• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    "ট্যাকটিকস নয়, আবেগেই জয়"

    "ট্যাকটিকস নয়, আবেগেই জয়"    

    অ্যালেয়াঞ্জ অ্যারিনায় গতকাল রাতে জুভেন্টাসকে অবিশ্বাস্যভাবে হারানোর পর যেন কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেন পেপ গার্দিওলা। এমন ম্যাচের পর তো ভাষা হারিয়ে ফেলাই স্বাভাবিক। “কৌশল দিয়ে নয়, বায়ার্ন মিউনিখের জয়টা এসেছে আবেগ দিয়েই”- মিউনিখের ঘটনাবহুল রাতের পর যেন মেনেই নিলেন গার্দিওলা।

     খেলা শুরুর মাত্র ২৮ মিনিটের মধ্যে নিস্তব্ধ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনা। ম্যাচের শুরুতেই, মাত্র ৬ মিনিটেই পগবা আর ২৮ মিনিটেই কুয়াদ্রাদোর গোল জুভেন্টাসকে মহাকাব্যিক এক জয়ের আশা দেখাচ্ছিল। ম্যাচের ৯০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হল না জুভদের। থামানো গেল না জার্মান জায়ান্টদের, থামানো গেল না ইউরোপিয়ান ফুটবলের অন্যতম সেরা এক ফিরে আসার গল্পকে।

    প্রথম লেগে ২-২ গোলে ড্র করার পর ঘরের মাঠে প্রথম ২৮ মিনিটেই দুই গোল হজম করে তো চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় চোখ রাঙাচ্ছিল বায়ার্নকে! বায়ার্ন কোচ হিসেবে শেষ মৌসুমে গার্দিওলার কাছে যেখানে কিনা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের প্রত্যাশা, সেই দলের সমর্থকেরা দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় মেনে নেবেন কেন?   


     

    অথচ দুর্দান্ত একটা ম্যাচের পর আলভারো মোরাতা আফসোস করতেই পারেন। ম্যাচের অনেকটা সময় নাভিশ্বাস তুলেছেন বায়ার্ন ডিফেন্ডারদের। ৭০ গজ দৌড়ে দ্বিতীয় গোলের অ্যাসিস্ট তো অনেকদিনই চোখে লেগে থাকবে। কিন্তু পরে মোরাতাই ম্যাচটা শেষ করে দেওয়ার সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন। ভাগ্যটাও অবশ্য পক্ষে ছিল না, প্রথমার্ধে তাঁর নিশ্চিত একটা গোল তো রেফারি অফসাইডের জন্য বাতিল করে দিয়েছিলেন। 

    থমাস মুলারের ইনজুরি সময়ের গোলে ম্যাচে সমতায় ফেরে বায়ার্ন। এর আগে ৭৩ মিনিটে ডলাস কস্তার ক্রসে মাথা ছুঁয়ে বুফনের জালে বল জড়ান পোলিশ স্ট্রাইকার লেভান্ডফস্কি। ওই গোলেই প্রাণ ফিরে পায় অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনা। নিথর-নিস্তরঙ্গ ম্যাচে ফেরত আসে অনিশ্চয়তার দোলাচল! 

     

    ম্যাচের অন্তিম মুহুর্তে মুলারের গোলে সমতায় ফিরলো বায়ার্ন। বেঁচে থাকল বায়ার্নের চ্যাম্পিয়নস লিগ স্বপ্নযাত্রা। ম্যানেজার হিসেবে প্রত্যেকবার অন্তত কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার রেকর্ডটা অক্ষুণ্ণ রাখতে গার্দিওলাও সময় পেলেন আর ৩০ মিনিট। বার্সেলোনা-আর্সেনালের এক পেশে ম্যাচ শেষ করে তখন পুরো ফুটবল বিশ্বের চোখ বায়ার্ন-জুভের ম্যাচের দিকেই! ইউরোপিয়ান ফুটবলের ঘটনাবহুল রাতগুলো তো এমনই! আনন্দ-বেদনা আর উত্তেজনায় ঠাসা।


    বায়ার্ন-জুভেন্টাসের ম্যাচটা প্রথম লেগ থেকেই ‘টুইস্টে’ টইটম্বুর। খেলা তো শেষ হয়ে গিয়েছিল তুরিনের প্রথম ৬০ মিনিটেই! সেই ম্যাচেও ঘুরে দাঁড়াল জুভে। দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও ওরা সমতায় ফিরলো। ফিরতি লেগের এই ম্যাচেও এমন উত্তেজনা ছড়াবে তা কে ভেবেছিল!



    অতিরিক্ত সময়ের ওই ৩০ মিনিটেই নির্ধারিত হল ম্যাচের ভাগ্য, কোয়ার্টারের টিকেট। প্রথমার্ধটাও থাকল অমীমাংসিত। খেলা তখন টাইব্রেকারের দিকেই এগোচ্ছে। কিন্তু বাধ সাধলেন থিয়াগো। বার্সেলোনা থেকে যাকে পেপ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন জার্মানিতে! বায়ার্নে যার বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে সাইড বেঞ্চ গরম করে আর ইনজুরিতে খেলতে না পেরে।  

    খেলার ১০৮ মিনিটে মুলারের সাথে বক্সের ভেতর পাস দেয়া নেয়া করে থিয়াগো আলকান্তারার ডান পায়ের শটটা জুভেন্টাসের জালে জায়গা পেলে নাটকীয়তার ঝাঁঝটা বাড়ে আরও। চ্যাম্পিয়নস লিগের রঙ্গমঞ্চে জুভেন্টাসকে সেই নাটকে আরেকবার রঙ চড়ানোর সুযোগ না দিয়ে উপসংহার টানেন কোম্যান। ১১০ মিনিটে তার গোলেই ৪-২ গোলের জয় নিশ্চিত হয় বায়ার্নের। নাটকের উপসংহারটা এখানে টানা গেলেও টুইস্টের শেষটা এখানেও না! শেষ হইয়াও যে নাটক হয় না শেষ! যার গোলে জুভেন্টাসের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকা হল সেই কোম্যান জুভেন্টাস থেকে দু’বছরের ধারে খেলতে এসেছিলেন বায়ার্নে! দুই বদলী খেলোয়াড়ের গোলেই জুভেন্টাসকে বিদায় করলো বায়ার্ন মিউনিখ।   

    ক্লাইম্যাক্স-অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্সে ঠাসা খেলার গল্পটা হয়তো বলা যেত অন্যভাবেও। জুভেন্টাসের বাজে শুরুর পরও লিগের শীর্ষে থাকা, কোপা ইতালিয়ার ফাইনালে ওঠার সাথে প্রথম লেগে অমন ফলের পরও বায়ার্নকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে দেয়ার গল্পটা যোগ করা গেল না। তাতে জুভেন্টাসের গল্পটা পূর্ণতা পেল না হয়ত, কিন্তু রাতটা রঙিন হয়ে থাকল বায়ার্নেরই। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই পুরোনো কথাই আবার বলতে হয়, “ইউরোপিয়ান ফুটবলের রাতগুলো তো এমনই!”