ঢাকাকে উড়িয়ে শীর্ষে বরিশাল: 'লড়াকু তামিম'কে ম্লান করে চলছেই 'সাকিব শো'
ফরচুন বরিশাল- মিনিষ্টার গ্রুপ ঢাকা, মিরপুর (টস- ঢাকা/ ব্যাটিং)
মিনিষ্টার গ্রুপ ঢাকা-১২৮/৯, ২০ ওভার (তামিম ৬৬, শুভাগত ২১*, রানা ২/১২, ব্রাভো ২/১৮, শফিকুল ২/৩৬)
ফরচুন বরিশাল-১২৯/২, ১৫.৩ ওভার (সাকিব ৫১*, মুনিম ৩৭, শান্ত ২৮*, কাইস ১/১৫,শফিউল ১/২৬)
ফলঃ ফরচুন বরিশাল ৮ উইকেটে জয়ী
প্লেঅফের জন্য এখন অন্যের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে ঢাকাকে। তাদের হাতে অবশ্য যা ছিল, তাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে চরমভাবে। একাই লড়ে যাওয়া নিঃসঙ্গ তামিমে ঢাকা ১২৮ রানের পুঁজিতে নেমেছিল ফিল্ডিংয়ে। রুবেল-ফারুকির বোলিংয়ে ক্ষীণ আশা জেগেছিল ঢাকার, কিন্ত মুনিমের মারকাটারি ব্যাটিং বরিশালের কাজ সহজ করে দেয়। সাকিব আগেই রেকর্ড গড়েছিলেন, বিপিএলে টানা চার ম্যান অব দ্যা ম্যাচ পেয়ে। আজ আবার ২৯ বলে ৫১* রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে পেলেন তা টানা পঞ্চমবার। মুনিমের সহজ করে দেওয়া কাজটা যা আরও সহজ বানিয়ে দিল। ২৭ বল হাতে রেখেই লক্ষ্য পেরিয়ে যাওয়া বরিশাল এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। আর নয় পয়েন্ট নিয়ে ঢাকাকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে অন্যের দিকে, খুলনা ও চট্টগ্রামের যেকোন একটি দল হারলে তবেই মিলবে তাদের প্লেঅফে প্রবেশাধিকার।
নাঈমের ঘরে ফেরা, কিন্ত থাকা হবে তো?
ওপেনিংয়েই এতদিন বসতবাড়ি গড়ে ফেলা নাঈমের পজিশন এই বিপিএলে নামতে নামতে গিয়েছিল আট পর্যন্ত। শুরুতে টপ অর্ডারে জায়গা পেলেও পরে সাত ও আট নাম্বারেও খেলতে হয়েছে। বাঁহাতি এই ওপেনারের সময়টা ভালো যাচ্ছে না মোটেই, এর আগে খেলা ৬৬ বলে করেছিলেন মাত্র ৪৩ রান। আজ ফিরেছিলেন ওপেনিংয়ে, যেন ফিরলেন ঘরে। কিন্ত নয় বলে ছয় রানের ইনিংসের পর প্লেঅফে গেলে তাঁর সে ঘরে থাকা হবে তো?
নাঈমের আউটসাইড অফের ডেলিভারিগুলোতে দুর্বলতা এখন যেন সবার মুখেমুখে। সেরকমই এক ডেলিভারিই আজ তাঁর কাল হলো। শফিকুলের বেরিয়ে যাওয়া এক বলে লেট কাটে চার মেরেছিলেন এর আগে। কিন্ত পরে আবার শফিকুলের বাইরের এক বলেই টেনে মারতে গিয়ে সরাসরি ক্যাচ তুলে দেন মিড অনে।
সাত রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর জহুরুল এসে তামিমকে সঙ্গ দেন কিছুটা সময়। এক পাশে যদিও মুজিব তাঁর মুন্সিয়ানা দেখিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্ত অপর প্রান্তের বোলিংয়ে ফায়দা লুটেছেন তামিম। শফিকুল ও শান্তের তিন ওভার মিলে আসে ২৭ রান। আর পাওয়ারপ্লেতে তিন ওভার বল করে মুজিব দেন মাত্র ১১ রান; তৃতীয় ওভারে জহুরুলকেও ফিরিয়ে দেন ২ রানে। ২৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো ঢাকাকে উদ্ধারের দায়িত্বটা তাই আরও একবার বর্তায় তামিম-মাহমুদউল্লাহ জুটির উপর।
তামিম ৬৬, শুভাগত ২১*, অতিরিক্ত ১১
তামিম ও মাহমুদউল্লাহ যখন ক্রিজে সঙ্গ বাঁধলেন, তখন ঢাকা ২৯ বলে ২৯ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে। ঢাকাকে খাদের কিনারা থেকে তোলার কাজটা এর আগেও করতে হয়েছে এই জুটিকে। আজ সেটি আরও জরুরি হয়ে পড়লো। জিতলেই যে প্লেঅফ নিশ্চিত হয়ে যেতে ঢাকার। কিন্ত মাহমুদউল্লাহ হার মানলেন ধৈর্যের কাছে; ব্রাভোকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা খেয়ে গেলে তাদের জুটিটা অষ্টম ওভারেই ভেঙ্গে যায়। সাত বলে দুই রানে অধিনায়ক ফেরার পরও তবু একাই লড়াই চালিয়ে গেছেন তামিম। যেমনটা তাকে পুরো ইনিংসেই করতে হলো আসলে!
৬৮ রানে ঢাকার চার উইকেট যাওয়ার পর শুভাগত এসে তামিমকে যা একটু সঙ্গ দিয়েছিলেন। তবে ৬৬ রানে তামিমের ইনিংস থেমে গেলে তাদের জুটিটাও ৪১ রানের বেশি যেতে পারেনি। তামিম তাঁর সে ইনিংসের শুরুটা করেছিলেন দারুণভাবে। এদিন তাঁর একটি চার যেন এনে দিচ্ছিলো আরেকটি চার। শফিকুলের এক ওভারে পরপর দুই চারের পর মারেন আরেকটি চার। শান্তের আরেক ওভারে মারেন টানা দুই চার। এরপর আবার জিয়াউরকে পেলে তাকেও মারেন টানা তিন চার।
কিন্ত ১৩তম ওভারে ৩৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পরে আর সেভাবে ঝড় তুলতেই পারেননি, পরের ১১ বলে ১৬ রান আনার পর মেহেদী রানার বলে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষমেশ ১৭তম ওভারেই থেমে গেছেন। শুভাগতের ভোগান্তিও আর থামেনি, ২৭ বলে ২১ রানে এক পাশে অপরাজিত থেকেছেন। কাইস ও রুবেলের দুই ছয় ঢাকাকে টেনে নিয়েছিল কিছুটা, তবে তামিমের ৫০ বলে ৬৬ রানের পরও ঢাকার পুঁজি ১২৮ রানই মাত্র। দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর যে এসেছে অতিরিক্ত থেকে! তামিম ও শুভাগত বাদে আর কেউই পারেননি দুই অঙ্কের রান করতে। তামিম বাদি বাকিদের ব্যাট থেকে ৭০ বলে এসেছে মোটে ৫১ রান!
মারকাটারি মুনিমের পর সাকিব-শোতে ডিসমিস ঢাকা
দশ ওভার শেষ হতে না হতেই বরিশালের প্রয়োজনীয় রানের চেয়ে হাতে বল ছিল বেশি। সেরা দুই আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের। এক আর দুইয়ে সুবিধা একই, তাই কুমিল্লার চেয়ে রান রেটে পিছিয়ে থাকা বরিশালের রান রেট বাড়ানোটা এত জরুরি কিছু ছিল না। তারপরেও সাকিবের এমন বিধ্বংসী রুপে দেখা দেওয়ার কারণ কী তাহলে?
পাওয়ার হিটিং নিয়ে সাকিব কাজ করছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। গেল কয়েক ম্যাচে তার দেখাও মিলেছে। কিন্ত আজ ওমরজাইয়ের সাথে যা করলেন, তাতে বোলারের জন্য মায়াই লাগবে! ১২তম ওভারে আফগান এই পেসারের পাঁচ বলে চারটি চার ও এক ছয়ে আনেন ২২ রান। ১২তম ওভারেই বরিশাল একশ পার করে। ঢাকার ম্যাচে ফেরার যে অতি ক্ষুদ্র আশা জেগেছিল রুবেল ও ফারুকীর শুরুর বোলিংয়ে তা অবশ্য মিটে গেছে মুনিমের ব্যাটে ।
৭ রান করা গেইলের উইকেট হারিয়ে পাওয়ারপ্লেতে বরিশাল আনতে পারেনি ৩২ রানের বেশি। তবে মুনিমের জন্য আসল পরীক্ষা অপেক্ষা করছিলো সামনে। কায়েস আহমেদের উপরই উল্টো চড়াও হয়ে সেই পরীক্ষায় সফল মুনিম। স্লগ সুইপে মারেন দুই ছয়, একই শটে আবার মারতে গিয়ে যদিও ৩৭ রানে ধরা পড়েন সীমানায়। শান্ত এসে এরপর রানের চাকা সচল রেখেছেন, সাকিবকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন, আর সাকিব এক পাশে ঝড় তুলে ২৯ বলে করেছেন ৫১* রান। সাকিব কী তাহলে আগে থেকেই প্লেঅফের প্রস্তুতিটা সেরে নিলেন?