• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    'ফিনিক্স-ফিজের' পর অধিনায়ক কায়েস-লিটনে পিষ্ট চট্টগ্রাম

    'ফিনিক্স-ফিজের' পর অধিনায়ক কায়েস-লিটনে পিষ্ট চট্টগ্রাম    

    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ঢাকা (টস-কুমিল্লা/বোলিং)
    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স- ১৩৮/৮, ১৮(১৮) ওভার (জ্যাকস ৫৭, আফিফ ২৭, শামীম ২৬, মোস্তাফিজ ৫/২৭, নাহিদুল ১/২১, তানভীর ১/২১)
    কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স- ১৪৮/১ (লক্ষ্য:১৪৪), ১৬.৩(১৮) ওভার (কায়েস ৮১*, লিটন ৫৩, মৃত্যুঞ্জয় ১/২১)
    ফলাফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৯ উইকেটে জয়ী

     

    মিরাজ-বিতর্কের পর হারের বৃত্ত থেকে বেরই হতে পারছে না চট্টগ্রাম। মঈন আলী-সুনীল নারাইনদের প্রথম মাঠে নামার দিনে অবশ্য চট্টগ্রামের সেই দুর্দশা দীর্ঘায়িত করে মঞ্চের আলো কেড়েছেন দেশিরাও-হেসেছে কুমিল্লা অধিনায়কের ব্যাট, উইকেটে ফিরেছেন তাদের সেরা পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে সেই সাথে এক ম্যাচ পরেই জয়ের ধারায়ও ফিরল তারা।  

    ইমরুল-লিটনের ম্যাচজয়ী ওপেনিং জুটি

    চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জয় পেলেও কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের ব্যাটে ছিল না রান। সেজন্যই বোধহয় রানের ধারায় ফিরতেই নামলেন নিজের পছন্দের জায়গায়। আর ওপেন করতে নেমেই অধিনায়কোচিত এক ইনিংস খেলে ১৪৪ রানের লক্ষ্যকে রীতিমত ছেলেখেলাই বানিয়ে জিতলেন। অথচ প্রথমে কায়েস খেলছিলেন রয়েসয়েই; আক্রমণের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন লিটন। ৪১ বলে ৪৫ রানে থাকা কায়েস ফিফটি পূর্ণ করেন মেহেদী হাসান মিরাজকে ছয় মেরে। ওই ওভার থেকে দ্রুত ম্যাচ শেষ করার লক্ষ্যে গিয়ার পাল্টান দুজনেই, তিন ছয়ে ১৯ রান নেন ওই ওভারে। লিটনও ফিফটি পূর্ণ করেন ছয় মেরেই; যদিও নাসুমকে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সরাসরি ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। জ্যাকস সেটা তালুবন্দি করতে তো পারলেনই না, উল্টো পাঠিয়ে দিলেন দড়ির ওপারে। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে এরপর ক্যাচ তুলে ফেরেন তিনি, ৩৭ বলে ৫৩ রান করে। ১৩৮ রানের ওই ওপেনিং জুটিতে ম্যাচ জয় অবধারিত। কায়েসও তাই চার-ছয় মেরে ম্যাচ শেষ করলেন পরের দুই বলেই। ইনিংসের অর্ধেক সময় একশো স্ট্রাইক রেটের আশেপাশেই থাকা কায়েস দেখালেন কীভাবে গিয়ার পাল্টাতে হয়। ববৃষ্টির পর যেখানে তাসের ঘরের মত লুটীয়ে পড়েছিল চট্টগ্রামের ব্যাটিং লাইনআপ সেখানে কায়েস-লিটনরা ব্যাটিংকে রীতিমত হাতের মোয়া বানিয়েই জয় নিশ্চিত করেছেন।

    মোস্তাফিজের কাটার-জাল

    ১২.৫ ওভারে চট্টগ্রামের স্কোরবোর্ড বলছে: ১০৭/২। সদ্য ফিফটি পূর্ণ করা জ্যাকসের সাথে আছেন ২০ বলে ২৬ রান করা শামীম হোসেন পাটওয়ারি। বড়সড় লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলা চট্টগ্রামের ইনিংসে আক্ষরিক অর্থেই তখন বাগড়া দিয়ে মিরপুরের আকাশ ভেঙে নামলো ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি শেষে খেলা ১৮ ওভারে নেমে এলে চট্টগ্রাম যেন একেবারেই খেই হারিয়ে বসল। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চট্টগ্রামের ইনিংসের ধসের কারিগর বনে গেলেন “ফিজ”। চিরচেনা সেসব কাটারের জাল ফেঁদে ফেরালেরন একের পর এক ব্যাটসম্যানকে। বৃষ্টির পরপরই প্রথম ওভারে ১৫ রান দেওয়া মোস্তাফিজকে ফেরত আনার জন্য কায়েসের অধিনায়কত্বকেও সাধুবাদ জানাতেই হয়। নিজের প্রথম ওভারে ভস্ম মোস্তাফিজ যেন “ফিনিক্স” পাখির মতই উঠে এসে ওই ওভারেই হানলেন জোড়া আঘাত। শামীমকে ফেরানোর বলটায় যদিও মাঠছাড়া হওয়াই উচিৎ ছিল; শামীম তা তুলে তুলে দিলেন ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো নাহিদুলের মুঠোয়। এরপরেই মোস্তাফিজ মেলে বসেন তার কাটার-স্লোয়ারের পসরা। ওই ওভারের শেষ বলে ফেরান জ্যাকসকে। পরের ওভারে তিন বলের মধ্যে ফেরান নাঈম ইসলাম ও বেনি হাওয়েল। চোখের পলক ফেলার আগে নাঈমের ক্ষিপ্র শটে ফিরতি ক্যাচটা দেখার মত ছিল। ইনিংসের শেষ ওভারে মিরাজকে ফিরিয়ে নিজের বিপিএল ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত পূর্ণ করেন ৫-উইকেট, যা এই আসরেরও প্রথম। ৩০ রানে চট্টগ্রাম যে নিজেদের শেষ ৬ উইকেট হারাল, সেটাও ছয় ওভারের মাঝেই-তা তো এল এই মোস্তাফিজের কাটার-ধাঁধায়ই।

    ধারাবাহিক জ্যাকস ও আফিফ-আক্ষেপ

    ইংলিশম্যান উইল জ্যাকসের ব্যাটে এবারের আসরে ছুটছে রানের ফোয়ারা। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি তুলে নিয়েছেন আরও একটি দারুণ ফিফটি, সেটাও ৩১ বলে। চট্টগ্রামকে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন জ্যাকস। প্রথম ওভারেই চ্যাডউইক ওয়ালটন ফেরার পর আফিফ হোসেনকে সঙ্গী করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই বিপিএলে বেশ কয়েকবার ভালো শুরু পেয়েছেন আফিফ, ব্যাতিক্রম হয়নি এদিনও। ব্যাতিক্রম হয়নি এদিনও ভালো একটি শুরু ছুঁড়ে দিয়ে আসায়ও। তানভীর ইসলামের নিরীহ একটি বল কাট করতে গিয়ে যেভাবে স্টাম্পে বল ডেকে এনে ফিরলেন ২৭ রানে, তা যেন পুরো আসরেই তার ইনিংসের শেষের প্রতিফলন। শুরু অবশ্য ছুঁড়ে দিয়ে আসেননি জ্যাকস। তবে ৩৭ বলে ৫৭ রানে ফেরার সময় ইনিংস আরও লম্বা করতে না পারার আক্ষেপ হয়ত তাকেও ছুঁয়ে যাওয়ার কথা। তবে মোস্তাফিজ যেদিন জ্বলে উঠে সেদিন বেশিরভাগ ব্যাটারের কাছেই তার জবাব থাকে না; ছিল না এদিন জ্যাকসের কাছে, ছিল না চট্টগ্রামেরও।