• ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    দুর্দান্ত ইংল্যান্ডকে থামিয়েও বিদায় নিল দক্ষিণ আফ্রিকা

    দুর্দান্ত ইংল্যান্ডকে থামিয়েও বিদায় নিল দক্ষিণ আফ্রিকা    

    সুপার ১২, শারজাহ (টস- ইংল্যান্ড/ বোলিং)
    দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮৯/২, ২০ ওভার (ভ্যান ডার ডুসেন ৯৪*, মার্করাম ৫২*, ডি কক ৩৪, মঈন ১/২৭, রশিদ ১/৩২)
    ইংল্যান্ড ১৭৯/৮, ২০ ওভার (মঈন ৩৭, মালান ২২, লিভিংস্টোন ২৮, রাবাদা ৩/৪৮, শামসি ২/২৪, প্রিটোরিয়াস ২/৩০)

    ফলাফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ রানে জয়ী

     

    আগের তিন ওভারে ৪৫ রান দিয়ে দলের সবচেয়ে খরুচে বোলার তিনি; সেমিফাইনালের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেলেও জয়ের স্বপ্ন বোনা টেম্বা বাভুমা তবু বল তুলে দিলেন সেই কাগিসো রাবাদার হাতেই। হুট করেই কোন জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় মুহূর্তেই দেখা মিলল সেই চিরচেনা রাবাদার। শেষ ওভারে ১৪ রান প্রয়োজন হলে তাকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে প্রথম তিন বলেই ফিরে গেলেন ক্রিস ওকস, অইন মরগান ও ক্রিস জর্ডান; রাবাদাও পেয়ে গেলেন আসরের তৃতীয় হ্যাটট্রিক। সেই সাথে দলকে ১০ রানের জয় এনে দিয়ে মাথা উঁচু করেই মাঠ ছাড়লেন তারা।

    কোয়ালিফাই করতে হলে ইংল্যান্ডকে আটকে দিতে হবে ১৩১ রানের মধ্যে- এই সমীকরণ মাথায় নিয়েই নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। কোয়ালিফাই করার সমীকরণ মাথায় ছিল ইংল্যান্ডেরও: প্রয়োজন ৮৭ রান; গ্রুপে শীর্ষে থাকতে প্রয়োজন ১০৬+ রান। এতসব সমীকরণের মারপ্যাঁচে ইংল্যান্ডের দুই ফর্মে থাকা ওপেনারের শুরুটা হয় যথারীতি ঝড়ো। তবে কিছুক্ষণ পরে দ্রুত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। ইংল্যান্ডের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে রয় মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পরের ওভারে আনরিখ নরকিয়ার শিকার হয়ে ২৬ রানে ফিরে যান জস বাটলারও। পাওয়ারপ্লে শেষে অবশ্য ৫৯ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড।

    পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই জনি বেইরস্টোকে তাব্রেইজ শামসি ফেরালে দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালের স্বপ্নের পালে জোর হাওয়া লাগে। তবে প্রতি আক্রমণে মুহূর্তের মধ্যেই প্রোটিয়াদের স্বপ্ন দুমড়ে মুচড়ে দেন মঈন আলী। ইংল্যান্ডের প্রয়োজনীয় ৮৭ রান উঠে যাওয়ার পরের ওভারে ছয়-চারে ১৫ রান নিয়ে ডাভিড মালানের সাথে জুটি গড়েন; পরের ওভারের প্রথম বলে ছয় মেরে গ্রুপে ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানও নিশ্চিত করেন। বিশাল সেই ছয়ের পরের বলেও একই ফলাফলের খোঁজ করতে গেলে শামসির শিকার হয়ে ২৭ বলে ৩৭ রান করে থামেন তিনি। উইকেটে এসে লিয়াম লিভিংস্টোন রয়েসয়েই খেলছিলেন। তবে রাবাদা আক্রমণে এলে তাকে টানা তিন ছয়ে স্বাগত জানান তিনি, জার মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড়: ১১২ মিটার ছয়! ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টানোর ম্যাচে এরপরের ওভারেই ৩৩ রান করে ডুয়েইন প্রিটোরিয়াসকে উইকেট দিয়ে ফেরেন মালান।

    ১৯তম ওভারে সেই প্রিটোরিয়ায়সই লিভিংস্টোনকেও ফেরান। তবে উইকেটে এসেই বড় ছয়ে দলকে ম্যাচে রাখেন ক্রিস ওকস। এরপরে শেষ ওভারে রাবাদা করেন স্বপ্নের মত সেই ওভার; একে একে ওকস, মরগান ও জর্ডানকে ফিরিয়ে দলকে এনে দেন জয়।  

    জয়ের কোনও বিকল্প তো দক্ষিণ আফ্রিকার ছিলই না, বরং জয়টাও হতে হত বড় ব্যবধানে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মঈন আলির বলে স্টাম্প খুইয়ে রিজা হেন্ড্রিকস ফিরে গেলে মনস্তাত্ত্বিকভাবেই কিছুটা পিছিয়ে পরে তারা। তবে দ্রুওতি নিজেদের গুছিয়ে নেন কুইন্টন ডি কক-রাসি ভ্যান ডার ডুসেন জুটি। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ১৪ রান নিয়ে স্কোরকার্ডে তোলেন ৪০ রান।

    পাওয়ারপ্লের পরেও নিয়মিত প্রান্ত বদল করছিলেন দুজন, ওভাররতি দেখা পাচ্ছিলেন বাউন্ডারির। তবে মনোযোগে ছেঁদ পড়লে আদিল রশিদের শিকার হয়ে ২৭ বলে ৩৪ রান করে ফিরে যান ডি কক। সেই উইকেট পতন অবশ্য শাপেবর হয়েই এল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। উইকেটে আসা এইডেন মার্করামকে নিয়ে ইংলিশ বোলারদের মাঝে রীতিমত ত্রাস সঞ্চার করেন ভ্যান ডার ডুসেন। ৩৭ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করার পর গিয়ার পাল্টে প্রায় সব বোলারকেই এক হাত নেন। আর মার্করাম তো শুরু থেকেই ছিলেন দারুণ সপ্রতিভ।

    মূল ঝড়টা শুরু হয় ১৬তম ওভার থেকেই। আগের ওভারেই মাত্র ৪ রান দিয়ে ক্রিস জর্ডান লাগাম টেনে ধরেছিলেন। কিন্তু আসরে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ডট বল করা ক্রিস ওকসকে এরপর তিন ছয় মেরে ২১ রান নেন এই জুটি। শেষ ৫ ওভারে ৭১ রান তোলেন দুজন মিলে। সেঞ্চুরির খুব কাছে গেলেও অধরাই থেকে যায় তা ভ্যান ডার ডুসেনের; নিজের ফিফটিটা অবশ্য ঠিকই পেয়েছেন মার্করাম। ৬০ বলে ৯৪* করা ভ্যান ডার ডুসেন ও ২৫ বলে ৫২* রান করা মার্করাম তাই দলকে এনে দেন ১৮৯ রানের বড় সংগ্রহ। বর্ণবাদের অভিযোগ, ডি কক-ইস্যুকে একপাশে সরিয়ে রেখে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানো দক্ষিণ আফ্রিকা সেই সংগ্রহকে যথেষ্ট বানিয়ে ইংল্যান্ডের জয়ের ধারা ছিন্ন করেছেন। টুর্নামেন্ট থেকে রান রেটের হিসেবে বিদায় নিলেও নিজেদের নিয়ে তাই গর্ব করতেই পারে প্রোটিয়ারা।