শেষ দল হিসেবে প্লেঅফে খুলনা: 'সেঞ্চুরিয়ান স্পাইসম্যান' ও 'ওপেনার মাহেদী'তে আড়াল 'ফ্যাবিউলাস ফাফ'
খুলনা টাইগার্স-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, মিরপুর (টস-খুলনা/বোলিং)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-১৮২/৫, ২০ ওভার (ডু প্লেসি ১০১, জয় ৩১, অঙ্কন ২০*, মাহেদী ১/২৯, ফরহাদ ১/৩০, নাভিন ১/৪৮)
খুলনা টাইগার্স-১৮৩/১, ১৮.৪ ওভার (ফ্লেচার ১০১*, মাহেদী ৭৪, মঈন ১/১৩)
ফলাফল: খুলনা টাইগার্স ৯ উইকেটে জয়ী
প্লে-অফে যেতে জয়ের কোনও বিকল্প ছিল না খুলনার। প্রতিপক্ষ কুমিল্লা আগের ম্যাচে রীতিমত ছেলেখেলা করেছিল তাদের নিয়ে। এই ম্যাচেও ফাফ ডু প্লেসির দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে প্লে-অফের আশা যেন মনে হচ্ছিল দূরে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা কোনও লাইটহাউসের বাতি। সেই আলোকেই পাথেয় করে পথ তো খুঁজে পেলই খুলনা, পেলও দোর্দণ্ড প্রতাপে। মাহেদী হাসানকে ওপেন করতে নামানোর ফাটকাকে কাজে লাগল দারুণভাবে, সাথে ‘স্পাইসম্যান’ দেখালেন তার পেশির জোর। ঢাকার বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে শেষ দল হিসেবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জয় দিয়ে প্লে-অফে জায়গা করে নিয়েছে মুশফিকুর রহিমের দল।
অধিনায়কত্বের অভিষেকেই ফাফের ব্যাট হাতে বাজিমাত
উইকেটে যখন এলেন তখন ৪ ওভারে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে কুমিল্লা তুলেছে ৩১ রান। ম্যাচ ঘুরে যেতে পারত খুলনার দিকে, তবে সেই সুযোগ দিলেন না ফাফ ডু প্লেসি। অধিনায়কত্বের গুরুদায়িত্ব পাওয়ার পর ব্যাট হাতেও ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন। তবে সেটার জন্য সময় ব্যয় করেননি বেশি; ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন ৩০ বলেই। ফিফটির পরে গিয়ার বদলাতে গিয়ে একটু অস্বস্তিতেই পড়েছিলেন। তবে নিয়মিত প্রান্ত বদল করে রানের চাকা সচল রাখেন। মাহেদী হাসান ও খালেদ আহমেদের বলে দুই বার রিভিউয়ের আবেদনে বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে অবিচল থেকেই পরের ২২ বলে তুলে নিলেন পরের পঞ্চাশ রান। ৫২ বলে পেয়ে যান বিপিএলে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। পরের ওভারে নাভিন-উল-হকের স্লোয়ার তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন। তবে ৫৪ বলে ১০১ রানের ওই ইনিংসে তখন খুলনার প্লে-অফের আশা ফিকে করে দিয়েছিলেন।
মাহেদীর গুরুত্বপূর্ণ স্পেল ও অসাধারণ শেষ ওভার
নিজের প্রথম ওভারেই মাহেদী ফিরিয়েছিলেন এই মৌসুমে প্রথম নামা পারভেজ হোসেন ইমনকে। তার পরের ওভারেই আবার রান আউট হয়ে ফিরেছিলেন মুমিনুল। পাওয়ারপ্লেতে কুমিল্লার লাগাম টেনে ধরা নিজের স্পেলকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন শেষ ওভারে। ১৭৯ রানে থাকা কুমিল্লা শেষ ওভারে ২০০ রান ছোঁয়ার লক্ষে এগুচ্ছিল। মাহিদুল হাসান অঙ্কন শেষ দুই বলে দুই ছয় মেরে দিচ্ছেন হুঙ্কার। কিন্তু সেই অঙ্কনকে মোটে এক বল খেলার সুযোগ দিলেন মাহেদী। বাকি পাঁচ বল উইকেটে নবাগত সুনীল নারাইনকে বেঁধে রাখলেন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। তিনি যে স্পিনার তা বেমালুম ভুলিয়ে দিয়ে করলেন অসাধারণ সব ওয়াইড ইয়র্কার; গুনলেন মোটে ৩ রান। মাহেদীর সেই শেষ ওভার নিঃসন্দেহে খুলনাকে দিয়েছিল বাড়তি বিশ্বাস; তাকেও দিয়েছিল আত্মবিশ্বাস যার প্রমাণ তিনি রেখেছেন পরে ব্যাট হাতে।
স্পাইসম্যানের ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মাহেদীর মারকুটে ব্যাটিং
দুজনে মিলে প্রথম ওভারটা খেললেন দেখেশুনে, নিলেন ৩ রান। আক্রমণে পেসার আসতেই অবশ্য চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো আন্দ্রে ফ্লেচারের; আবু হায়দার রনিকে মারলেন টানা চার-ছয়, মাঝে পেলেন ওয়াইডে পাঁচ রান। মাহেদী-ফ্লেচার জুটি ওই ওভারে তুললেন ১৭ রান, পরের ওভারে ১৮! সেই যে শুরু করেছিলেন, এরপরে কুমিল্লা বোলারদের জীবন বিষয়ে তুলেছিলেন ক্রমাগত আক্রমণে। দুজনে মিলে পাওয়ারপ্লেতেই তুলে ফেলেন ৬৯ রান। ৯.১ ওভারেই ওই জুটি ছুঁয়ে ফেলে ১০০ রান! তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ না করে ঠান্ডা মাথায় খেলে গিয়েছেন দুজন। স্কোরবোর্ডে রান রেট যথার্থ হওয়ার পরে সময়ও নিয়েছেন দুজন একটু। ২৪ বলে ফ্লেচার ফিফটি করার পর মাহেদীও ফিফটি পেয়েছিলেন ,৩১ বলে। রনিকে যেন এদিন দুজনের একটু বেশিই মনে ধরেছিল; দুজনে মিলে তাকে তুলোধোনা করে তার ৩ ওভারেই নিয়েছিলেন ৪২ রান। এবারের আসরে তামিম-শাহজাদের সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড যেই ওভারে অতিক্রম করলেন ওই ওভারে নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন ‘স্পাইসম্যান’, ৫৯ বলে। জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে মাহেদী ফিরলেন। তবে ৬ চার ও ৪ ছয়ে সাজান ৪৯ বলে ৭৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে কাজ ততক্ষণে সেরে ফেলেছেন। দুজনে মিলে গড়েছেন রান তাড়া করতে নেমে বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি। সেই সাথে চাপকে তোয়াক্কা না করে দলকে এনে দিয়েছেন অবিস্মরণীয় জয়।