• সাকিবের নিষেধাজ্ঞা
  • " />

     

    নিষেধাজ্ঞার 'নরক' পেরিয়ে এবার কোন পথে সাকিব?

    নিষেধাজ্ঞার 'নরক' পেরিয়ে এবার কোন পথে সাকিব?    

    ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করার দায়ে এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ ২ বছরের জন্য সাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধ করেছিল আইসিসি। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে ২৮ অক্টোবর। নিষেধাজ্ঞার আগে থেকেই বেশ নাটকীয় সময় কাটাচ্ছিলেন সাকিব, এরপর কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যতটা খেলা মিস করার কথা, সাকিব সেটিও করেননি। এ সময়ে টেস্টে সুবিধার সময় যায়নি বাংলাদেশের। সামনে বিসিবির টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়েই ক্রিকেটে ফেরার কথা আছে তার। 



    স্বর্গ থেকে মর্ত্যে, এবার কোন পানে? 

    ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ থেকে সাকিব ফিরেছিলেন চোট নিয়ে। সেই চোট ও অস্ত্রোপচার নিয়ে বেশ কয়েকদফা নাটক হয়েছিল-- কবে করানো হবে, বা হবে না। সে চোটের কারণে তার ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেতে পারে, এমনও কথা উঠেছিল। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরও মিস করেছিলেন তিনি, বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে-- বাংলাদেশের প্রথম ‘টুর্নামেন্ট-শিরোপা’ জয়ের ফাইনালেও তিনি ছিলেন না চোটের কারণে। বিশ্বকাপ পেরিয়ে শ্রীলঙ্কা সফর থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। 

    তবে ভারত সফরের আগে তাকে ঘিরে হয়েছিল বড় নাটক। হুট করেই শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে ধর্মঘটে গিয়েছিলেন তিনি, এর আগে বিশ্বকাপ শেষ করেই গণমাধ্যমে দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষাতকারে বিসিবি ও দেশের ক্রিকেট কাঠামোর সমালোচনা করেছিলেন। ধর্মঘট থেকে ফিরে ক্রিকেটাররা অনুশীলনে যোগ দিলেও সাকিব প্রথম দিন ছিলেন না, মিস করেছিলেন অনুশীলন ম্যাচও। তবে সেসবের পেছনে যে তার নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার ব্যাপার আছে, সেসব স্পষ্ট হয়েছিল আদতে তিনি শাস্তি পাওয়ার পরই। 

    সাকিব কোভিড-১৯ মহামারির বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গে, এ সময় দ্বিতীয়বার বাবাও হয়েছেন তিনি। পরে সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, দ্বিতীয়বার বাবা হওয়া তার মাঝে আরও বড় পরিবর্তন এনেছে। আর ক্রিকেটের ক্ষেত্রে তিনি যে ভুল করেছিলেন, তার আশা, সেটি আর কেউ করবেন না। 



    ২০১৯, সাকিবের ‘সেরা’ সময়

    ওয়ানডেতে সাকিব তার সেরা সময়টা কাটিয়েছেন ২০১৯ সালে। সে বছর সাকিব যাওয়ার পর অবশ্য আর ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ। অসাধারণ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে সাকিবের ব্যাটিং গড় ছিল ৯৩.২৫, এর আগে এক পঞ্জিকাবর্ষে ওয়ানডেতে তার ৫০-পেরুনো গড় ছিল দুইবার-- ২০০৯ সালে ৫১.৬১, ২০১২ সালে ৫৯.২৫। অবশ্য পরেরবার মাত্র ৪টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। 

    ওয়ানডেতে সে বছর তার ৪০.৩০ বোলিং গড়ের চেয়ে বাজে ছিল আর ৩ বার, তবে সে বছরই নিজের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ফিগার গড়েছিলেন তিনি, সাউদাম্পটনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে।

    নিউজিল্যান্ড সফর চোটের কারণে মিস করার পর সাকিব ২০১৯ সালে খেলেছিলেন একটি মাত্র টেস্টই। ক্যারিয়ারে এক পঞ্জিকাবর্ষে সাকিবের সবচেয়ে কম খেলা টেস্ট এ বছরই। সে টেস্টে আফগানিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। 

    ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছরে সাকিব টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন ৪টি। তবে আগের ৫ বছরের তুলনায় ব্যাটিং স্ট্রাইক-রেটটা বেড়েছিল তার এই ম্যাচগুলিতে।

     


    মহামারিতে ‘লাকি’ সাকিব 

    ধরুন কারও বাসায় বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে, বকেয়া-পাওনার জন্য। সেই এলাকায় লোডশেডিং হলে সেই বাসার যে অবস্থা হয়-- বাইরের সঙ্গে একটা সংযোগ ঘটে-- সাকিবের নিষেধাজ্ঞার একটা বড় সময় কেটেছে সেভাবেই। সাকিব যেমন অন্ধকারে ছিলেন, অন্ধকারে ছিল ক্রিকেটবিশ্বও। নিষেধাজ্ঞার সময় সাকিবের যা যা মিস করার কথা ছিল, তার চেয়ে অনেক কম তাই মিস করতে হয়েছে তাকে। 
     


    এমনিতে এ বছর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময়গুলির একটি পার করার কথা ছিল টেস্টে, তবে এখন পর্যন্ত সাকিব মিস করেছেন মোটে ৩টি ম্যাচ। আয়ারল্যান্ডে বিপক্ষে একটি টেস্ট অবশ্য বাতিল হয়ে গিয়েছিল কোভিড-১৯-এর আগেই, তার বদলে বেড়েছিল সীমিত ওভারের ম্যাচ, শেষ পর্যন্ত যে সফর এখনও হয়নি বাংলাদেশের। 

    এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-- দুটিই স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সাকিবকে ছাড়া বড় টুর্নামেন্টেও যেতে হয়নি বাংলাদেশকে। 


     

    সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ

    সাকিব না খেললে বাংলাদেশের টিম কম্বিনেশনে সবচেয়ে বড় যে ঝামেলা পোহাতে হয়-- তার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংয়ের জায়গাতেও খেলাতে হয় বাড়তি একজনকে। সাকিবকে ছাড়া স্পিন-বিভাগের নেতৃত্ব চলে গিয়েছিল তাইজুল ইসলামের কাছে, যিনি সীমিত ওভারেও এ সময়ে প্রায় নিয়মিতই খেলেছেন। 

    সাকিব যাওয়ার পর তিন ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয়েছে চারজনের-- টেস্টে সাইফ হাসান, ওয়ানডেতে আফিফ হোসেন, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে নাঈম শেখ, টি-টোয়েন্টিতে হাসান মাহমুদের। এর মাঝে শুধু আফিফকেই সাকিবের ‘ভূমিকায়’ আপতন করা যেতে পারে-- ব্যাটিংয়ের সঙ্গে টুকটাক বোলিং-ও করেন তিনি। এছাড়া সাইফ ও নাঈম ওপেনার, হাসান পেসার। 

    সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ৪টি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১টি ছাড়া হেরেছে বাকিগুলিতে। ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩টিতেই জিতেছে, টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে ১টি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২টি জিতেছে মোট ৭টি ফল হওয়া ম্যাচে। 

    টেস্টে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে বিবর্ণ ছিল বাংলাদেশ, তাদেরকে মাত্র একবার ইনিংসে অল-আউট করতে পেরেছিল বাংলাদেশ, ৬ ইনিংস মিলিয়ে ২০০ পেরুতে পেরেছিল মাত্র দুইবার। 

     

    সাকিব আল হাসান : নিন্দিত কিংবা নন্দিত নরকে


    সাকিবের সামনে কী 

    বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ নামের টুর্নামেন্ট দিয়ে ফেরার কথা সাকিবের, এমন জানিয়েছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। এর আগে শ্রীলঙ্কা সফরেই তাকে ফেরাতে চেয়েছিল বিসিবি, শেষ পর্যন্ত সেটি স্থগিত হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্টস কপের পর এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করে মূলত আন্তর্জাতিক দলগুলিকে আনার ক্ষেত্রে পথটা ঠিক করতে চায় বিসিবি। 

    জানুয়ারিতে তিন ফরম্যাটের জন্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা আছে আইসিসির এফটিপিতে। এছাড়া মার্চে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে নিউজিল্যান্ড যাওয়ার কথা আছে বাংলাদেশের, যে সূচি এরই মাঝে চূড়ান্ত করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। এছাড়া ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে, যেটি হবে ভারতে। 

    টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছিল সাকিবকে, মাশরাফি বিন মুর্তজার পর ওয়ানডেতেও সে দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন তিনিই। তবে বাংলাদেশে এখন তিন ফরম্যাটে বিসিবি নেতৃত্ব দিয়েছে তিনজনকে-- টেস্টে মুমিনুল হক, ওয়ানডেতে তামিম ইকবাল ও টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহ। 

    সামনের মার্চে সাকিব পূর্ণ করবেন ৩৪। কদিন আগে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, খেলতে চান আরও ৩-৫ বছর। সামনে নেতৃত্ব পাবেন কিনা, সেটি নিশ্চিত নয়। তবে তিনি কোন রূপে ফিরবেন, এই এক বছর সেটিও ছিল আলোচনার পয়েন্ট।