• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    টার্নিং ট্র্যাক, লোয়ার অর্ডারদের দৃঢ়তা: মিরপুরে লো স্কোরিং থ্রিলারে জিতল কুমিল্লা

    টার্নিং ট্র্যাক, লোয়ার অর্ডারদের দৃঢ়তা: মিরপুরে লো স্কোরিং থ্রিলারে জিতল কুমিল্লা    

    কুমিল্লা-সিলেট (টস-কুমিল্লা/বোলিং)

     

    সিলেট সানরাইজার্স- ৯৬, ১৯.১ ওভার, (কলিন ইনগ্রাম ২০, রবি বোপারা ১৭, নাহিদুল ২০/২, মোস্তাফিজ ২০/২, শহীদুল ১৫/২) 

    কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স- ৯৭/৮, ১৮.৪ ওভার (ক্যামেরন ডেলপোর্ট ১৬, করিম জানাত ১৮, নাহিদুল ১৬, অপু ১৭/৩, মোসাদ্দেক ১০/২) 

    ফলাফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দুই উইকেটে জয়ী। 


     

    দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর সহজ লক্ষ্য ছুঁতে গিয়ে রীতিমতো ঘাম ঝরেছে কুমিল্লার। সিলেটের স্পিনারদের দাপটে ৯৭ রানও মনে হচ্ছিল কুমিল্লার অনেক দূরের পথ। অপু-মোসাদ্দেকের হোসেন সৈকতদের স্পিনে খেই হারানো দলটি সেই পথটা পাড়ি দিয়েছে দুই টেলএন্ডার, মাহিদুল ও তানভীরের ব্যাটে ভর করে। ইনিংসের আট বল বাকি থাকতে দুই উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে কুমিল্লা। 

     

    স্পিনারদের হাতেই ম্যাচের লাগাম

    কুয়াশামাখা দিনে ভেজা, স্যাঁতস্যাঁতে উইকেট দেখে টস জিতে বোলিং নেন কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। সিলেট অধিনায়ক মোসাদ্দেকও জানান, টস জিতলে তিনিও একই সিদ্ধান্ত নিতেন।

    ইমরুলের সিদ্ধান্ত তো কাজে লেগেছেই। সিলেটের স্পিনারদের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে কুমিল্লার ব্যাটসম্যানদেরও। 

    সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলীয় ১৩ রানে আউট হন ফাফ ডু প্লেসি। নিজের বোলিংয়ে ফিরতি ক্যাচ নেন সোহাগ গাজী। মারকুটে ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দেয়া কলিন ইনগ্রামও থেমেছেন তার বলেই। সোহাগ গাজী একটু খরুচে হলেও, উল্টোটা দেখা গেছে মোসাদ্দেকের স্পিনে। চার ওভারের আঁটসাঁট স্পেলে দুই উইকেট নেন মাত্র ১০  রানের বিনিময়ে।

    ম্যাচের লাগাম সিলেটের হাতে প্রায় এনেই দিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার অপু। উইকেটে টেকার সুযোগ দেননি আরিফুলকে। একপ্রান্ত আগলে দাঁড়ানো নাহিদুলও আউট হয়েছেন তার স্পিনে ধোঁকা খেয়ে। শহীদুলকে তৃতীয় শিকার বানিয়ে লো স্কোরিং এই ম্যাচে খানিকটা উত্তেজনার যোগান দেন তিনি।  

    এর আগে, প্রথম ইনিংসে পাওয়ারপ্লের ছয় ওভারের চারটিই করেছেন স্পিনাররা। সোজা ব্যাটে খেলতে চেয়ে ধাঁধায় পড়েছেন সিলেটের ব্যাটসম্যানরা। স্পিন, টার্ন, আর  আচমকা বাউন্স সামলে উঠতে উঠতেই লণ্ডভণ্ড টপ অর্ডার। তাদের সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন নাহিদুল আর তানভীর। 

    ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নাহিদুলের টার্নিং ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এনামুল হক বিজয়। অবশ্য শুরু থেকেই স্পিন সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন তিনি। মন্থর উইকেটের ফায়দা তুলতে ইমরুল বল তুলে দেন মুমিনুলের হাতেও। সেই টোটকা কাজেও লেগেছে বেশ। উইকেটে থিতু হতে থাকা রবি বোপারাকে ফিরিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। 

    মোসাদ্দেকদের রক্ষণের পরীক্ষা নিয়ে সবচেয়ে কিপটে বোলিং করেছেন তানভীর ইসলাম। চার ওভার বল করে মাত্র দশ রান দিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। সিলেট অধিনায়ক মোসাদ্দেকের উইকেটটাও পেয়েছেন। 

    সিলেটের ওপর চড়ে বসার পথটা তৈরি করেছেন স্পিনাররাই। বাকি কাজটা করেন কুমিল্লার দুই পেসার মোস্তাফিজ ও শহীদুল। দুজনই ১৫ রানের খরচায় পেয়েছেন দুইটি করে উইকেট। সব মিলিয়ে মাত্র ৯৬ রানেই থামে সিলেটের ইনিংস। 


    ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে নাহিদুল-জানাতের দৃঢ়তা

     

    টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই আলাদা নজর ছিল ফাফ ডু প্লেসির ওপর। কিন্তু তার ব্যাটও হাসেনি। দুই রান করেছেন সাবেক এই প্রোটিয়া অধিনায়ক। 

    শুরুটা ভালোই করেছিলেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট।  একটি করে করে ছক্কা ও চার মারেন বাঁহাতি এই ওপেনার। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা থাকেনি। ফিরেছেন ১৬ রান করে। মুমিনুল-ইমরুলদেরও একই চিত্র। 

    তবে হাল ধরেন নাহিদুল। এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করেন সাবধানে। ১৬ বলে ১৬ রান করে আউট হওয়ার আগে দলকে রাখেন জয়ের পথেই। তার বিদায়ের পর চেষ্টা চালান করিম জানাত। শুরুর ধাক্কাটা কুমিল্লা সামলে ওঠে মূলত এই দুজনের ১৬ ও ১৮ রানের ইনিংসেই।

    সিলেটের ব্যাটসম্যানদের ছিল আরো বেহাল দশা। দুই অংক ছুঁয়েছেন কেবল তিনজন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের মালিক কলিন ইনগ্রাম। রবি বোপারা ১৭ ও সোহাগ গাজী করেন ১২। 


    লোয়ার অর্ডারেই জয়ের টনিক

    ম্যাচজুড়ে স্পিনাররা দাপট দেখালেও, ফলাফলে ভূমিকা রেখেছেন টেলএন্ডাররাই। নাহিদুল-তানভীরদের স্পিনে টিকতেই পারেননি সিলেটের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। শেষ পাঁচ উইকেট পড়েছে মাত্র ৩১ রানে। 

    সেদিক থেকে ঢের এগিয়ে ছিল কুমিল্লা। অপু-মোসাদ্দেকদের স্পিনে খাবি খেলেও, জয় পর্যন্ত মাঠে ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মাহিদুল। নাহিদুল-জানাতের বিদায়ের পর সাবধানী ব্যাট করেন তিনি। ১৪ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। তাকে সঙ্গ দেন তানভীর।