মিরাজের স্পিন-জাদুর পরেও জয় দিয়েই যাত্রা শুরু সাকিবের বরিশালের
বরিশাল-চট্টগ্রাম, মিরপুর (টস-বরিশাল/বোলিং)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স- ১২৫/৮, ২০ ওভার (হাওয়েল ৪১, জ্যাকস ১৬, নাঈম ১৫, জোসেফ ৩/৩২, নাঈম ২/২৫, সাকিব ১/৯)
ফরচুন বরিশাল- ১২৬/৬, ১৮.৪ ওভার ( সৈকত ৩৯, জিয়াউর ১৯*, শুক্কুর ১৬, মিরাজ ৪/১৬, মুকিদুল ১/২৫)
ফলাফল: ফরচুন বরিশাল ৪ উইকেটে জয়ী
দারুণ বোলিংয়ের পর লক্ষ্যতাড়ায় মাঝে খেই হারিয়ে বসলেও ৪ উইকেটের জয় দিয়ে শুভসুচনা করেছে সাকিব আল হাসানের বরিশাল। ম্যাচের শুরু থেকে বরিশালই চালকের আসনে থাকলেও শেষ দিকে বেনি হাওয়েলের ক্যামিওতে আশা দেখতে শুরু করেছিল চট্টগ্রাম। মিরপুরের মন্থর উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজ সেই আশার পালে জোর হাওয়া লাগালেও শেষমেশ কোনও বিপদ ঘটতে দেননি জিয়াউর রহমান-ডোয়াইন ব্রাভো জুটি।
অধিনায়কোচিত দুই বোলিং পারফর্ম্যান্স
বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের পাওয়ারপ্লে বোলিং নিয়ে সন্দেহ বোধহয় খুব কম মানুষেরই আছে। বিশ্বজুড়ে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ রাখা সাকিব আরও একবার প্রমাণ করলেন তাকে খেলা কতটা কঠিন, তাও যদি হয় এরকম ধীরগতির উইকেটে। পাওয়ারপ্লেতে চট্টগ্রাম তুলেছিল ৩৬ রান; তবে সেখানেই ২ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ফিরিয়েছিলেন সাব্বির রহমানকে। নাঈম হাসান তাই অন্য প্রান্তে বল ভাসানোর সুযোগ পেয়েছেন; রান গুনলেও সাকিবের আঁটসাঁট বোলিংয়ের জন্য আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের সাহস পেয়েছেন। চার ওভারের স্পেল পূর্ণ করার পরে সাকিবের বোলিং ফিগার ছিল: ৪-০-৯-১! অধিনায়কের এমন বোলিং বিফলে যেতে দেননি নাঈম-আলজারি জোসেফরা।
সাকিবের কিপটে স্পেল পরিপূর্ণতা পেয়েছিল অন্য বোলারদের নিয়মিত উইকেট তুলে নেওয়ায়, যা পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজের বোলাররা। স্বল্প পুঁজি নিয়েও দলকে লড়াই করার রসদ জুগিয়েছিলেন অধিনায়ক নিজেই। দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসেই নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। পাওয়ারপ্লেতে ৩ ওভার করে ১০ রান দিয়েছেন; শেষ ওভারে ফিরিয়েছেন সাকিবকে। তবে ম্যাচ যখন হাতের মুঠো গোলে বেরিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ১৫তম ওভারে আক্রমণে এসে ৩৯ রানে ব্যাট করতে থাকা সৈকত আলীকে ফিরিয়েছেন; পরের বলেই ফিরিয়েছেন ১৬ রানে থাকা ইরফান শুক্কুরকেও। ওই ওভারে সালমান হোসেন রান আউট হয়ে ফিরলে ম্যাচে শক্তভাবেই ফিরে আসে চট্টগ্রাম। কিন্তু মিরাজের এই অসাধারণ পারফর্ম্যান্স দিনশেষে নিষ্ফলা হয়ে ঠেকেছে চট্টগ্রাম বোলারদের নিষ্প্রভ দিনে।
হাওয়েল ঝড়, অতঃপর সৈকতের ঠাণ্ডা হাওয়া
বেনি হাওয়েল যখন উইকেটে আসেন তখন চট্টগ্রামের জন্য একশো পেরোনোই দুষ্কর মনে হচ্ছিল। ১৪ ওভারে মোটে ৬৩ রান করে ৬ উইকেট হারিয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করা চট্টগ্রামকে এরপর হাওয়েল উজ্জীবিত করেন স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে। ব্রাভোর ১৭তম ওভারে টানা চার-ছয় মেরে করেছিলেন শুরু। এরপর তো আলজারি জোসেফকে মারলেন টানা চার-ছয়-চার! ইনিংসের শেষ বলের আগের বলে ব্রাভোকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে তিনি থামেন ৪১ রান করে; তবে মাত্র ২০ বলের ওই ইনিংসে মেরেছিলেন ৩টি করে ছয় ও চার, দিয়েছিলেন চট্টগ্রামকে লড়াই করার সম্বল।
তবে লক্ষ্য যখন ছোট, উইকেট যখন মন্থর তখন এরকম ঝড় খুব একটা প্রয়োজন নেই, যদি না দল অথৈ সাগরে পড়ে। সাকিব ও শান্তকে হারিয়ে বরিশাল পাওয়ারপ্লের পরে কিছুটা বিচলিত ছিল বটে, তবে দিক্বিদিকশূন্য হয়নি, হয়নি সৈকত আলীর ঠাণ্ডা মাথার ইনিংসে। বিপদ সামলেছেন, পরিস্থিতি বুঝে বাউন্ডারি বের করেছেন। গিয়ার পাল্টানোর চিন্তা করেই মিরাজকে ছয় মেরেই শুরু করেছিলেন ১৪তম ওভার। তবে পরের বলেই একই কাজ করতে গেলেই হয় বিধিবাম। তবুও ৩৫ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে নিজের কাজটা ঠিকই করে গিয়েছিলেন।
পেসারদের দৈন্যদশা ও পার্থক্য গড়ে দেওয়া আলজারি
পুরো ম্যাচজুড়েই খরুচে ছিল পেসাররা। তবে বরিশালের পেসারদের ছিল উইকেট নেওয়ার সক্ষমতা; আর পরিস্থিতি বুঝে বল করার অভিজ্ঞতার ঝুলি। শরিফুল-হাওয়েলরা হয়ত অভিজ্ঞতার অভাবেই পরিস্থিতি অনুযায়ী, উইকেট অনুযায়ী বল করতে পারেননি, যা পেরেছে জোসেফ-ব্রাভোরা। চাপ দুই দলের স্পিনাররাই তৈরি করেছিলেন, দুই দলেরই ব্যাটিংয়ের শুরুটাই তাই মনঃপুত হয়নি।। তবে সেটার সুযোগ নিয়ে জোসেফ যখন মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট তুলে নিয়েছেন, ম্যাচ শেষ করেছেন ৩ উইকেট নিয়ে সেখানে ব্যর্থ হয়েছে হাওয়েল-শরিফুল। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মিরাজের সেই ১৫তম ওভারের পর বরিশালের লাগত ৩০ বলে ৩৪ রান; তবে হাতে ছিল মোটে ৪ উইকেট। ব্রাভো-জিয়ার সেই জুটি ভাঙলেই লেজের দেখা মিলত। দুই পেসারের পাশাপাশি মুকিদুলও সেখানে ছিলেন ব্যর্থ। ১৭তম ওভারে দুই চার ও এক ছয়ে তিনি ওই ওভারে গুনেছেন ১৮ রান; সেই সাথে ওখানেই বিসর্জন দিয়েছিলেন ম্যাচে ফিরে আসার সম্ভাবনা।