বরিশালের টানা ৫ম জয়: 'মারকুটে মুনিম', অল রাউন্ড সাকিব-ব্রাভোতে আড়াল দৃষ্টিনন্দন ইনগ্রাম
সিলেট সানরাইজার্স-ফরচুন বরিশাল, সিলেট (টস-সিলেট/বোলিং)
ফরচুন বরিশাল- ১৯৯/৪, ২০ ওভার (গেইল ৫২*, মুনিম ৫১, সাকিব ৩৮, আলাউদ্দিন ১/২৮, স্বাধীন ১/৩৭, সোহাগ ১/৪৫)
সিলেট সানরাইজার্স- ১৮৭/৬, ২০ ওভার (ইনগ্রাম ৯০, মোসাদ্দেক ৩৪, আলাউদ্দিন ২২*, শান্ত ২/২ সাকিব ২/২৩, ব্রাভো ২/৪২)
ফলাফল: ফরচুন বরিশাল ১২ রানে জয়ী
বরিশালের জয়রথ ছুটছেই। আসরে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ পেলেও কলিন ইনগ্রামের দুর্দান্ত ইনিংসে সাকিব আল হাসানদের শিরদাঁড়ায় কাপন ধরেছিল নিশ্চিতভাবে। তবে মুনিম শাহরিয়ারের ঝড়ের পর সাকিব-ব্রাভোর দারুণ অল রাউন্ড পারফর্ম্যান্সে শেষ হাসি হেসেছে তারাই।
বরিশালের ঝড়ো ইনিংস: পাওয়ারপ্লেতে মুনিম, মাঝে সাকিব, শেষে ব্রাভো, আর পুরোটা জুড়ে অচেনা গেইল
দিনের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ওপেনার নাঈম শেখ নেমেছিলেন ছয়ে, হয়েছেন কাবু; শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেও তামিমের ব্যাটিংটা ঠিক টি-টোয়েন্টিসুলভ হয়নি। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে পাওয়ারপ্লের সুবিধা কীভাবে নিতে হয় তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। প্রথম বলেই স্লিপে জীবন পেলেও পান বাউন্ডারির দেখা। পরে আরও এক চার ও ছয়ে সোহাগ গাজির প্রথম ওভারেই নেন ১৭ রান। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই তিনি পৌঁছে যান ৪৭ রানে; বরিশাল তোলে ৬৭ রান। পরে ওই সোহাগকেই চার মেরে ২৬ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি; এক বল পরেই যদিও থামতে হয়েছিল তাকে।
তবে চারে নেমে মুনিমের এনে দেওয়া শুরুকে কাজে লাগিয়ে এরপর ঝড় তোলেন সাকিব। সোহাগের শেষ ওভারে মারেন দুই চার ও এক ছয়। আলাউদ্দিন বাবুকে দারুণ এক ছয় মারার পরের বলেই সাকিব থামলেও ২ চার ও ৪ ছয়ে ১৯ বলে ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে রানের চাকা সচল রেখে যান।
আর সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ডেথ ওভারে ঝড় তোলেন ডোয়াইন ব্রাভো। বরিশাল শেষ দুই ওভারে তোলে ৩৪ রান, যার সিংহভাগ এসেছে তার ব্যাট থেকেই। ওই দুই ওভারে তিনি মারেন ৪টি ছয়, অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ৩৪* রানে।
যার ব্যাটে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছোটার অপেক্ষাই চেয়ে থাকে দর্শকেরা সেই ‘ইউনিভার্স বস’ অবশ্য পুরো ইনিংস জুড়ে অচেনা। ওপেন করতে নেমে ‘ব্যাট ক্যারি’ করলেন। তবে রান করলেন ৪৫ বলে মোটে ৫২*। ১৬তম ওভারে সিরাজ আহমেদকে দুটো ছয় মেরেছিলেন; এছাড়া ইনিংসের কোনও পর্যায়েই মনে হয়নি উইকেটে থাকা এই ব্যাটারটাই টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের অবিসংবাদিত কিংবদন্তী। এমনকি ‘ব্যাট ক্যারি’ করে এটাই তার সবচেয়ে কম রানের ইনিংস ও ২য় ধীরতম ফিফটি।
ইনগ্রামের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস
এবারের আসরে বেশ কয়েকবার ভালো শুরু করেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি, পেয়েছেন শুধু একটি ফিফটি; গত ম্যাচেও খেলেছেন প্রশ্নবিদ্ধ ৩৭ রানের ইনিংস। এদিন অবশ্য ফ্লাডলাইটের নিচে সব পুষিয়ে দেওয়ার পণ করেই নেমেছিলেন মনে হচ্ছিলেন। ছিল না কোনও পাওয়ারহিটিংয়ের পসরা; তবে ইনগ্রামের ব্যাটে রান আসছিল বিদ্যুৎগতিতে। মুজিব-সাকিব-ব্রাভো কাউকে গণ্যই করলেন না। মেহেদী হাসান রানার প্রথম ওভারে যেই ভঙ্গিতে ২১ রান নিলেন তাতে পুরো বরিশালকেই অসহায় লাগছিল; কোনও ফিল্ডিং পরিকল্পনাই কাজে আসছিল না। ওপেন করতে নেমে এদিন ২৪ বলেই পূর্ণ করেছেন ফিফটি। নাজমুল হোসেন শান্তকে বোলিংয়ে আসতে দেখেই নিজের দ্বিতীয় ছয়ের খোঁজে ব্যাট চালিয়েছিলেন, কাল হয়ে দাঁড়াল সেটাই। ৪৯ বলে ৯০ রানের ইনিংসের পুরোটা জুড়েই ছিল চোখের শান্তিদায়ক সব শট; দিনশেষে অবশ্য সবই গিয়েছে বিফলে।
শান্ত’র ‘গোল্ডেন আর্ম’
আরও একদিন অসাধারণ বোলিং করে সাকিব নিজের স্পেল শেষ করলেন ২৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে, ১৪তম ওভারে। নিজের ওভারে বোপারাকে ফেরানোর পাশাপাশি নতুন ব্যাটার মোসাদ্দেককেও চাপে ফেলেছিলেন সাকিব। রানের চাকা সচল রাখতে, মোসাদ্দেকের ওপর চাপ কমাতে ইনগ্রাম হয়ত আক্রমণ করবেন ভেবেই শান্তকে আনেন তিনি। অধিনায়ক সাকিবের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রতিদান দিয়ে শান্ত ফেরালেন ইনগ্রামকে; সেই লং অনের ক্যাচেই! পরের বলেই মিজানুর রহমান এসেই ফিরে গেলেন। শান্ত ওই ওভারে ২ রান দিয়ে যে ২ উইকেট নিলেন সেটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দিনশেষে। লক্ষ্যের দিকে ছুটতে থাকা সিলেটের প্রয়োজনীয় রান রেট ওই ওভারের পর গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৪ রানে। মোসাদ্দেক-আলাউদ্দিন বাবু এরপর ২৮ বলে ৫১ রানের জুটি গড়লেও ২০০ রানের পাহাড় অতিক্রম করা তাই আর সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে।