্যাংলেটের সঙ্গে ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে আন্টোয়ান গ্রিযমানেরও। যতক্ষণ তিনি মাঠে ছিলেন এর ভেতর দারুণ এক সুযোগ তার কাছে এসেছিল বার্সার কাউন্টার অ্যাটাক থেকে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগা গ্রিযমান সেই সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন। একমাত্র তার পারফরম্যান্সটাই আরও একবার দুশ্চিন্তার ভাঁজ তৈরি করার কথা কোমানের কপালে। ল্যাংলেট মাঠ ছাড়ার পর গ্রিযমানকে তুলে ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাউহোকে নামিয়ে দেন কোমান।
দ্বিতীয়ার্ধে বার্সাকে আর চাপে পড়তে দেননি মেসি। চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিংয়ে বক্সের ভেতর ডানদিকে ঢুকে পড়েছিলেন। এরপর ক্রসই করেছিলেন, কিন্তু সেল্টা ডিফেন্ডার লুকাস ওলাজার গায়ে লেগে সেই বল কাছের পোস্টে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ে। ৫২ মিনিটে বার্সাও পেয়ে যায় দুই গোলের লিড। এর খানিকক্ষণ বাদে মেসি অবশ্য নিজেও বল জালে জড়িয়েছিলেন। কৌতিনহোর শট বারপোস্টে লেগে ফেরত আসার পর তার সামনে পড়েছিল বল। কৌতিনহোর মতো তিনিও গোলবঞ্চিত হয়েছেন। মেসি অল্পের জন্য ছিলেন অফসাইড পজিশনে।
৭০ মিনিটের পর কৌতিনহোকে কোমান তুলে নিলে চাপে পড়ে গিয়েছিল বার্সা। যদিও সেটা অনুমিতও ছিল। ১০ জনের দল নিয়ে এরপর রক্ষণে ভালোই খাটুনি গেছে বার্সার। গোলরক্ষক নেতোও ছিলেন দুর্দান্ত, বাকি সময়ে বেশ কয়েকটি সেভ করেছেন তিনি। সেল্টা ম্যাচে ফেরার সবচেয়ে ভালো সুযোগ পেয়েছিল ৭৩ মিনিটে। নলিতোর শট নেতো ঠেকিয়ে দেওয়ার পর ফিরতি বলে মিগুয়েল বায়েজা গোল পাননি বারপোস্টে বল লাগিয়ে।
যোগ করা সময়ের একেবারে শেষদিকে বার্সা জয় নিশ্চিত করেছে সার্জি রবার্তোর গোলে। মেসির শট সেল্টা গোলরক্ষক ইভান ভিলার ঠেকিয়ে দিলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ফিরতি বল গিয়েছিল রবার্তোর কাছে। তার জোরালো শট ফাঁকা বারে জড়ালে জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বার্সার।
লিগের তৃতীয় ম্যাচে এসে বার্সার কাছে প্রথম হারের স্বাদ পেল সেল্টা। আর বার্সা দুই ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে উঠল তাতে।