ব্যাটে-বলে আদর্শ এক ম্যাচ কাটিয়ে চট্টগ্রামের টানা দ্বিতীয় জয়
ঢাকা-চট্টগ্রাম, মিরপুর (টস-খুলনা/বোলিং)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স- ১৯০/৭, ২০ ওভার (হাওয়েল ৩৪*, সাব্বির ৩২, মিরাজ ৩০, কামরুল ২/৩৫, ফরহাদ ১/৩৫, নাভিন ১/৪৮)
খুলনা টাইগার্স- ১৬৫/৯, ২০ ওভার (ইয়াসির ৪০, মাহেদী ৩০, রাজা ২২, রেজা ২/২০, শরিফুল ২/২৯, মিরাজ ২/৪২)
ফলাফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ২৫ রানে জয়ী
আদর্শ এক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পেয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। ব্যাটিংয়ে শুরুতে ও শেষে ঝড় তোলার পাশাপাশি মাঝে পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিং, অতঃপর বোলিংয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে চাপ ধরে রেখে ১৯০ রানের সংগ্রহকে খুলনার নাগালের বাইরে রেখে চট্টগ্রাম যেন বার্তা দিয়ে রাখল যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিজেদের সক্ষমতার।
পাওয়ারপ্লে ব্যাটিংয়ের তারতম্য
দুদলই পাওয়ারপ্লেতে হারিয়েছে ২ উইকেট। খুলনা টাইগার্স পাওয়ারপ্লেতে তুলেছে ৪৫ রান। রানের হিসাবে সেখানে পিছিয়ে থাকলেও লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সেটা পাওয়ারপ্লেতে নিঃসন্দেহে ভালো সংগ্রহ। তাহলে ঠিক কোথায় পিছিয়ে ছিল খুলনা? পিছিয়ে ছিল খেলার ধরনে, উইকেট হারানোর সময়কালে। ২ উইকেট চট্টগ্রাম যখন হারিয়েছে ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে উঠে গিয়েছে ৫২ রান, সেটাও মোটে ৩.৪ ওভারে। কেনার লুইস ও উইল জ্যাকস রীতিমত কচুকাটা করছিলেন বোলারদের; সোহরাওয়ার্দি শুভর করা প্রথম ওভারেই দুই ছয় এক চারে দুজন মিলে তুলেছিলেন ২৩ রান। সেখানে তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই তানজিদ হাসান তামিমকে হারানোর পর পরের ওভারে রনি তালুকদারও ফিরলে সেই অর্থে পাওয়ারপ্লের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি খুলনা। পাওয়ারপ্লেতেই এই মৌসুম সর্বোচ্চ ৬৪ রান তুলে যেই বার্তা পাঠিয়েছিলেন লুইস-জ্যাকস; বোলারদের মনে ভীতি সঞ্চার করে মারমুখো ব্যাটিংয়ের যে ভিত গড়ে দিয়েছিলেন এই দুই বিদেশি- তা পারেননি খুলনার ওপেনাররা।
শুরুতে ঝড়, মাঝে উইকেট সংরক্ষণ, অতঃপর শেষে বিস্ফোরণ: চট্টগ্রামের আদর্শ টি-টোয়েন্টি ইনিংস
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামার সময় মিরাজ বলেছিলেন ১৬০-১৭০ রান তোলা তাদের লক্ষ্য। আদর্শ টি-টোয়েন্টি ইনিংস গড়ে অধিনায়কের সেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশিই করেছে তারা। চট্টগ্রামের ইনিংসের আদ্যোপান্তেই ছিল পরিকল্পনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের ছাপ। লুইস-জ্যাকসের তোপে পর্যুদস্ত বোলাররা যখন তাদের বিদায়ে ম্যাচে ফেরার আশা করছিলেন তখন সাব্বির রহমানকে সঙ্গী করে তাদের সেই আশায় পানি ঢেলে দিয়েছেন অধিনায়ক মিরাজ নিজেই। দুজনেই অবশ্য হাত খুলতে গিয়ে ফিরে গিয়েছেন- সাব্বির ৩৩ বলে ৩২ ও মিরাজ ২৩ বলে ৩০ রান করে। তবে তাদের গড়ে দেওয়া ভিত কাজে লাগিয়ে লোয়ার মিডল অর্ডার স্কোরবোর্ডে বড় সংগ্রহ তুলতে ভুল করেননি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বেনি হাওয়েলের ব্যাটে এদিন আরও একবার উঠেছে ঝড়, খেলেছেন ২০ বলে ৩৪* রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। তবে শেষদিকে নাঈম ইসলাম দুই ছয়ে ৫ বলে ১৫ রানের যেই ক্যামিও খেলেছেন তাতে খুলনার কাছ থেকে এক অর্থে মানসিক ভাবেই ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
খুলনার মাঝের ওভারগুলোর ব্যর্থতা
পাওয়ারপ্লেতে দুই উইকেট হারালেও উইকেটে ছিলেন ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার। তবে ব্যাথা ক্রমশ বেড়ে ওঠায় ঘাড়ে আঘাত পাওয়া “স্পাইসম্যান” মাঠ ছেড়ে যান পাওয়ারপ্লের পরপরই। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনা সন্দেহাতীতভাবেই খুলনার প্রতিকুলে গিয়েছে। এরপর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও তার ভুমিকায় ছিলেন ব্যর্থ। ৭-১২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে তাই খুলনা তোলে ৩৩ রান। ফ্লেচারের কঙ্কাশন বদলি হিসেবে নামা সিকান্দার রাজা জ্বলে উঠেছিলেন পরের দুই ওভারে, করেছিলেন ১২ বলে ২২ রান। মাহেদি হাসানের ২৪ বলে ৩০ রানের পর ইয়াসির আলি রাব্বিও ২৬ বলে ৪০ রান করে জয়ের ক্ষীণ সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু মাঝের ওভারে প্রয়োজনীয় রান রেটের যেই চাপ তৈরি হয়েছিল, এই দুজনের বিদায়ের পর সেই চাপ উতরে উঠতে পারেনি খুলনার লোয়ার মিডল অর্ডার। শরিফুল ইসলাম ও রেজাউর রহমান রেজারও সেজন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। ১৭তম ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন রেজা; ১৯তম ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে শরিফুল ঠুকেছেন খুলনার কফিনের শেষ পেরেক।