• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    বিপিএল প্রিভিউ: কেমন করবে কোন দল

    বিপিএল প্রিভিউ: কেমন করবে কোন দল    

    দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। রাত পোহালেই শুরু হবে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই টুর্নামেন্ট। 

    ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে তারুণ্যনির্ভর দল সাজিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ওদিকে মিনিস্টার ঢাকার স্কোয়াডে এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। দেশি-বিদেশি মিলে ফরচুন বরিশালও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ এক দল। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও মাঠে নেমেছে কোমর বেঁধে। মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্সের ভরসা স্কোয়াডের অলরাউন্ডাররা । সিলেট সানরাইজার্সের আশার প্রদীপ দেশি ক্রিকেটাররাই।

    দেশি-বিদেশি ক্রিকেটাদের নিয়ে বিপিএলে কেমন করতে পারে কোন দল? শক্তি-সামর্থ্যে কে এগিয়ে? দুর্বলতাই বা কোথায়? কে হতে পারেন দলের এক্স ফ্যাক্টর? প্যাভিলিয়নের আজকের আয়োজনে থাকছে বিপিএলের টিম প্রিভিউ

     

    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স


    বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যচে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। প্লেয়ার্স ড্রাফটে তারকাদের পেছনে না ছুটে, ফ্র্যাঞ্চাইজিটি দল সাজিয়েছে তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে।দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ড্রাফট ও সরাসরি চুক্তিতে মোট ১৮  ক্রিকেটারকে দলে নিয়েছে চট্টগ্রাম।

    এখন পর্যন্ত আলাদা তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে খেললেও শিরোপা জেতেনি চট্টগ্রাম। সাফল্য কেবল, একবারের রানার আপ। তবে এবার তরুণদের কাঁধে ভর দিয়েই শিরোপার স্বপ্ন দেখছে দলটি। 

    চট্টগ্রামের অধিনায়কের দায়িত্বে মেহেদী হাসান মিরাজ। বিপিএলে আগেও অধিনায়কত্ব করেছেন এই অলরাউন্ডার। 

    শক্তি ও সম্ভাবনা

    ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রামের মূল শক্তি আফিফ হোসেন ধ্রুব- সাব্বির রহমানরা। টপ কিংবা মিডল অর্ডারে বড় ইনিংস খেলার প্রমাণ আগেই দিয়েছেন দুজন। তাদের সঙ্গ দিতে আছেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার চ্যাডউইক ওয়ালটনও। চট্টগ্রামের জার্সিতে তার বিপিএল রেকর্ডও বেশ ভালোই। 

    আলাদা করে নজর কাড়তে পারেন আরেক ক্যারিবিয়ান কেনার লুইস। বিশালদেহী এই ওপেনারও দলকে এনে দিতে পারেন উড়ন্ত সূচনা। 

    মিডল অর্ডারে মিরাজের সাথে থাকতে পারেন অভিজ্ঞ নাঈম ইসলাম। বেনি হাওয়েল-রায়াদ এমরিটরা প্রতিষ্ঠিত পাওয়ার হিটার নন। তাই দলটি চেয়ে থাকবে শামীম পাটোয়ারির ব্যাটে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলীও খেলতে পারেন হাত খুলে। সুযোগ পেলে ছন্দে থাকা জাকির হাসানও দেখাতে পারেন ভেলকি। 

    চট্টগ্রামের স্পিন জুটি মিরাজ-নাসুম। রান আটকাতে দুজনই হতে পারেন কার্যকরী। পার্ট টাইমার আফিফ হতে পারেন চট্টগ্রামের ‘ম্যান উইদ দ্য গোল্ডেন আর্ম’।

    মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, রেজাউর রহমান রাজা, মৃত্যুঞ্জয়দের নিয়ে সাজানো পেস আক্রমণের নেতৃত্বে থাকবেন শরীফুল ইসলাম। তাদের মধ্যে তুলনামূলক অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই বোলারই। ডেথ ওভার কিংবা পাওয়ারপ্লেতে, গতি-সুইং-বাউন্সে চমকে দেয়ার সামর্থ্য আছে তার।

     

    দুর্বলতা 


    দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় দলের বাইরে আছেন সাব্বির। ইঞ্জুরিতে পড়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের দৃশ্যপটেও ছিলেন অনুপস্থিত। এতদিন পর মাঠে ফিরে ছন্দ ফিরে পাবেন কিনা, সেটা ভাবাতে পারে টিম ম্যানেজম্যান্টকে। কারণ ফেরার মঞ্চ হিসেবে বিপিএল বেশ কঠিন জায়গা-ই বটে। 

    বিপিএলের ঢাকা পর্বে মিরপুরের মন্থর উইকেটে সাব্বিরের ব্যাট ছন্দে ফিরে কিনা সেটাই দেখার অপেক্ষা। 

    ডেথ ওভারের ব্যাটিং নিয়ে ভোগান্তির সম্ভাবনা আছে চট্টগ্রামের। শামীম থাকলেও, ইনিংসের শেষদিকে একজন প্রতিষ্ঠিত স্লগারের অভাব বোধ করতে পারে দলটি। 

    বড়মঞ্চে তরুণ পেসাররা চমক হতে পারেন, কিন্তু মাথায় রাখতে হবে তাদের অনভিজ্ঞতার ব্যাপারটাও। আচমকা মুখোমুখি হওয়া ব্যাটিং ঝরে পা হড়াকনোর সম্ভাবনাও বেশ আছে। এছাড়া স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে  বিপিএলের আলাদা তিন ভেন্যুর উইকেট  রাজা-মুগ্ধ-মৃত্যুঞ্জয়রা কীভাবে কাজে লাগাবেন সেটাও বড় এক প্রশ্ন। তরুণদের কাঁধে চড়ে প্লে-অফের টিকেট নিশ্চিত 

     

    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স স্কোয়াড-

    দেশি: নাসুম আহমেদ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক) শরিফুল ইসলাম, শামীম পাটোয়ারী, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, রেজাউর রহমান রাজা, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, আকবর আলি. নাঈম ইসলাম, এনামুল হক জুনিয়র ও জাকির হাসান।

    বিদেশি:  চ্যাডউইক ওয়ালটন, বেনি হাওয়েল. উইল জ্যাকস, কেনার লুইস ও রায়াদ এমরিট


    মিনিস্টার ঢাকা

    এক দলেই দেশের তিন তারকা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মোর্তুজা। নিশ্চিত করেই বলা যায়, মাঠের খেলায় তাই অভিজ্ঞতার কোনো কমতি হবে না মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার। 

    আলাদা তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে খেলে এখন পর্যন্ত তিনবার শিরোপা জিতেছে ঢাকা। অভিজ্ঞতার সঙ্গে ইতিহাসও ঢাকার পক্ষেই কথা বলছে।

    শক্তি ও সম্ভাবনা

    ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত সুচনা এনে দিতে তামিমের সঙ্গী হতে পারেন নাঈম শেখ কিংবা মোহাম্মদ শাহজাদ। শাহজাদ শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে পারেন। নাঈম একটু রয়েসয়ে খেললেও, নিজের দিনে তামিম হতে পারেন বিধ্বংসী। 

    মিডল অর্ডারের খুঁটি খোদ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের শেষদিকে ব্যাট হাতে তার রেকর্ডও ঢাকার স্বস্তির কারণ। 

    আফগান অলরাউন্ডার নাজিবউল্লাহ জাদরান, শুভাগত হোম ডাকাবুকো ব্যাটসম্যান না হলেও, রানের চাকা সচল রাখতে পারে। সর্বশেষ ডিপিএল টি-টোয়েন্টিতেও শুভাগতর স্ট্রাইকরেটও ছিল সর্বোচ্চ। 

    ডেথ ওভারে ব্যাটিংয়ের চিন্তা দূর করতে পারেন আন্দ্রে রাসেল। মারকুটে এই ক্যারিবিয়ান যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো বোলিং আক্রমনের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে পারেন। সাথে তার ডানহাতি পেসও ঢাকার জন্য বাড়তি পাওনা। 

    ঘরোয়া ক্রিকেটের দুই অভিজ্ঞ স্পিনার আরাফাত সানি,শুভাগত হোমকে নিয়ে ঢাকার স্পিন আক্রমণ। তবে  প্রতিপক্ষের রানের রথ থামাতে কার্যকরী হতে পারেন আফগান লেগ স্পিনার কাইস। 

    দুর্বলতা

    দীর্ঘদিন ক্রিকেটের বাইরে থাকা মাশরাফিই হয়তো থাকতেন পেস বোলিংয়ের নেতৃত্বে। কিন্তু ইঞ্জুরিতে পড়ে প্রথম কয়েক ম্যাচের জন্য ছিটকে গেছেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক। যদিও দুই অভিজ্ঞ পেসার  রুবেল হোসেনও শফিউল ইসলাম আছেন। এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন ছন্দে থাকা এবাদত হোসেন।  আক্রমণে বৈচিত্র্য যোগ করবেন লংকান বাঁহাতি পেসার ইসুরু উদানা। 


    সীমিত ওভারে ক্রিকেটে তামিমের সাম্প্রতিক ব্যাটিংয়ের ধরন নানান কারণেই সমালোচিত। তার তুলনামুলক ধীর গতির ব্যাটিংয়ে, প্রতিপক্ষের বোলাররা হয়তো চেপে বসতে পারেন ঢাকার ওপর। 

    চিন্তার কারণ হতে পারে নাঈমের ব্যাটিংও। শুরুটা দারুণ করলেও, ইনিংসের দৈর্ঘ্য বাড়ার সাথে সাথে তুলনামূলক ধীরই হয়ে যায় তার ব্যাট। 

    দীর্ঘদিন ক্রিকেটের বাইরে আছেন মাশরাফি। বয়স বাড়ন্ত, ফিটনেসটাও চিন্তার কারণ। জানা গেছে ইঞ্জুরির কারণে থাকছেন না প্রথম কয়েক ম্যাচে। ক্রিকেটের সঙ্গে দীর্ঘ এই বিরতি আরো দীর্ঘায়িত হলো। তবে মাঠে ফিরে নিজের বিশাল অভিজ্ঞতার সাথে পারফর্ম্যান্সের সন্নিবেশ ঘটাতে পারবেন কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন। 

     

    মিনিস্টার ঢাকা স্কোয়াড-

    দেশি:  মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক) , তামিম ইকবাল, রুবেল হোসেন, মাশরাফি বিন মোর্তুজা, শুভাগত হোম চৌধুরী, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, আরাফাত সানি, ইমরানুজ্জামান, শফিউল ইসলাম, এবাদত হোসেন, শামসুর রহমান, জহুরুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন।

    বিদেশি: কাইস আহমেদ, নাজিবুল্লাহ জাদরান, ইসুরু উদানা, মোহাম্মদ শাহজাদ, ফজল হক ফারুকী ও আন্দ্রে রাসেল।


    ফরচুন বরিশাল

    সাকিব আল হাসান, ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, মুজিব-উর-রহমান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বড় এই তারকাদের নিয়েই দল গড়েছে  ফরচুন বরিশাল। উদ্বোধনী ম্যাচে তারকাখচিত দলটির প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তারকাদের সঙ্গে আছেন  নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, মুনিম শাহরিয়ারের মতো দেশি ক্রিকেটাররাও। 

    এর আগে আলাদা দুটি  ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানায় খেলে, একবারও  শিরোপা জেতেনি বরিশাল। সেরা সাফল্য  ২০১৫ বিপিএলে রানার আপ হওয়া। তবে শক্তিশালী দল গড়ে এবার শিরোপা জিততে আশাবাদী নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি। 

    শক্তি ও সম্ভাবনা

    বরিশালের শক্তির অন্যতম জায়গা তাদের ব্যাটিং।পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন শান্ত-মুনিম-হৃদয়রা। চেনা কন্ডিশন আর উইকেটে বরিশালের ব্যাটিং কাণ্ডারি হতে পারেন তারা। কয়েক ম্যাচ পর গেইল যোগ দিলে ব্যাটিং অর্ডারের শক্তি বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

    মিডল অর্ডারের ভরসা দুই বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার সাকিব আর ব্রাভো। নুরুল হাসান সোহান, সৈকত আলী, জিয়াউর রহমানরাও লেট অর্ডারের সামর্থ্যবান ক্রিকেটার। সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে ছন্দে ছিলেন তিনজনই। 

    মুজিব-সাকিব-তাইজুলকে নিয়ে দলটির স্পিনত্রয়ী। স্লো উইকেটে টার্ন-ফ্লাইট কিংবা আর্মারে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের মূল চ্যালেঞ্জ হবেন তারাই। অফ স্পিনার নাঈম তো আছেনই। বৈচিত্র্য যোগ করবেন ইংলিশ চায়নাম্যান বোলার জেইক লিন্টট। 

    স্কোয়াডে আছেন তিন বাঁহাতি পেসার। ওবেড ম্যাককয় বিদেশি হলেও, চেনা মাঠে শফিকুল-রানারা তাকে পথ দেখাতে চাইবেন নিশ্চয়ই।

    দুর্বলতা

    বিপিএলে রেকর্ড ভালো হলেও, দীর্ঘদিন ধরে ছন্দে নেই গেইলের ব্যাট। টি-টোয়েন্টিতে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তাও বছরখানেক প্রায়। সর্বশেষ দশ টি-টোয়েন্টির চারটিতেই আউট হয়েছেন সিংগেল ডিজিটে। গেইলের ফর্মটাও ভোগাতে পারে বরিশালকে। 

    সাকিবের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের গ্রাফও নিম্নমুখী। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের ফ্ল্যাট উইকেটে চলিশোর্ধ্ব দুটো ইনিংস আছে অবশ্য। তবে বিপিএলের স্লো উইকেটেই হবে সাকিবের আসল পরীক্ষা। আসন্ন বিপিএলে সাকিব যদি টপ অর্ডারে ব্যাট করেন, তাহলে তুলনামূলক তরুণ কোনো ব্যাটসম্যানের জায়গা হবে ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে। 

    অবশ্য বিপিএলের ইতিহাস বলছে, স্লো উইকেটে অমন ব্যাটিং পজিশনে বোলিং অলরাউন্ডাররাই ভালো করেন। কিন্তু  ড্রাফটে বোলিং অলরাউন্ডারদের দিকে না ঝুঁকে, প্রায় সবগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোই দলে টেনেছে ফাস্ট বোলারদের।
     

    ফরচুন বরিশাল স্কোয়াড-

    দেশি; সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নুরুল হাসান সোহান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান রানা, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, তৌহিদ হৃদয়, জিয়াউর রহমান, শফিকুল ইসলাম, সৈকত আলি, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, সালমান হোসেন, ইরফান শুকুর এবং মুনিম শাহরিয়ার। 

    বিদেশি: মুজিব-উর-রহমান,ডোয়াইন ব্রাভো, ক্রিস গেইল, ওবেড ম্যাকরয়, আলজারি জোসেফ, নিরোশান ডিকভেলা, জেইক লিন্টট। 

     

    কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

    ব্যাটে-বলে ভারসাম্যপূর্ণ এক দল গড়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মোস্তাফিজুর রহমান, ফাফ ডু প্লেসি, সুনিল নারাইন, মঈন আলীর মতো বড় তারকাদের দলে ভিড়িয়েছে দুইবারের শিরোপাজয়ী  ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। আছেন লিটন দাস, ইমরুল কায়েসের মতো দেশি তারকারাও। 

    শক্তি ও সম্ভাবনা

    বিদেশি তারকাদের অভিজ্ঞতা আর ছন্দে থাকা স্থানীয় ক্রিকেটাররাই, কুমিল্লার ভারসাম্যের মূল চাবিকাঠি। 

    ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লিটন আছেন ফর্মে। বাঁহাতি ওপেনার ইমরুলের বিপিএল অভিজ্ঞতার ঝুলিও বেশ ভারী। তার অধিনায়কত্বেই সর্বশেষ বিপিএল শিরোপা জিতেছিল কুমিল্লা। দলটির নেতৃত্বে এবারও থাকছেন তিনি। 

    পারভেজ হোসেন ইমন হতে পারেন কুমিল্লার তুরুপের তাস। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ইমন ঘুরিয়ে দিতে পারেন ম্যাচের মোড়। অলরাউন্ডার নাহিদুল ইসলামও আছেন স্কোয়াডে। ব্যাটিং তো আছেই। অফস্পিনেও কাবু করার সামর্থ্য আছে তার। 

    লিটন-ইমরুল-ডু প্লেসিদের গড়া ইনিংসের শেষতা রাঙাতে পারেন মঈন আলী। ডেথ ওভারে তার ব্যাট থেকে চার ছক্কা দেখা যায় নিয়মিতই। 

    স্পিন বিভাগের নেতৃত্ব থাকবে নারাইনের হাতে। সহযোদ্ধা হিসেবে পাবেন  মাহেদী ও নাহিদুলকে। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামও নজর কাড়তে পারেন। 

    দুর্বলতা

    পেস আক্রমণের পুরোটাই আবর্তিত হবে মোস্তাফিজকে ঘিরে। ওশানে থমাস, করিম জানাতরাও বেশ কার্যকরী। তবে শহীদুল, সুমন, আর আবু হায়দার রনিদের দায়িত্বও থাকবে আলাদা। বলা চলে, পেস বোলিংয়ে কুমিল্লার ভাগ্য অনেকাংশেই মোস্তাফিজের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষত, পাওয়ার প্লে ও ডেথ ওভারে।  


    কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স স্কোয়াড-

    দেশি: মোস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, শহিদুল ইসলাম, ইমরুল কায়েস (অধিনায়ক), তানভীর ইসলাম, আরিফুল হক, নাহিদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, সুমন খান, মুমিনুল হক, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, পারভেজ হোসেন ইমন, আবু হায়দার রনি, মেহেদী হাসান। 

    বিদেশি: সুনীল নারাইন, ফাফ ডু প্লেসি, মইন আলী, কুশাল মেন্ডিস, ওশেন থমাস , করিম জানাত, ক্যামেরন ডেলপোর্ট 


    খুলনা টাইগার্স

     

    অলরাউন্ডারের ছড়াছড়ি খুলনা টাইগার্সের স্কোয়াডে। মুশফিকুর রহিমকে অধিনায়ক করে দেশ-বিদেশের অলরাউন্ডারদের প্রাধান্য দিয়ে দল সাজিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। সৌম্য সরকার, ইয়াসির আলি রাব্বি, রনি তালুকদার, আন্দ্রে ফ্লেচারকে নিয়ে খুলনার টপ অর্ডার। সাথে মুশফিক তো আছেনই। 

    থিসারা পেরেরা, মেহেদী হাসান, সেকুগে প্রসন্ন, সিকান্দার রাজাদের নিয়ে অলরাউন্ডার বিভাগটাও বেশ আঁটসাঁট খুলনার। ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ ফরহাদ রেজা, মোহাম্মদ শরীফুল্লাহরাও আছেন এই তালিকায়। তারা মিডল অর্ডারে খেললেও, ডেথ ওভারেই প্রমাণ দিতে হবে সক্ষমতার।

    কামরুল ইসলাম রাব্বি, নাভিন উল হক নেতৃত্ব দিবেন পেস আক্রমণে। পাওয়ার প্লে আর ডেথ ওভারেই মূল দায়িত্ব তাদের। মাঝের ওভারে  তাদের সহযোগী হিসেবে থাকবেন আরেক ডানহাতি পেসার খালেদ আহমেদ। 

    স্পিন দিয়ে ধীরগতির উইকেটে সোহরাওয়ার্দী শুভ, নাবিল সামাদও কার্যকরী হতে পারেন। 

    দুর্বলতা

    গত বিপিএলের রানার আপ খুলনা। যদিও সেবার আলাদা ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে খেলেছিল দলটি। এবার নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে নতুন দল।  টিম ম্যানেজমেন্ট তথা অধিনায়ক মুশফিকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে স্কোয়াডের অলরাউন্ডারদের নিয়ে সেরা দলটা দাঁড় করানো। এখানে পা হড়কালে, অন্য দলগুলো এর সুযোগটা নিতেই চাইবে।   

     

    খুলনা টাইগার্স স্কোয়াড-

    দেশি: মুশফিকুর রহিম, শেখ মাহেদী, সৌম্য সরকার, কামরুল ইসলাম রাব্বি , ইয়াসির আলী রাব্বি, ফরহাদ রেজা, রনি তালুকদার, খালেদ আহমেদ, জাকের আলী অনিক, নাবিল সামাদ, মোহাম্মদ শরীফুল্লাহ, সোহরাওয়ার্দী শুভ, তানজিদ হাসান তামিম। 

    বিদেশী: থিসারা পেরেরা, নাভিন উল হক, ভানুকা রাজাপাক্সে, সেকুগে প্রসন্ন, সিকান্দার রাজা ও আন্দ্রে ফ্লেচার। 

     

    সিলেট সানরাইজার্স

     

    কাগজে-কলমে সিলেট সানরাইজার্সের স্কোয়াড বেশ শক্তপোক্তই। কিন্তু টি-টোয়েন্টির বিচারে মাঠের খেলায় কতটা কার্যকরী হবে সেটার অপেক্ষায় সবাই। 

    শক্তি ও সম্ভাবনা

    রবি বোপারা, কেসরিক উইলিয়ামস, কলিন ইনগ্রামরা আছেন বিদেশি কোটায়। অধিনায়ক মোসাদ্দেকের সাথে তাসকিন আহমেদ, এনামুল হক বিজয়ের মতো দেশি তারকারাও আছেন।  

    ব্যাটিংয়ে বিজয়ের সাথী ইনগ্রাম। দেশিদের মধ্যে মিঠুন, মোসাদ্দেক, মিজানুর রহমানরা থাকবেন ব্যাটিং অর্ডারের বাকি পজিশনে। 

    মিডল অর্ডারের ব্যাটিং বোপারার ওপর নির্ভর করবে অনেকখানি। সাথে তার থেকে চার ওভারের বোলিং নিশ্চয়তাও পাবে সিলেট। 

    পেস আক্রমণে সম্মুখে থাকছেন তাসকিন। ডেথ ওভার - পাওয়ার প্লের ঝড় সামলাতে হবে তাকে। থাকবেন কেসরিক উইলিয়ামস, আল-আমিন হোসেনরাও। লেগ স্পিনার জুবায়ের লিখনের সাথে দেখা যাবে নাজমুল ইসলাম অপুকেও।

    দুর্বলতা

    কাগজে কলমে, ভারসাম্যপূর্ণ দল হলেও, কমতি থেকে গেছে একজন অভিজ্ঞ টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডারের। টুর্নামেন্টে এই অভাবটা বোধ করতে পারে সিলেট। 

     

    সিলেট সানরাইজার্স স্কোয়াড-

    দেশী: তাসকিন আহমেদ  মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, আল-আমিন, নাজমুল ইসলাম অপু, আনামুল হক বিজয়, সোহাগ গাজী, অলোক কাপালি, মোক্তার আলী, নাদিফ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, জুবায়ের হোসেন লিখন, শফিউল হায়াত হৃদয়, সানজামুল ইসলাম

    বিদেশী:  রবি বোপারা,  সিরাজ আহমেদ, কেসরিক উইলিয়ামস, কলিন  ইনগ্রাম, লেন্ডল সিমন্স, ডেভন থমাস।