জ্যাকস-হাওয়েল তান্ডবের পর নাসুম-শরিফুল ঝড়ে ঢাকার টানা দ্বিতীয় হার
ঢাকা-চট্টগ্রাম, মিরপুর (টস-ঢাকা/বোলিং)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স- ১৬১/৮, ২০ ওভার (জ্যাকস ৪১, হাওয়েল ৩৭, সাব্বির ২৯, রুবেল ৩/২৬, মাহমুদউল্লাহ ১/১২, শুভাগত ১/১৫)
মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা- ১৩১, ১৯.৫ ওভার (তামিম ৫২, উদানা ১৬, শুভাগত ১৩, শরিফুল ৪/৩৪, নাসুম ৩/৯, নাঈম ১/৭)
ফলাফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৩০ রানে জয়ী
টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হারল মাহমুদউল্লাহর ঢাকা। উইল জ্যাকসের বিস্ফোরক শুরুর পর রুবেল হোসেনের উজ্জীবিত স্পেলে ঢাকা ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরেছিল। তবে আরও একদিন বেনি হাওয়েলের মারকুটে ক্যামিওতে চট্টগ্রাম এদিন পেয়েছিল ভালো সংগ্রহ। তামিম ইকবালের টানা দ্বিতীয় ফিফটির পরেও দুই বাংলাদেশি তরুণ নাসুম আহমেদ-শরিফুল ইসলামের দারুণ বোলিংয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের দল তাই তুলে নিয়েছে আসরের প্রথম জয়।
দুই ইংলিশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং পাঠদান
গত ম্যাচে চট্টগ্রামের শুরুটা ছিল একেবারেই এলোমেলো। শেষের দিকে বেনি হাওয়েলের মারকুটে ইনিংসও তাই সেদিন কোনোমতে ১২০ রানের সীমারেখা পার করেছিল তারা। এদিন অবশ্য সেই ভুল আর করেনি চট্টগ্রাম। ইংলিশ ব্যাটসম্যান উইল জ্যাকস শুরুতে নেমেই খেলেছেন টি-টোয়েন্টিসুলভ ইনিংস। দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন মাত্র ২৪ বলে ৪১ রান করে। যদিও তার বিদায়ে ছোটখাটো ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল চট্টগ্রাম। তবে আগের দিনের মত এদিনও হেসেছে হাওয়েলের ব্যাট; শুরুর ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে এদিন তার ঝড়ো ব্যাটিং ঠিকই চট্টগ্রামকে এনে দিয়েছে ভালো সংগ্রহ। তবে তার জন্য সাব্বির রহমানকেও ধন্যবাদ দিতে পারেন তিনি। ১৭ বলে ২৯ রান করে সাব্বির রহমান মাঝের বিপদ সামলেছেন; ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন জ্বলে ওঠার। সাব্বির অবশ্য শেষটা করে দিয়ে না গেলেও শেষ বলে রান আউট হয়ে থামার আগে ১৯ বলে ৩ ছয়ে ৩৭ রান করে তুলির শেষ আঁচড় টেনেছেন হাওয়েল।
তামিমের প্রশ্নবিদ্ধ ফিফটি
পরিসংখ্যান এদিনও কথা বলেছে তামিম ইকবালের হয়ে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পেলেন ফিফটি, টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যা তার ৪২তম। ফিফটির সকল পরিসংখ্যানে অবশ্য আড়াল হয়ে যায় তামিমের ইনিংসের গতিবিধি। একসময়ে ১৭ বলে তিনি করেছিলেন মোটে ১০ রান। পরে শরিফুল ইসলামের এক ওভারে দুই চার, এক ছয়ে গিয়ার পাল্টানোর ইঙ্গিত দিলেও সেই অর্থে চড়াও হতে পারেননি। ৪২ বলে ঠিকই তুলে নিয়েছিলেন ফিফটি, কিন্তু যখন আউট হলেন তখন ঢাকার প্রয়োজন ৫২ বলে ৮৯ রান। শুরুতে ধরে খেললে পরে সেটা পুষিয়ে দেওয়ার একটা চাপ ব্যাটসম্যানের ওপর থাকে, সেই দায়িত্ব কিছুটা হলেও আপনার ওপর স্বাভাবিকভাবেই বর্তায় যখন আপনি দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের একজন। রানের মাঝে থাকলেও তামিম সেই দায়িত্ব পালনে গত ম্যাচের মত এবারও ব্যর্থ। আউট হওয়ার সময় ও ধরন বিবেচনায় ম্যাচে হারের দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারবেন না তিনি। উইকেটে লম্বা সময় ব্যয় করার পর নতুন কোনও ব্যাটসম্যানকে আসতে হলে তার যে হাত খুলে খেলা ছাড়া উপায় নেই এটা জেনেও শরিফুল বল ছোড়ার অনেক আগেই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে যেই শট তিনি খেললেন তার জন্য তার এই ইনিংসের ওপর একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকেই যায়।
নাসুম-শরিফুলের দুই ওভারের ঝড়
নাসুম আহমেদ এদিন শুরু থেকেই যেন ছিলেন ঢাকা ব্যাটসম্যানদের যম; পাওয়ারপ্লেতে ২ ওভার বল করে গুনেছিলেন মোটে ৩ রান। শরিফুলের শুরুটা অবশ্য ছিল একেবারেই বিপরীত, প্রথম ওভারেই গুনেছেন ১৫ রান। দুজনের শুরুটা দুমুখো হলেও ম্যাচজয়ী পারফর্ম্যান্স দিয়ে দিনশেষে দুজনে এসে দাঁড়িয়েছেন একই কাতারে। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া তামিমকে ৫২ রানে অফ কাটারে বোল্ড করে ফেরানোর এক বল পরেই ১২ বলে ১০ রান করা জহুরুলকেও ফেরালেন শরিফুল। পরের ওভারে নাসুম এসেও হানলেন জোড়া আঘাত; ফেরালেন মোহাম্মদ নাঈম ও মাহমুদউল্লাহকে। পরে আন্দ্রে রাসেলের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে নাসুম ম্যাচ শেষ করেছেন অবিশ্বাস্য বোলিং ফিগার নিয়ে: ৪-০-৯-৩! শরিফুলও অন্যদিকে ঢাকার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছেন আবারও এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে; মারমুখী হয়ে ওঠা ইসুরু উদানা ও অভিজ্ঞ শুভাগত হোমকে ফিরিয়েছেন। ১২-১৪ ওভারে দুই তরুণ মিলেই লিখেছেন প্রত্যাবর্তনের গল্প; ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দলকে এনে দিয়েছেন প্রথম জয়।