সিলেটে থ্রিলার: অধিনায়ক আফিফের বাজিমাৎ, তামিম ম্লান মৃত্যুঞ্জয়ের তোপে
ঢাকা-চট্টগ্রাম (টস ঢাকা/বোলিং)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স- ১৪৮/৬, ২০ ওভার (শামীম ৫২, আফিফ ২৭, জ্যাকস ২৬, হাওয়েল ২৪*, মাহমুদউল্লাহ ৫/১, মাশরাফি ২৪/১, সানি ১৬/১)
মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা- ১৪৫/৬, ২০ ওভার (তামিম ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ ২৪, শুভাগত ২২, মৃত্যুঞ্জয় ২১/২, শরীফুল ২৮/২)
ফলাফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স তিন রানে জয়ী
চরম নাটকীয় এক ম্যাচ দেখল বিপিএল। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়েছে ইনিংসের শেষ বলে। শেষ ওভারে চট্টগ্রাম অধিনায়ক আফিফ বল তুলে দেন মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে। আফিফের সেই বোলিং পরিবর্তনের ফলও এলো হাতেনাতে।
মৃত্যুঞ্জয়ের করা শেষ ওভারে কোনো কমতি ছিল না নাটকীয়তার। উইকেট, ডট বল, দারুন ইয়র্কার, দুর্দান্ত স্লোয়ার, বাউন্ডারির সম্ভাবনা, নো বল; সব মিলিয়ে সম্ভাব্য সকল ফলই উঁকি দিচ্ছিল এই ম্যাচে। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ের বুদ্ধ্বিদ্বীপ্ত বোলিংয়ে থ্রিলিং এই ম্যাচে ঢাকাকে হারিয়ে ভুলতে বসা জয়ের স্বাদ পেল চট্টগ্রাম। অথচ তামিম যেভাবে ব্যাট করেছেন, তাতে ঢাকার জয় কেবল সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল।
অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে তামিম দেখলেন মৃত্যুঞ্জয়ের কারিশমা
বিপিএলে দারুণ ছন্দে আছেন তামিম। আজকেও ফিফটি করেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তিন ছক্কা আর ছয়টি চারে খেলেছেন ৭৩ রানের ইনিংস। জয়ের পথেও দলকে একাই টেনেছেন তিনি। শেষদিকে তার ব্যাটেই তাকিয়ে ছিল ঢাকা।
ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে ঢাকার প্রয়োজন ছিল নয় রান। আগের ওভারের শেষ বলে চার মারায় তামিম ছিলেন নন স্ট্রাইকে। সেই সুযোগটাই কাজে লাগালেন মৃত্যুঞ্জয়। স্ট্রাইকে থাকা কাইস আহমাদকে প্রথম বলেই বোল্ড করেন বাঁহাতি এই পেসার। আট নম্বরে নামেন নাঈম শেখ। তারও এলোমেলো ব্যাটিং। টানা দুই বল দিলেন ডট। নিজের খেলা তৃতীয় বলে নিলেন সিঙ্গেল।
অপর প্রান্তে আটকে থাকা তামিম স্ট্রাইকে গেলেও সুবিধা করতে পারেননি। দারুণ এক ইয়র্কার ছুটে যায় মৃত্যুঞ্জয়ের হাত থেকে। বাই থেকে এক রান পেলে, স্ট্রাইক ফিরে পান নাঈম। শেষ বলে বিমার করলে, উত্তেজনার পারদ ছুঁয়ে ফেলে চূড়া। পরের বলেও সুবিধা করতে পারেননি খাবি খেতে থাকা নাঈম। লো ফুলটসটা সোজা ড্রাইভ করে এক রান নেন তিনি।
লং অন থেকে সেই বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠান চট্টগ্রামের নতুন অধিনায়ক আফিফ। গোটা ম্যাচে তার বোলিং কিংবা ফিল্ডিং পরিবর্তন ছিল ফলপ্রসূ।
পাওয়ারপ্লেতে কিপটে চট্টগ্রাম, ‘আনলাকি’ মাহমুদউল্লাহ
হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা চট্টগ্রাম স্কোরবোর্ডে জমা করে ১৪৮ রান। লম্বা ব্যাটিং অর্ডারের ঢাকাকে চাপে ফেলতে টপাটপ উইকেট নেয়ার বিকল্পও ছিল না। ঢাকা শিবিরে প্রথম আঘাতটা হানেন শরীফুল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আফগান ওপেনার শাহজাদকে ফেরান তিনি। পরের ওভারে নাসুমের শিকার ইমরানউজ্জামান। সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে শামীমের হাতে ধরা পড়েন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
স্লথ হয়ে যাওয়া রানের চাকা ঘোরাতে পিঞ্চ হিটার হিসেবে মাশরাফিকে পাঠায় ঢাকা। সেই টোটকা কাজে লাগেনি অবশ্য। রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। বোল্ড হয়েছেন দারুণ ফর্মে থাকা মৃত্যুঞ্জয়ের বলে।
২৮ রানে তিন উইকেট পড়ার পর তামিমকে নিয়ে ঢাকার হাল ধরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। দুজনের পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটিতে ম্যাচে ফেরে ঢাকা। কিন্তু মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। বলটা স্কয়ার লেগ বাউন্ডারির ওপারে চলেই যাচ্ছিল। কিন্তু বাজপাখির ক্ষিপ্রতায় সেই বল তালুবন্দী করে ফেলেন শামীম। ভারসাম্য রাখতে না পেরে বল ছুঁড়ে দেন মাঠের ভেতর বেনি হাওয়েলের হাতে।
শামীম-হাওয়েলের ব্যাটে লড়াইয়ের পুঁজি
টুর্নামেন্টে এর আগে ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। কিন্তু তার ব্যাট থেকে কাঙ্ক্ষিত ইনিংস পায়নি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কুমিল্লার বিপক্ষে আগের ম্যাচে চার নম্বরে নেমে করেছেন ২৭। ভিত গড়েও সেদিন ইনিংস বড় করতে পারেননি। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে খেলেছেন ২৯ রানের ধীরগতির ইনিংস।
তবে আজ ঢাকার বিপক্ষে ঠিকই হেসেছে তার ব্যাট। পাঁচ নম্বরে নেমে ফিফটি পেয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৩৭ বলে পাঁচটি চার ও এক ছক্কায় করেছেন ৫২ রান। তার ওপর বিনিয়োগের কিছু হলেও ফিরত পেয়েছে চট্টগ্রাম।তার সঙ্গী ইংলিশ অলরাউন্ডার বেনি হাওয়েলও শেষদিকে খেলেছেন ঝকঝকে ক্যামিও ইনিংস। ১৯ বলে দুই ছক্কায় ২৪* করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সপ্তম উইকেটে দুজন গড়েন ৬৪ রানের জুটি। এই দুজনের দৃঢ়তাতেই শেষ পাঁচ ওভারে ৫৭ রান তোলে চট্টগ্রাম।