কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম: ‘বিধ্বংসী’ ওয়ালটনের পর আফিফের ‘গ্যাম্বলিংয়ে’ মিরাজের বাজিমাৎ
এলিমিনেটর
চট্টগ্রাম-খুলনা (টস-খুলনা/বোলিং)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স- ১৮৯/৫, ২০ ওভার (ওয়ালটন ৮৯* লুইস ৩৯, মিরাজ ৩৬, খালেদ ৪০/২)
খুলনা টাইগার্স- ১৮২/৫, ২০ ওভার (ফ্লেচার ৮০*, ইয়াসির ৪৫, মুশফিক ৪৩, মিরাজ ৪০/২)
ফলাফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৭ রানে জয়ী
এলিমিনেটরের সহজ সমীকরণ। হারলেই বাদ, জিতলে থাকছে ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে সেই সুযোগটা পেয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। চ্যাডউইকের দুর্দান্ত এক ইনিংসে ভর করে বড় সংগ্রহ পায় চট্টগ্রাম। জবাবে আন্দ্রে ফ্লেচারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ম্যাচে ফিরে খুলনা। কিন্তু শেষ ওভারের নাটকীয়তায় চট্টগ্রামই জিতেছে ম্যাচটা।
ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে খুলনার প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। উইকেটে ছিলেন খুলনার ব্যাটিং ভরসা আন্দ্রে ফ্লেচার ও পাওয়ার হিটার থিসারা পেরেরা। এরপরেও অধিনায়ক আফিফ বল তুলে দেন মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। আফিফের সেই গ্যাম্বলিংয়ের টোটকা দারুণ কাজে লেগেছে চট্টগ্রামের। দারুণ লাইন-লেংথ মেনে বল করে তাদের আটকে রেখেছেন মিরাজ। বাড়তি পাওনা হিসেবে শেষ বলে পেয়ে গেছেন পেরেরার উইকেটটাও।
মিরাজের বাজিমাৎ
প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ছন্দে ছিলেন মিরাজ। ৩০ বলে করেছেন ৩৬ রান। বল হাতেও চমক দেখিয়েছেন এই অফস্পিনার। থিতু হয়ে যাওয়া ফ্লেচার আর পেরেরার সামনে বল করেছেন দারুণ মাথা খাটিয়ে। প্রথম তিন বলে কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেননি তারা। এসেছে তিন সিংগেল। চতুর্থ বলটা অবশ্য লেগ স্টাম্পের বাইরে ফুলটস করে বসেছিলেন মিরাজ। ফ্লেচারের খেলা শট ফাইন লেগের ফিল্ডার ধরতে না পারায় চার রান পায় খুলনা।
পঞ্চম বলটা মিরাজ করেন সোজা ব্লক হোলে। ব্যাট তোলারই সুযোগ পাননি ফ্লেচার। সেই বলে সিংগেল নিলে স্ট্রাইকে যান পেরেরা। ম্যাচ ততক্ষণে ঢুকে গেছে চট্টগ্রামের পকেটে। শেষ বলে তুলে মারতে গিয়ে মিরাজের হাতেই ক্যাচ দেন পেরেরা। চট্টগ্রাম ভাসে জয়ের আনন্দে।
অধিনায়ক আফিফের ‘স্পিন’ টোটকা
শেষ চার ওভারে খুলনার দরকার ছিল ৫৬ রান। চট্টগ্রামের ডেথ ওভারের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় এসে দিলেন ১৯ রান। ওভার দ্য উইকেটে করা প্রথম দুই বলেই তাকে বাউন্ডারি মারেন ইয়াসির রাব্বি। পঞ্চম বলে লং অনের ওপারে দ্বিতীয় ছক্কা। ম্যাচ ঝুঁকে যায় খুলনার দিকে। পরের ওভারে আট রান দিয়ে ইয়াসিরের উইকেট নেন শরীফুল।
সময় আসে অধিনায়ক আফিফের গুটি চালানোর। বেনি হাওয়েল, নাসুম, শরীফুল, মৃত্যুঞ্জয়দের নির্ধারিত ওভার শেষ। এক ওভার বাকি ছিল মিরাজের। উইকেটে টি-টোয়েন্টির দুই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান থাকার পরও মিরাজেই ভরসা আফিফের। আফিফের সেই গ্যাম্বলিংয় কাজে লেগেছে দারুণভাবেই। মিরাজের বুদ্ধিদ্বীপ্ত বোলিংয়ে খুলনা ম্যাচ হেরেছে এগিয়ে থেকেও।
লুইসের প্রত্যাবর্তনের পর ‘বিধ্বংসী’ লুইস, সঙ্গী তার মিরাজ
দশ ওভার শেষ হওয়ার আগে ৬৬ রানে নেই চার উইকেট। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের তখনকার দলীয় রানের তিন-চতুর্থাংশই এসেছে কেনার লুইসের ব্যাট থেকে। উইল জ্যাকসের জায়গায় একাদশে ঢুকেছেন তিনি। আউট হয়েছেন নাবিল সামাদকে সুইপ করতে গিয়ে। আগের ম্যাচে দারুণ ক্যামিও খেলা শামীমও আজ ব্যর্থ।
বাঁচা-মরার এই ম্যাচে চট্টগ্রামের ত্রাতা হয়ে এলেন চ্যাডউইক ওয়ালটন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দলের বড় সংগ্রহে ওয়ালটনের বড় অবদান থাকলেও, পাল্টা আক্রমণের শুরুটা হয়েছিল মিরাজের ব্যাট থেকেই। মাহেদী হাসানকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মেরেছেন বিশাল এক ছয়। সেখান থেকেই শুরু দুজনের তাণ্ডবের। ষষ্ঠ উইকেটে দুজন গড়েছেন ১১৫ রানের জুটি। চলতি বিপিএলেরও ষষ্ঠ শতরানের জুটি এটি।
মিরাজ এক প্রান্তে রয়েসয়ে খেললেও বাউন্ডারির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন ওয়ালটন। মাহেদীর ফ্লাইট, পেরেরার স্লোয়ার, খালেদের গতময় ডেলিভারি, ফরহাদ রেজার হাফভলি কিংবা রুয়েল মিয়ার সোজা বল; ওয়ালটনের ব্যাটের ছোঁয়ায় সোজা বাউন্ডারির ওপারে। ছাড় পাননি কেউই। সাত চার ও সাত ছক্কায় ৪৪ বলে ওয়ালটন খেলেছেন ৮৯* রানের ইনিংস। মিরাজের দৃঢ়তা আর ওয়ালটনের মারকাটারি ব্যাটিংয়েই বড় সংগ্রহ পায় চট্টগ্রাম।