এক আসরেই তিনবার অধিনায়ক বদল: বিপিএলে এমন হয়েছে আগেও
টুর্নামেন্ট চলাকালীন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অধিনায়ক বদলের ঘটনা নতুন কিছু নয়। আইপিএল, পিএসএলে এমনটা প্রায়ই দেখা যায়। ব্যতিক্রম নয় বিপিএলও। চলতি বিপিএলেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়কই বদলেছে তিনবার। সিলেটও খেলেছে দুই অধিনায়কের নেতৃত্বে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, বিপিএলে এর আগেও দেখা মিলেছে এমন ঘটনার।
বিপিএল ২০২২
চলতি অষ্টম আসর পর্যন্ত বিপিএল দেখেছে ৪৮ অধিনায়ক। সর্বশেষ এই তালিকায় নাম উঠেছে আফিফ হোসেন ধ্রুবর। আগের ম্যাচেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স খেলেছে নাঈম ইসলামের নেতৃত্বে। অথচ সিলেটে মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে আজ টস করতে দেখা গেল আফিফ হোসেন ধ্রুবকে।
এর আগে মেহেদী হাসান মিরাজকে ঘটা করে অধিনায়ক ঘোষণা করা হলেও টুর্নামেন্টের মাঝপথেই তাকে সরিয়ে দেয়া হয় দায়িত্ব থেকে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম দলের দায়িত্ব পান নাঈম ইসলাম। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারও আর চালিয়ে যেতে পারলেন কই? মাঠের ফল পক্ষে আসেনি, পড়তি ফর্মে একাদশে নিজের জায়গাও প্রশ্নবিদ্ধ। টিম ম্যানেজমেন্টও আর ভরসা করেনি তাকে। দায়িত্ব তাই তরুণ আফিফের কাঁধে।
সিলেট সানরাইজার্সেও চলছে অধিনায়ক বদলের খেলা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে অধিনায়কত্ব দেয় সিলেট। তার অধীনে ছয় ম্যাচ খেলে জয় কেবল একটিতে। পাঁচ হারের দায় নিয়ে মোসাদ্দেক নিজেই ছেড়ে দেন দায়িত্ব। টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য জানিয়েছে, নিজের পারফর্ম্যান্সে মনোযোগ দিতেই এমন সিদ্ধান্ত মোসাদ্দেকের।
সহ-অধিনায়ক আনামুল হক বিজয়কে প্রস্তাব দিলে মাঝপথে নেতৃত্ব দিতে তিনি রাজি হননি বলে জানায় এক শীর্ষ দৈনিক। অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে ছিলেন রবি বোপারা। কোনো পুর্বাভাস ছাড়াই সপ্তম ম্যাচে তাকে অধিনায়ক ঘোষণা করে সিলেট। যেটা জানা যায় খুলনার বিপক্ষে এই ইংলিশ অলরাউন্ডারকে টস করতে দেখার পর। অবশ্য প্রশ্ন থেকেই যায়, বোপারার অধীনে ভালো না করলে সিলেটের জার্সিতে নতুন অধিনায়ক দেখা যাবে কিনা?
সিলেট ও চট্টগ্রামে অধিনায়ক বদলালেও, বাকি চার দল ঠিকঠাকই চলছে তাদের নির্ধারিত নেতাদের দায়িত্বে। ঢাকায় মাহমুদউল্লাহ, খুলনায় মুশফিক, কুমিল্লায় ইমরুল ও বরিশালে আছেন সাকিব।
বিপিএল ২০১৯-২০
বিপিএলের গত আসরেও অধিনায়কদের নিয়ে চলেছে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা। শুরুটা হয়েছিল সেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে দিয়েই। অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ইঞ্জুরিতে পড়ে প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। স্কোয়াডে ছিলেন আগের বিপিএলে কুমিল্লাকে শিরোপা জেতানো অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। ম্যানেজমেন্ট তার ওপর ভরসা না করায় অধিনায়ক হন রায়াদ এমরিট। ইঞ্জুরি কাটিয়ে মাহমুদউল্লাহ দলে ফিরলে বাদ পড়েন এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার।
তিন ম্যাচে খেলে মাহমুদউল্লাহ আবারো ইঞ্জুরিতে পড়েন। নেতৃত্বের ভার পড়ে ইমরুলের ওপর। বাঁহাতি এই ওপেনারও চালিয়ে যেতে পারেননি একই কারণে। কুমিল্লার বিপক্ষে দারুণ উত্তেজনার ম্যাচে চট্টগ্রামের নেতৃত্ব দেন নুরুল হাসান সোহান।
সে বছর রাজশাহী রয়েলসের অধিনায়ক ছিলেন আন্দ্রে রাসেল। তার অধীনে টানা আট ম্যাচ খেলে দলটি। কিন্তু চোটের প্রভাবে ছিটকে যাওয়ায় তার পরিবর্তে অধিনায়কত্ব করেন শোয়েব মালিক। পাকিস্তানি এই অলরাউন্ডার আগেও অধিনায়কত্ব করেছেন। ২০১৭ বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দায়িত্ব দুই ম্যাচে সামলেছিলেন তিনি।
অধিনায়ক বদলের হিড়িক পড়েছিল সিলেট থান্ডার দলেও। পূর্ব নির্ধারিত অধিনায়ক ছিলেন মোসাদ্দেক। বিপিএলে তার প্রথম অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না অবশ্য। মাঠের ফল পক্ষে আসেনি। তার অধীনে আট ম্যাচ খেলে সাতটিতেই হারে সিলেট। এর সাথে যোগ হয় ইঞ্জুরির থাবা। টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যান এই অলরাউন্ডার। নতুন অধিনায়ক হন আন্দ্রে ফ্লেচার। টুর্নামেন্টের শেষ চার ম্যাচ সিলেট খেলেছিল এই ক্যারিবিয়ানের নেতৃত্বে।
২০১৭ সালে চার ম্যাচের জন্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ছিলেন মোহাম্মদ নবী। সেই অভিজ্ঞতার বিচারেই সপ্তম বিপিএলে এই আফগান অলরাউন্ডারকে অধিনায়ক ঘোষণা করে রংপুর রেঞ্জার্স। কিন্তু টানা ছয় ম্যাচে হারের ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে সরতে হয় তাকে। এক ম্যাচের জন্য অধিনায়ক হন টম আবেল। সেই ম্যাচে জয়ও পায় রংপুর। তবে এক ম্যাচ যেতে না যেতেই অধিনায়কত্বে আবারো বদল আনে রংপুর। টুর্নামেন্টের মাঝপথে দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে অধিনায়কত্ব নেন শেন ওয়াটসন।
দাসুন শানাকাকে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই অধিনায়ক ঘোষনা করেছিল কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। ছয় ম্যাচে এই লংকানের অধীনে খেলেছেও দলটি। কিন্তু জাতীয় দলের ডাক আসায় মাঝপথেই দল ছেড়ে যেতে হয় তাকে। এরপর তার জায়গায় কুমিল্লাকে নেতৃত্ব দেন ডাভিড মালান। দুই ম্যাচ পর এই ইংলিশ ক্রিকেটার চলে গেলে অধিনায়ক হন সৌম্য সরকার। তার অধীনে দুই ম্যাচ খেলে কুমিল্লা।
বিপিএল ২০১৮
বিপিএলের ষষ্ঠ আসরেও দেখা গেছে অধিনায়ক অদল-বদলের ঘটনা। সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক হয়ে খেলতে এসেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। তার অধীনে সাত ম্যাচ খেলে দুটিতে জিতেছিল সিলেট। তবে কনুইয়ের পুরনো ইঞ্জুরি ফিরে আসায় আর চালিয়ে যেতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিমান ধরেন তিনি। ওয়ার্নার চলে গেলে এ ম্যাচের জন্য অধিনায়ক হন সোহেল তানভীর। এরপর আবারো অধিনায়ক বদলায় সিলেট। দায়িত্ব পান অলক কাপালি। এর আগে বিপিএলে সিলেট রয়েলস ও বরিশাল বার্নারকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শেষবার শিরোপা জিতেছিল ২০১৯ বিপিএলে। সেই টুর্নামেন্টের শুরুতে অধিনায়ক করা হয় স্টিভেন স্মিথকে। দুই ম্যাচ শেষে তিনিও ছিটকে যান কনুইয়ের চোটে। তখন দলের দায়িত্ব দেয়া হয় ইমরুল কায়েসকে। তার নেতৃত্বেই সেবার শিরোপা জিতে কুমিল্লা।
বিপিএল ২০১৭
২০১৭ বিপিএলে দুইবার অধিনায়ক বদল করেছিল চিটাগং ভাইকিংস। টুর্নামেন্টের প্রথম পাঁচ ম্যাচে দলটি খেলেছিল মিসবাহ-উল হকের অধিনায়কত্বে। তার অধীনে খেলা পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই হারে চট্টগ্রাম। ব্যাটও কথা বলছিল না তার হয়ে। ফলস্বরূপ অধিনায়কত্বের সাথে সেরা একাদশেও জায়গা হারান তিনি। বাকি ম্যাচগুলোতে চট্টগ্রামকে নেতৃত্ব দেন লুক রনকি।
কুমিল্লা সেবার অধিনায়ক করেছিল তামিম ইকবালকে। ইঞ্জুরিতে পড়ে প্রথম চার ম্যাচ খেলতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। তাই দলের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নবী। চার ম্যাচ পর দলে ফিরলে অধিনায়ক হন সেই তামিমই। তামিম ফের ইঞ্জুরিতে পড়লে দুই ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন শোয়েব মালিক।
বিপিএল ২০১৫
বিপিএলের ২০১৫ সালের আসরে সিলেট সুপার স্টার্স খেলেছিল দুই অধিনায়কের নেতৃত্বে। শুরুতে মুশফিকের ওপর দায়িত্ব থাকলেও, মাঝের চার ম্যাচে সিলেটকে দেখা গেছে শহীদ আফ্রিদির নেতৃত্বে খেলতে।
ঢাকা ডায়নামাইটসের নিয়মিত অধিনায়ক ছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। এই লংকানের অধীনে সেবার দশ ম্যাচ খেলে চারটিতে জিতে ঢাকা। শেষদিকে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে সাঙ্গাকারা বিশ্রামে গেলে অধিনায়কত্ব করেন নাসির হোসেন।
এর আগেও বিপিএলে দেখা গেছে অধিনায়কত্ব বদলের নাটক। বলা চলে, এই টুর্নামেন্টের বয়স বাড়ার সাথেসাথে অধিনায়কত্ব নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর 'মিউজিক্যাল চেয়ার' খেলার পরিমাণও যেন পাল্লা দিয়েছে সমানে।