• টোকিও অলিম্পিক ২০২০
  • " />

     

    অলিম্পিকে ক্রিকেট আছে, ক্রিকেট নেই

    অলিম্পিকে ক্রিকেট আছে, ক্রিকেট নেই    

    অলিম্পিকে অনেক খেলার নিয়ম আপনি হয়তো জানেন না। কিছু কিছু খেলা আছে যেমন বিএমএস রেসিং, ইভেন্টিং এসবের নামও হয়তো অনেকে শোনেননি, নিয়ম জানা দূরে থাক। এই উপমহাদেশে প্রতি অলিম্পিকের সময় একটা হাহাকার শোনা যায় অস্ফুটে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞে ক্রিকেট নেই কেন? যে খেলাটা বিশ্বের অন্তত ১৫০ কোটি লোকের কাছে প্রায় উপাসনার মতো, সেই খেলাটাই নেই অলিম্পিকে? টোকিওতে ক্রিকেট নেই, তবে এক অর্থে আবার আছেও। ব্রেন্ডন স্টার্ক ও রাই বেনজামিন মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ক্রিকেটের সাথে যোগ আছে এই অলিম্পিকের।

    অবশ্য অলিম্পিকে যে ক্রিকেট কখনোই ছিল না তা নয়। ১৯০০ সালের অলিম্পিকে ক্রিকেট ছিল, ক্রিকেটের আদিভূমি ব্রিটেন সোনাও জিতেছিল। তবে এরপর অলিম্পিকে ক্রিকেট অপাংক্তেয়। একটা সময় ফেরানোর কোনো চেষ্টা হয়নি, এখন চেষ্টার পরও ফিরতে পারেনি। ২০২৮ অলিম্পিক থেকে অবশ্য ক্রিকেটকে দেখা যাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সেটারও অনেক দেরি। তাই বলে কি অলিম্পিকে ক্রিকেট নেই?

    অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা অন্তত প্রতিবাদ জানাবেন নিশ্চিতভাবেই। অলিম্পিক চলার সময়েই তারা টি-টোয়েন্টি খেলতে এসেছেন ঢাকায়। দুই দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে তারা যখন মিরপুরে প্রথম দিন অনুশীলনে নেমেছিলেন, একজনের মন নিশ্চিতভাবেই ছিল টোকিওতে। মিচেল স্টার্ক উৎকন্ঠা নিয়ে বসেছিলেন হাই জাম্পের ফাইনালের জন্য। সেখানে লড়ছিলেন তার ভাই বেঞ্জামিন স্টার্ক। অনুশীলনের ফাঁকে পুরো অস্ট্রেলিয়া দলই ব্রেন্ডনের জন্য বসে গেল মাঠে ব্রেন্ডনের ফাইনাল দেখতে। সেই ছবিটা ভাইরাল হয়ে গেছে, এর মধ্যে হয়তো আপনার চোখেও পড়ার কথা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ব্রেন্ডন স্টার্ক পারেননি, তবে মিচেল স্টার্ক ভাইকে নিয়ে গর্ব করবেন নিশ্চিতভাবেই। ক্রিকেটমহলে হয়তো মিচেল সুপারস্টার, তবে বৈশ্বিক মঞ্চে তো ব্রেন্ডনই পরিবার থেকে প্রতিনিধি। মিচেল একবার মজা করে বলেছিলেন, তার পরিবারে তিনি তৃতীয় সেরা অ্যাথলেট। একজন তার ভাই ব্রেন্ডন অবশ্যই, আরেকজন মিচেলের স্ত্রী অ্যালিসিয়া হিলিও এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের ক্রিকেটের কিংবদন্তি।

    আরেকজন ক্রিকেটারও টোকিও অলিম্পিকের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের ওপর শ্যেন দৃষ্টি রাখছিলেন। আজ যখন ৪০০ মিটার হার্ডলসে রাই বেঞ্জামিন দৌড়াচ্ছিলেন, তখন ধারাভাষ্যকার বলছিলেন রাইয়ের বাবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের একজন ক্রিকেটার। বেঞ্জামিন নামটা শুনে অবশ্য কেউ কেউ অনুমান করে ফেলতে পারেন। নব্বই দশকে যারা ক্রিকেট দেখেছেন, তাদের উইন্সটন বেঞ্জামিনকে না চেনার কোনো কারণ নেই। একটা সময় ম্যালকম মার্শালের উত্তরসূরি ধরা হতো এই পেসারকে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা অবশ্য সেরকম বড় হয়নি। এমনকি অবসরের পরের সময়টাও সুখের কাটেনি তার, নানান রকম কাজ করেও থিতু হতে পারেননি কোথাও। তবে বোলার বেঞ্জামিন নিয়মিতই ১৪০ কিলো ওঠাতে পারতেন পেস, নিজের অনুকূলে কন্ডিশনে ছিলেন দারুণ বোলার।

    তার ছেলের অবশ্য স্প্রিন্টার হয়ে ওঠার গল্পটাও অভিনব। উইন্সটন অ্যান্টিগার মানুষ, তার ছেলের জন্মও সেখানে। তবে রাইয়ের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ ছিল না খুব একটা। ব্রায়ান লারাকে আধ একটু চিনত, এরপর মালিঙ্গা ছাড়া আর কোনো ক্রিকেটারকে রাই চেনে না। একটু বড় হয়ে মায়ের সঙ্গে সে চলে যায় নিউ ইয়র্ক, সেখানে তার ধ্যানজ্ঞাণ ছিল আমেরিকান ফুটবল। তবে কলেজে ওঠার পর অ্যাথলেটিক্স কোচের চোখে পড়ে যান। রক্তে দৌড় আছে তার, বাবা দৌড়াতে পারতেন খুব। রাইও সেটা পারেন, তাই নাম লেখান হার্ডলসে।

    এরপর একের পর এক সিড়ি টপকে যাওয়া। এই বছর ৪০০ মিটার হার্ডলসে সর্বকালের তৃতীয় সেরা টাইমিং করলেন। টোকিওর ফাইনালেও বিশ্বরেকর্ড গড়ে সোনা পেতে পারতেন, কিন্তু নরওয়ের কারস্টেন ওয়ারলম যে অতিমানব হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত রাইকে তাই রূপা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তবে উইন্সটন হয়তো তাতে খুব একটা মন খারাপ করবেন না। ছেলে অ্যান্টিগা ছেড়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রে নাম লেখাল, তখনও সেটা মেনে নিয়েছিলেন। ছেলে যেটা করতে চেয়েছেন, সেটাই করেছেন। উইন্সটন তাই রাইয়ের পদককে অ্যান্টিগার জন্যও গর্বের উপলক্ষ হিসেবে দেখছেন। বিশ্বমঞ্চে ছেলে যেভাবে আলো ছড়িয়েছে, সেটাই বা কম কী?